somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইসিয়াক
একান্ত ব্যক্তিগত কারণে ব্লগে আর পোস্ট দেওয়া হবে না। আপাতত শুধু ব্লগ পড়বো। বিশেষ করে পুরানো পোস্টগুলো। কোন পোস্টে মন্তব্য করবো না বলে ঠিক করেছি। আমি সামহোয়্যারইন ব্লগে আছি এবং থাকবো। ভালো আছি। ভালো থাকুন সকলে।

গল্পঃ সম্পর্ক

২৪ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[১]
এই রাস্তার বাড়িগুলো প্রায় সবগুলোই চার পাঁচ তলা।দারুণ ঝকঝকে তকতকে, খুব সুন্দর ছবির মতো সাজানো গোছানো ।অলোক এই রাস্তায় এর আগে কোনদিন আসেনি। এই রাস্তায় কেন এই এলাকাতেই সে কোনদিন আসেনি।অবশ্য কোন কারণে আসার প্রয়োজন হয়নি ।আসল কথা হলো এতো অভিজাত পাড়ায় তাদের আসা যাওয়ার তেমন একটা দরকার পড়েনি।

সুন্দর সুন্দর বাড়িগুলো পলকেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সে শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখছে, এর মধ্যে হঠাৎ কি জানি কি দেখে পলক তার দাদার হাত ছাড়িয়ে নিলো। তারপর কিছু একটার পিছন পিছন ভোঁ দৌড় দিলো।

অলক সম্বিত ফিরে পেতেই ভাইকে ধরতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। এই রাস্তায় বেশ ভারি ভারি গাড়ি চলছে। বলা যায় না হঠাৎ একটা ঘাড়ের উপর চড়ে বসলে দ্রুম পটাশ। নিমেষেই শেষ হয়ে যেতে পারে সব। দ্রুম পটাশ কথাটা দাদাভাই খুব বলে।অলক তীব্রবেগে ছুটে গিয়ে এক প্রকার খামচিয়ে ধরে নিয়ে এলো ছোট ভাইটাকে।তারপর আদর মেশানো শাসনের সুরে বলল,
-এই পলক দুষ্টুমি করিস না ভাই আমার। আমার সাথে আয়,আয় বলছি। গাড়ি চাপা পড়বি কিন্তু।দাদাভাই কি বলেছে মনে নেই? একদম লক্ষীছেলে হয়ে থাকতে বলেছে।

পলকের ওসব ভাবনা মোটেও নেই সে বেশ আহ্লাদি গলায় বলল,
-দেখ দাদা কি সুন্দর প্রজাপতি, এমন প্রজাপ্রতি আমি এর আগে দেখিনি।

পলক আবার প্রজাপ্রতি টানে ছুটে যেতে চায়।কিন্তু শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে পারে না দাদার সাথে।অলক ধমকে উঠলো,
-অচেনা জায়গা একদম দুষ্টুমি করবি না।লক্ষী হয়ে থাক।
-ইশ আমি মোটেও লক্ষী হতে চাই না। লক্ষী তো মেয়েদের নাম, দিদিমণি বলেছে।

অলক কটমট করে তাকাতেই
অনিচ্ছা সত্ত্বেও কি ভেবে পলক চুপ করে গেলো।ভালো মানুষের মতো ভাইয়ের হাতটি ধরে রইলো।তারপর তারা যে কাজে এই পাড়াতে এসেছে সেই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

অনেকক্ষনের চেষ্টাতে বাড়ির হোল্ডিং নাম্বার মিলিয়ে নির্দিষ্ট বাড়িটাকে ঠিকঠাক খুঁজে বের করলো অলক। কিন্তু সমস্যা দেখা গেল অন্যখানে।এই বিশাল বাড়িটার দরজা তো লক করা,দারোয়ানকে কাছে পিঠে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। তাহলে ভিতরে ঢুকবে কেমন করে?

[২]
-নাম কি তোমাদের?
জোয়ান তাগড়া লোকটি অর্ন্তভেদি দৃষ্টি নিয়ে ছেলে দুটির দিকে গোল গোল চোখ নিয়ে তাকিয়ে বলল,
অলোক বরাবরই সাহসী সে একটুও না ঘাবড়ে বলল,
-আমি অলোক আর এই হচ্ছে আমার ছোট ভাই পলক।
-আচ্ছা বুঝলাম,তো এখানে দাড়িয়ে কি করছো?
-আমি এই বাসার ভিতরে যাবো। একটু কাজ আছে?
-একা একাই? বড় কেউ নাই? কার কাছে যাবে? কি কাজ?

বলতে বলতে আরো গভীর ভাবে বাচ্চা দুটিকে পর্যবেক্ষণ করলো কালু মিয়া।পরনের পোষাক দেখে এই বাসার লোকজনের আভিজাত্যের সাথে ঠিক মেলে না। তারপরেও গ্রাম থেকে ও অনেকের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র আত্নীয় স্বজনরা দেখা করতে আসে, হয়তো এরাও তেমন কেউ হবে। তবে একা একা এই বাচ্চাদুটোকে দেখে সে বেশ কিছুটা বিষ্মিতও বটে।সাথে বড় কেউ নাই সন্দেহজনকও বটে। কালুমিয়া আরো ভালোভাবে যাচাই করার জন্য বলল,
-তোমরা কোথায় থাকো? তোমাদের বাড়ি কোথায়?
-নেতাজী সুভাষ চন্দ্র রোড়ে।
-সে তো বহুদূর।
-হ্যাঁ।
-এখানে কার কাছে এসেছো?
-শফিক আহম্মেদ সাহেবের কাছে।
-কি হন উনি তোমাদের?

এবার অলোক একটুক্ষণ চুপ করে গেলো। কি যেন ভাবলো, আসলে দাদুভাই বার বারই বলেছে সত্যিটা সবাইকে বলা যাবে না তাহলে কিন্তু জায়গা মতো পৌছবি না।বাড়িতে ঢোকাতো দূরের কথা।

অলোক বলল শফিক আহম্মেদ চাচা হন।উনি আমাদের আসতে বলেছেন।উনি কয় তলাতে থাকেন আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। একটু দেখিয়ে দেবেন?
-কেমন চাচা?
-আমার বাবার আপন ভাই।
-শফিক সাহেব থাকেন চারতলার । যাচ্ছো যাও তবে অন্য কোন মতলব থাকলে এক্ষুনি কেটে পড়তে পারো।
অলক কিছু বলার আগে পলক বেশ চোখ মুখ পাকিয়ে বলল,
-আমরা চোর নই। ভদ্র ঘরের ছেলে।
[৩]
অহনা আর শফিক দুজনে ঠিক করে বাড়ির লোক না চাইলেও তারা দুজনে বিয়ে করবে।শফিকের অত তাড়া নেই কিন্তু অহনার মামীমা নিজের ভাইয়ের ছেলের সাথে অহনার বিয়ে দেওয়ার জন্য আদা জল খেয়ে লেগে গেছে। ছেলেটি ভালো নয় নেশা ভাং করে,বেকার।এমনিতে অনেক কষ্টের জীবন অহনার। ছোট বেলা থেকে এতিম,জীবনের এতোটা পথ পুরোটাই কষ্টে কেটেছে আরো বেশি কষ্টে মধ্যে সে পড়তে আর রাজী নয়।

তাছাড়া শফিক তাকে সত্যি খুব ভালোবাসে।শফিকের মতো ভালোবাসা এই পৃথিবীতে আজ অবধি কারো কাছ থেকে পায়নি সে, যেই ভাবা সেই কাজ। খুব চটপট সিদ্ধান্তে বিয়েটা হয়ে যায় তাদের। শফিক যেহেতু চাকরি করে সেহেতু তেমন একটা অসুবিধাও হলো না।
বেশ সুখেই কাটতে লাগলো জীবন।

কিন্তু বছর পাঁচেক যেতে শফিকের ভিতর পরিবর্তন আসতে লাগলো। আসল কথা শফিক তখন নিজেকে খানিকটা বঞ্চিত হিসেবে ভাবতে লাগলো। এতোদিন পরেও দু পক্ষের কারো বাড়ির দিক থেকে এই বিয়েকে যেহেতু মেনে নিলো না কেউ, তখন একটা হতাশা তৈরি হলো এবং হতাশা থেকে ভুল বোঝাবুঝি শুরু হলো দুজনের মধ্যে।

শফিক অহনাকে দোষ দিতে লাগলো তার কারণে তাকে বাপমা ভাইবোন ছেড়ে থাকতে হচ্ছে।তাছাড়া তার নিজের শ্বশুর বাড়ি বলে কিছু নেই।তার অনেক সাধ ছিলো ইত্যাদি ইত্যাদি.......। প্রায় প্রতিনিয়ত এসব কথা শুনে শুনে অহনা না বলে পারলো না যে,
-তুমি যাও তোমার বাপ মায়ের কাছে কে আটকে রেখেছে।

সুযোগ পেয়ে শফিক প্রায়ই বউ বাচ্চা রেখে নিজের বাড়িতে গিয়ে বাবা মা ভাই বোনের সাথে দিন কাটিয়ে আসতে লাগলো ।এসব ব্যাপারে অহনা তেমন কিছুই বলল না।যদিও কষ্টে তার বুকটা ভেঙে যেতে লাগলো। সে মনে মনে ভাবে,নিজেকে স্বান্তনা দেয় এসবই হয়তো তার নিয়তি। সুখ তার কপালে নেই। শফিক যে কদিন বাড়িতে না আসে, সেই সময়গুলো অহনার খুব কষ্টে কাটে। বাজার ঘাট সংসার সামলানো, ছেলেদের দেখাশোনা । একেবারে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা হয়ে যায়।

তারপরেও অহনা খুব একটা মুখ খোলে না।সবসময় তার কেন জানি মনে হয় কিছু বললে শফিক তাকে ছেড়ে একেবারে চলে যাবে। কিন্তু মনের ভাবনা বাস্তব হতে খুব একটা সময় নেয় না।

কিছুদিন পরে অহনা জানতে পারে শফিক বাড়ির পছন্দে আবার একটি বিয়ে করেছে। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তার । কি করবে কি বলবে কার কাছে যাবে প্রথমত সে কিছুই বুঝতে পারে না। এদিকে শফিক সমানে অস্বীকার করে চলে,
- না সে বিয়ে করেনি। এসবই গুজব। তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ভাঙার জন্য কিছু দুষ্টু লোক এসব বলে বেড়াচ্ছে।

কিন্তু সত্যকে মিথ্যা দিয়ে বেশিদিন ঢেকে রাখা যায় না। একদিন না একদিন সত্য প্রকাশিত হয় তেমনি সত্য প্রকাশিত হলো কিন্তু খবর শুনে অসহায় হয়ে পড়লো অহনা।

আসলে তার তো যাবার মতো কোন জায়গাই নাই। কোথায় যাবে সে?

তাদের প্রেমের বিয়ে, কত আশ্বাস,কত অংগীকার, কত শপথ সব হারিয়ে গেলো ক্ষনিকের ঝড়ে।একসময় শফিক তাকে পুরোপুরি ছেড়ে চলে গেলো।

তখন অনেকে বলেছে মামলা করতে ।মামলা করলে কি সব আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে? বরং ঘৃনা বাড়বে। ছেলে দুটো চিরতরে বাপ হারা হবে। বাঁকা পথে না গিয়ে অহনা নিজে যে টুকু বিদ্যা ছিলো তার জোরে অনেক কষ্টে একটা চাকরি জুটিয়ে নিলো।

অহনা চায় না কারো কষ্টের দীর্ঘশ্বাস তার সন্তানদের ঘাড়ে পড়ুক।শফিক যদি এতে ভালো থাকে তো থাকুক।হাজার হলেও সে অলক পলকের বাবা। নতুন চাকরিতে পরিশ্রম বেশি হলেও যা মাইনে পায় তাতে তিন জনের কোন রকমে চলে যায়।তাতেই খুশি অহনা।ছেলে দুটো মানুষ হলেই তার জীবন স্বার্থক।

এর মধ্যে একদিন অফিসের তাড়াহুড়োতে সটকাট পথে রাস্তা পার হতে গিয়ে বাসের নিচে পড়ে তৎক্ষনাৎ মারা যায় অহনা। ছেলে দুটোকে এবার জন্মের মতো পানিতে ভাসিয়ে দিয়ে অনন্তর পথে যাত্রা করে সে।
ছবিঃ গুগল থেকে।
গল্পটি পরের পর্বে শেষ হবে। বাকী টুকু এই পোস্ট প্রথম পাতা থেকে সরে গেলেই পোস্ট দেওয়া হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৪৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×