somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ সম্পর্ক[শেষ পর্ব ]

২৪ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[৪]
বাড়িওয়ালা জামাল সাহেবের স্ত্রী সায়রা খাতুন। নিপাট ভালো মানুষ। পৃথিবীতে কোন কোন মানুষকে প্রথম দেখাতেই মনে হয় অনেকদিনের চেনা,অনেক বেশি আপন।প্রথম দেখাতে সায়রা খাতুনকে দেখেও অহনার তাই মনে হয়েছিলো ।সায়রা খাতুনের দিক থেকে অনুরূপ সাড়া পেয়ে সম্পর্কটা আরো ব্যপ্তি লাভ করল অচিরেই।বাড়িওয়ালা ভাড়াতে সম্পর্কটা ঘুচে যেতে খুব বেশিদিন সময় লাগলো না।
দিনে দিনে সম্পর্কটা আরো গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগলো।

অবসর সময়ে সায়রা খাতুনের সাথে অহনা তার জীবনের ঘটে যাওয়া অতীত বর্তমান সবকথাই গল্প করতো। আপনজন ভেবেই করতো।কষ্টের কথা দুঃখের কথা নিজের জীবনের অতীত দুঃখ, সুখ স্মৃতির কথা কারো সাথে বললে মনটা হাল্কা হয়।

সায়রা খাতুনও প্রতিটা সময় মাতৃসুলভ স্নেহ দিয়ে অহনাকে আগলে রাখতেন। গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনতেন তার সকল আশা আকাঙ্খা পাওয়া না পাওয়ার বেদনা, ভালো লাগা মন্দ লাগার কথা। তার ব্যথায় ব্যথিত হতেন আবার সুখে হতেন উল্লসিত।

শফিককেও তিনি নিজের ছেলের মতো দেখতেন তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কত আলোচনা চলতো, শফিককে বোঝাতেন বলতেন,
-মনে করো আমরা তোমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি।
শফিক অবশ্য এইসব পছন্দ করতো না মোটেও।সে বেশ কয়েকবার এই বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়িতে চলেও যেতে চেয়েছিলো। শুধু অহনাই রাজী হয়নি বলে যেতে পারেনি।

শেষের দিনগুলোতে শফিককে অনেক বুঝিয়েছেন সায়েরা খাতুন ও জামিল সাহেব দম্পতি ,ছেলে দুটোর দিকে তাকিয়ে হলেও সংসার করে যেতে বলেছেন।শেষে মাতৃসুলভ ধমকধামক ও দিয়েছেন কিন্তু শফিক সবসময় অনড় থেকেছে নিজের সিদ্ধান্তে। সে শোনেনি কোন কথাই।ছেলে দুটোর কথাও ভুলেছে সে সহজে।


শফিক এই আসা যাওয়ার মধ্যে এক সময় হারিয়ে গেলো দুম করে। অহনা তখন পানিতে পড়ল, রাজ্যের চিন্তায় তখন তার দিশেহারা অবস্থা। এখন কোথায় যাবে? কার কাছে থাকবে? কে তাকে আশ্রয় দেবে?

নানান চিন্তায় সে পাগল হয়ে উঠলো, এর আগে ছিলো একমাত্র মামার আশ্রয়ে, এখন মামা আর এ জগতে নেই । শফিকের সাথে এই বিয়ে মামী কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। তার ইচ্ছা ছিলো নিজের ভাইয়ের ছেলেন সাথে বিয়ে দেবে অহনাকে।মনের মধ্যে এই ক্ষোভটা তার রয়েই গেছে, ইদানিং সেই ক্ষোভ আরো বেশি করে ফিরে এসেছে। দেখা করতে গেলেও বাজে ব্যবহার ছাড়া আর কোন পাওনা অহনা পায়নি।

চারিদিকের অশান্তি লাঞ্ছনা গঞ্জনায় অহনার দম বন্ধ হয়ে আসার যোগাড় হলো, কত দিন ভেবেছে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে কিন্তু ঘুমন্ত নিঃস্পাপ শিশু দুটির মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে বার বার সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়েছে।আহারে অলক পলকের সে ছাড়া তো পৃথিবীতে আর কেউ নাই। ছেলে দুটো যে ভেসে যাবে।

এদিকে শফিক চাতুরতার সাথে নিজের ঠিকানা গোপন করে হারিয়ে যায় কোন অজানায়। শফিকের বাড়ির ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায় সব ভুয়া। ভুল ঠিকানা। সেই ঠিকানায় শফিক বা শফিকের বাবা মা পরিবার কেউ কোন কালে ছিলো না,এখনো থাকে না।

তার মধ্যে শফিক নিজের চাকরি বদলেছে। বন্ধু বান্ধব তার কোন কালে তেমন একটা ছিলো না।রহমান নামে এক ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলো সে থাকে মালয়েশিয়ায়।তার বউ এর কাছে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নাম্বার চাইতে এমন চোখ সরু করে চাইলো যে অহনা নিজেই লজ্জায় পড়ে গেলো।

অহনা মারা যাবার পরে জামাল দম্পতি হঠাৎ যেন সাগরে পড়লেন ছোট ছোট বাচ্চা দুটোকে নিয়ে। কার কাছে দিবেন বাচ্চা দুটোকে তাছাড়া ততদিনে অহনার মতো অলক পলককেও এই দম্পতি খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছে ।

প্রথাগত ভাবে অবশ্যই এই বাচ্চা দুটোর দেখাশোনার ভার তার আত্নীয় স্বজনদের উপর পড়ে কিন্তু অহনার দিক থেকে না আছে কেউ আর শফিক তো অনবরত ঠিকানা বদল করে অহনার থেকে পালিয়ে বাঁচতে ব্যস্ত।

অহনার মামীর কাছে গেলে সে এসব ব্যাপারে কোন কথা শুনতে সরাসরি অস্বীকার করলো।

অনেক আলোচনার শেষে এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার বললেন ওদের কে এতিমখানায় দিয়ে দেওয়া যাক কিন্তু সায়েরা খাতুন হঠাৎ আবেগতাড়িত হয়ে হাউমাউ করে কেঁদে কেটে পরিবেশ ভারী করে ফেললেন।

তারপর সিদ্ধান্ত হলো বাচ্চাদুটোর আত্নীয় স্বজনের খোঁজ না পাওয়া অবধি জামাল সাহেবদের কাছেই অলক পলক থাকবে। সেদিন থেকে অলক পলক সায়েরা জামাল দম্পতির ঘর আলো করে আছে। কিন্তু জামাল সাহেব শফিকের খোঁজখবর করার দায়িত্ব হিসাবে নিতে ভুল করলেন না। এবং বেশ কয়েকদিন পরে অবশেষে সে শফিকের সন্ধান পেয়ে যায় হঠাৎ করেই।

সায়েরা খাতুন খবরটা শুনেই মুষড়ে পড়লেন বাচ্চাদুটো যে ততদিনে তার আরো বেশি প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়েছে। একমাত্র ছেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। তাদের নিঃসঙ্গ জীবনের সম্বল এখন অলক পলক। যাই হোক আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।জামাল সাহেব তার সিদ্ধান্তে বদ্ধ পরিকর। মনকে তিনি শক্ত করে বাধলেন। আবেগকে তিনি কোন রকমে প্রশ্রয় দিলেন না। এক সকালে ছেলে দুটিকে পৌছে দিলেন তার বাবার কাছে।

[৫]
কলিংবেল বাজতেই নিরুবালা দরজা খোলার আগে বাজখাই গলায় হাঁক দিলো,
-এ্যাই কে?
অলক পলক দুজনেই একসাথে বলে উঠলো,
- আমরা।
গলার স্বরে আশ্বস্ত হলো কিনা কে জানে দরজা খুলে ভারী শরীরের সেই বাজখাই গলার মালিক নিরুবালা অলক পলকের পা থেকে মাথা অবধি বার কয়েক চোখ বুলিয়ে ভুরু নাচিয়ে জানতে চাইলো,
- কাকে চাই?
-শফিক আহমেদ আছেন?
বাচ্চাদুটোকে তার খুব ভালো লাগলো,বেশ মিষ্টি চেহারা।
নিরুবালা বাচ্চাটার দৃঢ়তায় একটু অবাক হলেও আবার প্রশ্ন করলো,
-খালুজানের সাথে কি দরকার?
-আমরা ওনার আত্নীয় হই।
-আত্নীয়? সাথে কে আছে?
-কেউ নাই আমরা দুজনই এসেছি।
কি মনে করে নিরুবালা দরজা থেকে সরে এলো, তাপর বলল,
-ভিতরে ঢুকো কিন্তু চুপচাপ বসে থাকবা আমি খালুজানরে ডেকে দিচ্ছিা।দুষ্টুমি করবা না। তোমার যে একা একা আসছো তোমাদের বাবা মা জানেন?
-আমার মা তো নাই,পলক আগ বাড়িয়ে বলল।
কাহিনী যে কি নিমেষে নিরুবালা বুঝে ফেলল। ভাসা ভাসা যা জানে তাতে এই বাচ্চাদুটোই খালুজানের আগের পক্ষের। ভিতরে তো ঢুকতে দিলো এখন যদি খালুজান খালাম্মা গাল মন্দ করে তখন? বাচ্চাদুটোকে বের করেও দিতে ইচ্ছা করছেনা ।আহা কি মায়া ভরা চেহারা।দেখলেই আদর করতে ইচ্ছা করে।

কিছুক্ষণের মধ্যে ড্রইংরুমের ভিতরে যেন ঝড় বয়ে গেলো। হঠাৎ করে হুড়মুড় করে শফিকের দ্বিতীয় স্ত্রী রমলা ড্রইংরুমে এসে বলল,
-এই তোরা কারা? এখানে ঢুকছিস কি করে।নিরুবালা তুমি ওদের বের করে দাও।এক্ষুনি ওদের বের করে দাও।

শফিক সাহেব মনেহয় দাড়ি কামাচ্ছিলেন তার মুখে সেভিং ক্রমি। সে এসে বেশ নরম স্বরে বলল,
- আহ! রমলা শান্ত হও, কি হচ্ছে কি?

-তুমি ওদের যেতে বলো তারপর তোমার সাথে কথা। ওদের যেতে বলো? না হলে তোমাকেও আমি এ বাড়ি থেকে বের করে দেবো।
ইশ!শখ কত, ফকিরের বাচ্চাগুলো আমার সাজানো সংসার তছনছ করতে এসেছে।
শফিক নিজে বেশ বিব্রত হয়ে পড়লো,আসলে আর কিছু না হোক বাচ্চাদুটো তার রক্ত।শফিক আসন্ন গৃহযুদ্ধ থামাবার জন্য বলল,
-আমি কথা দিচ্ছি ওরা থাকবেনা, চলে যাবে।তুমি শান্ত হও।
-যে লোকটি ওদের পাঠিয়েছে ওকে বলো এসে যেন এক্ষুনি নিয়ে যায়। তুমি ওকে ফোন দাও। তোমার মোবাইলে ও ফোন করেছিলো আমি ধরেছি। আমি তোমার এই ছাই গুষ্টি একেবারেই টানতে পারবোনা। এই আমি বলে দিচ্ছি।

[৬]
জামাল সাহেবের মনটা আজ খুব খারাপ । আজ কদিন ধরেই খারাপ। ওই যেদিন থেকে শফিকের সন্ধান পাওয়া গেছে সেদিন থেকে। হিসাবে খুশি হওয়ার কথা কিন্তু তিনি বা সায়েরা কেউ খুশি হতে পারছেন না।

আসন্ন বিচ্ছেদ ব্যাথায় তার বুকের ভিতরটা মুচড়ে উঠছে। বাচ্চা দুটোকে মনের অজান্তে কখন যেন এতোটা ভালোবেসে ফেলেছেন তা তারা নিজেই জানেন না।তাছাড়া ওদের জন্ম তো তাদের বাড়িতেই। বেড়ে ওঠাও তাদের বাড়িতে।কি সুন্দর ঘর আলো করে হৈচৈ করে বেড়ায় সারাটা দিন।

তার খুব খারাপ লাগছে। এই বয়সে এসে এরকম মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে পড়া ঠিক হয়নি সেটা সে মনে মনে উপলব্ধি করতে পারছে । কিন্তু এ বাধন তো স্বয়ং আল্লাহই তাদের সাথে বেধে দিয়েছেন বাচ্চা দুটোর সাথে রক্তের সম্পর্কের মতো।

এতো বয়সে এসে জামাল সাহেব এতোটুকুই বুঝেছেন যে রক্তে সম্পর্ক ছাড়া মানুষের সাথে মানুষের আরো সম্পর্ক হতে পারে।তার বারবার মনে হচ্ছে যদি একটু নিভৃতে চোখের পানি ফেলতে পারতেন তবে মনটা হাল্কা হতো।কষ্টগুলো কমতো।

বাড়ি ফিরে যেতে হবে ওদিকে সায়েরাও বাসাতে একা একা রয়েছে। তারও খুব মন খারাপ কিন্তু কি করা। বাচ্চাদুটো তাদের বাবার কাছেই সব থেকে ভালো থাকবে। বাবা বলে কথা। রক্তের বাঁধন কখনো ছিন্ন হবার নয়।আজ না হয় কাল তো ঠিকই বাবার কাছেই চলে যেতো ওরা। একটু না হয় আগেভাগেই গেলো। তারা দুজন তো সাময়িক নিমিত্তি মাত্র।

মোড়ের মাথার চায়ের দোকানে জামাল সাহেব বসে আছেন ফিরে যেতে পারছেন না।বাচ্চা দুটো ঠিক ঠাক তাদের বাবার হাতে পৌছল কিনা তিনি তা বুঝতে পারছেন না।একটা ফোন করে জেনে নেওয়া যেতে পারে। তিনি আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবেন বলে ঠিক করলেন
কিছুক্ষণ আগে শফিকের কাছে তিনি ফোন দিয়ে দিয়েছেন বাচ্চা দুটো বিল্ডিং এ প্রবেশ করার সাথে সাথে। কে একজন মহিলা মনে হয় শফিকের নতুন স্ত্রী হবে ফোন ধরেছিলো সব শুনে ফোন না কেটেই চিল্লাপাল্লা শুরু করে দিলো। বাচ্চা দুটোর কপালে কি আছে কে জানে। শফিক যদি না রাখে এই আশাতে তিনি আরো কিছুক্ষণ বাচ্চাদুটোর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।অবশেষে ফোন বেজে উঠলো।

[৭]
এরপর অনেকদিন কেটে গেলো। অলক আর পলক বেড়ে উঠতে লাগলো সায়েরাখাতুন আর জামাল সাহেবের কাছে নিজের সন্তানের মতো করে। উনারা ওদের কোন চাওয়া পাওয়াতে কোন কমতি রাখলেন না। বাবা মায়ের কোন অভাব বুঝতে দিলেন না।

বাচ্চাদুটোও ওদের বয়সের চাইতে অনেক বেশি পরিপক্ক।ছোটবেলা থেকে মানব জীবনের জটিল অনেক কিছুই তাদের সামনে বড্ড বেশি খোলামেলা ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।সেই কারণেই হয়তো নিজেরা নিজেদের ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছে খুব তাড়াতাড়ি।

তারা এই দুজন নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ আর বৃদ্ধার জীবনটাকে আলোকিত করে দিয়েছে। বিনিময়ে পেয়েছে সুশাসন, অকৃত্রিম ভালোবাসা, আদর ও স্নেহ।

সময়ের পরিক্রমায় অলক এইচ এস সিতে জিপিএ ফাইভ পেয়ে পাশ করলো বিজ্ঞান বিভাগ থেকে। পলক এস এস সিতে অত ভালো রেজাল্ট না করলেও এ পেয়ে পাশ করে এখন কলেজে পড়ছে। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন দুই ভাইয়ের কাছে ডাক এলো বাসায় আসার জন্য।

তারা দুইভাই তখন মার্কেটে ছিলো কিছু কেনা কাটা করার জন্য। হঠাৎ জরুরী তলবে তারা উর্ধ্বশ্বাসে বাড়ি ফিরে এলো, অন্য কোন অমঙ্গল আশঙ্কায়। কিন্তু বাসার ড্রইংরুমে অচেনা এক লোককে বসে থাকতে দেখে তারা লোকটির দিকে সন্দেহ চোখে তাকালো।
হ্যাঁ এই লোকটিকে তারা চেনে খুব ভালো করে চেনে। এই লোকের বাসাতেই তাদের শিশু জগৎটা সর্বপ্রথম দুলে উঠেছিলো মারাত্নকভাবে। সে কথা তারা এ জীবনে ভুলবে কি করে। উফ! সে কি অপমান।

এই লোকটি নতুন করে আবার কি মতলবে এসেছে কে জানে।এই পাষণ্ড দায়িত্বজ্ঞানহীন লোকটির নতুন কোন মতলব সফল হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই। দুই ভাইয়ের চোখাচোখি হলো এবং চোখে চোখে ঠিক করে নিলো তাদের কি করতে হবে।

তারা ভিতরে এসে দেখলো দিদিমণি আর দাদাভাই বসে আছে ভিতরের বারান্দায় নিশ্চুপ হয়ে। যেন কোন কাঠের মুর্তি ।অলক পলক তাদের সামনে গিয়ে দাড়ালো, অলক বলল,
-এখানে কি করছো?
মন যে কতোটা ভার তা ফুটে উঠলো সায়েরা খাতুনের মুখের ভাষাতে, তিনি অস্পষ্ট স্বরে বললেন
-তোদের বাবা তোদের নিতে এসেছে,গুছিয়ে নে তাড়াতাড়ি।

অলক আবার বলল ,
-আমাদের তাড়িয়ে দিচ্ছো?
-না সোনা তোদের আমি কি করে তাড়িয়ে দেবো। তোরা আমাদের রক্তের কেউ না তবু তোরা দুই ভাই আমাদের সবচেয়ে আপন। একদিন না একদিন আমাদের ছেড়ে তো যেতে হতোই তোদের। তোরা এখন বড় হয়ে গেছিস। ভালোই হলো তোদের বাবা তোদের ঠিক সময়ে নিতে এসেছেন। তোরা গুছিয়ে নে।

আলক আর পলক বেশ দৃঢ়তার সাথে বলল,
-তোমরা আমাদের তাড়িয়ে দিলেও আমরা কোথাও যাচ্ছি না এটা জেনে রাখো। আর ড্রইংরুমে বসা ওই লোকটিকে বলে দাও চলে যেতে। আর স্পষ্ট করে জানিয়ে দাও রক্তের সম্পর্কে দাবি নিয়ে আর যেন কোনদিন আমাদের সামনে সে যেন এসে না দাড়ায়।

শফিকের কানে প্রতিটা কথাই পৌছে গেলো অচিরেই কারণ অলক পলক বেশ জোরে এবং উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বলছিলো।সাধারণত তারা এভাবে কথা বলে না। আজ তাদের মেজাজাটা বিগড়ে গেছে। রক্তের সম্পর্কের দোহাই দিয়ে মানুষ অনেক অন্যায় সুযোগ নেয়। নিজের স্বার্থে মানুষ খুব দ্রুত অতীত ভুলে যায়। কিন্তু অলক পলক তাদের অতীত ভুলে যেতে রাজী নয়।

হঠাৎকরে আকাশ জুড়ে মেঘ করলো। বৃষ্টি হবে বলে মনে হচ্ছে।অন্য কোন দিকে বৃষ্টি হয়েছে বলে মনেহয়। বেশ ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে।হাঁটতে হাঁটতে শফিক রাস্তার একপাশে গিয়ে হাওয়া আড়াল করে একটা সিগারেট ধরালো।এখন তাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। তবু মনের মধ্যে একটু ভালো লাগা কাজ করছে তার। যাক তার ছেলেদুটো ভালো আছে।সুখে আছে।
শেষ।
ছবিঃ গুগল থেকে
প্রথম পর্বের লিঙ্ক মন্তব্যে ঘরে দেওয়া আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:৪০
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×