সামহ্যোয়ার ইন ব্লগে আমার দুই বছর পূর্ণ হলো ,সবসময় পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করবার জন্য,সহযোগীতা করার জন্য ব্লগ কর্তৃপক্ষ সহ সব ব্লগার ভাই বোনদের প্রতি রইলো আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা
মধ্য এপ্রিলের কোন একদিন ।
আকাশ মেঘহীন। তখনও পূর্ব আকাশে সূর্য,মৃদু মন্দ হাওয়া বয়ে যাচ্ছে নিস্তব্ধ চরাচর জুড়ে ।
আল পথ বাদ দিয়ে রোজিনা সোজা ছুটছে মাঝ বরাবর ....
আজ বাবা বকবে ঠিক, কতটা বেলা হয়েছে। খাবার পৌছেনি তার মাঠে।
খেলার ছলে বেলা গড়িয়েছে বেশ খানিকটা।
ছেড়া লুঙ্গিতে বাঁধা টিনের থালায় পান্তা ভাত, লবন,পেয়াজ,কাঁচা ঝাল আর চুলায় শুকানো বেগুনের তরকারি।
খুব সাবধানে হাতখানি তার কিছুটা উঁচুতে তোলা।
হঠাৎ অচেনা বিভৎস আওয়াজ। ভারী বুটের দামামা ,তারপর যান্ত্রিক কর্কশ শব্দ
ঠা ঠা ঠা... কাছাকাছি কোথাও প্রচন্ড কোলাহল। আর্তচিৎকার...
রোজিনার নিষ্পাপ চোখে ভয়ার্ত চাহনি,
বসির মিয়া অদুরে লাঙল চালাচ্ছিলেন তিনিও বিভ্রান্ত কিছুটা আতঙ্কিত।
-বাপজান!
রোজিনা না,রোজিনাই তো, বসির মিয়া কান খাড়া করেন।
গরু দুটিও অনভ্যস্ত আওয়াজে অশান্ত। বসির মিয়া হঠাৎ দিশেহারা কোন দিক সামলাবেন?
গরু দুটি না মেয়েকে?
আবার বিকট আওয়াজ এবার আকাশ পথে, অজানা অচেনা আতঙ্ক!
যুদ্ধ বিমান।
পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণ!
আবারও রোজিনার চিৎকার।
-বাপজান।
-এইতো মা আসি।
-আমার ভয় করে বাপজান,তুমি তাড়াতাড়ি আমার কাছে আসো... কথা অসমাপ্ত থেকে যায়।
প্রচন্ড আওয়াজ, ধোয়া...
তারপর.....
ছিন্নভিন্ন দেহ।
সেলের আঘাতে মুহূর্তে লাশ হলো রোজিনা। পান্তা ভাত,ফুলের ছবি ওয়ালা টিনের থালা ছিন্ন ভিন্ন।
বসির মিয়া হতভম্ব,
এ কি করে সম্ভব?
তার কলিজার টুকরো মুহূর্তে শত ছিন্ন হলো কিভাবে?
ততক্ষণে গরু দুটি জোয়াল কাঁধে নিয়েই ছুট লাগিয়েছে উর্ধ্বশ্বাসে , ছুট লাগিয়েছে মানুষ দিকবিদিক।.... বসির মিয়া বসে আছে লাশের পাশে। নির্বাক।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৩৯