somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থ্রিলারঃ গোরস্থানে গন্ডগোল

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





(১)
সারাদিনের বেশির ভাগ সময়টুকুই আজ এখানে ওখানে চায়ের দোকানে ঢুঁ মেরে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে আর সিগারেট টানতে টানতে কেটে গেল।কাজের কাজ তেমন কিছুই হলো না। পথে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য লোকজন নেই আজ, নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হয়নি কেউ । নিরবিচ্ছিন্ন বর্ষণ মুখর দিনে এটাই স্বাভাবিক।আজ সম্ভবত পহেলা আষাঢ়।নিতান্ত লোক চলাচল যা আছে সবই খুচরা পার্টি , এমন কুফা মার্কা দিন অনেকদিন আসেনি।অথচ আজই সবচেয়ে বেশি টাকার প্রয়োজন ছিল আমার।
এদিকে গাড়ির জমা পুরোটা জোগাড় করা হয়নি এখনও অথচ রাত গভীর হতে চলল। তার উপর মাসের প্রথম সাতদিন পার হয়ে গেছে গত পরশু এখনও বাসা ভাড়া দেওয়া হয়নি। বাড়িওয়ালী লোক সুবিধার না।এমনিতে বউয়ের সাথে প্রায় সময় দাঁত খিটিমিটি লেগে যায় তার।সবসময় যে তার দোষ তাও না আমার বউটা আসলে ভীষণ মুখরা। একটু ঝগড়া প্রিয় বলা চলে।এ কারণে যখন তখন লেগে যায় বাড়িওয়ালীর সাথে। এত করে বলি আরে বাবা এটা পরের বাড়ি একটু মানিয়ে গুছিয়ে থাকো। কে শোনে কার কথা। উনি আছে উনার মর্জি মত অনেক বার ওয়ার্নিং পড়ে গেছে তাই ভাড়া না পাওয়ার এমন যুৎসই অজুহাত পেলে নামিয়ে দিতে দ্বিধা করবে না সুযোগ মত সেটা আমি ভালো করে জানি।কি দিয়ে যে কি করবো ভাবতে ভাবতে উপশহর থেকে সোজা একটানে স্টেশন রোড়ে ট্যাক্সিটা চালিয়ে নিয়ে এলাম।একে তো বাদলা বরষার দিন তার উপর রাত হয়ে যাওয়াতে রাস্তা একদম ফাঁকা। বাসায় যেহেতু ফিরতে হবে সর্ট কার্ট পথ ধরা ভালো ছিল কিন্তু উপশহর থেকে খাজুরার এই পথে ছিনতাইকারীদের কার্যকলাপ ভীষণ রকম বেড়ে গেছে যখন তখন ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার ভয় আছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত লোকজনের খবর পাওয়া যায়।কলেজ মোড়টা চোর ছ্যচড়া আর নেশাখোরদের জমজমাট আখড়াই বলা যায়। ট্যাক্সিটা বেশ চলছিল ফাঁকা রাস্তার পথ ধরে। ইঞ্জিনে আপাতত কোন সমস্যা নেই মোটামুটি ফ্রেশ।কদিন আগে মালিককে ধরে অনেক কষ্টে ম্যানেজ করে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ করিয়ে নেওয়া হয়েছে গ্যারেজ থেকে।এজন্য অবশ্য ভাড়ার জমার টাকা বাড়াতে হয়েছে। সব শালা মালিক পক্ষ রক্তচোষা।সুযোগ পেলেই এক হাত নেয়। খাই খাই অভ্যাস।
এ সময় বেখেয়ালে আচমকা ট্যাক্সির সামনের চাকা একটা গর্তে পড়ল।ভীষণ বিরক্তিকর অবস্থা। সবকিছুর জন্য এই সৃষ্টি ছাড়া বৃষ্টি দায়ী বলে মনে হল আমার। সারাদিনই আজ ঝুম বৃষ্টি।কোন মানে হয়? কোন কোন রোডে তো হাঁটু সমান পানি জমে গেছে। পলিথিন প্লাস্টিকের যথেচ্ছাচার ব্যবহার এই জলাবদ্ধতার জন্য বিশেষত দায়ী।
এখন অবশ্য বৃষ্টির দাপটটা আর নেই, সন্ধ্যার পর থেকে রেহাই মিলেছে কিছুটা তবে যখন তখন আবার ঝরবে না কে বলতে পারে? আকাশ ভর্তি ঘন কালো মেঘের ছড়াছড়ির কমতি নেই কোন । সাথে আবার দমকা বাতাস।বেশ শীত শীত লাগছে।
কাছাকাছিই ট্রেন স্টেশনটা একবার ঢুঁ মারলে কেমন হয় ভাবতে ভাবতে স্টেশনে গেটে চলে এলাম।দেখা যাক শেষ একটা ট্রিপ মারা যায় কিনা।যদিও সম্ভাবনা একেবারেই কম। শেষ ট্রেন চলে গেছে হয়তো, ছেড়ে যাবারই কথা।মোবাইলে সময় দেখলাম রাত একটা বাজে।দেরী হয়ে গেছে।একটু অপেক্ষা করে ফেরত যাবো কি না ভাবছি ঠিক তখনই দুরে ট্রেনে হুইসেল বেজে উঠলো। তার মানে ট্রেন আসছে। আমার ধারণা ছিল শেষ ট্রেন ছেড়ে গেছে, এদিকটায় ফড়কা যাত্রীর খোঁজেই আসা।বাবু বিবিরা রিসোটে যান রাত নিশি হলে।গোপন যাত্রায় পয়সা বেশি পাওয়া যায়। যাক বাবু বিবির দেখা না পাওয়া গেলেও ট্রেনের দেখা পাওয়া গেল। কপাল যদি ভালো হয় এত রাত্রিতে যাত্রী মিললেও মিলতে পারে। কিছু ক্ষণের মধ্যে সশব্দে ট্রেন এসে পৌছালো স্টেশনে ।হতাশ ই হলাম যাত্রী তেমন নেই তবে বৃষ্টি বিঘ্নিত এত রাতে এটাই স্বাভাবিক।একেবারে শেষ মুহুর্তে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে হাত ধরাধরি করে নামলো ট্রেন থেকে।তারা নামার সাথে সাথে দুলে উঠলো ট্রেন। ঘুমিয়ে ছিল নাকি! কে জানে? সম্ভবত নব দম্পতি।ভাব দেখে তাই মনে হচ্ছে। সাথে আবার ভারি লাগেজও আছে।ট্রেন থেকে নেমেই তারা দ্রুত এদিক ওদিক চাইলো।কাউকে খুঁজছে কি? চোখে মুখে উদ্বেগ উৎকন্ঠা সাথে তাড়াও আছে বোঝাই যাচ্ছে। কিছুক্ষণ চেষ্টা করে এদিক ওদিক ছুটে কোন যানবাহন না পেয়ে মেয়েটি ব্যকুল হয়ে বললো
- রাত তো অনেক এখন কি হবে? কোথাও তো কিছু দেখছি না।ছন্নছাড়া বৃষ্টির কিছু না বলে! এত জ্বালা আর ভালো লাগে না।
-অস্থির হচ্ছো কেন এত ,আমি তো আছি নাকি?
-ফোনেও তো চার্জ নেই যে বাড়িতে একটা খবর দিবো।এতবার করে বললাম গেম খেলো না গেম খেলো না। কে শোনে কার কথা।এখন বোঝো ঠেলা।এত রাতে কোন যানবাহন পাওয়া মানে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। এমন হবে আমি আগেই জানতাম।আগেই জানতাম।
-আমি কি জানি নাকি এত রাত হয়ে যাবে পৌঁছাতে ?ট্রেন লেট হলে আমার দোষটা কোথায় বুঝতে পারছি না তো। শুধু শুধু দোষ দিচ্ছ।
-মুখ না চালিয়ে একটু নড়াচড়া করো। বাড়ি ফিরতে হবে। বেশ জোরে সোরে কথা চলছে দম্পতিটির। চায়ের দোকানের ছেলেটা হা করে তাদের কথা গিলছে।তার কাজ শেষ । মালিক টাকা গুনছে।টাকা গোনা শেষ হলে সম্ভবত তার ছুটি।
আমি হাল্কা করে হর্ণ বাজালাম দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। কাজ হলো
দুরে হলেও আমার ট্যাক্সির দিকে মেয়েটির চোখ পড়ল ,সে এদিকটায় এক প্রকার উড়ে এসে সঙ্গীকে হাতছানিতে ডাকল।
- এই শোন শোন এই দেখো একটা ট্যাক্সি
-তাই নাকি? হ্যাঁ তাই তে।
-আরে ভালো হলো চল চল চল কি ভাই যাবেন তো নাকি?
আমি তো খুশিতে গদগদ যাহোক অতি রাত্রের ভাড়া সারাদিনের ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নেয়া যাবে হয়তো । তবে দুরের পথ না হলে পোষাবে না।কাছাকাছি হলে খামাখা তেল পোড়াবো না ভাবছি।ফিরে যাবো।বউ ফোন দিয়েছে ইলিশ খেচুড়ি করেছে আজ।
আমি নির্লিপ্ত গলায় বললাম
-কোন দিক যাবেন আপনারা?
-তের খাদা, বীর নারায়ণপুর।
হঠাৎ আমার মুখটা কালো হয়ে গেল । সারা মুখে অজানা ভয়ের আতঙ্ক আমি শ শ ব্যস্ত হয়ে বললাম
-না না যাবো না। ও বড় দুর্গম পথ।অনেক ঝামেলা।
আমরা তো নিয়মিত যাই ভাই
-পথটা ভালো নয়। অনেক সমস্যা আছে
-ভালো নয় মানে? কি সমস্যা?
-পথে যেতে যেতে দুটো কবরখানা আর একটা শ্মশানও পড়ে। সেখানে নানা অশরীরি আত্না রাত হলে বের হয়ে আসে কবর ফুঁড়ে। মানুষের ঘাড় মটকে ধরে, রক্ত খায়। তারপর আক্রান্ত ব্যক্তি রক্ত শূন্য হয়ে মারা যায়। শোনা যায় কোন কোন সময় দিনের বেলাতেও নাকি উনারা বাইরে বের হন।
- আরে এসব তো আমি কখনও শুনিনি।সব গুজব।
- না,দাদা সত্যি বলছি আপনি অন্য কিছু দেখে তাতে না হয় চলে যান।আমি বেঘোরে প্রাণটা হারাতে রাজী নই।
-আমরা তো গাড়িতেই থাকবো। আপনি সোজা চালিয়ে যাবেন।আর আমাদের সাথে পবিত্র কোরআন শরীফ আছে। ইনশাআল্লাহ সমস্যা হবে না। ভালো ভাড়া দেব।
টাকার ও দরকার। কিছুটা সময় ভাবলাম তারপর আমি নিমরাজী হয়ে বললাম
-কিন্তু সে তো অনেকটেই পথ। আজ আর ফিরে আসতে পারবো না তো। রাত থাকতে হবে ওখানে।
মেয়েটি বলল
-না হয় আমাদের ওখানে থাকার একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে দাদা। আমাদের অনেক বড় বাড়ি ।অনেক ঘর খালি পড়ে থাকে এমনি এমনি।
-না থাক ,আমার আবার ভীষণ ভুত প্রেতে ভয়। বাড়িতেও বউটা একেলা। আপনারা যান আমি ফিরে যাই।
-ভাড়া পুষিয়ে দেব দাদা। বিপদে পড়েছি বলেই রিকোয়েষ্ট করছি।
-রাস্তা তো খারাপ ট্যাক্সি ফেঁসে যাবে।
এবার মেয়েটি কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল
-প্লিজ দাদা একটু চলুন না। আমার মা ভীষণ অসুস্থ।এখন তখন অবস্থা। রাত পোহালে তাকে হয়তো এ জীবনে আর দেখতে পাবো না।
-ঠিক আছে এত করে যখন বলছেন।তবে ভাড়া কিন্তু বেশি লাগবে।
- আপনি যা বলবেন তাই হবে। তাই দেওয়া হবে দাদা। আপনি প্লিজ চলুন।আপনি গেলে আমাদের উপকার হয়।
অগত্যা ভালো দামের ভাড়া তার উপর আবার অসহায় মেয়ের সকরুণ মিনতি। যা থাকে কপালে আমি রাজি হয়ে গেলাম।তবে বউ রেগে যাবে তাই যাত্রার আগে আমি প্রয়োজনীয় দুটো ফোন সেরে নিলাম। একটা বাড়িতে স্ত্রীর কাছে অন্যটি ট্যাক্সির মালিককে।
যাহোক তেল চেক করে আমি গাড়ি স্টার্ট করলাম।ট্যাক্সিটা চলতে শুরু করলো পথ এখনও পর্যন্ত ভালোই মসৃণ। সিটি করপোরেশন ছাড়িয়ে কিছুটা রাস্তা পেরিয়ে ফাঁকা মাঠে চলে এলাম দ্রুতই। ভাবছি এদের পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসা যায় কিনা। বেশ জোরে বাতাস বইছে। আমি গাড়ির সাইড গ্লাসটা বেশ খানিকটা টেনে দিলাম। আমার আবার ঠান্ডার ধাত।
আশেপাশে যেহেতু লোকালয় নেই তাই জনমানুষের চিহ্ন নেই কোথাও। সমস্ত চরাচর শুনশান। পথে কিছু শেয়াল রাস্তা পার হতে দেখা গেল।চোখগুলোতে গাড়ির হেড লাইটের আলো পড়ে ভীতিকর দেখাচ্ছে।মেয়েটি চিৎকার দিয়ে উঠলো
-ওফ মাগো কি ভয়ংকর!
আমি বললাম
-ওগুলো শেয়াল,ভয় পাবার কিছু নেই। খাবারের খোঁজে বের হয়েছে।
পিছন থেকে কোন উত্তর নেই। আবার চুপচাপ।
আমি গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দিলাম।এবার একটা লোকালয়ে এলাম বলে মনে হলো তবে কোনখানে লোক জনের চিহ্ন নেই। অবশ্য এত রাতে গ্রামের দিকে লোকজন জেগে থাকার কথা নয়।চারদিকে ঘুটঘুটে আঁধার । আজ সম্ভবত অমাবস্যার রাত। গাড়ির হেডলাইটের আলো ছাড়া আর কোন আলো নেই কোথাও। আমার গাড়ির যাত্রী দুজন গাড়িতে ওঠার পর থেকে কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে।চুপচাপ আর কতটা সময় থাকা যায়। আমি ভাব জমানোর জন্য বললাম।
-দাদা গান শুনবেন?
- না থাক আমাদের মন ভালো নেই আপনি তাড়াতাড়ি চলুন।
-ওহ সরি আমার তো মনেই নেই আপনারা রুগি দেখতে যাচ্ছেন। রুগি আপনাদের কে হন?
-আমার শ্বাশুড়ি মা।
-অনেকদিন অসুস্থ বুঝি?
-হু। কথাগুলো কাটা কাটা।সম্ভবত আলাপে আগ্রহী নয়।
কি বলবো বুঝতে পারছি না ,ওপাশ থেকে একদমই কোন সাড়া শব্দ নেই। আমি লুকিং গ্লাসে দেখতে পাচ্ছি স্বামী স্ত্রী দুজনেই জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।জড়ো সড়ো হবার কি আছে কে জানে? শীত লাগছে নাকি? নাকি ভয়!
-দাদা কি ভয় পাচ্ছেন?
-নাহ! ঠিক আছে আপনি একটু টেনে চলুন।
- একদম ভয় পাবেন না দাদা।ভুতে আমার ভয় আছে ঠিকই তবে মানুষকে আমার কোন ভয় নেই। বলেই আমি বা হাতে পায়ের কাছ থেকে একটা গাছি দা টেনে বের করে আনলাম।গাছি দাখানি দেখিয়ে বললাম
-কোন ফালতু লোক সামনে এলে একেবারে চুরিয়ে দেব না।পার্টি করা লোক আমি। এই সব এলাকার নাড়ী নক্ষত্র সব আমার চেনা। রাত বিরেতেই যত কাজ কাম ছিল।বুঝলেন। সেই সব দিন ছিল বটে। রাত দুপুরে মুরগীর ঝোল দিয়ে ভাত কিম্বা চালের রুটি হাঁসের কষা মাংস খেতে ইচ্ছে হয়েছে। যে কোন গৃহস্থ বাড়ি উঠলেই হল বানিয়ে জামাই আদরে খাওয়াতে বাধ্য। সাহসের কমতি তখনও ছিল না এখনও নেই।শুধু একটু ভুত প্রেতে যা ভয়।
-গল্প বাদ আপনি টেনে চলুন দাদা।
আমি যার পর নাই বিরক্ত হলাম। এমন কাঠখোট্টা যাত্রী এর আগে পাইনি।
এর মধ্যে প্রথম কবরখানার কাছে এসে গাড়ির হেড লাইটটা হঠাৎ করে অফ হয়ে গেল।
-শালা!
-কি হলো দাদা?
-দেখছি।
হেডলাইট বন্ধ হয়ে গেলেও গাড়ি চলছে ঠিকই। কি সমস্যা দেখার জন্য নামতে যাবো কি না ভাবছি। লোকটি আবার বলল,
-কি হয়েছে দাদা? কিছু বলছেন না কেন ?
-বুঝতে পারছি না আপনার কাছে কি টর্চ আছে?
- না?
- মোবাইল?
- আছে কিন্তু চার্জ নেই।
- বৌদির মোবাইল আছে না।
-ও মোবাইল ব্যবহার করে না।
- মুশকিল হলো দেখছি।
- এখন কি হবে?
-নেমে দেখতে হবে মনে হচ্ছে..। তারপর মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে আমি বললাম আমার কাছেই তো মোবাইল আছে। কি ভুলো মন আমার।
-পাশে ওটা কবরখানা না দাদা।
-হ্যাঁ
-এখানে আপনি নামবেন? গাড়ি তো চলছে আপনি সামনে এগিয়ে যান না হয়।
এর মধ্যে আমার একটা ফোন এলো রাগে বিরক্তিতে আমি ফোনটা কেটে দিলাম। এখন কথা বলার সময় নেই।
এতো অন্ধকার চোখে দেখা যায় না।স্লো স্পীডে কোন রকমে গাড়ি চালাচ্ছি। ঘুটঘুটে অন্ধকার। গাড়ির কোন লাইটই কাজ করছে না।
মেয়েটি মনে হয় বেশ ভয় পেয়েছে । একদম সিঁটিয়ে গেছে। কোন সাড়া নেই।
-আর কতটা পথ।
-অর্ধেকটা এসেছি মনে হয়
-দাদা আপনার ফোনে বাসায় এটা ফোন করা যাবে? সবিনয় অনুরোধ
-আমি ফোনটা দেবো কিনা ভাবছি তখনই খেয়াল করলাম দ্বিতীয় কবরখানার সামনে আমরা। এই কবরখানাটির মধ্যখান দিয়ে রাস্তা চলে গেছে ।দুপাশেই কবর আর কবর। চারদিক মারাত্নক শুনশান। বাতাসের আওয়াজটুকুও নেই কোনখানে।হঠাৎ বাতাস থেমে গেল কেন? যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয় বুঝি একেই বলে হঠাৎ গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেল। আমি কয়েকবার চেষ্টা করলাম কিন্তু গাড়ি স্টার্ট নিতে না নিতে বণ্ধ হয়ে যাচ্ছে।আচ্ছা জ্বালাতন।
- কি হয়েছে দাদা?
-বুঝতে পারছি না।
আমি গাড়ির দরজা খুলে বের হতে যাবো তখন মেয়েটি বলল
-আপনি গাড়ির দরজা খুলবেন না। কিসের যেন আওয়াজ আসছে।ওই যে ওই যে ওদিক থেকে
আমি বললাম,
-ভয় পেলে চলবে না আপু মনে একটু সাহস রাখুন আমি ট্যাক্সির দরজা খুলে বেরিয়ে এসে দড়াম করে দরড়া লাগিয়ে দিলাম্ এত জোরে আওয়াজে নব দম্পতি সমস্বরে বলে উঠলো কি হলো আবার?
-ও কিছু না
ঠিক তখনই কবরখানার দুপাশ থেকে উলু ধ্বনির আওয়াজ এলো ।মিনিটখানেক তারপর চুপচাপ। আবার কারা যেন সমস্বরে কেঁদে উঠলো । এটাও মিনিটখানেক তারপর চুপচাপ। এসময় থেমে থাকা বাতাসের বেগ হঠাৎ বেড়ে গেল। আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো ।বজ্রের বিকট আওয়াজ
- উফ মাগো কী ভয়ংকর। এই কবরখানার পিশাচরা মনে জেগে গেছে। আজ অমাবস্যা না?
ছেলেটা আর মেয়েটা সমস্বরে বলে উঠলো
- আজ বুঝি নিস্তার নেই। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ
হঠাৎ করে কয়েকটি প্রদীপ যেন দপ করে জ্বলে উঠলো আমি তখনও ঠাই দাড়িয়ে বাইরে সংগত কারণে আমার কোন ভয় নেই। কিন্তু গাড়ির ভিতরের যাত্রী দুজন তখন ততক্ষণে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
আমার কাজ প্রায় শেষ।
আমি ধীরে সুস্থে সিগারেট ধরালাম। অনেকক্ষণ ধরে নেশার জণ্য মনটা উই চুই করছিলো। এখন একটু শান্তি। অপারেশন সাকসেসফুল। শিস বাজাতে ছুটে এলো সৌম্য আবির আর রাহাত একে একে মেয়েটির শরীর থেকে গহনা খুলে নিতে লাগলো। দ্রুত হাতে সুটকেসের চাবি হাতড়ে সুটকেস খুলে মূল্যবান জিনিস পত্র বাগিয়ে নিতে ভুল করলো না।মানিব্যাগ ঘড়ি মোবাইল সব হাতিয়ে নিয়ে আমরা সবাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ট্যাক্সিতে উঠে এলাকা ছাড়ার আয়োজন করলাম।ক্রাইম স্পটে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক না। অজ্ঞান দেহ দুটো একটা ঝোপের নিচে ফেলে দিলাম তার আগে। সবাই বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। আজকের বিজনেসটা বেশ ভালোই হয়েছে।
সৌম্য মনে হয় গাঁজা টানছে। আমি আবিরকে বললাম
- স্টিয়ারিং ধর দুটান মেরে নেই । মাথাটা ভার হয়ে আছে সন্ধ্যা থেকে। মেয়েটা কিন্তু দারুণ দেখতে ছিল কি বলিস?
আবির বলল বাদ দে ওই লোভ করা যাবে না চিহ্ন থেকে যাবে।টাকা দিলে ামন মেয়েছেলে অনেক পাওয়া যাবে। তাড়াতাড়ি কেটে পড়ি চল।
একটু থেমে দুটান দিতে না দিতেই দেখি চারদিকে আলেয় আলোয় ভরে উঠলো। এক আলো!!!
সেই সাথে গাড়ি বহর আর মটর সাইকেলের আওয়াজ।
একি! নেশাটা দু্ইটানেই লেগে গেল নাকি! এত আলো,গাড়ি এই অসময়ে!!!!! কিভাবে সম্ভব?
এমন তো হবার কথা নয়!
ওসি রায়হানকে ফোন দিতে যাবো তার আগে মাইকে ঘোষণা এলো ,ট্যাক্সির আরোহীদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হচ্ছে। কেউ পালানোর চেষ্টা করলে গুলি করা হবে।.......
(২)
শেষ রাতে বাড়ি ফিরেছে জাহাঙ্গীর। কম ধকল যায়নি কাল রাতে। আবিদ আর সুরমার দারুণ অভিনয় নিয়ে বিস্তর আলাপ আলোচনা হাসি ঠাট্টা চলেছে অবিরাম অপারেশন শেষে । আবিদ অবশ্য সদ্য বিবাহিত ওর বউ যদি জানতে পারে সুরমা নামে ওর আরও একখানা বউ আছে বেচারা কপালে কি কি দূর্যোগ দেখা দিতে পারে তাই নিয়ে যত টিকা টিপ্পনীতে আরও দেরি হয়ে গেল বাসায় ফিরতে। সুরমা কিন্তু সত্যি সত্যি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। গোরস্তানের ভুত বলে কথা! তবে একটা কথা না বললেই নয় অপূর্ব নামের ছেলেটি বি এ অনার্স পাশ।সময় নিয়ে এমন ছেলে এই লাইনে কিভাবে কি জানতে হবে জাহাঙ্গীরকে।
এসময় রান্নাঘর থেকে এসে মিলি চায়ের কাপ নামিয়ে রাখতে রাখতে বলল,
-শুনছো
-হু
-ঘুমাবে না একটু
- ঘুমাবো
-মুখতা এবার তোল নাকি তাতেও মানা। সারাদিন তো বাসায় থাকো না হেন কাজ তেন কাজ কত দোহাই যাও বা একটু সকালের টাইমে থাকো তো মোবাইলের স্ক্রীনে মুখ গুজে বসে থাকো। আমি কি এতোটাই অসুন্দর। কই বিয়ের আগে তো এমন ছিলে না। সারাদিন তো দেখতাম চাতক পাখির মতো আমাদের জানালায় চেয়ে থাকতে কখন আমাকে একটু দেখা যায় এই আশায়। তোমার ভাষায় দেবী দর্শন সেই দেবী বুঝি এখন তোমার চোখে ডাকিনি যোগীনি রূপে ধরা দিয়েছে?
এক নিঃশ্বাসে এতগুলো অভিযোগ! আমি মুচকি হেসে বললাম
-সকাল সকাল কি শুরু করলে বলো তো। আজ সারাদিন ছুটি যত খুশি চোখে চোখ রেখে গল্প করা যাবে শুধু কয়েকটা মেসেজ দিয়ে নেই একটু সময় দাও।
-কি যে করো সারারাত ডিউটির নামে কে জানে?
জাগাঙ্গীরকে আরো কিছু বলতে যাবে মিলি তখনই টিভি স্ক্রীনে চোখ গেল তার
গতরাতে দুর্ধষ এক ডাকাতদল ধরা পড়েছে ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে। সেই খবরই দেখাচ্ছে টিভি চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজে
হালকা অভিমানে মিলি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
-কই এতো কান্ড হলো সারারাত ধরে আমাকে তো কিছুই বললে না ।আমি কি এতোই পর হয়ে গেছি মিলির গলা ভারি হয়ে এলো।
অনেক অন্যায় হয়েছে আসলেই মিলিকে সময় দেওয়া হয় না তেমন ভাবে।তবে অফিসিয়ল খবর তাকে কিভাবে শেয়ার করে? আজ কোন কাজ রাখবে না বলে ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর মনে মনে শপথ করলো। বলল
-চল আজ তোমার মায়ের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসি হাঁসের মাংস আর ছিটা রুটি খাবো,বহুদিন খাই না। ফোন দিয়ে দাও এক্ষুনি । মুহুর্তে মিলির মুখ থেকে সব অভিমানের মেঘ সরে গেল।দারুণ উচ্ছসিত হয়ে সে বলে উঠলো
-সত্যি! সত্যি বলছো?
-সত্যি, সত্যি ,তিন সত্যি.... মিলি আবেগে জাহাঙ্গীরকে জড়িয়ে ধরলো।
(৩)
কয়েক মাস ধরে বীর নারায়ণপুর উপজেলার প্রধান সড়কে ডাকাতির পরিমান মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল।প্রায় প্রতিদিন এই ব্যপারে পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ আসতেই থাকে। কিন্তু কি এক রহস্যময় কারণে বরাবরই অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে ।
গোদাগাড়ী কবরখানার কাছেই প্রায় সব ঘটনার কমন স্পট।গত দু মাস আগে এম পি সাহেবর ভাগ্নে জহির আব্বাস এরকম এক ঘটনার শিকার হবার পর উপর মহলে বেশ হৈ চৈ পড়ে যায়।
ঢাকা থেকে টিম আসে কিন্তু ঘুঘু আর ফাঁদে ধরা পড়ে না।সব শুনে জেনে ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীরের মনে হলো ভুত রয়েছে সরিষার মধ্যে। তিনি হেড অফিসের সাথে যোগাযোগ করে কিছু নিজের লোক আনিয়ে নিলেন গোপনে।ছক কষে অপারেশন পরিচালনা করলেন দারুণ বুদ্ধিমত্তার সাথে গত রাতে।
তারই ধারাবাহিকতায় ধরা পড়লো দুর্ধর্ষ ডাকাত অপূর্ব সৌম্য আবির ও রাহাত।পরদিন স্থানীয় পত্রিকায় বড় বড় হেড লাইনে আর জাতীয় দৈনিক গুলোতে প্রথম পাতা খবর বের হলো গোরস্তানের গন্ডগোলের মূল রহস্যের। সবাই বাহবা দিতে লাগলো ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীরের দলকে।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

ছবির লিঙ্ক

আমাকে নিরন্তর অনুপ্রানিত করে যান যিনি ব্লগে এবং ব্লগের বাইরে সেই প্রিয় ব্লগার পদাতিক দাদাকে পোস্টটি উৎসর্গ করলাম। আজ দাদার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন দাদা। ভালো থাকুন সবসময়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:০৫
১৩টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×