somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইসিয়াক
একান্ত ব্যক্তিগত কারণে ব্লগে আর পোস্ট দেওয়া হবে না। আপাতত শুধু ব্লগ পড়বো। বিশেষ করে পুরানো পোস্টগুলো। কোন পোস্টে মন্তব্য করবো না বলে ঠিক করেছি। আমি সামহোয়্যারইন ব্লগে আছি এবং থাকবো। ভালো আছি। ভালো থাকুন সকলে।

গল্পঃ ধুলো খেলা

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৭:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোকসানা শিরিন তার দুই ছেলে রোহান আর সোহানকে নিয়ে গাবতলী বাস টার্মিনালে এসে পৌছেছেন এই মাত্র। চারদিকে চিল্লাচিল্লি লোকজনের হাঁক ডাকে অস্থির অবস্থা। নিরন্তর ছুটে চলা মানুষগুলোকে কিছুটা দেখলেন তিনি বাসের জানালা দিয়ে।
সোহান এদিক ওদিক চোখ বড় বড় করে দেখতে দেখতে বলল,
- মা আমরা কি পৌঁছে গেছি? ঢাকায় পেঁছে গেছি?
- হ্যাঁ, বাবা।
রোহান বলল,
-মা মামা বাড়ি আর কত দুর ? আমরা কখন মামা বাড়ি যাবো?
- কাছেই হবে। ঠিক জানি না বাপ। তোর মামা এসে নিয়ে যাবে বলেছে। তারপর অধিকাংশ যাত্রী নেমে যেতে একে একে বাস থেকে নেমে এলো তারা তিনজন। সাথে অনেক মাল পত্র,কিছু হাতপর কাছে ছিল আর কিছু বক্সে রাখা ছিল ।চালের গুড়ো,কুমড়োর বড়ি, চাল ভেজে তিল বাদাম দিয়ে মোয়া সহ আরও কত কি..।
ভায়ের জন্য একটু একটু করে জমিয়ে জমিয়ে এনেছেন সব। কতদিন ভাইটা তার ওখানে যায় না । এসব জিনিস কি আর এই শহরে কিনতে পাওয়া যায় যে কিনে নেবে ইচ্ছে হলেই? যশোর থেকে ঢাকায় অনেকটা লম্বা পথ ।বরাবরই ভ্রমনের ধকল রোকসানা শিরিনের শরীর সহ্য করতে পারে না। বাসে উঠলেই তার কেন জানি গা গুলায় আর বমি পায়। বমি ঠেকানোর জন্য চকলেট,লেবু পাতা কাগজী লেবু সহ আরও কত আয়োজন সাথে করে এনেছেন। সব সোহানের বাপের কান্ড। পাগল মানুষ একটা। পথে অবশ্য সমস্যা হয় নি তবে শরীরটা ভীষণ ক্লান্ত লাগছে কিন্তু মনটা একেবারে ফুরফুরে আর দারুন তরতাজা ক্লান্তি যা কিছু শরীরে মনে কোন ক্লান্তি নেই রোকসানা শিরিনের । কতদিন পরে ভায়ের সাথে সামনাসামনি দেখা হবে ভাবতেই অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে । মন খুলে কথা হবে হাসি হবে প্রাণ খুলে, হাজার স্মৃতি রোমন্থন হবে ।এছাড়াও বুকের ভিতর কত যে জমানো কথা আছে তার ইয়ত্তা নেই সব বলবে সব জানাবে ভাইকে, তবেই মিলবে শান্তি ।এই ভাইটি ছাড়া রোকসানা শিরিনের সাত কুলে আপনজন বলতে আর কেউ নেই। মা বাব নৌকাডুবিতে মারা যাবার পরে নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি ভাইকে নিজের কাছেই নিয়ে রেখেছিলেন। চোখের আড়াল করেননি একটু সময়ের জন্য ।ভেসে যেতে দেননি বাপ মা হারা এতিম ভাইকে। কিছু সাংসারিক প্রতিবন্ধকতা থাকা স্বত্বেও স্বামীর সংসারে খেয়ে না খেয়ে ভাইকে খাইয়েছেন ঠিক ঠাক পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নিতে সাহায্য করেছেন যদিও অভাব অভিযোগের কমতি ছিল না কখনও ই আর সোহরাব ছিল কর্মঠ টিউশনিতে বেশ আয় ছিল তার । তারপর দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের পর পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে চাকরি চেষ্টা, সেও এক দুর্মর লড়াই। অবশেষে মেধাবী হওয়ার দরুন সেই ভাই আজ রুপালি ব্যংকে সেকেন্ড অফিসার পদে চাকরি করছে নিজ যোগ্যতা বলে তাও দু’বছর হলো। চাকরি পাওয়ার পর তিনি নিজে দেখে ভাইবৌ এনেছেন বছরখানেক আগে । তারপর সব দায়িত্ব ও কর্তব্য শেষ করে তবেই না কর্তব্য শেষ হয়েছে তার। এদিকে ভায়ের অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও নানা ব্যস্ততায় এদিক পানে আর আসা হয়নি মন চাইলেও তবে ভায়ের সংসার দেখার সাধটা পুরোন হবে এবার যা এতদিন মনে মনে পুষে রেখেছিলেন প্রথম থেকেই ।
রোকসানা শিরিন দুর থেকে জেনেছেন ওরা সুখে আছে,ভালো আছে এটুকু জেনে নি সন্তুষ্ট ,এটাই তো তিনি চেয়েছেন সারা জীবন ধরে । মা বাপ মরা একমাত্র ভাইটা ভালো থাকলেই তার শান্তি ।
এদিকে রোকসানা শিরিনের নিজের সন্তান হয়নি বিয়ের অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও। তার স্বামী জামালকে ধন্যবাদ দিতেই হয় তার অসীম ধৈর্যের কারণে।সন্তান হয়নি বলে দ্বিতীয় বিয়ের চাপ কত কথা,কত উপদেশ যে শুনতে হয়েছে তাকে তার শেষ নেই। তবে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তার দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন। বলা চলে ধৈর্যের ফল মিলেছে। জমজ দুটো ছেলে হয়েছে মাশাল্লাহ । ওদের বয়স এই চৌদ্দ পড়বে খুব শিঘ্রী। প্রায় ওরা আবদার করে বলে
-মামা বাড়ি যাবো। মামা বাড়ি যাবো।
ওদের খুব ছোট্টবেলাতে যখন সোহরাব রোকসানা শিরিনের কাছে ছিল তখন ছেলে দুটো মামার খুব ন্যাওটা ছিল। মামা ছাড়া তাদের চলতোই না। এদিকে অনেক দিন মামাকে দেখেনি তারা। এ জন্য কত দুঃখ তাদের মনে।কিন্তু সংসারের নানা ঝক্কি ঝামেলা সামলে সময় বের করা বড্ড মুশকিল যে। সন্তান মানুষ করা চাট্টিখানি কথা নাকি! হাজার ঝুঁট ঝামেলায় আসি আসি করেও আর আসা হয়ে ওঠে না তার।ওদের মামাও অফিস সামলে অন্য দিকে সংসারিক চাপে আর বোনের ওখানে যাওয়ার সময় পান না কোনক্রমেই তবে এবার কি মনে হতে রোকসানা শিরিন দুই ছেলে নিয়ে গোছগাছ করে উঠলেন ভায়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
গাবতলী নেমে কিছু ফল আর মিষ্টি কেনা শেষে হঠাৎ রোকসানা শিরিন খেয়াল করলেন তার ছোট ছেলেটি আশেপাশে কোথাও নেই। নেই তো নেই। এত লোকের ভীড়ে কেথায়,খুঁজবে তাকে? রোকসানা শিরিনের বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে উঠলো। অচেনা অজানা জায়গা। শেষ পর্যন্ত ভীড়ের মাঝে ছেলেকে হারিয়ে ফেললেন নাকি?
এখন কি হবে?
তিনি খানিকটা দিশেহারা হয়ে উত্তেজিত গলায় হাঁক দিলেন
-রোহান? রোহান? কোথায় তুই?
এই সময় সোহান ব্যস্ত হয়ে বলল
- মা, মা ওই যে রোহান। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেন তিনি ছুটে গিয়ে বললেন,
-কোথায়,ছিলি রে, বেয়াদব ছেলে। বারবার নিষেধ করেছি একা একা কোথাও যাবে না। এটা কি তোমার গ্রাম নাকি? মারবো এক থাপ্পড়?
- মা প্রসাব লেগেছিল। তাই......
যাহোক মাল পত্র সামলে এবার তিনি ভাইকে একটা ফোন দিলেন । আগেই কথা হয়ে ছিল সব । গাবতলী নেমে সোহরাবকে ফোন দিতে হবে । সে নিজে এসে বোন আর ভাগ্নেদের বাসায় নিয়ে যাবে। সোহরাব এলে বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।
সোহরাবের চার কামড়ার ফ্ল্যাট । বেশ বড় বাড়ি তারা দুটিতে বেশ সাজিয়েছে সংসার। রোকসানা শিরিন অতি উৎসাহে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো সব কিছু।তার চোখে বিষ্ময়। সোহরাব বলল,
-আপা তোমরা হাত মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নাও। চাইলে গোসল সেরে নিতে পারো তোমরা।
এবার রোহান সোহান নানা প্রশ্ন করে ব্যতিব্যস্ত করে তুলল মামাকে। মামাও ভাগ্নেদের পেয়ে খুশি।খুনসুটি জমে উঠলো অচিরেই।
সোহরাবের স্ত্রী এশা খুব সংসারী বোঝা ই যাচ্ছে, তবে মনে হয় কথা বলে কম। কই আগে তো এমন মনে হয়নি! কে জানে ? আর সব মানুষ কি একরকম হয় নাকি?নিজের মনে রোকসানা শিরিন প্রশ্ন আর উত্তর সাজিয়ে নিলেন। কম কথা বলা মানুষ ই বরং ভালো। নিজেই সগতোক্তি করলেন আর ইচ্ছে মত ঘুরে ঘুরে ভায়ের সংসার দেখতে লাগলেন । যে দিকে তাকাচ্ছেন চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে তার। দারুণ সাজিয়েছে সব। চারপাশটা ছবির মত সাজানো। ঝকঝকে তকতকে। এদিকে রোহান সোহান দারুণ দুষ্টু। এটা ধরে ওটা ছোঁয়। সব কিছুতে তাদের দারুণ বিষ্ময়। রোকসানা শিরিন তাদের সামলাতে সামলাতে হিমসিম অবস্থা ।
-এই এটা ধরিস না ও সোহান এদিকে আয়। বারান্দা থেকে পড়ে যাবি.....কি করিস কি?
রাতে হরেক পদের খাবারের শেষে রোহান সোহান ঘুমিয়ে পড়লো।যদিও জেগে থাকবে বলেছিল কিন্তু ক্লান্তির কাছে আত্নসমর্পণ করতে বাধ্য হলো একসময়। ওদের ঘুমানোর সুযোগে দুই ভাই বোন মন খুলে গল্প করলো । বলা চলে প্রায় সারা রাত। এশা অবশ্য ওদের সঙ্গ দিল না। তার এসব গল্পে কোন আগ্রহ নেই। আর সে রাত জাগতে একদম অভ্যস্তও নয়। যা কিছু কথা হবে আগামীকাল।এই বলে সে নিজের ঘরে ঘুমুতে গেল।
রোকসানা শিরিন এক গাল হেসে বললেন
-ভাই তুই ভালো আছিস সুখে আছিস দেখে মনটা আমার আনন্দে ভরে গেছে রে। মন ভরে দোয়া করি ভাই সব সময় ভালো থাকিস সুখে থাকিস এমন।
- বুবু সব তোর ই দয়ায়।তুই পাশে না থাকলে আর উপরে আল্লাহ সহায় না হলে এমনটা কোনদিন সম্ভব হতো না। তোর এ ঋণ আমি কোন দিন শোধ করতে পারবো না। গল্প চলতে লাগলো কত যে গল্প..
দুই ভাই বোন অনেক পরিকল্পনা করলো। সপ্তাহ জুড়ে কোথায় কোথায় বেড়াতে বের হবে। কি করবে? কি কি খাবে, কি কি কেনা হবে। ইত্যাদি।
প্রথম দিনই সকাল সকাল নাস্তা করে তারা বের হলো ঢাকা চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্য। এর আগে রোহান সোহান কখনও চিড়িয়াখানা দেখেনি।এশা অবশ্য তাদের সাথে গেল না ,তার বাড়িতে কাজ আছে। চিড়িয়াখানায় নানা রকমের জীবজন্তু দেখা ঘোরা ফেরা করতে করতে
দিনটা কখন যে কিভাবে কেটে গেল টের পাওয়া গেল না।দুপুরে তারা বড় একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিল।এত রকম খাবার মানুষ খায় !হায় আল্লাহ ! এখানে না এলে তো তার জানাই ছিল না। কত রকমের যে সুন্দর সুন্দর মানুষ। কি সুন্দর যে তাদের সাজ বাহার। রোকসানা শিরিন বড় বড় চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকেন।
বিকালে সোহরাব বোন ও দুই ভাগনেকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে কি একটা কাজে বাইরে গেল। রাতে ফিরবে সে। বলে গেল, ফিরতে একটু দেরি হতে পারে।রোকসানা শিরিন বাড়িতে ঢুকে দেখেন চারদিক নিস্তব্ধ । এশা মনে হয় এসময় ঘুমাচ্ছে রোকসানা শিরিন তাকে বিরক্ত না করে বাসায় পৌঁছে কাপড় চোপড় বদলে নিলেন।ছেলেদের বললেন তারা যেন এসময় হৈ হল্লা না করে। ছেলেরা ততক্ষণ নতুন কেনা নানা খেলনা নিয়ে খেলতে লেগে গেছে। এদিকে কিছু পরে ওয়াশ রুমে ঢোকার মুখে রুকসানা শিরিন শুনতে পেলেন এশা যেন কার সাথে মোবাইলে কথা বলছে। দরজায় হাতলে হাত দিতে দিতে একটা কথা তার কানে খট করে বাজলো
- আরে বলিস না উটকো ঝামেলায় আছি রে। মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।
- কি হলো আবার? কি ঝামেলা?
- গ্রাম থেকে সোহরাবের গাইয়া খ্যাত বোনটা এসেছে। সাথে দুই বিচ্ছু ছেলে।কদিন থাকবে কে জানে। আমার বাসা পুরাই এলোমেলে।কি যে বিশ্রি অবস্থা কি বলবো?কোন ম্যানার জানে না কিছু না। এখন সব কাজ ফেলে দিন রাত তাদের সেবা যত্ন করতে হবে আমাকে।। ঋণ শোধ করতে হবে ঋণ।না হলে সাহেবের আবার রাগ হয়ে যাবে। ভালো লাগে না এসব উটকো ঝামেলা। যত্তোসব।
- বেশি কিছু করতে যাবি না।যা করবি উপর উপর। না হলে একবার প্রশ্রয় পেলে দেখবি বার বার আসছে। আর এটা ওটা অযুহাতে ইনিয়ে বিনিয়ে সাহায্য চাইছে। দেখা আছে এই সব গাইয়া ভুতদের। একেকটা লোভী আর স্বার্থপর।
নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ জীবন পার করে এসেছেন রোকসানা শিরিন হা করলে বুঝতে পারেন হাওলি না বেড়েলি বলবে সামনের মানুষটি। এক নিমেষে তিনি যা বোঝার বুঝে নিলেন। যা হল ভালোই হলো বড় কোন অঘটন ঘটার আগেই সরে পড়া ভালো তিনি নিজে চান না তার কারণে ভায়ের সংসারে ঝড় উঠুক। তছনছ হয়ে যাক।গ্রামীণ জনপদে থাকার কারণে কথার খোঁচা তাকে লক্ষ হাজারবার শুনতে হয়েছে এমন কিছুতে অভ্যস্থ ই বলা চলে কিন্তু ভাই বৌ এর এই কথোপকথন আর ঠান্ডা ব্যবহার তার বুকে যেন হাতুড়ির আঘাতের মত পড়েছে।কোথেকে একরাশ অভিমান ভরা দলা কান্না এসে তার সমস্ত স্বত্ত্বাকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। এমন দিন দেখতে হবে এটা তার কল্পনাতে কখনোই ছিল না।
রোকসানা শিরিন তড়িঘড়ি করে নিজের ঘরে এলেন। দুই ছেলেকে গুছিয়ে নিতে বললেন ঝটপট।
স্বাভাবিকভাবে ছেলেরা অবাক
- আমরা কি এখনই চলে যাবো মা?
- হ্যাঁ
- কেন?
মোক্ষম অস্ত্র হাতেই ছিল
- স্কুল খুলেছে সে খেয়াল আছে? স্কুল থেকে ফোন দিয়েছে আবার। ক্লাস না করলে হবে না।
- ক’দিন থাকি না মা।
- স্কুল খুলে গেছে ।স্কুল থেকে ফোন দিয়েছে কাল সকালে ক্লাস। বোঝা গেছে? দশটার আগে পৌঁছাতে হবে। যেতে হবে। স্কুলটা আগে। পরে আবার আসা যাবে।
রোহান সোহান স্কুল খুব ভালোবাসে। তার উপর দেড় বছর স্কুল যায়নি মন তো ছুটবেই। তাই কিছুটা মন খারাপ হলেও তারা আর কথা না বাড়িয়ে নিজেরা গুছিয়ে নিল। সাথে নতুন কেনা খেলনা গুলোও নিতে ভুল করলো না। রোকসানা শিরিন কি ভেবে মানা করলেন না। খেলনাগুলো ফেলে গেলে ভাই মনে কষ্ট পাবে। তাছাড়া খেলনা রেখে গেলে চলে যাওয়ার কারন স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তার কষ্টের কথা তার ভাই কিছুটা বুঝে ফেলতে পারে। তিনি চান না তার ভাই তার চলে যাওয়ার কারন জেনে নিজ সংসারে অশান্তি ডেকে আনুক। ওরা ভালো থাকলেই তার ভালো ,তিনি তো দু‘দিনের অতিথি মাত্র । তিনি তো অন্য কিছু চাননি কখনও । না প্রতিদান। না ঋণশোধ। আর যেহেতু সত্যি সত্যি সকালে স্কুল থেকে ফোন দিয়েছে সেহেতু অন্য কিছু ভাববার কোন অবকাশ খুব একটা নেই ও ভাই বা ভায়ের বৌয়ের।
ভাইকে ফোন দিয়ে রোকসানা শিরিন বেশ গুছিয়ে বুঝিয়ে বললেন কত গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণি পাঠদানে উপস্থিত থাকা।সেই সঙ্গে অনেক কষ্টে নিজের আবেগকে তিনি সংযত রাখলেন। যেন ঘুনাক্ষরে ভাই টের না পায় তার চলে যাবার কারণ।
সোহরাব অবশ্য জরুরি কাজে আটকে গেছে সে জানালো সে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িতে আসছে।তারপর কথা হবে তবুও রোকসানা শিরিন দু'ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
এশা একটু অবাক হলেও মনে মনে খুশিই হলো,মুখ দেখলে বোঝাই যায়। না করলে নয় তাই সে দু একবার থেকে যেতে অনুরোধ করল।রোকসানা শিরিন সেই অনুরোধ বিনয়ের সাথে প্রত্যাখান করে একটা দীর্ঘশ্বাস চাপলেন অনেক কষ্টে । আন্তরিকতাহীন অনুরোধের কোন আবেদন কি থাকে? সব বোঝা যায়। আর একবারও কি বলতে পারতো না, থেকে যান । ভাই যেমন বারবার জানতে চেয়েছে অন্য কোন কারণ আছে কিনা? কি হয়েছে? কেন চলে যাবে। একদিন ক্লাস না করলে এমন কোন ক্ষতি হয়ে যাবে না। ইত্যাদি।
দ্রুত গতিতে সোহাগ পরিবহন ছুটছে যশোরের দিকে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে রোকসানা শিরিন। মনটা ভীষণ বিক্ষিপ্ত। তিনি দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে আছেন।তার চোখে বাঁধ ভাঙা জল। সামলাতে পারছেন না কিছুতেই।
ছোট্ট সোহান কি ভেবে বলল,
- মা তুমি কাঁদছো কেন?
- না রে বাবা কাঁদছি না। আমর চোখে বাতাস লেগেছে। তাই চোখ জ্বালা করছে।
- জানালা দিয়ে দাও। তাহলে বাতাস লাগবে না।
- না থাক বড্ড গরম লাগছে। একটু বাতাস খাই।
বাতাস খাওয়ার ছলে চোখ ভেঙে জল আসছে ..।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। বুকের ভিতর কষ্টের চাপ। এক নিমেষে ভাইটা তার যোজন যোজন দুরে চলে গেছে যেন।
রোহান তার মায়ের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল
- মা তুমি কেঁদো না। তুমি কাঁদলে আমাদের ও কান্না পায়। স্কুলটা খোলার আর সময় পেল না তাই না মা?
কি যে হলো ডুকরে কেঁদে উঠলেন রোকসানা শিরিন। ছেলে দুটোকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
তোরা মানুষের মত মানুষ হলে পড়াশোনা শিখে বড় হলে আমার সব দুঃখ কষ্ট দুর হয়ে যাবে সোনা। বাসায় গিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো শুধু, তাহলেই হবে। তোদের কাছে এটুকুই আমার চাওয়া। ।
রোহান সোহান তাদের মায়ের বুকে মুখ লুকালো।তাদেরও কান্না পাচ্ছে। বাসটি তীব্র গতিতে ছুটে চলছে তার গন্তব্যে।এদিকে তিনটি মানুষ তখন যে যার মনের ভিতর কান্না লুকাতে ব্যস্ত।...
সমাপ্ত
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:০৬
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×