somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ঘটনা দূর্ঘটনা

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :








অবশেষে চকোরী  আর আসিফ দুজনেই  সিদ্ধান্ত নিল  এবার তারা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেরে নিবে কোনক্রমে আর দেরি করা ঠিক হবে না।
কারণ চকোরীর সৎ মা তার ভাইয়ের দোজবর  ছেলে সমশের মবিনের সাথে চকোরীর বিয়ে ঠিক করেছে।লোকটি স্বভাবে যেমন লোভী তেমনই দুঃশ্চরিত্র। এরকম লোকের সংগে আর যাই হোক সংসার করা চলে না।
বাপ মা হারা চকোরী  ভালো করেই জানে পরের আশ্রয়ে থাকার কি জ্বালা বিনা কারণে তাকে পেলে পুষে রাখে নি তার সৎ মা। লোভ চকোরীর নিজের গর্ভধারিণী মায়ের রেখে যাওয়া এই বাড়িটি।লোভের কারণে মানুষ অনেক অনাসৃষ্টি করে অতএব যে কোন মুহুর্তে অঘটন ঘটে যেতে পারে। 
আগে সম্বন্ধ হওয়া  বিয়েগুলো নানা  কৌশল খাটিয়ে  ভাঙা সহজ হলেও এবার তা কোন প্রকারেই  ভাঙা সম্ভব নয় আর চকোরীর সৎ মা জুলেখাবানুও চকোরীর বিয়ে নিয়ে অদৃশ্য কলকাঠি নাড়ার ব্যাপারে কিছু একটা আঁচ করেছেন বলে মনে হয়।তিনিও চকোরীকে চোখে চোখে রাখছেন কিন্তু মূল  সমস্যা হলো আসিফ তার এ শহরে চাল চুলো বলতে কিছুই নেই,  থাকে সে বারোয়ারী এক ম্যাচে, গ্রমের বাড়ি বলতেও তথৈবচ  হঠাৎ বিয়ে করলে কোথায় নিয়ে  তুলবে চকোরীকে?
সিদ্ধান্ত মোতাবেক দ্রুত থাকবার জন্য দু'কামরার ঘর দেখাদেখি চলল। এই শহরে  চাইলেই হুট করে মনের মত বাসাবাড়ি পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। বিশেষ করে সল্প আয়ের লোকজনদের জন্য সে এক দুরুহ ব্যাপারও বটে।
অনেক চেষ্টা চরিত্রের পর অবশেষে শহরের শেষ প্রান্তে প্রায় পরিত্যক্ত একটা বাড়িতে  দুই কামরার ঘরের সন্ধান  মিলল,তুলনামূলকভাবে ভাড়াও বেশ কম। বাড়ির  নির্দিষ্ট অংশটি  শরিকানা সম্পত্তি হলেও মূল বাড়ি থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন  আর মালিকও থাকেন অন্য কোন এক শহরে।ফোনের মাধ্যমে ভাড়া ও সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করতে বিশেষ বেগ পেতে হলো না ।  অবশ্য অত্র এলাকার  কেউ কেউ জানালো বাড়ির এই অংশে না-কি  কি সব সমস্যা আছে।
শোনা যায় অনেক বছর আগে এক কিশোরীর রহস্যময় মৃত্যুর মত একটা ঘটনা ঘটেছিল এখানে।তারপর থেকে নানা বিপদ আপদের মধ্যে দিন অতিবাহিত করে অবশেষে বাড়ি ছেড়ে অনত্র বসবাস শুরু করে ।আজও নাকি মধ্যরাতে প্রায়ই সেই  মেয়ের অতৃপ্ত আত্মার  কান্না শুনতে পাওয়া যায় ।করুন কন্ঠের চিৎকার ও অট্টহাসি  শোনা যায় নিয়মিতই ।
এসব কান কথায় চকোরী বা আসিফ দুজনের একজনও পাত্তা দিলো না।আসলে উপায়ও নেই আর ওসবভুত প্রেত আত্মা টাত্না নিয়ে তাদের কোন আগ্রহও নেই।
অন্য দিকে সময় একেবারেই হাতে নেই যা করার দুই একদিনের মধ্যে করতে হবে।আগামী পরশু চকোরীর সাথে সেই দোজোবর সমশের মবিনের বিয়ে দিন পাকা হয়েছে তার আগে চকোরীকে বাড়ি ছাড়তেই হবে।না হলে যে অনন্ত নরকবাস।
কাজি অফিসে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আসিফের পুরাতন আবাসস্থল  হয়ে তারা দুজন সোজা নতুন ভাড়া বাড়িতে এসে উঠলো পরদিনই ।যা কিছু কেনা কাটা আগেই করা ছিল। আজ গোছগাছ করবার  পালা।খাট বিছানা পেতে সারাদিন রান্না বান্না গোছগাছ, টুকটাক খুনসুটির পর  রাতের ঘুম।আহ! দারুণ সে সময়।নির্বিঘ্নেই কাটলো কয়েকটা দিন।
সেদিন ছিল আষাঢ়ী পূর্ণিমার রাত।
রাত তখন আড়াইটার কিছু বেশিই  হবে।হঠাৎ আসিফের ঘুম ভেঙে গেল। পুরানো আমলের চওড়া  জানালা দিয়ে বানের পানির মত হুড়হুড়িয়ে চাঁদের জোছনা ঢুকছে ঘরে তখন।ঘর ভেসে যাচ্ছে আলোর বন্যায়। অপার্থিব সে দৃশ্য।সত্যি চোখ ফেরানো দায়।
কিন্তু গরজ বড় বালাই তলপেটে প্রবল চাপের কারণে   আসিফ দ্রুত ছুটলো  টয়লেটের দিকে। মনে মনে ভাবলো প্রয়োজনীয় কাজ সেরে চকোরীকে ঘুম থেকে তুলতে হবে। দুজনে মিলে  জোছনা দেখে বাকি রাত কাটালে মন্দ হবে না।
কিন্তু আসিফ  বসার ঘরে এসেই একটু চমকে গেল, চকোরী আনমনে সোফার উপর বসে আছে,মুখে মিটিমিটি হাসি।চকোরী বিছানা থেকে উঠলো কখন?
- কি ব্যাপার তুমি এখানে একা একা কি করছো? বিছানায় না দেখলাম তোমাকে এই মাত্র ?
চকোরী  কিছু বলল না তবে হাসির মাত্রা বাড়িয়ে দিল, চোখের ইশারায় দুষ্টু ইঙ্গিত করে  শোবার ঘরের দিকে  চলে গেলো মোহময়ী ছন্দে । আসিফের চিন্তায় অন্য কিছু ছিল সন্দেহ নিমেষে দুর হলো ।হয়তো নিজের প্রয়োজনে কোন কারণে চকোরী  হয়তো এ ঘরে এসে থাকবে। যেমন এসেছে সে।

 টয়লেট থেকে বের হয়ে আসিফ  দেখলো চকোরী আবার ফিরে এসেছে। ওর জন্য গামছা হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছে।মুখে মৃদু হাসি..
-এই নাও হাত মুখ মুছে নাও।
- তুমি এখনও জেগে বসে আছো?কি করছিলে এখানে একা একা? ঘুম ভেঙে উঠলে কখন?আমাকে ডাকতে পারতে?ভয় টয় পাও নি এটাই তো অনেক।
আবার সেই ভুবন ভোলানো হাসি
- কি হলো এতো হাসছো কেন? ঘরে চলো।ঘরে চলো কেমন চাঁদ উঠেছে দেখবে এসো ।
চকোরী  মাথা নাড়ল বলল,
-আমি আগেই দেখেছি জনাব। এক কাজ করি, চল দুজনে ছাদে যাই। ওখান থেকে জোছনা মাখবো আর চাঁদটাকেও বিভোর হয়ে দেখবো।
- না না সে ঠিক হবে না। এত রাতে ছাদে..বাড়িটা ভালো নয়,  যদি কোন অঘটন ঘটে।
-কি দারুণ জোছনা। চাঁদটাকে দেখেছো? কি মায়াবী না?বল? এর মধ্যে অঘটন ঘটার কি হলো? অম্নি মাথায় উল্টো পাল্টা চিন্তা শুরু হয়ে গেল?শোন কোন অঘটন ঘটবে না  চল আজ দুজনে মিলে ছাদে গিয়ে জোছনা স্নান করি।এমন দিন রোজ রোজ আসবে না। চকোরী গাইলো,
"এসো নীপ বনে এসো ছায়া বিথী তলে... "
- এতো রাতে কি পাগলামি শুরু করলে বলো দেখি? গান তো ভালোই গাইছো।আর জোছনা স্নান? পাগল না-কি?  আমি নিশ্চিত আজ তোমাকে রোমান্টিক ভুতে ধরেছে।
- হ্যাঁ ধরেছে সেই রোমান্টিক ভুতটা হলে তুমি। আসিফকে চুপ থাকতে দেখে,চকোরী  তবু বায়না করে
- চলো না প্লিজ। না হলে আমি কিন্তু  একা একাই ছাদে চলে যাবো  আর ফিরবো না কোনদিন ,কসম ।
-একটু বোঝার চেষ্টা কর জান, ছেলেমানুষী করো না। কাল সকালে আমার অফিস আছে। রাত জাগলে সকালে তো ঘুমই ভাঙবে না তখন....তার চেয়ে বরং ঘর থেকেই আমরা জোছনা দেখি।
- বউয়ের জন্য এটুকু করবে না।তেমন কিছু তো চাই নি।কত জন তো কত কিছু করে বউয়ের জন্য ।এই তোমার ভালোবাসা? আমি তোমাকে সকাল সকাল ডেকে দেবো, অফিসে দেরি হবে না,প্রমিজ করছি ।চলো চলো, খুব বেশি সময় নেব না,চল না।
চকোরী হাত ধরে টান দিলো আসিফের


অল্প সময়ের ব্যবধানে ওরা ছাদে উঠে এলো।সত্যি অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ ।ছাদের উপর থোে জোছনায় ভেসে যাওয়া নিস্তব্ধ চরাচর দেখে অপার  মুগ্ধতা গ্রাস করলো আসিফের মন প্রাণ। নয়ন সার্থক ।মন হয়ে গেল  টলটলে স্নিগ্ধ  নদী। সেই  অমিয়ধারায় দুজনে হুটোপটি খেলতে খেলতে সে খেলা লুকোচুরিতে রুপ নিল সময়ের ব্যবধানে।
হঠাৎ আগুনের গোলার মত কি এক বস্তু তাড়া করলো চকোরীকে। চকোরী আতঙ্কে কেঁপে উঠলো। আসিফ তখন ছিল অন্য প্রান্তে সে ছুটে আসতে চাইলো। ঠিক সে সময় চকোরীকে আগুনের গোলাটি ছাদের কার্ণিশে নিয়ে গেছে।
চকোরী তখন বলছে
- আমাকে বাঁচাও আসিফ। আমি আর কোনদিন তোমার অবাধ্য হবো না আমাকে বাঁচাও।
আসিফ যত সরে যায় আগুনের গোলা ও চকোরী তত সরে যায় আসিফ ততক্ষণে চলে এসেছে ছাদের কার্ণিশে আর এক পা বাড়াৱে আসিফ সোজা নিচে পড়ে যাবে ঠিক তখনই আর্ত স্বরে এক নারী কন্ঠ তাকে ব্যকুৱ হয়ে ডাকলো।
-ফিরে এসো আসিফ আর এক পা ও এগিয়ো না।


অবাক ব্যাপার এতো চকোরীর কণ্ঠ , তবে ও কে?  চকোরী ছাদের দরজার মুখে দাড়িয়ে তখনো একটানা ডেকে চলেছে আর চকোরীর ভেক ধরা মুখটি তখন বিভৎস আকৃতি ধারণ করেছে।আগুনের গোলাটি তখন দুর থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। চকোরী ছুটে এসে আসিফের হাত ধরে টান না দিলে মুহুর্তে আসিফ ছাদ থেকে পড়ে যেত।মায়াবিনীর ছলনায় আসিফের ভবলীলা সাঙ্গ হতো আষাঢ়ী পূর্ণিমার এই মনোময় রাতে।
আসলে চকোরীর রূপ ধরে মেয়েটি  অতৃপ্ত সেই আত্না যে বহুবছর আগে তার প্রেমিকের দ্বারা প্রতারিত হয়ে আত্নহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। তারই প্রতিশোধের শিকার হতে যাচ্ছিলো আজ আসিফ।  
পরদিন সকাল হবার সাথে সাথে বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় ওরা। জীবনের শুরুতে বেঘোরে প্রাণ হারাবার কোন ইচ্ছে তাদের নেই। এখনও অনেক স্বপ্ন পূরণ হবার যে বাকি।

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩৪
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×