somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিতাঃ ওরা কি আমাকেও মেরে ফেলবে?

০১ লা অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে
আমি ক্রমশ বাকরুদ্ধ!
এবং আতংকিত
এই মৃত্যু উপত্যকা কি আমার দেশ?
একি অরাজকতা!
কোথায় মানবিকতা?
কোথায় বিবেকবোধ?
মূল্যবোধের একি অবক্ষয়!
না, এ সব মেনে নেওয়া যায় না।
মানছি না।
যদিও বহু আগে থেকেই মানবিকতা বিবেকবোধের চর্চা এদেশে খুব একটা ছিল না।
তবে বর্তমানের মত এতটা ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হয়নি কখনও তা।
স্বাধীনতা 2.0!
চারদিকে মারমার কাট কাট অবস্থা ।
এ যেন তামিল ছবির সফল দৃশ্যায়ণ চলছে চতুর্দিকে।
লুটপাট
অগ্নি সংযোগ
ভাঙচুর
মারামারি
গুজব গণহত্যা..
আমার বারবার মনে হয় এ-সবই দুঃস্বপ্ন, ঘুম ভাঙলেই...
আচ্ছা আমিও কি খুব শীঘ্রই এভাবে আক্রান্ত হতে পারি?
কোন একদিন কি ওরা আমাকেও
প্রকাশ্যে জনসম্মুখে পিটিয়ে মেরে ফেলবে?
যেভাবে মেরেছে তোফাজ্জেলকে?
চলতি পথে পিছু ডেকে উদ্ধত ভঙ্গিতে জানতে চাইবে অদ্ভুত কিছু প্রশ্নের উত্তর?
উত্তর মন মত না হলে..
আমাকে গান গাওয়াবে?
কাতুকুতু দিয়ে হাসাবে?
আমার হাসিতে ওরাও হাসবে তারপর হাসতে হাসতে ভিডিও করে ডাকাত ট্যাগ দিয়ে ওরাও কি আমাকে প্রকাশ্য জনপদে হাত পা ভেঙে দিয়ে হত্যা করবে?
কথাটা বার-বারই মাথায় ঘুরছে ক'দিন ধরে
কিছুতেই সরাতে পারছি না।
কিছুতেই...
জানি আপনারা বলবেন,এমন অবান্তর কথা বলার মানে কি?
এতো সংশয়বাদী হলে চলবে কি করে ?
সবাই স্বাধীনতা উদযাপন করছে,একটু আধটু অমন হয়।
স্বাভাবিক থাকুন,
নুতন স্বাধীনতা উপভোগ করুন।
দেশতো সঠিক পথেই চলছে, সব ঠিকঠাকই আছে। যা কিছু অনিয়ম দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে।
জঞ্জাল সরাতে লাগছে যা একটু সময়,
অচিরেই আধার কাটবে।
হয়তো! কিন্তু
আমার আশংকা অন্যখানে।
আমি যে ভীষণভাবে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির লোক।
আমি একাত্তরকে বুকে ধারণ করেছি জন্মাবধি ।
আজন্ম ভালোবেসেছি এবং আজীবন ভালোবাসবো
আমার দেশ,আমার মানচিত্র ,আমার পতাকা,আমার জাতীয় সংগীতকে।
বুকে আগলে রেখেছি এবং রাখবো।
তাতে যদি আমার মৃত্যু হয় হোক।
আমি আমার আদর্শকে বিসর্জন দিতে পারবো না।

মানিয়ে নিতে বলছেন?
দুঃখিত!
আমি তো বেনিয়া নই।
আমি সুবিধাভোগীও নই।
যখন যে পাত্র তখন সে পাত্রের আকার ধারণ করতে পারিনি কখনও
পারবোও না।
এখনও আমি পনেরশ টাকার মাইনে আর টিউশনিতে চলি।
আমার চাহিদা সামান্য।
আমি লুটেরা দূর্নীতিবাজ কাপুরুষ নই।
আমি বিশ্বাস করি
এ দেশটা আমার মা!
এক জীবনে আমার চাওয়া একটাই,
আমার মা যেন যেকোনো মূল্যে ভালো থাকে।

যুদ্ধ দিনের কথা ভাবলে এখনও আমার রক্ত টগবগিয়ে ফোটে।
আমি ভুলতে পারি না ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষের উপর মা বোনের সাথে ঘটে যাওয়া পাশবিক নির্যাতনের কথা।
অন্যায় অত্যাচারের সেই সব দূর্বিষহ স্মৃতিগুলো এখনও আমায় আতঙ্কিত করে।
দুঃস্বপ্ন হয়ে বারবার ফিরে আসে সেই সব অতীত দিনগুলো।
সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনায়
একাত্তর আমার রক্তে মিশে আছে।
আসলে এছাড়া আমার উপায়ও নেই।
যে সময় আমার রক্তে মিশে রয়েছে তাকে অস্বীকার করি এমন ইচ্ছা বা শক্তি কোনোটাই নেই।
একাত্তর আমার ঘর নিয়েছে
আমার বাবা, মা, ভাই...
আমার বোনকে দিনের পর দিন অত্যাচার করে হত্যা করেছে।
আর তাই আমি জোর গলায় বলি বলবো
আমি রক্তাক্ত সবুজ জাতীয় পতাকার পক্ষের লোক।
আমি, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি এই সংগীতের ধারক ও বাহক।
পতাকায় আঁকা রূপক অর্থে সারা বাংলা আমার আত্নার আত্নীয় ।
আমার মা আমার ভাই আমার বাবা আমার বোন।
এছাড়া আমার যে আর কেউ নেই।
হ্যাঁ যুগ যুগ ধরে বাংলা মায়ের উপর অত্যাচার
অবমূল্যায়ন
দমন পীড়ন আমাকে পীড়া দেয় এবং দিয়েছে।
প্রতিটা অন্যায় অন্যায্য আচরণ
প্রতিহত করার না পারার যন্ত্রণা কুরে কুরে খায় এখনও আমার বিবেক।
আমি আমার সীমাবদ্ধতা জানি।
আমি বরাবরই সকল অন্যায় অত্যাচারের বিরোধী।
যেখানেই অন্যায় সেখানেই প্রতিবাদ
শুধু এটুকুই চাওয়া আমার বাংলা মা ভালো থাকুক
আমার বাংলার মানুষ ভালো থাকুক
সে যে কোন মূল্যে।
ব্যস
এটুকুই তো আমার স্বান্তনার
বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।
সুনিদিষ্ট
কোন আদর্শকে অন্তরে ধারণ করা বা ভালোবাসার জন্য
আমাকে ওরা যদি ধরে নিয়ে যায়, যাবে?
আমাকে যদি দালাল বলে
বলবে।
আমি ছদ্মবেশী হতে পারবো না।
ক্ষমতাবানদের কে কবে ঠেকাতে পেরেছে?
যাক ধরুক আমাকে
মারলে মারুক
মেরে ফেলুক আমাকে।
মেরে ফেলবার আগে
আমাকে নিশ্চয় জিজ্ঞেস করবে
তুমি ভাত খাবে? পানি লাগবে, পানি ?
আমি বলবো খাবো।পেট ভরে ভাত খাবো, পানি খাবো।
শহীদ তোফাজ্জেলের মত।
শোল মাছ অথবা মুরগী নয়-
কাতলা মাছের মুড়িঘন্ট আমার বড্ড প্রিয়
টক মসুরের ডাল আর ঝুরি আলু ভাজাও আমার প্রিয়।
এরপর
আমার শেষ আহার শেষে ওরা আমায় হাসতে হাসতে
নির্মম অত্যাচার করতে করতে মেরে ফেলবে হয়তো।
ফেলুক
তবু আমি আমার মতাদর্শ বদলাতে পারবো না।
ওরা ভাষা আন্দোলনের কী জানে না, আমি জানি।
ওরা ছয় দফার কী জানে না, আমি জানি।
ওরা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান কি জানে না, আমি জানি।
ওরা একাত্তর কি জানে না, আমি জানি।
ওরা জিন্নাহকে জাতির পিতা মানে, মানুক।
আমি মানতে পারবো না ।
ওরা উর্দুকে সাদরে বরণ করে নেয় তো নিক । আমি বরণ করতে পারবো না।
এটাই ফাইনাল,
আমি আমার আদর্শ বদলাবো না।
ওরা কাওয়ালীর মজমা বসাক
পাকিস্তানী ব্যান্ড সংগীতের আসর বসায় বসাক।
আমার জারি সারি মুরশিদিই কবি গানের আসরই ভালো।
আমি কোনক্রমে ওদের মতাদর্শে বিশ্বাসী নই
হতে পারবোও না।
এজন্য যদি ওরা আমায় মেরে ফেলে
ফেলুক।
আমি হাসতে হাসতে আমার মাতৃভূমিকে আকড়ে মরে যাবো।

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×