somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গিফট

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে লগ ইন করে তুহীন চৌধুরী নিউজ ফিড স্ক্রল করতে করতে দেখলেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ থেকে কাটা ভিডিও আপলোড করা। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা,‘কুরিয়ার সার্ভিসের লোক পরিচয়ে ডাকাতি করছে একদল দুর্বিত্ত। বাধা দিতে আসলে খুন করতে পিছপা হচ্ছে না তারা।’

কৌতুহলবশত ভিডিওটি দেখা আরম্ভ করলেন তিনি। একটি অল্প বয়সী মেয়ে হাতে প্যাকেট নিয়ে ফ্ল্যাটের কলিংবেল বাজালো। কয়েকবার বাজানোর পর একজন ভদ্রলোক দরজা খুলে মেয়েটির সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে পাশে লুকিয়ে থাকা সশস্ত্র কয়েকজন ছেলে লোকটিকে ধরে বেধে ভিতরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। বেশ কিছু সময় পার হয়ে যাওয়ার পার সেই দূর্বিত্তরা মাল জিনিস নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যায়।

ভিডিও দেখে তুহীন সাহেব প্রচন্ড রকমের আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। প্রেসের ব্যবসার প্রয়োজনে মাঝে মাঝে তার কাছে কুরিয়ার আসে। যদিও আজ পর্যন্ত এমন কোন ঘটনার সম্মুখিন হতে হয়নি। সামনে এমন ঘটনার সম্মুখিন হতে হবে না এমন নিশ্চয়তা নেই। তিনি এখন থেকেই সাবধান হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। নিজের বেলায় যদি এমনটি হয় তাহলে যে কোন মূল্যে প্রতিরোধ করবেন। প্রয়োজনে তাদের খুন করবেন। ডাকাতদের খুন করা যে সহজ কাজ নয় সেটা তিনি ভালো করেই জানেন। তবে আজকাল থ্রিলার গল্প পড়ে তার মাথায় খুন খারাপির বিষয় বেশ ভালোভাবে জায়গা করে নিয়েছে। কখনো কখনো আফসোস করেন এই ভেবে যে,কেনো নিজের জীবনে থ্রিল কিছু ঘটে না! তাই বাস্তব জীবনে যদি এমন থ্রিল ঘটনায় মুখোমুখি হওয়া যায় তাহলে ক্ষতি কি? কিছু কিছু মানুষ আছে যার বই পড়তে পড়তে সেই বইয়ের চরিত্রটাকে নিজের ভেতর ধারন করে। ইচ্ছা জাগে বাস্তবে জীবনে সেইসব ঘটনার সম্মুখিন হতে। তুহীন চৌধুরীর বিষয়টা তেমন।

তুহীন সাহেব বাইরে যাবেন। বইমেলা চলছে। প্রকাশকদের দম ফেলার ফুসরত নেই। যদিও তিনি অন্য সবার মত বইমেলা নিয়ে এতোটা ব্যস্ত থাকতে চান না। এসব কাজ তার বড় চেলেই দেখে। তার কাজ প্রতিদিনি ছাপাখানায় গিয়ে দেখভাল করা। আজ একটু তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। কয়েকজন পুরোনো লেখক দেখা করবেন বলে অপেক্ষা করছেন। খাওয়া দাওয়া করে তৈরী হয়ে আয়নার সামনে চুল আঁচড়াতে যাবে ঠিক এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। মাথা না আঁচড়িয়ে দরজার কাছে গেলেন। লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো। একটি অল্প বয়সী মেয়ে! সাথে সাথে ভিডিওতে দেখা সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে গেলো। যতোটুুক দেখা যায় একইরকম বোরখা পরা। মুখ নেকাবে ঢাকা। দরজা খুলবেন,নাকি ঘরে বসে থাকবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। এই প্রথম নিজেকে তার প্রচন্ড রকমের ভীতু মনে হতে লাগলো। ইন্টারকমে দারোয়ানকে ফোন দিলো। ফোন বেজে গেলো। নিশ্চয়ই ওরা দারোয়ানকে বেধে রেখেছে। আবারো কলিংবেল বাজছে। এবার তুহীন সাহেব ড্রয়ার থেকে ছুঁরিটা বের করলেন। ধীর পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। আস্তে করে দরজার লক খুলে যেই মেয়েটি তাকে দেখে ‘স্যার’ শব্দটি উচ্চারণ করলো সাথে সাথে ছুঁরি বের করে চোখ বন্ধ করে মেয়েটির শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করতে করে ফেললেন। মেয়েটি শুধুমাত্র একটি চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। হাতে,মুখে রক্ত লেগে থাকা তুহীন সাহেব মেয়েটির লাশের দিকে স্তব্দ হয়ে তাকিয়ে রইলেন।

ফোনের শব্দে ধ্যান ভাঙলো তুহীন সাহেবের। ভিতরে গিয়ে রক্তাক্ত হাতে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নির্মাতা সঞ্জয় সমাদ্দারের কন্ঠ,

‘তুহীন ভাই,গত রাতে আপনার জন্য একটি গিফট পাঠিয়েছি কুরিয়ারে করে। এতোক্ষনে তো পেয়ে যাওয়ার কথা। পেয়েছেন কি?’


তুহীন চৌধুরী কোন কথা বলতে পারলেন না। কান থেকে মোবাইল ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে লাশটির কাছে দৌড়ে গিয়ে পাশে পড়ে থাকা গিফটের বাক্স খুলে দেখতে পেলেন,একটি হলুদ পাঞ্জাবী।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:২৮
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×