শিরীনের লেখা গল্পটা পড়ে মেজাজটা ভালোই খিচড়ে গেল। পড়ে বুঝলাম মেয়েদের সন্তুষ্ট করা আর যারই হোক না কেন অন্তত আমার কর্ম না।
সারাদিন খেটে খুটে আসি ।সেই সকাল সাড়ে সাতে বেরুই বাসা থেকে দশটার অফিস ধরতে আর ছ্য়টার পরে বের হয়ে বাসায় ফিরি রাত আটটার দিকে। স্যান্ডউইচ দেখেছেন না? যাতায়াতের সময়টায় জ্যাম নামক অপরিহার্য উপসর্গটাতে আটকে থেকে বাসের ভেতর সামনে পেছনে লোকের ভিড়ে চিড়ে চ্যাপ্টা হতে হতে আমার নিজেকে স্যান্ডউইচের ভিতরকার পদার্থটার মত মনে হতে থাকে।এর আগের সুদীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে এই অচল পদার্থটাতে ওঠার সংগ্রামের কথাটা তো নাই বা বললাম। তারপর ফিরে এসে নিজে কি একটু দুমিনিট জিরোতেও পারবো না নাকি? আরে ভাই আমিও তো একটা মানুষ, রোবট তো নই।
শিরীনের অবস্থাটা তুলনা করে দেখুন আমার সাথে , তাহলে বুঝবেন। নিজে তো আমার গাড়িটা চব্বিশঘন্টা ভোগ করে। ওর অফিস , বাচ্চাদের স্কুল, কোচিং , টিউটর এসবের ফাঁকে চক্করে পড়ে নিজের গাড়িটাতে আমার ভুমিকা শুধু তেল পানি আর সার্ভিসিং-এর পয়সা জোগান দেওয়াতে সীমাবদ্ধ, আরোহীর পর্যায়ে না। মানছি যে ওদের মাল্টিপারপাস কাজের জন্য আমার একমাত্র গন্তব্যের সাথে স্যাক্রিফাইস করাই লাগতো কিন্তু এসব যুক্তি তো আর শরীর বোঝে না।
তারপর কি আমার একটুও বিশ্রামের অধিকারও নেই? আর এত খাটাখাটুনিই বা কাদের জন্যে? এরপরও সবসময় আত্নকেন্দ্রিকের মত শিরীন কেবল আমকেই দোষারোপ করে যাবে, এটা তো ফেয়ার না তাই না?
বাড়ি এলেই কি- না বিচ্ছুর পাল সামলাও। একেকটা নিজে নিজে কি কিছুই করতে পারে না নাকি? সব চামচে তুলে খাওয়াতে হবে? আমার ভূমিকা যেন রাখালের, গরুর পাল যেন অন্যকিছুতে মুখ দিতে না পারে, যেন বইয়ের অক্ষরগুলোর মাঝে মুনীর- শীলার অক্ষয় মনোযোগ অক্ষুন্ন হয়ে থাকে। তাহলে এতগুলো টিচার পুষে কাজ কি? যদি সব শেষমেষ আমাকেই দেখতে হয়, তবে ঐ গুলোকে বাদ দিলে নিদেন পকেটের উপর নির্যাতনটা কিছু কমে।
একটু দেখিয়ে দিলেই চলবে না, সঙ্গে বসে থাকতে হবে। আজকালকার পোলাপান কত চালাক চতুর, কত সিরিয়াস পড়াশোনায়, কি সুন্দর নিজের ভালো নিজেরাই বোঝে, আর আমারগুলো !
দেখুন না, আমার অফিসের পিয়ন কুদ্দুস, তার ছেলে কদিন আগেই এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে, তাও গোল্ডেন। সোজা কথা! এর আগে ওর বড়টাও কিন্তু একই রকম রেজাল্ট করেছিল। অথচ হলফ করে বলতে পারি ওদের বাপ ওদের শুধু স্কুলের টিউশন ফি ছাড়া আর কিছু কোনকালে দিয়েছিল কিনা সন্দেহ।
অথচ আমারগুলোকে নানারকম ফি আর বেতন জোগাতে জোগাতে আমার নাভিশ্বাস উঠেছে। তাও পড়ার যে দশা, কি যে হবে এদের ভবিষ্যতে.?.. বেশী বেশী পেলে এইরকমই হয় ।
তা কিছুক্ষন দেখিয়ে দিয়ে তো একটু ক্ষন টিভিটা ছাড়লাম কি ছাড়লাম না-বিশ্বাস করা যায় কতদিন আমি একটা ফুটবল ম্যাচের ফার্স্ট হাফের বেশী দেখা ম্যানেজ করতে পারিনি? একে তো তিরিশ মিনিটের মাঝে গড়ে অ্যাড থাকে অন্তত বিশ মিনিট....আবার ছেড়ে বসার একটু পরেই ম্যাডাম এসে হাজির। সোজা রিমোটের দখলীস্বত্ব হস্তান্তর করতে হয়। কি হয়েছে? না, ম্যাডাম এখন সিরিয়াল দেখবেন। অগত্যা সুবোধ ভদ্রলোকের মত রিমোটটা সারেন্ডার করি। পাশে বসে বাসী হয়ে যাওয়া পেপারটাই এখন আমার ভরসা।
কেননা দুনিয়া উল্টে যাক , শিরীন ইহজীবনেও ওর প্রিয় সিরিয়াল মিস করবে না। কেমন সেলফিশ মহিলা ,দেখলেন? আমকে তো কম্মিন কালেও কিছু দেখতে দেবে না, অথচ নিজের প্রোগ্রামের বেলা ...।হু হু ...ওটাতে কোন ফাঁক নেই.।অথচ নিজের লেখাতে দিব্যি আমাকেই উল্টো স্বার্থপরতার অপবাদ দিয়ে দিল,-প্যাথেটিক।
বিশ্বাস করতে পারেন - বিয়েবাড়ি কি কোন অনুষ্ঠানে গেলেও সে বাড়ি ফিরবে নটার মাঝেই, যাতে তার প্রিয় প্রোগ্রাম মিস না হয়। ওর জ্বালায় কোন জায়গায় গিয়ে শান্তি নেই ভাই, গিয়ে বসার কিছুক্ষনের মাঝের যখন আওয়ামী- বিএনপি- জাপা -জামাত নিয়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক ময়দান , ঠিক তক্ষুনি উঠে পরবার ডাক আসবে।
তারপর আর কি...একটার পর একটা সিরিজ সিরিয়াল দর্শন চলতে থাকে। তাও কি একই সময়ে একটা নাকি? একই সাথে সে কমপক্ষে তিনটা সিরিয়াল দেখছে তিনখানা চ্যানেলে। রিমেটের উপর যে অত্যাচার চলে, প্রাণ থাকলে কবেই ওটার প্রাণবায়ু বের হয়ে যেত! প্রতিভা বটে শিরীনের , একই সাথে সে তিন তিনটা সিরিয়ালে কিভাবে ম্যানেজ করে?কাহিনীই বা মনে রাখে কেমন করে? আমার তো নির্ঘাত গুবলেট হয়ে যেত। তবে কিনা, প্রায় সবগুলোরই তো সেই সাশ-বহুর একঘেয়ে একই সাসপেন্স প্যাঁচালী,তাই পারে মনে হয়। আমার নিজের তো ধারনা একটা দেখলেই সবগুলোই দেখা হয়ে যায়।তবে মনের কথা অপ্রকাশ্যই থাকে , বললে খবর আছে।
তা ঘরের এহেন পরিস্থিতিতে নিউজিল্যান্ড বনাম বাংলাদেশ ম্যাচটা দেখতে পাবার সম্ভাবনা শুন্যেরও নিচে- বুঝতেও পারছেন। তাও যতটুকুন দেখা যায়, কোনমতে আজ মুনীরশীলার দায়টা সেরে সোজা টিভির সামনে-এই হচ্ছে প্লান। সবে খেলাটা একটু জমে উঠেছে, খুন্তি হাতে বেরহম গিন্নী এসে আমাকে ফের ওদের পড়ার টেবিলে ফেরত পাঠলো। দেহ একখানে, মন তো পড়ে আছে টিভির সামনে ..........।
এই রচনাটা যেভাবে বোঝালাম মুখস্ত করতে থাক আর শীলা এইযে অঙ্কটা যেরকমে দেখালাম বাকিগুলোও এই নিয়মেই হবে, করতে থাক, বলেই এক লাফে আমি আবার "ব্যাক টু দ্য স্টেডিয়াম"। তারপর থাঙ্কস টু বিশাল বিশাল বিজ্ঞপন বিরতি, একবার পড়লেই সোজা আবার টেবিলে, অন্যদিনের চেয়েও জোরে শোরে হাকডাক করে মুনীর শীলাকে পড়াই , পড়া ঠিকঠাক হচ্ছে না বলে বেহুদাই ধমকাই, আজন্ম কর্তব্যপরায়ন বাবা বলে আমাকে মনে হতে থাকে।
ভালোই চালাতে থাকি আমার আজ রাতের দ্বৈত ভুমিকা- ব্যাটসম্যানের ক্রিজে দৌড়ানোর সাথে সাথে তালে তাল দিয়ে আমার বাচ্চাদের টেবিল আর বসার ঘরের সোফার অবস্থানের পালাবদল হতে থাকে।
টিভিতে এভাবে খেলা দেখলে জানবেন তা মহা পরিশ্রমের বিষয়, সেই কখন খেয়েছি , পেট চুঁই চুঁই করছে।পেটের আর দোষ কি , এত দৌড়-ঝাঁপ হাইস্কুলের পরে তো আর অভ্যেসে নেই। কিন্তু কিছু বলারও নেই, অসময়ে ছাইপাশ খাবার বেলা শিরীনের ঘোর আপত্তি।আর যা করছি তাতে শক্তির যোগান, শিরীনের ঘোর মতের ও পলিসির বিরুদ্ধে, তাই ও প্রস্তাবই অবান্তর।
তাই বুঝতেই পারছেন কাতর সুরে বড়জোর একটু চা চাইবা পর্যন্তই আমার দৌড়। কিন্তু আজ দেখলাম মেঘ না চাইতেই জল। গরম গরম পাকোড়া চলে এসেছে, সাথে ধোঁয়া ওঠা চা- নতুন রেসিপি বানালাম, টেস্ট করে দেখ।শিরীনের কথাগুলো কানে মধুবর্ষন করে।
আমি সকৃতজ্ঞে শিরীনের দিকে তাকাই, মাঝে মাঝে সে বেশ বুঝদারের মত কাজ করে। না চাইতেই বুঝে যায় কখন কি দরকার।
তবে সে কালেভদ্রে। এদিকে খেলা তো বেশ জমে উঠেছে। মুনীর শীলাকে উঠে গিয়ে আরো একবার রুটিনমাফিক ধমক দেই।
তোকে না বললাম বাকি অংকগুলো করে ফেলতে , এখনও তুই তিননম্বরটাতে আটকে আছিস যে?
বলে অরেকটা হুঙ্কার দেই অন্যটার দিকে তাকিয়ে, রচনা এতক্ষণ কি মুখস্থ করলি? এতক্ষণেও ইন্ট্রোডাকশনটাও তো হল না।
ওরা দুটো মাথা নিচু করে বই নিয়ে ঢুলতে শুরু করে , আমি আবার ব্যাক করি সোফায়। জোরে চেঁচালে বিপদ হতে পারে , তাও বেফাঁস একটা উল্লসিত চিৎকার দিয়ে ফেলি যখন মাশরাফি একটা উইকেট ফেলে দেয়। নিঃশব্দ টানটান উত্তেজনার মাঝে আমি খেলা দেখি। অশান্ত উত্তেজনার ধকল গলাটা না নিতে পারলেও চেয়ারের হাতলগুলোয় ঝাল মিটাই।ভাগ্যিস ওরা অ-বাক!
সময় বয়ে যেতে খেলায় মাঠের পারফর্মেন্সে এখন পেন্ডুলামের দোলন চলছে। ঠেকতে ঠেকতে ক্লাইম্যাক্সে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের এখন ব্যাটিং । বারো বলে লাগবে দশ রান ।
দুই বল গেল বিনা রানে।
টেনশনের পারদ চড়ছে টের পাচ্ছি।আমর প্রেসারটাও কি..?
বিজ্ঞাপন বিরতি।
শালা! দেবার আর টাইম পেল না? এই দর্শকদের ইমোশনাল একটা সময়েও ব্যবসা করতে হয়?দেশ নিয়ে আবেগপূর্ণ একটা কমার্শিয়াল দেখতে দেখছে ভাবি , দেশটাও এখন গোটা একটা বিগ বিজনেস, ভুগোলকে ছাড়িয়ে বাড়িয়ে।
দে দৌড়......।
এই অবসরে আমি রানিং সোফা থেকে ছেলেমেয়েদের টেবিলে। দেখি তোদের পড়া কতদূর এগুলো। কিরে তুই এখনও আগের অংকটা নিয়েই বসে আছিস যে?
পারছি নাতো, তুমি দেখিয়ে দাও।
দূর, এই সাধারন অংকটাও করতে পারিস না, গোবর গণেশ একদম।
দাঁড়া, আমি করছি। করতে বসি,কিন্তু অংকের দিকে মন কোথায় আমার?
দুলাইন লিখে টের পাই খেলা আবার শুরু হয়েছে,এখন অন্যদিকে মন দেয়া অসম্ভব ।আচ্ছা, একটু ঘুরে এসে করে দিচ্ছি। তুই বাকিগুলো করতে থাক। ছেলে যেন কি একটা জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিল , ওর দিকে ভালো করে না তাকিয়েই আমি আবার টিভির সামনে। এখন না, খেলা শেষ হোক ,প্রায় তো শেষের দিকেই এসেছে, আর তো মাত্র কয়েকটা বল,তারপরে দেখিয়ে দিলেই হবে।
যা দেখলাম -মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়, আরো দুটো বল খেলা হয়েছে, একটা পড়েছে, সাকিবের মূল্যবান উইকেটটা । রান সেই -ই আছে, এখন টার্গেট, নয় বলে দশ।
বাংলাদেশের খেলা সম্পর্কে ধারনা থাকলে জানে সবাই, একমুহুর্তের নেই ভরসা ,কখন কি যে হয়।
..... অবশেষে দুটো রান পর পর দুবলে,যাক জেতার এখনো আশা আছে.,.... এমন সময় দুম করে ফের পর পর দুটো বলে বাংলাদেশ সাত উইকেটে ২০৬ থেকে নয় উইকেটে ২০৬। চিন্তা করতে পারেন অবস্থাটা? কেমন যে রাগ হচ্ছে আমার খেলোয়াড়গুলোর উপরে। এখন পাঁচ বলে আট |মার ,একটা ছয় মার। খেল খতম, কি নিদেন একটা চার। মনে মনে আল্লাহ্ আল্লাহ্ করছি আর মুখে কষে গাল দিচ্ছি।
গাধাগুলো ভালো করে খেলতেও পারে না। আর একটা আউট হলেই তো নিউজিল্যান্ডের পক্ষে হ্যাটট্রিক আর বাংলাদেশের কপালে হার। এদের পেছনেই কি না দেশের এতগুলো টাকার শ্রাদ্ধ হচ্ছে । পাড়ার একটা ছেলেও তো এর চেয়ে ভালো খেলতে পারে। শিরীনের ভয় ভুলেছি এখন আমি, টেনশনে টেবিল চেয়ারগুলো চাপড়ে সমানে গালি দিচ্ছি সাকিবকে। আরে এতক্ষন যখন টিকেছিস, আর একটু টিকতে পারলি না, দরকারের সময় আউট।ঘোড়ার ডিমের প্লেয়ার হয়েছে একেকজন, আরে একটা ব্যাট হাতে পেলে এই আমি-ই তো এরচেয়ে ভালো খেলতে পারি।
আর দুটো বল, পাঁচ রান দরকার। এ অবস্থায়- হুম আমাদের দলের দশা তো জানি, যতই দেশপ্রেম থাকুক,পক্ষে বাজি ধরাও আমার পক্ষে সম্ভব না।
ইসরে জেতা ম্যাচটা, ...অন্তত আমি মনে করি ভালোই জেতার চান্স আজকে বাংলাদেশের ছিল। এখন..অসম্ভব....
আরো একটা রান হলো পাঁচ নম্বর বলে.।শেষে যদি একটা চার হয়...আশা দুরাশার দোলায় অস্থির মন।
উত্তেজনায় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছি আমি।এ কি বাংলাদেশ পারবে ?
তাও শেষের আগে সবকিছু শেষ হয়েছে- অবোধ মন মানতে চায় না।
আহ্, ছক্কা!
যা যা যা যা যাহ............., একেবারে বাউন্ডারির সামনে একটা বোলার আপেল লুফে নেবার ভঙ্গিতে দুই হাত উঁচু করে ...প্রায় ধরেই ফেলেছে..........। হার্ট বিট বন্ধ হয়ে যাবার জোগার আমার ...
না, ধরতে পারেনি।
ছক্কা-আ আ আ!আকাশ কাঁপানো চিৎকার দিয়ে উঠি আমি এই রাত দুপুরে।
বাংলাদেশ জিতে গেছে!একপাক নেচে উঠি আমি স্থান কাল পাত্র বেমালুম ভুলে গিয়ে।
আনন্দে উদ্বেল আমার টেনশন প্রশমিত হতে চোখ যায় পাশে দাঁড়ানো শিরীনের দিকে। কখন এসেছে খেয়ালই করি নি আগে। একটু দমে যাই, বাঁধা পড়ে আমার বাঁধভাঙা আনন্দে। এইরে , কি জানি আবার কত কি কথা শুনতে হয়.।
তার বদলে, চলো খেতে চলো , অনেক দেরী হয়েছে, সবাই না খেয়ে বসে আছে, কত রাত হয়েছে খেয়াল আছে?শুনে একটু স্বস্তি পাই, যাক অল্পের উপর দিয়ে গেল তাহলে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আমি চমকে যাই, শুধু রোজকার নির্ধারিত ওয়ার্ণিং সময়ই তো নয়, সবগুলো সিরিয়ালের সময়ও তো পার হয়ে গেছে।
গিন্নীর কথার অপ্রাসঙ্গিক ভাবে শুধাই, আজ যে তোমার সিরিয়াল দেখলে না..?
আহহা! তুমি এত মনোযোগ দিয়ে দেখছিলে ,তাও আবার বাংলাদেশের খেলা তাই-
বাব্বা! শিরীন আমার কারনে এত বড় একটা স্যাক্রিফাইস করলো?করতে পারলো?শুরুর সেই দিন গুলোর মত যখন আমার খুশি- আনন্দের জন্য সে সবসময় ব্যস্ত হয়ে থাকতো, কতবার অতি জরুরী কাজ, পরীক্ষা ছেড়ে সে মোবাইলে ঘন্টা ধরে কথা বলতো,কত পাগলামী, কত আকুলতা..
আবার সে-ইসময়ের কথা মনে করিয়ে দিল।
-তাছাড়া, শেষ না হওয়া কথার খেই ধরে বলল শিরীন, কালকে তো আবার পুনঃপ্রচার হবেই, তো ক্ষতি কি? ওসময় দেখে নেবনে, তুমি কিন্তু কালকে খবরদার অফিস ফিরেই টিভি নিয়ে পড়বে না, ঐসময়টাতেই আবার আগেরদিনের গুলোর রিপিট হয়।
আমার মনের মাঝে হরিষে বিষাদ নামলো। মুহূর্তেই বাংলাদেশের জয়ের আনন্দ ভ্যানিশ হয়ে হাহাকার বেরুলো অবাধ্য গলা চিরে।
কি হল ওরকম করলে কেন? শিরিনের চোখ পাকিয়ে তাকানোটাই যথেষ্ট। দেখলেন স্বার্থপর মহিলার চিন্তাভাবনা, নিজেকে কিছু ছাড়তে হবেনা দেখেই আজকে আমর জন্য ছাড় দিয়েছিল, কাল তো ঠিকই সুদে আসলে ষোলআনা তুলে নেবে।
রাগান্বিত চিন্তাধারায় বাধা পড়লো।
তাড়তাড়ি খেয়ে নিয়ে আমাকে উদ্ধার দাও।
খেলা দেখলে এত আগ্রহ নিয়ে তাই কিছু আর জোর করিনি, নইলে-
কালকে মুনির শীলার ক্লাসটেস্ট আছে, এখন খেয়ে নিয়ে আবার তো আমকেই বসতে হবে।শিরীনের চাপা স্বরে গজগজ চলছে।
নাহলে কালকে নির্ঘাত পরীক্ষায় ডাব্বা মারবে।
বেগমের মেজাজ বিশেষ গরম মনে হচ্ছে দেখে আমি আর কথা বাড়ালাম না। চুপে খেয়ে নেওয়াই নিরাপদ।
খাওয়া শেষে শোবার ঘরে গেলাম , আমার ঘুমের ব্যাঘাত হবে তাই দুরে সামনের বসার ঘরে গিন্নির তত্বাবধানে পড়াশোনার দ্বিতীয় অধিবেশন বসেছে।
এখান থেকেও ওর সুউচ্চ সজাগ কন্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছি, কোথা থেকে যে ওর এত এনার্জি আসে? আমি ও,দুজনেই তো কাজ করি, দেখুন দশটা বাজতেই আর শরীর চলতে চায়না, আজ দূর্ঘটে বারোটা বেজেছে, ভেঙে পড়তে আর দেরী নেই, ওর অবস্থাও তো..।
জানি, তারপর ও নিজের রুটিন কাজ সেরে আমারটা নিয়ে লেগেছে।
সুগভীর ঘুমে তলিয়ে যাবাের আগমুহুর্তে শুনতে পেলাম, এই যা ত, রুমের দরজাটা বন্ধ করে দে, তোদের আব্বুর ঘুমের প্রবলেম হবে নাহলে। কাল তো আবার সকাল সকাল উঠতে হবে।একটা জরুরী মিটিং আছে , ভালো ভাবে ঘুমানো দরকার।নাহলে খুব কষ্ট হবে।আস্তে , তোরা তো আবার ধাপ ধুপ করে পাড়া শোরগোল না করে কোন কাজ করতে পারিস না.............। ডোর নবটা ঘুরিয়ে আলতো করে লাগা........।একবিন্দু শব্দও যাতে কানে না যায়.......
রেজওয়ানা আলী তনিমা
ফেব্রু ০৪, ১৪ইং
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




