যে কোনো কাজ করার আপনার স্বাধীনতা আছে, হোক তা পাপ কিংবা পূণ্য। সেটা আপনার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। কিন্তু মানবসম্প্রদায় হিসেবে যেটা অমানবিক, সেটা করার স্বাধীনতা আপনার নেই। ঠিক এ কারণেই আপনি স্বাধীনতার উন্মুক্ত সবকে উন্মাদ হয়ে একটা মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করলেন। এইটা আপনার ব্যক্তি স্বাধীনতা হলেও মানবিক স্বাধীনতা পরিপন্থী। যার কারণে আপনি একা একজন মানুষ হলেও মানবিকভাবে বিকারগ্রস্ত। তাই মানবিকভাবে আপনার ‘ফাঁসি’ হওয়া জরুরি। এবং সারাবিশ্বে এ আইনকে মানবিকভাবেই শ্রদ্ধা করে।
এখান থেকে মোটাদাগে যেটা বুঝা গেলো, একজন মানুষের স্বাধীনতাকে স্রেফ স্বাধীনতা বলা যায় না। সকল মানুষের একত্রিত স্বাধীনতাকে দ্ব্যর্থহীনভাবে স্বাধীনতা বলা যায়। এবং এ স্বাধীনতার প্রান্তসীমা হলো মানবিকতা। অর্থাৎ আপনার একার পক্ষে কোনো একটি কাজের সংকল্পকে স্বাধীনতা বলা হবে না। বলা হবে, যে সংকল্পটি সকল মানুষের জন্য কল্যাণনিহিত হবে, সেটাই প্রকৃতপ্রস্তাবে মৌলিক স্বাধীনতা।
একাত্তরেও বাংলাদেশের কিছু লোক পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। আর সে সময়ে বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের সাথে যুক্ত অর্থাৎ পূর্বপাকিস্তান। তাই পাকিস্তানের পক্ষে থাকাটা পাকিস্তানের স্থানীয় হিসেবে স্বাধীনতা হলেও বাঙালী জাতির স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল আর বাংলাদেশে থেকে বাঙালী জাতির স্বাধীনতাবিরোধী আন্দোলন করাটা এককথায় অমানবিক ছিল। এ কারণে বাঙালী জাতির কাছে সেটা মানবতাবিরোধী কিংবা মানবিক স্বাধীনতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আজও চিহ্নিত।
অতএব, আপনার একার যে কাজটিকে আপনি স্বাধীনতা ভাবছেন, সেটা আদৌ স্বাধীনতা না, এটাকে বড়জোর বলা যায় ‘স্বেচ্ছাচারিতা’। এ স্বেচ্ছাচারিতাও একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত বৈধতা রাখে। আপনার স্বেচ্ছাচারিতা যদি অন্যের ক্ষতির কারণ হয় তাহলে এ স্বেচ্ছাচারিতাও নাজায়েজ। আমাদের সমস্যা হলো, আমরা স্রেফ করার মধ্যেই স্বাধীনতা দেখি। না করার মধ্যেও যে স্বাধীনতা আছে, সেটা দেখি না। এই যে ধরুন, নারীরা তাদের বক্ষ উন্মুক্ত করে বেড়ানোকে তাদের স্বাধীনতা মনে করছে। কিন্তু না করারও তো স্বাধীনতা আছে, সেটা নারীবাদিরা মানতে নারাজ।
যার প্রকৃতি যেটা স্বাধীনতা ঠিক সেটাই। বৃষ্টি সব কিছু ভিজিয়ে দিবে, এটাই তার স্বাধীনতা। কিন্তু হঠাৎ করে যদি ভেজানো বন্ধ করে দেয়, সেটা হবে তার স্বাধীনতাবিরুদ্ধ আচরণ। তদ্রূপ নারীদের গতিপ্রকৃতির উপাদান হলো আড়ালে থাকা, আড়ালে রাখা। পুরুষের মতো বক্ষ উন্মুক্ত করে নারীরা চলতে পারবে না। বাইরে বাইর হলেও তারা চলবে শালীনভাবে, এটাই নারীর প্রকৃতি, এটাই তাদের স্বাধীনতা।
কিন্তু উন্মুক্তভাবে চললে তো সেটা স্বাধীন হলো না, পরাধীন হয়ে গেলো। জিনিস আপনার দেখছে হাজারো জনে, বিষয়টা পরাধীন হয়ে গেলো না? তাই এখানে নারীর ‘করা’তে নয়, ‘না করা’তেই রয়েছে স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতাকে উপেক্ষা করাকে বলে স্বেচ্ছাচারিতা। অতএব, স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতা এক জিনিস নয়। স্বাধীনতার স্ব প্রত্যয়টির অর্থ এককভাবে নিজের হলেও সেটা নির্দেশ করে সামাজিকতাকে, মানবিকতাকে।
আমি এ সামাজিক ও মানবিক স্বাধীনতার সবক পেয়েছি ইসলামে। ইসলাম মানবতারহিত কোনো ধর্ম নয় কিংবা ইসলাম কিছু বিধিবিধানেরও নাম নয়। পুরা মানবতাটাই হলো ইসলাম। ইসলামের বাইরে কোনো মানবতা নাই, কোনো মানবতাবাদও নাই। তাই ইসলামের নাম দিয়ে মানবতাবিরোধী কোনো অপরাধও ইসলাম গ্রহণ করে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৯ ভোর ৬:৫৪