somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবিসিতে প্রচারিত মহানবীর (সা) জীবনীভিত্তিক ডকুমেন্টারি ‘দ্য লাইফ অব মোহাম্মদ’ এর অনুবাদঃ পর্ব-১

২০ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১১ সালে বিবিসিতে প্রচারিত হয় মহানবীর (সা) জীবনীভিত্তিক ডকুমেন্টারি ‘দ্য লাইফ অব মোহাম্মদ’। তিন পর্বের এই ডকু-ফিল্মটি সম্প্রচারের পর পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক আলোচিত হয়। এই প্রথম কোনো পাশ্চাত্য মিডিয়া মহানবীর (সা) জীবনীর উপর পূর্ণাঙ্গ কোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করলো। ডকুমেন্টারিটির স্ক্রিপ্ট লিখেছেন ব্রিটিশ স্কলার জিয়াউদ্দীন সরদার। উপস্থাপনা করেছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক রাগেহ ওমর। ক্রিসেন্ট ফিল্মস নির্মিত ডকুফিল্মটির পরিচালনা করেছেন ফারিস কেরমানী। মহানবীর (সা) জন্মস্থান মক্কা, হেরা গুহাসহ ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে উপস্থাপক দর্শকদের নিয়ে গেছেন। পক্ষ-বিপক্ষের স্কলারদের প্রচুর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। মহানবীর (সা) জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে পাশ্চাত্য একাডেমিয়াতে সাধারণত যেসব প্রশ্ন তোলা হয়, এখানে ধরে ধরে সেসব ‘আপত্তি’ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

ভূমিকা

চৌদ্দশ বছর আগে বর্তমান সৌদি আরবের মক্কায় একজন মহান ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইতিহাসের গতিধারা পাল্টে দেয়া এই ব্যক্তিটি প্রায় দেড়শ কোটি মুসলমানের নিকট সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল, যিনি মানবজাতির কাছে আল্লাহর বাণী নিয়ে এসেছিলেন। তিনি একটি ধর্মের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন, যার নাম ইসলাম। তাঁর মৃত্যুর পর এটি একটি সংস্কৃতি ও সভ্যতা হিসেবে গড়ে ওঠে, যা কালক্রমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের অনেকগুলো আশ্চর্য সুন্দর স্থাপত্যশিল্প এই সভ্যতার হাত ধরে গড়ে ওঠেছে।

সে যাই হোক, বর্তমান বিশ্বে ইসলামকে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। বিশ্বজুড়ে একাধিক নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলার সাথে মোহাম্মদের (সা) নামকে জড়ানো হয়েছে।

মুসলমানদের কাছে তিনি হলেন অনুসরণীয় চূড়ান্ত আদর্শ। তাঁর বিস্তারিত জীবনীও মুসলমানরা জানে। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের বাইরে বলতে গেলে কেউই তাঁর সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। তাই তিনি আসলে কে, তিনি কী বার্তা নিয়ে এসেছিলেন, মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে বহু মানুষ কেন তাঁর শিক্ষার বিরোধী– এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

মোহাম্মদের (সা) উপর নাজিলকৃত ঐশীবাণী, বহুবিবাহ নিয়ে বিতর্ক, ইহুদীদের সাথে তাঁর সম্পর্ক, যুদ্ধ ও শান্তির সময়ে অনুসৃত নীতি, তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে প্রণীত আইনসহ তাঁর জীবনের বহু জটিল ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ আমি এই সিরিজে তুলে ধরবো। তৎকালীন সময় ও তাঁর জীবনীর উপর আমি একটি নির্মোহ পর্যালোচনা করতে চাই। বর্তমান বিশ্বকে কীভাবে তা প্রভাবিত করছে, সে ব্যাপারটি বুঝতে চাই। তাঁর শিক্ষা আমাদের জন্য ভালো নাকি মন্দ– সেটিও বুঝে নিতে চাই। আমি ইসলামের নবী মোহাম্মদের (সা) সঠিক পরিচয় তুলে ধরতে চাই। আল্লাহ তাঁর উপর শান্তি বর্ষণ করুন।

প্রথম পর্ব: সত্যসন্ধানী

মুসলমানরা অতি সাধারণ দুই টুকরো সাদা কাপড় পরিধান করে মক্কায় হজ ও ওমরা করতে আসে। দৈনন্দিন পরিধেয় কাপড়ের পরিবর্তে পবিত্রতা ও সমতার প্রতীক হিসেবে তারা এই সাধারণ কাপড় তারা পরিধান করে। গত চৌদ্দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে, অর্থাৎ মোহাম্মদের (সা) সময়কাল থেকে এখন পর্যন্ত অব্যাহতভাবে ঐতিহ্যটি পালিত হয়ে আসছে।

জন্মের পর পরই আমার কানে প্রথম যে শব্দগুচ্ছ প্রবেশ করে, তাহলো কালেমায়ে শাহাদাত, ঈমানের সাদামাটা ঘোষণা– ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মোহাম্মদ আল্লাহর রাসূল’। এই ঘোষণা একইসাথে আমাকে মক্কা এবং ইসলামের প্রতিষ্ঠাতার সাথে সংযুক্ত করে দিয়েছিলো। অধিকাংশ মুসলমানের মতো আমিও বাবা-মায়ের পরিবর্তে মোহাম্মদের (সা) নামই সর্বপ্রথম শুনেছি।

ত্রিশ বছর আগে যখন আমার বয়স ছিলো পাঁচ, তখন পরিবারের সাথে হজ করার উদ্দেশ্যে মক্কায় এসেছিলাম। মক্কার কাবাঘর হলো ইসলামের সর্বাধিক পরিচিত প্রতীক। মুসলমানরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, কাবার দিকে ফিরে প্রতিদিন পাঁচবার তারা নামাজ আদায় করে। আল্লাহর দরবারে নিজেকে সঁপে দিয়ে কাবার চারদিক প্রদক্ষিণ করার মাধ্যমে মুসলমানরা মোহাম্মদের (সা) পদাঙ্ক অনুসরণ করে। কোন একতার টানে সারা দুনিয়া থেকে লোকজন এখানে আসে? এ প্রশ্নের উত্তর হলো, সবাই নবী মোহাম্মদের (সা) জীবনের মতো করে নিজের জীবনকে সাজাতে চায়। খ্রিস্টানদের কাছে যিশু যতটা গুরুত্বপূর্ণ, মুসলমানদের কাছে মোহাম্মদ (সা) ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই মানুষটি তাদের শুদ্ধ পরিচয় নির্ধারণ করেছেন।

তবে তারা যিশুর মতো মোহাম্মদকে (সা) আল্লাহর পুত্র মনে করে না। আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতোই তাঁর জন্ম হয়েছিলো, যিশুর মতো অলৌকিকভাবে নয়। তিনি সাধারণত কোনো অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শন করতেন না। যিশুর মতো তিনি পুনরুত্থিতও হননি। তিনি আমাদের মতোই একজন মানুষ ছিলেন।

মক্কা নগরী

চৌদ্দশ বছর আগে মোহাম্মদ (সা) যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেখানকার পরিবেশ ছিলো বসবাসের জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল। সেই তপ্ত মরুভূমি ও রুক্ষ পার্বত্যঞ্চলটি আকারে ছিলো ইউরোপের এক-তৃতীয়াংশ। এর অবস্থান ছিলো তৎকালীন দুনিয়ার দুই বৃহৎ পরাশক্তির মাঝখানে। উত্তরে ছিলো রোমানদের সর্বশেষ সাম্রাজ্য খ্রিস্টান বাইজেন্টাইন। এর রাজধানী ছিলো কনস্টান্টিনোপল। আর পূর্বে ছিলো আরেক প্রাচীন শক্তি, বিশাল পারস্য সাম্রাজ্যের অবশিষ্টাংশ– সাসানীয় সভ্যতা। এর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অসংখ্য আরব উপজাতি ও গোত্র আধিপত্য বিস্তার ও টিকে থাকার লড়াইয়ে সর্বদা লিপ্ত থাকতো। পুরো অঞ্চল জুড়ে শহর ছিলো মাত্র গুটিকয়েক। এরমধ্যে অন্যতম হলো তাঁর জন্মস্থান মক্কা।

মোহাম্মদ (সা) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জন্মের আগেই তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন। আর মা আমেনা ছিলেন খুবই দরিদ্র। সবচেয়ে বড় কথা হলো, একজন ‘মেসিয়াহ’র যে আগমন ঘটছে, এর কোনো ইঙ্গিত ছিলো না। তাঁর আগমনে আকাশে বিশেষ কোনো তারকার আবির্ভাব ঘটেনি। তাঁর উপাসনা করতে দূরদূরান্ত থেকে জ্ঞানী লোকদের আগমনও ঘটেনি। মাত্র গুটিকতেক জ্ঞানী ব্যক্তি ব্যাপারটি খেয়াল করেছিলেন। বাদবাকিরা ঘটনাটিকে আদৌ তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি। মোহাম্মদ (সা) ঠিক কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এর কোনো চিহ্ন এখন আর নেই। কোনো স্মৃতিসৌধ নেই, যাদুঘর নেই, এমনকি একটি ফলক পর্যন্তও নেই।

কেন মহানবীর প্রতিকৃতি আঁকা হয় না?

বেশিরভাগ মুসলমানই ব্যক্তি মোহাম্মদ (সা) ও তাঁর প্রচারিত শিক্ষার মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য মেনে চলেন। মোহাম্মদ (সা) নিশ্চয় উচ্চ মর্যাদায় আসীন, কিন্তু তাই বলে তিনি উপাসনাযোগ্য নন। তাঁর ইবাদত করা শিরক হিসেবে বিবেচিত। ইসলামে এটি জঘন্য ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আর তাই মানুষ যাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করে, সে জন্য মোহাম্মদের (সা) স্মৃতি বিজড়িত বহু স্থানের চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে। মোহাম্মদের (সা) প্রতিকৃতি আঁকার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাই খ্রিস্টান চার্চগুলোতে ক্রুশবিদ্ধ যিশু ও কুমারী মাতা মেরির অসংখ্য ছবি দেখা গেলেও মসজিদগুলোতে মোহাম্মদ (সা) কিংবা অন্য কারোরই কোনো ছবি নেই। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কনটেম্পোরারি ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক তারিক রমাদান এ সম্পর্কে বলেন,

ঠিক এ কারণেই মুসলমানদের জন্য ইসলামী একেশ্বরবাদ (যাকে আমরা আরবীতে বলি ‘তাওহীদ’ তথা আল্লাহর একত্ববাদ) সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ সবকিছুর ঊর্ধ্বে। তাই আমরা আল্লাহর কোনো প্রতিকৃতি বানাই না। এটি খোদার সাথে আমাদের এই বিশেষ সম্পর্কেরই দাবি। আমরা নবীদেরও কোনো ধরনের প্রতিকৃতি বানাই না। কেবল সর্বশেষ নবী মোহাম্মদই (সা) নন, ইব্রাহীম (আ), মুসা (আ), ঈসা (আ) সহ সকল নবীর ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি কমিটমেন্টের কারণেই আমরা কখনো মহানবীর (সা) ইবাদত করি না।

অতীতে কিছু উসমানীয় ও ইরানী মিনিয়েচার পেইন্টিংয়ে মোহাম্মদের (সা) ছবি আঁকা হয়েছিলো। তবে সেগুলোর সবগুলোতেই তাঁর মুখাবয়বকে আড়াল রাখা হয়েছে। অন্যদিকে পাশ্চাত্যের ড্রয়িং ও পেইন্টিংয়ে মোহাম্মদের (সা) প্রতিকৃতি আঁকার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

অতি সম্প্রতি একটি ডেনিশ কার্টুনে পাগড়ির ভেতর বোমা সম্বলিত একজন সন্ত্রাসী হিসেবে মুহাম্মদকে (সা) চিত্রিত করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম বিশ্ব জুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এই প্রতিবাদের পেছনে নিছক মুখাবয়ব আঁকাই মুখ্য কারণ ছিলো না। এই ধরনের কার্টুন প্রকাশের মাধ্যমে তাঁকে অপমান করাটাই ছিল মূল ইস্যু।

মহানবীর জীবনীর বিশুদ্ধতা কতটুকু?

মোহাম্মদের (সা) ছবি খুব একটা না থাকলেও তাঁর জীবনী সংক্রান্ত অসংখ্য লিখিত বিবরণ রয়েছে। এরমধ্যে প্রথমটি হলো স্বয়ং ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন। এছাড়াও মোহাম্মদের (সা) জীবনের অসংখ্য ঘটনা ও নিজের কথা তাঁর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এগুলো হাদীস নামে পরিচিত। মুসলিম পণ্ডিতগণ মোহাম্মদের (সা) অসংখ্য বাণী ও তাঁর সম্পর্কে বলা ঘটনাগুলো নানাভাবে যাচাই করে বিশুদ্ধ রেফারেন্সগুলো আলাদাভাবে সংরক্ষণ করেছেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের সিনিয়র লেকচারার ড. আমিরা বেনিসন এ প্রসঙ্গে বলেন,

মুসলিম পণ্ডিতরা সংগৃহীত হাদীসগুলো যাচাই-বাছাই করে বিশুদ্ধ হাদীসগুলো থেকে ভুয়া ও জাল হাদীসগুলো আলাদা করার চেষ্টা করেছেন। এসব বিষয়ে তারা সর্বোচ্চ পরিমাণ সচেতন থাকতেন।

জেরুসালেমে অবস্থিত হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসের অধ্যাপক রবার্ট হয়ল্যান্ড অবশ্য হাদীসের বিশুদ্ধতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে বলেন,

এ ব্যাপারটি নিয়ে গবেষকরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়েন। যেমন একটা সমস্যা হলো, এগুলোর লিখিত ভাষ্য তৈরি হয়েছে অনেক পরে। ৮২০ খ্রিষ্টাব্দের আগে প্রকৃতপক্ষে আমরা কোনো লিখিত বর্ণনা পাই না। অথচ মোহাম্মদ মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে। তারমানে একটা লম্বা সময় পরে এসে এসব লেখা হয়েছে। হ্যাঁ, মাঝখানের এই সময়টাতে প্রত্যেক যুগের লোকেরা নিশ্চয় হাদীসগুলো পরবর্তী যুগের লোকদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়ে গেছে। কিন্তু তা ছিল মুখে মুখে। হাদীসগুলোর বিশুদ্ধতার প্রশ্নে এটা একটা সম্ভাব্য দুর্বলতা।

তবে সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদেল হালিম মনে করেন, এই সংশয়ের কোনো ভিত্তি নেই। তাঁর যুক্তি হলো,

ঐতিহাসিকভাবেই আরবরা তাদের স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর করতো। স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর করেই তাদের ইতিহাস, বংশলতিকা ইত্যাদি সবকিছু সময়ের পরম্পরায় চলে এসেছে। আর সেখানে মোহাম্মদ (সা) তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। মৃত্যুর সময় তাঁর অনুসারী ছিলো হাজার হাজার, বিরোধী লোক ছিলো কম। তাঁর অনুসারীরা সবকিছু বলে গেছেন, সংরক্ষণ করে গেছেন। এখন কিছু লোকের ‘এগুলো তো বানোয়াট কথা মাত্র’ কিংবা ‘এগুলোর লিখিত রূপ তো অনেক পরে এসেছে’ নিছক এ জাতীয় বক্তব্যের কারণেই হাদীসের এই সমস্ত সূত্রগুলোকে উপেক্ষা করা যায় না।

হাদীসের বিশুদ্ধতা নিয়ে বিতর্ক চলমান থাকলেও কিছু অমুসলিম সূত্র থেকেও কিন্তু মোহাম্মদের (সা) ঐতিহাসিক কর্মকাণ্ডের বিবরণ পাওয়া যায়। এটি অবাক হওয়ার মতো একটি ব্যাপারই বটে। সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের নিয়ার অ্যান্ড মিডল-ইস্ট হিস্ট্রির ইমেরিটাস অধ্যাপক জেরাল্ড হটিং আমাদের জানাচ্ছেন,

মোহাম্মদকে নিয়ে অমুসলিম সূত্রে বর্ণিত তথ্যপ্রমাণ খুব বেশি নেই। অল্পকিছু ঐতিহাসিক দলীল রয়েছে মাত্র। মোহাম্মদের মৃত্যু পরবর্তী ৩০ বছরের মধ্যে গ্রিক, সিরিয়াক ও আর্মেনীয় ভাষায় তাঁর নামের লিখিত রূপ পাওয়া যায়। আমি মনে করি, তাঁর মৃত্যুর ৩০ বছরের মধ্যে এমনটি ঘটা একেবারে কম কিছু নয়।

প্রচলিত তথ্য হলো, ঐতিহাসিক সেবেউস মোহাম্মদের (সা) মৃত্যুর মাত্র ২৪ বছর পর আর্মেনীয় ভাষায় তাঁর সম্পর্কে লিখে গেছেন। তবে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ অনুষদের অধ্যাপক রবার্ট থমসন জানাচ্ছেন,

এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, প্রথমবারের মতো একজন আর্মেনীয় তথা একজন অমুসলিম মোহাম্মদ সম্পর্কে বলেছেন, তাঁর নাম উল্লেখ করেছেন এবং তাঁর কর্ম সম্পর্কে কিছুটা বিবরণ দিয়েছেন। সেবেউস নিজে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন ৬৩০ সালের দিকে। তারমানে এটি প্রকৃতপক্ষে মোহাম্মদের মৃত্যুর আগের ঘটনা।

অবাক করা বিষয় হলো, মোহাম্মদের (সা) পরিচয় ও তাঁর শিক্ষা সম্পর্কে একদম সঠিক তথ্যই সেবেউস তুলে ধরতে পেরেছেন। অধ্যাপক রবার্ট থমসন আর্মেনীয় ভাষায় সেবেউসের লেখা থেকে অনুবাদ করে আমাকে শুনিয়েছেন–

সেই সময় মেহমেত (আর্মেনীয় ভাষায় মোহাম্মদকে মেহমেত উচ্চারণ করা হয়) নামে একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। ঈশ্বরের আদেশপ্রাপ্ত হয়ে তিনি মানুষের কাছে ধর্মপ্রচারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তারপর, বর্তমানে তিনি তাদেরকে অনেকগুলো বিধিনিষেধ দিয়েছেন। যেমন– মৃত প্রাণীর মাংস ভক্ষণ করো না, মদপান করো না, মিথ্যা কথা বলো না, ব্যভিচার করো না ইত্যাদি।

মোহাম্মদের (সা) সময়কাল সম্পর্কে মুসলিমদের বর্ণনার সাথে সেবেউস ও অন্যান্য অমুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনা মোটাদাগে মিলে যায়। কোরআন ও হাদীসের সমন্বয় করলে আমরা মোহাম্মদের (সা) জীবনের বিস্তৃত ও খুঁটিনাটি ঘটনাগুলো খুঁজে পাই।

মূল লেখাঃ https://cscsbd.com/2162
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১:১৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×