এরপর সাংবাদিকরা উপস্থিত ভোটারদের নিকট এগিয়ে এলেন তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য। সবাইকে একই প্রশ্ন, এবার নির্বাচন কেমন হবে বলে মনে করছেন? ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ কেমন? ইত্যাদি ইত্যাদি। আর ভোটারদের উত্তরও গৎবাধা। নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে বলে আশা করছি, ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ ভালো ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার কাছেও আসলো একজন। একই রকম প্রশ্ন, তাই উত্তরও একই রকম দিলাম। তবে একটু বাড়তি যোগ করলাম যে, সকালের পরিবেশ দেখে সারা দিনের কথা বলা যায় না। মূলত এগারো বারোটা থেকেই শুরু হয় যত অনিয়ম। তাই আপনারা সে পর্যন্ত ধৈর্য ধরে থাকুন।
এরপর শুরু হলো ভোট গ্রহণ। ভোট গ্রহণের শুরুতেই গেটের সামনে দাড়ানো এক কর্মকর্তা উচ্চস্বরে ঘোষণা দিলেন, ভোট কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে যাওয়া যাবে না। মোবাইল রেখে তারপর যেতে হবে। এ ঘোষণা শুনে উপস্থিত ভোটাররা অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। আমি নিজেও চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমার এত দামি ফোটসেটটা কার কাছে রেখে যাবো। ভাবলাম ফোন বন্ধ করে পকেটেই রাখি। পুলিশ জিজ্ঞেস করলে বলবো, নেই। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে সে আশায় গুড়ে বালি। কারণ সে কর্মকর্তা একজন পুলিশকে ভোটারদের শরীর চেক করে কেন্দ্রের ভিতরে প্রবেশ করানোর নির্দেশ দিলেন। কী করবো ভাবছি, এমন সময় দেখি, দুইজন লোক টেবিল পেতে ভোটারদের মোবাইল জমা রাখছে। তারা মূলত একজন ওয়ার্ড কমিশনারের কর্মী। তাদের কাছে মোবাইল রেখে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করলাম। ভোট দিলাম। আমি যে বাড়িতে থাকি, সে বাড়ির মালিকের ছোটো ভাই আবার ওয়ার্ড কমিশনার পদে দাড়িয়েছে। মূলত তাকে ভোট দেওয়ার জন্যই যাওয়া। ও হ্যা, মহিলা কমিশনার হিসেবে যাকে দিয়েছি তিনিও অনেক ভালো মানুষ। ইতিপূর্বে কমিশনার থাকাকালে তিনি মানুষকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমিও তার নিকট থেকে বিভিন্ন বিষয়ে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।
ভোট দেওয়া শেষে আরো দু’একটা ভোট কেন্দ্র দেখে বাসায় চলে আসলাম। সকালে ভোটের পরিবেশ ঠিকই ছিলো, কিন্তু দশ-এগারোটার পর থেকেই গাজীপুরের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন অনিয়মের খবর আসতে লাগলো। হামলা, কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জাল ভোট দেওয়া, বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, একাধিক ভোট দেওয়া ইত্যাদি অনিয়মের খবর আসতে লাগলো। হাসান সরকার নির্বাচন বর্জনের ডাক দিলেন। আরো এক মেয়র প্রার্থী রাস্তায় নির্বাচন বর্জনের দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ করলেন। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন শেষ হলো এবং প্রত্যাশিত ভাবেই নৌকা জিতলো। আওয়ামী লীগের দাবী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে আর বিএনপির দাবী নির্বাচনে সব রকম অনিয়মই হয়েছে। অবশ্য যে কোনো নির্বাচনেই দুই দলের এমন পাল্টাপাল্টি ঘোষণা আর অভিযোগ থাকে। এ নিয়ে আমাদের সাধারণ জনতার মাথা ঘামিয়ে আসলে কোনো লাভ হয় না। যাই হোক শেষ পর্যন্ত গাজীপুরের নগর পিতা হলেন নৌকা প্রতীক নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম। দেখি তিনি গাজীপুরের কী উন্নতি করতে পারেন।
সর্বশেষ, আমি যে ওয়ার্ড কমিশনারকে ভোট দিয়েছিলাম তিনি নির্বাচিত হতে পারেননি। শোকের ছায়া সারা বাড়িতে। কর্মীরা শুকনো মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সারা বাড়ি থমথম করছে। তবে মহিলা কমিশনার অবশ্য জয় লাভ করেছেন। এভাবেই আনন্দ, বেদনা, হতাশা, প্রত্যাশা আর স্বপ্নভঙ্গ নিয়ে শেষ হলো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:২১