somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভয় (অনুলিখিত হরর কাহিনি) -১ম পর্ব

০৯ ই অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনীশ দাশ অপু আমার অনেক প্রিয় একজন হরর লেখক।উনার সম্পাদিত মৃত্য-পুতুল ব্ই এর প্রিন্স আশরাফ রচিত ভয় নামক এই গল্পটি আমার অনেক ভাল লেগেছিল তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম এইখানে।গল্পটি যেমন ছিলো পুরাপুরি তাই তুলে ধরছি....

আগেরদিনে গ্রামে যাদের টাকা পয়সা ছিলো বা হতো তারা হজ্জে যেতো।এখন অবস্থা বদলেছে।এখন গ্রামের টাকাওয়ালা লোক হজ্জে না যেয়ে সেই টাকায় ছেলেমেয়েদেরকে শহরের বেসরকারি ভার্সিটি বা মেডিকেলে ভর্তি করায়।

আমার বাবা অবশ্য দুটোই করেছেন।তার টাকা পয়সার অভাব নেই।ইউনিয়ন পরিশোধের চেয়ারম্যান তিনি।তাছাড়া ৩০০ বিঘার লীজ-ঘের আছে আমাদের।কাজেই ১০-১২ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি করানো এবং মাকে নিয়ে হজ্জে যাওয়া বাবার কাছে কোন ব্যাপার ই না।
বাবা হজ্জ থেকে আসার পর গ্রামের ছোট ছোট অনেক পরিবর্তন হয়েছে।ভাড়ায় ভিসিআর দেখানোর দোকানগুলো উঠে গেছে।বন্ধ হয়েছে দোকানের পিছনের ফেন্সিডিল ও গাজার পুরিয়া বেচা।আমার অবশ্য সমস্যা নেই।চেয়ারম্যানের ছেলে হওয়ার আমার সাপ্লাই সময়মত চলে আসে।
আর কয়দিন পরেই মেডিকেলে পড়তে যাবো বিধায় যা খাওয়ার এখন খেয়ে নিচ্ছি।ডাইল খাওয়ার জন্য সন্ধার পর ঘেরের সবচেয়ে দূরের কুড়েঁ ঘরে এসেছি।সঙ্গে আছে বন্ধুস্থানীয় বাবুল আর ঘেরের দুই পাহারাদার।ডাইল খেলে মাতাল হয় না কেউ,ঝিম মেরে বসে থাকতে হয়।আমরাও ঝিম মেরে বসে আছি।হঠাৎ একটা জিনিস মনে পরলো।আমি মাথা তুলে কারো দিকে না তাকিয়ে বললাম,"আমার একটা লাশ দরকার"
বাবুল চমকে উঠলো।আর ঘেরের পাহারাদার হামিদ বললো "ছোটোভাই,কন কার লাশ ফেলে দিতে হবে।আপনি খালি কন"
আমি মাথা ঝাকিয়ে বললাম "নির্দিষ্ট কারো না।যে কোনো মরা লাশ হলেই হবে।ডাক্তারি পরতে লাশ লাগে।লাশের হাড়গোড় লাগে।ঢাকা শহরে দশ বারো হাজার টাকা লাগে হাড় পেতে।তা্ই ভাবলাম যদি গ্রাম থেকে নিয়ে যাওয়া যায়। "
হামিদ ভাই আগের মত খসখসে গলায় বললো "কি কন ছোটভাই?হাড়ের দাম দশ হাজার টাকা?তাইলে তো প্রত্যেকদিন একটা করে লাশ নিয়ে ঢাকায় বেচে দিলে হয়।শুধু টাকা আর টাকা।"
"যেরকম ভাবছ তেমন সোজা না,ঝামেলা আছে"
ইয়াসিনের মাথা মোটামুটি ঠান্ডা,সে ভেবে বললো "ছোটভাই কবর দেয়া লাশ হলে চলবে?"
"কদিন আগে কবর দেয়া?শুনেছি বেশি আগে কবর দেয়া হলে সেই হাড়ে মাটি লেগে যায়।ঐ হাড় হবে না।"
ইয়াসিন হাত গুনে বললো "দুইদিন আগের"
"চলবে যদি হাড় ফ্রেশ থাকে"
"ফ্রেশ থাকতে পারে।যুবতি বউ তো,তারপর আবার বিষ খাওয়া লাশ।"
হামিদ ওপাশ থেকে বলে "কার কথা কও ইয়াসিন ভাই?"
"কেন বাগদি পাড়ার সন্নাসির বউ।এনড্রিন খেয়ে মরলো না।
আমি অবাক গলায় বললাম "বাগদিরা লাশ পোড়ায় না নাকি?"
ইয়াসিন বললো "মনে হয় না।পোড়াতে অনেক খরচ।ওদের এত টাকা কই?তারপর বিষ খাওয়া।পা ভেঙে সোজা মাটিতে পুতে ফেলে।"
"বাগদি ব্উ এর লাশ ই যদি হয় তাহলে আজ তুলে ফেলা ভালো।৩দিন হয়ে গেলে আমার আর কাজে লাগবে না"
"তাহলে আজই লাশ তুলে ফেলি"
হামিদ বললো "সবাই ঘুমিয়ে পরলে রাত একটু বাড়লে বের হই।আজ রাতটা বেশ ভালো।"
ঘেরের মধ্যেই সব জোগাড় হয়ে গেলো।কোদাল,শাবল আর লাশ বয়ে আনার জন্য বস্তা।
ইয়াসিন ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম "চুন আছে নাকি?"
"কতটুকু?"
"এই বস্তা খানেক"
"তা হবে।কিন্তু কি করবেন?"
"চুনগোলা পানিতে লাশ ফেলে ফুটালে হাড়ের গা থেকে সহজে মাংস ছাড়িয়ে যায় শুনেছি।"
বাবুল বলে উঠল "গন্ধ হবে না?"
"তা হয়তো হবে।কিন্তু ঘেরের এই ফাকা জায়গায় গন্ধ হলেই বা পাবে কে আমরা ছাড়া।আশে পাশে তো কোনো ঘর বাড়ি নাই"
রাতের খাবার খেয়ে সব গুছিয়ে উঠতে এগারোটা বাজলো।আমরা ৩ জন রওনা দিলাম।ঘের পাহারা দিতে হামিদ থেকে গেল।অবশ্য সে বস্তার চুন বড় পাত্রে ঢেলে পানি দিয়ে ফুটাতে থাকবে যাতে আমরা এসেই ওতে লাশ ছেড়ে দিতে পারি।
ঠান্ডা বাতাস ছেড়েছে।তার মধ্যে টর্চের আলো ফেলে বাগদি পাড়ায় পৌছাতে বারোটা ছাড়িয়ে গেল।বাবুলের চোখ শকুনের চোখ।সে এই অন্ধকারেই ঠিকই বাগদি বউ এর কবর খুজে বের করলো।আমি টর্চ জালিয়ে ধরলাম,ইয়াসিন ভাই কোদাল দিয়ে মাটি খুড়তে লাগল আর বাবুল হাত দিয়ে মাটি সরিয়ে রাখতে শুরু করলো।
বাবুলের চোখ সত্যিই শকুনের চোখ।এই অন্ধকারেও সে বলে দিলো "ইয়াসিন ভাই তাড়াতাড়ি হাত লাগান।ওয়াপদার রাস্তা দিয়ে কেউ এই দিকে আসছে মনে হয়।"
শুনে ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল,যদি ধরা পরে যা্ই।
কবরের মধ্যে ওটাকে কফিন না বলে বাক্স বলা ভাল।তার মধ্যে কেবল পচন ধরেছে বাগদি বউ এর লাশে।ওরা দুজনে ধরাধরি করে লাশ বস্তায় ভরে মুখ বন্ধ করে ফেলে।
বস্তা নিয়ে রাস্তায় উঠতেই বাবুলের দেখা আগন্তুকের সাথে দেখা হলো।
ইয়াসিন ভাই চড়া গলা্য় বললো "কে যায় এত রাতে?"
কাচুমাচু কন্ঠে জবাব পাওয়া গেলো "আমি বাগদি পাড়ার সন্নাসি"
"এত রাত বিরাতে ঐদিকে কই যাস?"
"কবরখানার দিকে।মনে হলো কারা যেন আছে কবরখানায়।আমার বউডার তো আবার ২দিন হলো কবর দে্য়া।"
"যা দেখে আয়।একা একা ভয় পাসনে"
সন্নাসি সাহস করে বলে উঠে "আপনারা কনে যান?"
"আমরা তো ঘেরের জন্য চুন আনতে গেছিলাম।এই বস্তা করে চুন নিয়ে যাচ্ছি।তুই যা।আমাদেরও দেরি হয়ে যাচ্ছে "
যাক একটা ফাঁড়া তো কাটলো।তারপর চুনের পানিতে লাশ জাল দিয়ে ফ্রেশ হাড় নিয়ে বাড়ি ফিরেই ঘুম।
ফাঁড়া যে কাটে নাই তা বুঝলাম পরদিন পুলিশের ডাকে ঘুম ভাঙাতে।পুলিশ কেন এসেছে তার কারণ বুঝতে আর বাকি রইলো না।তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি ইয়াসিন ভাই,হামিদ ভাই,বাবুল এর সাথে সন্নাসি বাগদি ও আছে।
পুলিশ আর বাবা কে বুঝাতে বেশি সময় লাগলো না,আর বাগদির মুখ বাবা আগেই টাকা দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে।সে দেখলাম মহা খুশি।বললো "আমার বউ এর হাড় দিয়ে ছোটকর্তা ডাক্তারি পড়বে,এ তো অনেক সৌভাগ্যের কথা"
তারপর বাসে পুলিশ কে কিছু টাকা খাইয়ে বুঝিয়ে,সবার চোখ বাচিয়ে কিভাবে ঢাকায় বাসায় ফিরলাম সে কথা আর না বলি।টাকা পয়সার সমস্যা না থাকায় কয়জন বন্ধু মিলে উত্তরায় ফ্লাট ভাড়া নিলাম।মেডিকেলে পড়ার অনেক চাপ।সারাদিন পড়া নিয়েই পরে থাকি।একদিন বন্ধুর বাসা থেকে ফেরার পথে মনে হলো বাসে হামিদ ভাই কে দেখলাম।কিন্তু হামিদ ভাই গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় কেন আসবে?আরো মনে হলো সে যেন আমাকে দেখেই তড়িঘড়ি বাস থেকে নেমে গেল।ভাবলাম তা হলে হ্য়তো হামিদ ভাই নয়।তবুও মনের খচখচানি না যাওয়ায় বাড়িতে খবর নিয়ে জানলাম,হামিদ ভাই ঘেরের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় কি জানি ব্যবসা করে যার জন্য তাকে ঢাকায় আসতে হয়।
হামিদ ভাই এর চিন্তা মাথা থেকে প্রায় ঝেড়ে ফেলেছি এমন সময় তাকে আবার দেখলাম,তাও আমাদের মেডিকেল কলেজে।পালানোর আগে প্রায় হাতে নাতে ধরলাম।এক কর্মচারীর সাথে হাড়ের লেনদেন চলছিল।হামিদ ভাই কে ক্যান্টেনে ডেকে নিয়ে বসি্যে কড়া গলা্য বললাম"তাহলে এখন ঘেরের কাজ ছেড়ে দিয়ে হাড় বিক্রির ব্যবসা ধরেছো?"
হামিদ ভাই কাচুমাচু মুখে বললো "না,মানে ছোটভাই একটা সুযোগ এসে গেলো,গরীব মানুসের লাশ..."
কড়া গলায় বললাম "ওসব ধান্দাবাজি ছেড়ে বলো কবে থেকে এই ব্যবসা করছো?গ্রামের কতোগুলা কবর খুড়ে লাশ বের করে বিক্রি করছো?"
"এই নিয়ে মোট দুইবার এই কাজ করছি ছোটভাই।"
"এই রকম আরো কত দুইবার আছে তা আল্লাই জানে।লাশ কি কবর খুড়ে তুলছো?"
"হু"
"কেউ জানতে পারে নাই"
"না।তবে পুলিশ সন্দেহ করছে।আপনার দোহাই লাগে ছোটোভাই আপনে কাওরে জানা্য়েন না"
"ঠিক আছে আমি কাওকে জানাবো না।তবে এই ব্যবসা ছেড়ে দাও।লাশের আত্মার অভিশাপ লাগে"।
হামিদ ভাই কি বুঝলো কে জানে।শুধু মুখ গম্ভীর করে উঠে গেল,আমার অনেক অনুরোধ সত্তেও আমার বাসায় গেলো না।
বাসায় ফিরে দেখি আরেক কান্ড।রুমমেট হাসান বাড়ি থেকে ফিরেছে সাথে রয়েছে ছোট তবে বেশ ভাল একটা ভিডিও ক্যামেরা।যা সামনে পায় তাই ভিডিও করে।মেডিকেলের একঘেয়ে পড়া থেকে মুক্তি পেতে হাসানের সাথে ফিল্মের একটা সর্ট কোর্সে ভর্তি হয়ে গেলাম।

তারপর চলবে....পরের পর্বে
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১০:৫৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×