somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্যান ফিকশন - কোয়ারেন্টাইনে তিন গোয়েন্দা

১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফ্যান ফিকশন
কোয়ারেন্টাইনে তিন গোয়েন্দা
১৭/০৪/২০২০
স্কুল বন্ধ এবং মিসেস পারকার উনার অসুস্থ ভাইকে দেখতে জর্জিয়া গিয়েছেন, এজন্য তিন গোয়েন্দা জিনাদের বাড়িতে এসেছেলো, ছুটিও কাটানো হলো আবার জিনাকেও সঙ্গ দেওয়া হলো। ওরা আসার এক সপ্তাহ পরেই কোভিড- ১৯ এর প্রভাব বাড়তে থাকায় শুরু হলো লকডাউন, সেই থেকে আজ একমাস ওরা জিনাদের বাড়িতেই আছে।

মেরী চাচী একবার বলেছিলেন এসে কিশোরকে নিয়ে যেতে, একইভাবে মিস্টার আমান আর মিস্টার মিলফোর্ডও ভাবছিলেন। কিন্তু পরে ভাবলেন ছেলেরা বাড়িতে আসলে একা বসে থাকতে হবে অন্যদিকে জিনাও একা হয়ে যাবে, এই পরিস্থিতি কখন শান্ত হবে তার ঠিক নাই, এর চেয়ে সবাই একসাথেই থাকুক সময় ভালো কাটবে।

মিস্টার পারকার রান্নাবান্না তেমন জানেন না, তিন গোয়েন্দাও প্রায় একইরকম, জিনা শুধুমাত্র নুডলস বানাতে জানে। লকডাউনের আগে ওরা রেস্টুরেন্টে গিয়ে অথবা উবারের মাধ্যমে বাসায় আনিয়ে খেতো, কিন্তু লকডাউনের ফলে সেটাও বন্ধ। মাঝেমধ্যে ওরা ইউটিউব দেখে দুয়েকবার রান্নার চেষ্টা করেছিলো বটে, মুসা অল্পবিস্তর খেলেও বাকি কেউ মুখেই দিতে পারেনি। রাফিকে দেওয়া হলে সে "ঘোৎ" শব্দে জানান দিলো যে এসব অখাদ্য তার চলেনা,ভবিষ্যতে যেনো তাকে আর না দেওয়া হয়। সেই থেকে ওরা ডিমসেদ্ধ আলুসেদ্ধ বা ফ্রোজেন খাবার খেয়েই আছে।

এক অলস দুপুরে তিন গোয়েন্দা জিনাদের লিভিং রুমে বসে আছে, হঠাৎ জিনার আগমন, "সবার জন্য সুসংবাদ আছে, বিশেষ করে মুসার জন্য" বলেই সে ধপাস করে সোফায় বসলো। রবিন বই থেকে মাথা তুলে একবার জিনার দিকে তাকিয়ে আবার বইয়ে মুখ ডুবালো,ওর সুসংবাদে তেমন আগ্রহ নাই, আর সুসংবাদটা যেহেতু বিশেষ করে মুসার জন্য সেহেতু সেটা খাবার সংক্রান্ত কিছু একটা হবে, হয়তো জিনা ইউটিউব দেখে নতুন কোন রেসিপি শিখেছে। এদিকে কিশোর ব্যস্ত একটা ধাঁধা সমাধান করতে, ফেসবুকে শুটকি টেরি তাকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছে,সেও আগ্রহ দেখালো না।বাকি রইলো মুসা। গত ১ মাস যাবত নুডলস খেতে খেতে বেচারা শেষ, তার উপর ফারিহা কোয়ারেন্টাইনের সুযোগে মায়ের কাছ থেকে রান্না শিখছে আর প্রতিদিন নানান পদের খাবারের ছবি মুসাকে পাঠিয়ে বেচারার কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছে, সে জিনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে থাকালো।

"আমাদের প্রতিবেশী মিসেস শেলভি একটু আগে ফোন করছিলেন, বললেন যে আমাদেরকে আজ উনি ডিনার রান্না করে পাঠাবেন,একটু পরে উনি বাজার করতে যাবেন, পছন্দের কোন আইটেম থাকলে......" জিনা কথা শেষ করার আগেই মুসার শরীরে দুনিয়ার সব এনার্জি চলে আসলো, সে লাফ দিয়ে উঠে বললো "কয়টা আইটেম বলা যাবে"?
কিশোর এবার আগ্রহ দেখালো " দুইটার বেশী বলা উচিত হবেনা,এখন জিনিসপত্র কেনা খুব কঠিন আর মিসেস শেলভিও বয়স্ক মহিলা, উনাকে বেশি কষ্ট দেওয়া ঠিক হবেনা, আর আমার কোন পছন্দের আইটেম নাই, আমার সব চলে, মুসার পছন্দই সই"।
রবিনও তাতে ভোট দিলো "আমারও, আমি চিপস খেয়েই দিন কাটাতে পারি, সমস্যা তো আমাদের মুসা সাহেবের, বেচারা কতদিন ভালোমন্দ খায়না, তার পছন্দই চলুক" জিনাও ওদের সাথে একমত হলো আর বললো "বাবাও বলেছেন আমাদের যা পছন্দ তাতেই উনার চলবে"।

"আংকেলের আবার খাবারের চিন্তা! উনি তো নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিনের পর দিন গবেষণাগারে কাটিয়ে দেন" হাতের বইয়ের থেকে চোখ না তুলেই বললো রবিন।
"এক হিসেবে উনি সারা বছরই কোয়ারেন্টাইনে থাকেন" বলে কিশোর মুচকি হাসলো, জিনার এই রসিকতা পছন্দ হলোনা, সে মুসার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চাইলো।

"কত কি যে বলতে মন চায়......লাসানা (lasagna) আর বিফ স্টেক, এই দুইটার কথা বলো......আচ্ছা লাসানা বাদ দাও ঘুরেফিরে সেই নুডলস,এরচেয়ে গ্রাউন্ড মিট আর সবজির কাসেরোল (Casserole) ভালো হবে ......আচ্ছা...... আইটেম আরেকটা বাড়ানো যায়না? প্যানকেক খেতে ইচ্ছে করছে, মিসেস শেলভি খুব ভালো মহিলা, গত বছরই তো উনার হারানো কুকুর আমরা খুঁজে বের করলাম, আশা করি না করবেন না" বলে মুসা কিশোরের দিকে থাকালো, কিশোর কটমট করে চেয়ে বললো প্যানকেক খেতে এতো মন চাইলে কাসেরোল আর বিফ স্টেক দুইটার মধ্যে একটা বাতিল করতে হবে"।
"ফারিহাকে ফোন করলেই পারো, তার মায়ের গাড়ি নিয়ে এসে দিয়ে যাবে" রবিন ফোড়ন কাটলো।
একে তো একমাস যাবত ঘরে বন্দী তার উপর কোন কেস হাতে নাই আর থাকলেও সমাধানের সুযোগ নাই সবমিলিয়ে কিশোরের মেজাজ ভালোনা, তাই মুসা ওকে আর না ঘাটিয়ে বললো "ঠিক আছে এই দুইটাই বলো, ডেজার্ট একটা তো এমনিতেই দিবেন আশা করি"
জিনা এসএমএস করে মিসেস শেলভিকে জানিয়ে দিলো।

স্কুল বন্ধ হলেও এখন ওদের বাসায় বসে অনলাইনে ক্লাস করতে হয়, তাতেই দিনের একাংশ কেটে যায়, দুপুরে খেয়েদেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকালে ওরা উঠোনে খেলতে বের হয়৷ সমুদ্র বাড়ির পাশে হলেও এখন সেখানে গোসল করতে যেতে মানা। সন্ধ্যায় খেয়েদেয়ে কেউ টিভি দেখে কেউ বই পড়ে কেউবা ফোনে কথা বলে, দশটার দিকে ঘুমাতে যায়। পরদিন আবার সেই একই রুটিন। এভাবেই কাটছে তিন গোয়েন্দা আর জিনা'র কোয়ারেন্টাইন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৪৫
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×