(শেষ কিস্তি)
১ম কিস্তির লিঙ্ক: Click This Link
২য় কিস্তির লিঙ্ক: Click This Link
ডিপজল: খলনায়ক থেকে মূল নায়ক
নব্বই দশকের শুরু থেকে খলনায়ক হিসেবে রুপালি পর্দা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন হুমায়ূন ফরিদী। তিনি খলনায়ক চরিত্রে সম্পূর্ণ নতুন ধারার প্রবর্তন করে অনেক সিনেমায় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন। ফরিদীর প্রায় এক দশক পর আরেকটি নতুন ধারার জন্ম দেন ডিপজল। মান্না-ডিপজল জুটির ব্যাপক সাফল্যের পিছনে ডিপজলের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। চরম সহিংসতার সাথে অশ্লীল গালাগালির মিশ্রণে একটা আনকোরা ডিপজলীয় কায়দা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেই কায়দার সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে ডিপজল এখন সত্যিকারের ভাল মানুষের চরিত্রে, এমনকি কাজের মানুষ ছবির মাধ্যমে নায়ক চরিত্রে পর্যন্ত, প্রচণ্ড সফল ও উজ্জ্বল। এভাবেই ডিপজল হয়তো বাংলা সিনেমার আরেক জসীম হতে যাচ্ছেন।
খলনায়কের পর নায়কই শুধু নয়, ডিপজলকে অনেক ভাল অভিনেতা না বলে এখন আর উপায় নেই। কাজের মানুষ ছবিতে তার অভিনয় সত্যি সত্যি মনকাড়া। অনেক 'এ গ্রেড' নায়কের ওভার-এক্সপ্রেশন বা অতি-অভিনয় ডিপজলে দেখা যায়নি। দুর্ধর্ষ সেই ডিপজলই দুঃখের সিকোয়েন্সে প্রকৃতই দুঃখী... এতটুকু ভাঁড়ামি ছাড়া। বয়সের ভার বা দর্শকের মনে গেড়ে বসা খলনায়ক ডিপজলকে মনে রেখেও রেসীর সাথে প্রেমের দৃশ্যে তাকে সত্যিকারের প্রেমিক বলেই মনে হয়-- অভিনয় করছে মনে হয় না। ছবিতে নায়ক ডিপজলের সাথে রেসীর নাচ-গান-- “তোমার মনের জমিনে যদি একটু জায়গা পাই/ ভালবাসতে বাসতে আমি মরে যেতে চাই”-- দর্শক ভালভাবেই নিয়েছে মনে হয়।
পরিবর্তন আসছে বাংলা সিনেমায়
বছর দুয়েক আগে দেখা সিনেমার সাথে বর্তমান বাংলা সিনেমার অনেক পার্থক্য। লেখার শুরুতেই তো অশ্লীলতার নির্বাসন আর সহিংসতার সংকোচনের কথা বলেছি। পর্দায় চলমান ছবির অতি নিম্নমান এখন প্রায় নেই বললেই চলে; পর্দার পাত্রপাত্রী এখন অনেক ঝকঝকে তকতকে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে নায়ক এখন আর এফডিসির ভিতরকার সেই চেনাজানা রাস্তায় দৌঁড়ায় না। ঢাকা শহরের আকাশচুম্বী অট্টালিকার ভিড়েই দৌঁড়ে পালাতে চেষ্টা করে ডিপজল। ‘... বাচ্চা’ শ্রেণির যে সাধারণ গালি তার একটাও নেই এক সময়ের গালাগালির রাজা ডিপজল প্রযোজিত ও অভিনীত কাজের মানুষ ছবিতে। এই ঈদেই মুক্তি পাওয়া টিনএজ প্রেমের আমার প্রাণের প্রিয়া ছবিতেও যা দু-তিনবার আছে।
আউটডোরের দৃশ্যধারণ গৎবাঁধাভাবে এফডিসির ভিতরে হয়নি-- এক্ষেত্রেও অনেক পরিবর্তন এসে গেছে। গ্রাম, শহর দু প্রান্তেরই অনেক ভাল ভাল আউটডোর লোকেশনে ছবির বেশ কিছু সিকোয়েন্স অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চিত্রায়িত হয়েছে। সবুজ মাঠ, সুনীল আকাশের রূপ সচেতনভাবেই তুলে ধরেছেন পরিচালক, চিত্রগ্রাহক। অস্পষ্ট শব্দের বাস্তব যে অভিযোগ এক সময় প্রবল ছিল তা-ও এখন আর করা যাবে না। সংলাপ, পারিপার্শ্বিক শব্দমালা, গান-- সবই স্পষ্ট এবং শ্রুতিমধুর কাজের মানুষ ছবিতে। ছবি-শব্দে এমন পরিবর্তন অন্যান্য বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রেও এসেছে। আমার প্রাণের প্রিয়া এক্ষেত্রে আরো বেশি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
বাংলা সিনেমার আরেক শত্রু ছিল পাইরেসি। হলে ছবি দেখতে গিয়ে খুব ভালভাবেই বোঝা গেল, পাইরেসি রোধেও হল কর্তৃপক্ষ অতিমাত্রায় সতর্ক। কাজের মানুষ ছবি চলাকালে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে যখন নোট টুকছি, হলের এক কর্মীর চরম রোষে পড়তে হয়েছে। তাকে কোনভাবেই বিশ্বাস করানো যায়নি যে মোবাইল সেটটি নষ্ট-- স্ক্রিনে কিচ্ছু দেখা যায় না, ভিডিও বা অডিও কিছুই রেকর্ড করা যাচ্ছে না। অনেক বোঝানোর পরও বিশ্বাস করেনি সে-- কিছুদূর দাঁড়িয়ে, সিনেমার প্রায় শেষ পর্যন্ত আমার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলেন সেই কর্মী।
অবশ্য বেশ কিছু সমস্যা এখনো রয়েই গেছে। পর্দার ছবি স্পষ্ট হয়েছে ঠিকই, তবে কাজের মানুষ এবং আমার প্রাণের প্রিয়া দুই ছবিরই কয়েকটি শট পুরো সময় জুড়ে আউট অব ফোকাস থাকা চিত্রগ্রাহক/ সম্পদকের অবহেলাই প্রকাশ করে। গল্পে নতুনত্ব আসছে, তবে গল্পের গাঁথুনি একেবারেই ঠিক হচ্ছে না। কিছু অংশ দেখলেই পরবর্তী অংশ গড়গড় করে বলে দেয়া যাচ্ছে এখনও।
আবারও ডিপজল
কাজের মানুষ সিনেমায় গানে গানে ডিপজল নিজের পরিচয় দেন এভাবে:
আমি কাজের মানুষ ভাই,
আমার কোন জুড়ি নাই।
আমি সব কাজেরই কাজি,
সব কথাতেই রাজি।
...
আমি উপকারে লাগলে কারো
অমনি ছুটে আসি,
দুঃখীর মুখে দেখতে যে চাই
একটুখানি হাসি...
http://www.youtube.com/watch?v=tRunI3KCSD0
এই পরিচয়পর্বটা শুধু সিনেমার চরিত্রদের সাথে কাজু ভাইয়ের পরিচয় হিসেবে দেখলে চলবে না। ডিপজলের এই কথাগুলো মনে হয় পুরো বাংলাদেশি সিনেমাশিল্পের প্রতিই বলা। দুঃখী বাংলা সিনেমার ঠিক প্রয়োজনের মুহূর্তে তার মুখে হাসি ফোটাতে ডিপজল নানা রূপে হাজির। এমন বলা অত্যুক্তি নয়। আমাদের বলতেই হবে: সিনেমাশিল্পের জন্য ডিপজল আসলেই একটা ‘কাজের মানুষ’। এভাবে লেগে থাকলে, বাংলা সিনেমার পূর্ণাঙ্গ ইউ-টার্ন নেওয়ার ক্ষেত্রেও ডিপজলের একটি বড় ভূমিকা থাকবে বলে ধারণা করা যেতেই পারে।
(সমাপ্ত)
...........
লেখাটি পাঠের সুবিধার্থে সামুতে তিন কিস্তিতে দেওয়া হল।
পুরো লেখার একটি সংক্ষিপ্তরূপ 'ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলা সিনেমা' শিরোনামে মিডিয়াওয়াচ পত্রিকায় (নতুন রূপে ও নবতর মেজাজে, বর্ষ ১, সংখ্যা ৪) প্রকাশিত হয়। (Click This Link)
ঐ সংস্করণে শিরোনামসহ অন্যত্র 'ডিপজল-স্তুতি'র বেশির ভাগ অংশ সযতনে ছেঁটে দিয়ে বাধিত করা হয়। এখানে ঐ অংশ উদ্ধার করলাম। সাথে সামান্য পরিমার্জনাও করা হল।
ইডাক: [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





