পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ-ভারত সচিব ও হাইকমিশনার পর্যায়ে গত ২ দিন ধরে সীমান্ত পরিদর্শনের পর উভয় দেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আলোচনা সফল হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এ দিকে বৈঠকের পর পাদুয়া সীমান্তে প্রায় ৩৫০ গজ বাংলাদেশি ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ভারতকে সীমানা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এ খবরে সীমান্তবাসীর মাঝে নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পাদুয়া প্রতাপপুর সীমান্ত সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। ১৯৫৪ সালে দেশ বিভক্তির পর ভারত পূর্ব-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমানা চিহ্নিত করে সীমান্ত পিলার স্থাপন করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাদুয়া সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করে ভারতের সামরিক বাহিনী। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু পাদুয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ভারতীয় সামরিক বাহিনী আর ফেরত যায়নি। সেখানে ভারতের বিএসএফ ক্যাম্প গড়ে ওঠে। জরিপ টিমের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি টিম জানায়, ১৯৭৪ সালে সীমান্ত সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে ভারত ও বাংলাদেশ ইন্দিরা-মুজিব নামে একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে । ওই চুক্তিতে উল্লেখ ছিল ভারতের জনগণ বাংলাদেশে থাকলে তা ভারতে ফিরিয়ে নেয়া হবে, আর বাংলাদেশি জনগণ ভারতে থাকলে তাদের ফেরত আনা হবে। স্বাক্ষরিত যৌথ চুক্তির পর বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারত থেকে ফেরত আনলেও কালের বিবর্তনে ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশ থেকে আর ফেরত যায়নি। এরই ফলে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে নানা কারণে উভয় দেশের নাগরিকদের মধ্যে বিরোধ লেগেই ছিল। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে ঢাকা-দিল্লিতে এবং সিলেট-ডাউকিতে উচ্চ পর্যায়ে একাধিক বার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় উভয় দেশের যৌথ জরিপের মাধ্যমে ইন্দিরা-মুজিব স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়ন করতে। এ প্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে যৌথ জরিপ কমিশন গঠন করে সীমান্তে জরিপ কাজ শুরু হয়। কিন্তু ভারতীয় নাগরিক ও বিএসএফের বাধার ফলে বারবার জরিপ কাজ ব্যাহত হয়।
সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্ত সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে এবার বাংলাদেশ-ভারত উচ্চ পর্যায়ে গত ২ জুন থেকে সীমান্ত এলকা পরিদর্শনের পর নলজুরী ও ডাউকিতে উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বৈঠকে বসেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিষয়ক উপ-সচিব ড. কামাল হোসেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবুল কালাম, বিজিবির ঢাকা হেড কোয়ার্টারের লেঃ কর্নেল নাছিম, সিলেট ৫ ব্যাটেলিয়নের ভারপ্রাপ্ত সিও নাইমুল ইসলাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মিসেস আশফিয়া, জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক ইকবাল হোসেন, সহকারী পরিচালক দবির উদ্দিন কানুনগো ও সার্ভেয়ারসহ ১৫/২০ জনের একটি প্রতিনিধি দল। ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ঢাকায় নিযুক্ত ডেপুটি হাইকমিশনার সঞ্জয় ভট্টাচার্য, পরিচালক সীমান্ত সার্ভে বিভাগ মেজর জেনারেল গ্রিস কুমার, সহকারী সচিব হর্ষবর্ধন, ডিআইজি শিলং রবি গরিয়া, মেঘালয় সার্ভে ডেপুটি ডাইরেক্টর মি.সাংমা এবং এডিশনাল ডিরেক্টর শিলং সানক্লিন।
গত ২ জুন সকাল ৯টায় সিলেট-তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে প্রবেশ করলে বাংলাদেশি প্রতিনিধি দল তাদের স্বাগত জানিয়ে নলজুরী ডাকবাংলোয় নিয়ে আসেন। এখানে সৌজন্য সাক্ষাত্ শেষে উভয় দেশের নেতারা গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রতাপপুর, পাদুয়া সীমান্তের ১২৭০ থেকে ১২৭১ নং সীমান্ত পিলার পর্যন্ত পরিদর্শন করেন। এক পর্যায়ে উভয় প্রতিনিধি দল ১২৭০ নং ৩এস পিলারের সামনে সীমান্ত পিলার থেকে প্রায় ৩৫০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঁশের খুঁটি বসিয়ে সীমানা চিহ্নিত করেন। এর পর দুপুরের দিকে তামাবিল জিরো পয়েন্ট দিয়ে ভারতে ঢুকে আমজলং ও ডিবির হাওর ১২৮৪ নং সীমান্ত পিলার পর্যন্ত পরিদর্শন শেষে বিকেলে নলজুরী ডাকবাংলোয় উভয় দেশের নেতারা বৈঠকে বসেন।
গত ৩ জুন বাংলাদেশি প্রতিনিধি দল আবারও একে অপরের সীমান্তে প্রবেশ করে পরিদর্শন করে বৈঠক করেন। পরিদর্শনকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিষয়ক সহকারী সচিব ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে এ পরিদর্শন ও বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমাদের বৈঠক সফল হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতকে বাংলাদেশের ভূমি দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। তবে সীমান্তে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পাদুয়া/প্রতাপপুর সীমান্তে ১২৭০ থেকে ১২৭১ নং পিলার পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থানে প্রাথমিক সিদ্ধান্তের ফলে একটি বাঁশের খুঁটি বসানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক ইকবাল হোসেনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, ভারত-বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এ পরিদর্শন ও বৈঠক হচ্ছে। আমরা আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত জরিপ কাজ চালিয়ে যাব।
গত ৪ জুন উভয় দেশের জরিপ দল পাদুয়া সীমান্তের ১২৭০ থেকে ১২৭১ নং পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার থেকে প্রায় ৩৫০ গজ বাংলাদেশি ভূখণ্ডের মধ্যে নতুন করে আরও দুটি বাঁশের খুঁটি বসিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে। জরিপ দলের কাছে জানতে চাইলে বাংলাদেশি প্রতিনিধিরা জানান, গত ২ ও ৩ জুনের উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিগণের বৈঠকের পর তাদের নির্দেশেই আমরা জরিপ করছি, তবে এর বেশি কিছু বলা যাবে না বলে তারা জানায়। সীমান্তের ৩৫০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে খুঁটি বসিয়ে ভারতকে সীমানা বুঝিয়ে দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে সীমান্ত এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
click this link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



