somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি

১২ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯২৮ সালে মিশরের ইসমাইলিয়া নামক একটি স্থানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত এক তরুণ চিকিৎসক হাসান আল বান্না ইখওয়ান নামে একটি দল গঠন করেন। যার লক্ষ্য ছিল ইসলামি আন্দোলনকে কুরআন-সুন্নাহ’র পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালিত করা। যাদের স্লোগান ছিল “ইসলাম হচ্ছে সার্বিক সমাধান”।



১৯৪৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি হাসান আল বান্নাকে হত্যা করা হয়। তার অনুসারীরা তাকে শহীদ হাসান আল বান্না বলে থাকে। অভিযোগ রয়েছে তার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ঠেকাতে রাজা ফারুক তাকে হত্যা করান। তবে ওই সময় মিশর বৃটিশদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।



হাসান আল বান্নার ইন্তেকালের পর হাসান আল হুদাইবি সংগঠনটির প্রধান হন। বর্তমানে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. মোহাম্মদ বাদাওয়ি।



সম্প্রতি এটি বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ইসলামিক দল। মিশর ছাড়াও বাহরাইন, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, জর্দান, ইরাক, ইরান, সৌদি আরব, কুয়েত , ইয়ামেন, আলজেরিয়া, সুদান, সোমালিয়া, তিউনিশিয়ায় রয়েছে এদের সক্রিয় অবস্থান। এটি একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। বিশ্বে ইখওয়ানের মুসলিম ভাতৃত্ব ছড়িয়ে দিতে দলটি কাজ করে যাচ্ছে। ইউরোপের অনেক দেশেই এর শাখা রয়েছে। এই দল বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন ইসলামিক দল বলেই পরিচিত।



ইখওয়ানের গঠনতন্ত্র প্রখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদ সাইয়েদ কুতব ও আব্দুল কাদের আওদার তৈরি। তারা বলেন, সম্পূর্ণভাবে কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে এটি প্রণীত হয়েছে। ড. মেহেদী আকেফ ছিলেন দলের সাবেক নেতা । ইখওয়ানের শীর্ষপদের সব নেতাই স্কলার এবং দেশটিতে পরিচিত নাম। বর্তমানে প্রখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদ মোহাম্মদ বাদাওয়ি এর নেতৃত্ত্ব দিচ্ছেন।



মিশরের ইখওয়ান এমন একটি দল যার কর্মীরা যুগ যুগ ধরে নিপীড়নের শিকার হয়ে বারবার তাদের দলের নাম পরিবর্তন করেছে কিন্তু কখনো আপস করেনি আদর্শের সাথে। সংগঠনটির প্রধান শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে সমগ্র আরব বিশ্বে ইখওয়ানকে জনপ্রিয় রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করে। সক্ষম হন।



কার্যত আরব বিশ্বে ঔপনিবেশিক শাসনপরবর্তী ইসলামের রাজনৈতিক আন্দোলনের দার্শনিক ভিত্তি হাসান আল বান্না তৈরি করে গেছেন। ১৯৪০ সালে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে হাসান আল বান্নার এই দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাত পরিচয় এক বন্দুকধারীর গুলিতে হাসান আল বান্নাকে হত্যা করা হয়। ধারণা করা হয়, ইখওয়ানের রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের অংশ হিসেবে তাকে হত্যা করা হয়। এর পর থেকে মিসরের প্রত্যেক সামরিক শাসকের নিপীড়নের শিকার হয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। জামাল আব্দুল নাসেরের স্বৈরশাসনের অবসানে আনোয়ার সা’দাতের ফিন্স অফিসার্স মুভমেন্টের প্রতি ইখওয়ানের সমর্থন ছিল। কিন্তু আনোয়ার সা’দাত ক্ষমতায় আসার পর অল্প কিছু দিন ইখওয়ানকে রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর অনুমতি দেয়া হলেও আবারো দলটি নিষিদ্ধ করা হয়। এর আগে ১৯৫৪ সালে জামাল আব্দুল নাসেরের ওপর আক্রমণের অভিযোগ এনে দলটি নিষিদ্ধ করা হয়। হাজার হাজার ইখওয়ান নেতাকর্মীকে কারাগারে বছরের পর বছর। ইখওয়ানের শীর্ষস্খানীয় ছয়জন নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়। এর মধ্যে ছিলেন প্রভাবশালী নেতা সাইয়েদ কুতুব। ইসলামের রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ নিয়ে সাইয়েদ কুতুবের বইগুলো এখনো এই রাজনৈতিক বিশ্বাসীদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়। যিনি শুধু মিসর নয়, গোটা বিশ্বে ইসলাম বিষয়ে একজন পণ্ডিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।



দীর্ঘ সময় নিষিদ্ধ থাকার পর ১৯৮০ সালে ইখওয়ান আবারো মূলধারায় ফিরে আসে। ওয়াফদ পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে জোটবদ্ধ হয়। ইখওয়ানের ওপর অব্যাহত নিপীড়ন ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উথ্থানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে এই দলের একটি অংশ আশির দশকে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয়। যদিও তাদের সংখ্যা ছিল খুবই সামান্য।



ইখওয়ান শুধু একটি রাজনৈতিক সঙ্গঠন নয়, ধর্মশিক্ষা সাহিত্য সকল ক্ষেত্রে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। ইখওয়ানের সদস্যরা সর্বজন বিদিত প্রাজ্ঞ ব্যক্তি। ডাক্তার হাসানুল বান্না, সায়েদ কুতব এর পর মুহাম্মাদ আল গাজ্জালী, আব্দুল কাদের আওদা, সাইয়েদ রামাদান ইউসুফ আল কারজাভীর মতো খ্যাতনামা লেখক ও মনীষিরা ইখওয়ানের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন



দুনিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী ও ইসলামপন্থি দল ইখওয়ানুল মুসলিমুন নতুন দল গঠন করেছে। যার নাম Freedom & Justice বা আরবিতে হুরিয়া ওয়া আদালাহ।

ইখওয়ান প্রধান ড. মোহাম্মদ বাদাওয়ি ঘোষণ করেন, এই নবগঠিত দলে যেকোনো মিসরীয় সদস্য হতে পারবেন। তিনি বলেন, তার দল মিসরী জনগনের আশা আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি উন্নত মিসর গড়তে চায়। দলটি তার নতুন সংবিধানের জন্য কাজ করছে, যা শিগগিরই চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে। প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বাদাওয়ি আরো বলেন, তার দল মন্ত্রিসভায় নারী ও খৃস্টান সদস্য নিতে আপত্তি করবে না। তবে দলের প্রধান হিসেবে নারী বা খৃস্টান হওয়া সমর্থন করে না। ইখওয়ান তার নতুন নামের মাধ্যমে এটাই প্রকাশ করলো, মিসরীয় নতুন প্রজন্মের জন্য এই স্বাধীনতা (Freedom) ও ন্যায় (Justice) বিচার কতোটা দরকার।



ইখওয়ানের মূল ভিত্তি ঠিক রেখেই বর্তমানে ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টি নামে একটি বহিরাঙ্গ রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিজিত হবে মুসলিম ব্রাদারহুড। এটিই এখন আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় হবে। মিশরের পরবর্তী নির্বাচনে ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস অংশ।



একনজরে

দলের নাম : আল ইখওয়ান, আর্ন্তজাতিক মিডিয়ায় মুসলিম ব্রাদারহুড নামে পরিচিত

বর্তমান নাম : ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি

প্রতিষ্ঠিত : ১৯২৮, ইসমাইলিয়া, মিসর

প্রতিষ্ঠাতা : হাসান আল বান্না

আদর্শ : ইসলাম, ইসলামিক গণতন্ত্র

link
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×