অনেকক্ষণ ধরে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করলাম।কিছুতেই ঘুম আসছে না।বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিকষ কালো আকাশটার দিকে তাকালাম,সব কিছু,সবাইকে খুব নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে।গলার কাছটায় কেমন বাধো বাধো লাগছে।কেউ যেন শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে আমার গলাটা চেপে ধরেছে!সামনে খোলা আকাশ তাও নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। জোর করে আরেকবার বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরলাম।চোখ বন্ধ করতেই হাজার চিন্তা মাথায় আসলোঃকবে শেষ হবে এই যাওয়া আসার খেলা,নিজের বাসায় অতিথি হয়ে থাকা,বিদায় বেলায় মায়ের অশ্রু,বাবার নিঃশব্দ বেদনা।বুকের কাছটা আবার চিন্চিন্ করে উঠল।নিজের অজান্তেই একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেল।
আর মাত্র কয় ঘন্টা,তারপর আপনজন ছেড়ে দূরে একাকী হোস্টেলে ফেরত যেতে হবে।ঘড়িটা দেখছি বার বার।হতচ্ছাড়াটা আজকে যেন একটু বেশি টিক্ টিক্ করছে।ওর গলাটা চিপে ধরতে ইচ্ছা করছে।তাতে যদি সময় থেমে যেত,তাই হয়ত করতাম।কিন্তু লাভ নাই।যেতে যে আমাকে হবেই।
ঘড়ির কাঁটা তিনের ঘর অতিক্রম করছে,তাও ঘুমের কোনো দেখা পাচ্ছি না।ঘরের মধ্যে কয়েক মাইল হাঁটা হয়ে গেছে।অন্য দিন হলে ক্লান্ত হয়ে কখন ঘুমিয়ে পরতাম।কিন্তু আজকের কথা ভিন্ন,স্নায়ু টান্ টান্ হয়ে আছে,কিছু একটা ভাঙতে পারলে মনটা শান্তি পেতো।এত রাতে সেটা করাও সম্ভব না।সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস থাকলে এতক্ষনে ধোঁয়ার রাজ্জ্যে হারিয়ে যেতাম।এইসব ভাবতে ভাবতেই পাখির ডাক কানে এল।যাক বাবা,সকাল হল তাহলে!রাতের আঁধারে আমাদের অবদমিত অনুভুতিগুলো অনেক বেশি মাথাচারা দিয়ে উঠে!দিনের আলোয় সেগুলো খুব ছেলেমানুষী মনে হয়।
রাতের আধাঁরে আমাদের মাঝের ছেলেমানুষগুলো(চাইল্ড)বেঁচে আছে বলেই তো দিনের আলোয় আমরা এত বড় মানুষ(এডাল্ট) হতে পারি!
উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য বাসা ছেড়ে দূরে হোস্টেলে যাওয়া আজই প্রথম নয়।৪ বছর তো পার করে দিলাম।তাও যেন সেই প্রথম দিনের অনুভুতি;এখনও!নিজের বাসায়,আপনজনের সাথে থাকার যে আকুলতা,সেটার জন্যই হয়তো এখনও হোস্টেলে ফেরার আগের রাতটা খারাপ লাগে।বিশেষ করে ঈদ,পূজার বড় বড় ছুটিগুলোর পর ফিরে যেতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়!
জানি না বাকি সবার অনুভুতি কেমন;হোস্টেল জীবনে অনেক মজা থাকলেও বাসা থেকে বের হয়ে আসার সময় কষ্ট হয়
না এরকম মানুষ কমই আছে!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



