somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুট্টো এবং ইয়াহিয়ার ঐতিহাসিক গোপন মোলাকাত

২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সন্ধ্যায় ডিনারে বসে ভুট্টো চাছাছোলাভাবে ইয়াহিয়ার কাছে জানতে চাইলেন, "আপনার হাতে এখন অপশন কয়টা?"
"কেবল দুইটা", ইয়াহিয়ার উত্তর।

রাজনীতি এক আজব জায়গা। এতদিন ভুট্টো ছিলেন ইয়াহিয়ার জাতশত্রু। কিন্তু আজ দুইজনের কমন বড় দুশমন মুজিব তাদেরকে এক টেবিলে নিয়ে এসেছে। পারট্রিজ শিকারের বাহানায় ইয়াহিয়া সিন্ধু প্রদেশের লারকানায় ভুট্টোর রাজকীয় বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।

কয়দিন আগে জাতীয় এবং প্রাদেশিক নির্বাচন হলো। ইয়াহিয়ার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, নির্বাচনে কোন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবেনা। National Security Cell এর চীফ মেজর জেনারেল ওমরের ভবিষ্যদ্বানী ছিল এটা। সেটা হলে যে রাজনৈতিক অবলাবস্থার জন্ম হতো তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে আরো কিছুদিন ক্ষমতায় থাকাটা নিশ্চিত হতো। আইয়ুব খান দশ বছর গদিতে ছিল, অথচ আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক স্হাপনকারী ইয়াহিয়াকে দুই বছর না হইতেই ক্ষমতা ছাড়তে হবে এ কেমন বিচার!

মাওলানা ভাসানী, মুসলীম লীগের সবুর খান এবং কাইয়ুম খান লোকগুলো অথর্ব। আওয়ামী লীগ যাতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে সেজন্য এদের পেছনেই হুদাই এতগুলা টাকা ঢালা হলো। এরা কেমন ক্যাম্পেইন করলো? আওয়ামী লীগ ৯৯% ভোট পায় কি করে?

যাই হোক, ইয়াহিয়া অপশনগুলোর ব্যাখ্যায় আসলেন।
অপশন ১: তিনি পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকবেন এবং সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দিবেন যেটা শেখ মুজিব চাচ্ছেন।
অপশন ২: শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা; আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা আবার জিইয়ে তোলা হবে। পাকিস্তান রক্ষায় সামরিক অ্যাকশনে যাওয়া হবে।

ইয়াহিয়া ভুট্টোর কাছে জানতে চাইলেন, "আপনি আওয়ামী লীগের সাথে কোয়ালিশন সরকার গঠন করবেন?"
"যে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান রাষ্ট্রের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে, তার সাথে কোয়ালিশন করে পাকিস্তান রাষ্ট্র ভাঙার দায় নেওয়া! অসম্ভব! অসম্ভব!"

ইয়াহিয়া ভুট্টোকে মনে করিয়ে দিলেন আইয়ুব খাঁন যখন শেখ মুজিবকে পাকিস্তান বিরোধী এবং দেশ ভাঙার ষড়যন্ত্রকারি হিসেবে বিচার করতে চেয়েছিলেন, তখন ভুট্টো মুজিবকে সমর্থন দিয়েছিলেন। (ডাবল স্টান্ডার্ড)

ভুট্টোর উত্তর: "দেখুন জেনারেল সাহিব, সেটা ছিল পলিটিকস, রাজনৈতিক চাল। রাজনীতি এমন জায়গা যেখানে কোন পারমানেন্ট বন্ধু বা শত্রু নাই; আপনাকে সবসময় রাজনৈতিক চাল খাটিয়ে চলতে হবে। আপনি যদি অপশন ১ বেছে নেন, তাহলে মুজিব প্রথম চান্সেই আপনাকে সরিয়ে তার আস্হাভাজন কাউকে সেনাপ্রধান করবেন, সম্ভবত বাচু করিমকে (মেজর জেনারেল, পূর্ব পাকিস্তান থেকে উঠে আসা সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে উচু rank এর অফিসার)। তাছাড়া মুজিব আপনাকে এবং আইয়ুব খানকে treason এ অভিযুক্ত করবেন; কারন আপনারা উভয়ে সংবিধান লংঘন করেছেন। জেনারেল সাহিব, আমি আপনার জায়গায় থাকলে অপশন ২ বেছে নিতাম।"

ইয়াহিয়া আশঙ্কা ব্যক্ত করলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ এবং শেখ মুজিব শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি। ফলে তাদের রাজনীতির ময়দান থেকে আউট করতে হলে এবং সামরিক অ্যাকশন নিতে হলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সমর্থন লাগবে।
তখন ভুট্টো সবুর খান এবং ভাসানীর প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, "আপনি তাদের টাকা খাইয়েছেন নির্বাচনে হারার জন্য? এখন সময় হয়েছে তাদের থেকে পাওনা বুঝে নেওয়ার"।

ভুট্টো তারপর দেয়ালে ঝুলন্ত একটা ডেকোরেশন পিসের দিকে তাকিয়ে বললেন, "Go for it"। পাকিস্তান 'রক্ষা'র জন্য যে সামরিক অ্যাকশন দরকার ছিল ইয়াহিয়া তাতে ভুট্টোর সমর্থন পেয়ে গেলেন।

এরপর কয়দিন আলোচনার নামে সময়ক্ষেপন চললো। আসলো ২৫ শে মার্চ। পাকিস্তান রক্ষার নামে বাঙালীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো পাক সেনারা।

(লেখাটা আরশাদ সামি খানের Three Presidents and an aide: Life, power & Politics এর উপর ভিত্তি করে লেখা।)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:১০
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×