
একটা সময় ছিলো যখন হাট-বাজারে মানুষ কেনা-বেচা হতো । ধর্নাঢ্য ব্যক্তিরা মানুষ কিনতেন এবং গৃহস্থালি ও মাঠের কাজ করাতেন বিনিময়ে শুধু দু’বেলা খাবার দিতেন ।
একটা সময় ছিলো যখন একজন রাজা/রানীর দাসত্ব করতে হতো । রাজা যা বলতেন প্রজাদের শুধু সেটাই করতে হতো । প্রজারা ফসল ফলাতেন তাঁর বিনিময়ে প্রজাদের দিতে হয় চড়া সুদ, দিতে হতো চড়া খাজনা । প্রজারা সেভাবেই টিকে থাকতেন ।
বর্তমানে পৃথিবীতে অনেক আধুনিকায়ন হয়েছে । আমরা গর্ব করে বলি বাংলাদেশে ১৮ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারী । আমাদের অর্থনীতি, আমাদের রাস্তাঘাট এখন ইউরোপ-আমেরিকার মতো ।

অথচ এই দেশেই একজন চা বাগানের শ্রমিকের বেতন মাত্র ১২০/= টাকা, গত কয়েকদিন আন্দোলনের ফলে তা বাড়ানো হয়েছে ২৫/= টাকা, বর্তমানে ১৪৫/= টাকা দৈনিক পারিশ্রমিক পাবেন তাঁরা । এই ১৪৫/= টাকা দিয়ে তাকে এবং তাঁর পরিবারকে খেতে হবে, পোশাক কিনতে হবে, বাসস্থান তৈরি করতে হবে, চিকিৎসার খরচ মেটাতে হবে, সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতে হবে, আত্নীয়-স্বজনের বাড়িতে গেলে মিষ্টি-সদাই নিয়ে যেতে হবে ।
আজ চা বাগানের শ্রমিকরা আন্দোলন স্থগিত করে দিয়েছেন । দফারফা করেছেন ১৪৫/= টাকায় ।
পৃথিবীতে আর একটা দেশ দেখান যেখানে এরকম নামমূল্য শ্রমিক পাওয়া যায় । এত এত মাথাপিছু ঋণের বোঝা নিয়েও চলতে হয় । এত চড়া দামে নিত্যপন্য কিনতে হয় ।

মানুষ বাঁচতে চায় । একটা স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চায় । তিনবেলা খাবারের নিশ্চয়তা চায় । সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতে চায় । সুচিকিৎসা চায় ।
আচ্ছা এই আন্দোলনে তো চা বাগানের মালিক ছাড়া বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিকগণ সংহতি জানিয়েছেন তবুও কেন এত যতসামান্য টাকা পারিশ্রমিক বাড়িয়েই আন্দোলন বন্ধ করা হলো? এঁর সদুত্তর জানা আছে কি কারোর?
জানি জানা নেই । দাসত্বের এই শিকল আমাদের মন-প্রাণ-দেহকে আবৃত করে রেখেছে । ধনিক শ্রেণী আমাদের রক্ত, ঘাম শুষে আরও ধনী হয়ে যাচ্ছে । অর্থের পাহাড়ে সিংহাসন পেঁতে বসে আছে ।
মজলুম এই দাসেরা পৃথিবীর বুকে কবে মুক্তি পাবে, কবে পাবে ন্যায্য মজুরি, কবে পাবে বাঁচার অধিকার, কবে পাবে কথা বলার স্বাধীনতা...
সাব্বির আহমেদ সাকিল
০৫ ভাদ্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, শরৎকাল | শনিবার | ২০ আগস্ট ২০২২ ইং | কলমাকান্দা, নেত্রকোনা
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




