আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরে একটা রোবোটিক কৃত্রিম ভয়াবহ জীবন কাটাবে । আবেগ অনুভব করার মতো ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার ঢের আশঙ্কা আছে ।
আমরা যাঁরা শৈশব-কৈশোরে নানাবাড়ি, দাদাবাড়ির সেই মাটির তৈরির একতলা, দোতলা বাড়িতে সময় কাটিয়েছি । ওঁরা তা পাবেনা । কারণ সবখানেই কংক্রিটের ছোঁয়া! গ্রামগুলোতে এখন শহরের ছোঁয়া লেগেছে । অচিরেই এটি আরও বৃদ্ধি পাবে ।
নানাবাড়িতে মাটির উনুনে মাটির হাঁড়িতে রান্না করা ভাত, মাটির তৈরি কড়াইয়ের তরকারি ওসব ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে হাঁটছে । এমনকি পানির পাত্র হিসেবে পিতলের জগ, গ্লাস ওসবও হারাতে বসেছে ।
হারাতে বসেছে বাড়ির চারিদিকে লাগানো নানা প্রজাতির ঔষধি ও ফলজ গাছও ।
এছাড়াও বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ঘরের কাঠামো, আসবাবপত্র ওসও হারিয়ে যাচ্ছে ।
ভোরে পাখির ডাকে আমাদের ঘুম ভাঙতো । সন্ধ্যাবেলায় পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনে মনে হতো এইতো বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে । কোথাও তেমন আর পাখিদের গুঞ্জন শোনা যায়না । চারিদিকে অবকাঠামো আর অবকাঠামো ।
নদীতে মামাতো, চাচাতো ভাইয়েরা কত গোসল করেছি । যখন বৃষ্টিতে ধানী জমিগুলো ভরে যেত তখন কলাগাছ দিয়ে ভেলা বানিয়ে আমরা বিকেলে সেই ভেলায় চড়ে ঘুরতাম ।
বাংলা মাস অনুযায়ী বিভিন্ন সিজনে বিভিন্নরকম খেলা হতো । হাডুডু, গোল্লাছুট, চোর-পুলিশ, পিট্টুপিট্টু, মার্বেল, লাকিমুষ্ঠি, রুটিচোর, গাদল ছাড়াও ক্রিকেট ও ফুটবল তো খেলতাম ই । শেষের দু'টো ছাড়া বাকি খেলাগুলো বর্তমানে বিলুপ্ত ।
সময়ের সাথে সাথে এসব খুব তড়িঘড়ি করেই কিন্তু এসব বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে । আধুনিকতার ছোঁয়া, প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় এত দ্রুত সময় বদলে যাচ্ছে যা সত্যিই ভয়াবহ রূপ নেবে একসময় ।
এই ইন্টারনেটের যুগে, প্রযুক্তির যুগে মানুষ সাময়িক আনন্দ খুঁজলেও একসময় এসে ঠিকই বিরক্ত হয়ে উঠবে । আপনকিছু খুঁজবে, যা নিয়ে ভাবা যায়, লালন করা যায় এমনকিছু । যেমনটা বিভিন্ন উদাহরণ টেনে আমি বললাম ওসব কিন্তু লালন করে আসা বিষয়, জীবনের সাথে যা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ।
সাব্বির আহমেদ সাকিল
২৯ বৈশাখ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | শুক্রবার | ১২ মে ২০২৩ ইং | কৃষ্ণ সপ্তমী | আপন নীড়, বগুড়া
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:২০