কিছু কিছু কমেন্টর উত্তর কমেন্টে দেয়ার চেয়ে পোস্টে দেওয়াটা উত্তম মনে হয়। চাঁদগাজী আঙ্কেলের তেমনই একটি কমেন্টের উত্তর চিন্তা করলাম কমেন্টে না দিয়ে পোস্টে দেই, আর এজন্যই এই পোস্ট।
প্রথমেই বলে রাখি, কেউ একজন তার লেখায় বলেছিলো- তিনি (চাঁদগাজী) নাকি মুক্তিযোদ্ধা। সে হিসেবে ত্রিশের কোটা পার না করা আমার বয়স তার অর্ধেকও হবে না। তাই সিনিয়র হিসেবে সম্মান জানাতেই তাকে আঙ্কেল সম্মোধন করলাম।
আমার লেখা ধ্বংসের স্বরলিপি কবিতায় তার মন্তব্যের সূত্র ধরেই বলছি।
প্রথমতোঃ ইঞ্জিনিয়ারেরা রাস্তা বানালে দুই দিনেই তা ধংস হয়ে যায় কথাটা ঠিক আছে, কিন্তু তার জন্য আল্টিমেটলি "ইঞ্জিনিয়ার" নামক কোন বিশেষ চরিত্র দায়ি না, এজন্যও রাষ্ট্র কাঠামো দায়ি। কারণ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে কেউ জন্মায় না, বা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কেউ বড় হয় না। একজন ব্যাক্তির জন্ম হয় মানুষ হিসেবে, বড়ও হয় মানুষ হিসেবে। অবুঝ হতে বুঝ হওয়া পর্যন্ত-বুঝ হওয়া থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত সময়টাতে এই পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রযন্ত্র ধীরেধীরে তাকে অমানুষ বানায়। বিদ্যাপীঠ হতে একজন মানুষ/অমানুষ যাস্ট রাস্তা বানানোর কৌশলটা শিখে মাত্র, যাকে সমাজ প্রকৌশলী বলে। বিদ্যাপীঠ হতে মানুষ দেহ মেরামত শেখে মাত্র, যাকে সমাজ ডাক্তার বলে। বিদ্যাপীঠে কয়েকটা নিদ্রিষ্ট বই মুখস্থ করে এসে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার শপথ নেয়, যাকে সমাজ পুলিশ বলে। আর ঠিক এভাবেই একজন ব্যাক্তি বিদ্যাপিঠে কিছু একটা শিখে বা কিছু নিদ্রিষ্ট বই পড়ে সাংবাদিক, আইনজীবি, অধ্যাপক, আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যাবসাহি,.... ইত্যাদি নানান পরিচয়ে বিভিন্ন পেশায় ছড়িয়ে যায়।
সুতরাং, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র একজন মানব শিশুকে অমানুষ হিসেবে প্রস্তুত করার পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেই কাজই শেখানো হোক, রাস্তা বানানো, মানব দেহ মেরামত, সংবাদ লেখার কৌশল, কিংবা আদালতে বিতর্কের কৌশল, সে- সেই কাজেই তার ঐ ফান্ডামেন্টাল চরিত্র, আইমিন অমানুষিক চরিত্রটাই এপ্লাই করবে।
দ্বিতীয়তঃ প্রত্যেক পেশাজীবীই সাধারণত নিজ পেশার লোকেদের হাজারো চুরি-চামারি বা অপরাধ হাইড করলেও কেউ যদি একটু ভালো কোনো কাজ করে তবে সেটা এমনভাবে প্রচার করে, যেনো তিনি সহ তার ঐ পেশায় কর্মরত প্রত্যেকেই একেকজন ফেরেস্তা। কিন্তু আমি সাধারনত কোনো পেশার সমালোচনা করি না; কারণ, দোষ পেশার নয়, দোষ মানুষের চরিত্রের। তবুও যদি কোনো নেতিবাচক কাজের উদাহরণ দিতে কোনো পেশা/পেশাজীবীকে টেনে আনার প্রয়োজন বোধ করি, তাহলে ইঞ্জিনিয়ার বা ইঞ্জিনিয়ারিং পেশাকেই আগে টানি। এমনকি উদাহরণও আছে যেখানে আমি নিজেই নিজের সমালোচনা করেছি। সিস্টেম পছন্দ হয়নি বলে সরকারী প্রতিষ্টানের চাকরি ত্যাগ করেছি।
এখন চাঁদ গাজী আঙ্কেল হয়তো বলবেন আমি নিজের মার্কেটিং করছি। কিন্তু না, তিনি যেহেতু আমার কবিতার বিপরীতে বলেছেন " বাংলাদেশের রাস্তা কারপেটিং করলে ২ সপ্তাহ পরে ধ্বংস হয়ে যায় কেন; কারণ, ইন্জিনিয়ারেরা কবিতা লেখেন"। তারমানে উনি এখানে লেখা নয় লেখকের সমালোচনা করেছেন। তবে সমালোচনা যারই করুর আর যাই করুক উনার মন্ত্যবের জন্য ধন্যবাদ। তাছাড়া আমি কখনোই সমালোচনার উর্দ্ধের কেউ নই, যে আমার সমালোচনা করা যাবে না। বরং সমালোচকদেরও আমি এ্যাপ্রিশিয়েট করি। তবে যদি কারো সমালোচনার জবাবে দিতে গিয়ে কোন তথ্য দিতে হয় সেটাকে নিশ্চই মার্কেটিং বলবেন না, রাইট?
বাইদ্যাওয়ে, ইঞ্জিনিয়ার হলে কি কবিতা লেখা যাবে না? নাকি কবিতা লেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ কোন ডিপাটমেন্ট হতে চার বছর মেয়াদী কোর্স করতে হবে? নাকি কোন বিশেষ বিষয়ে ডক্টরেট নিতে হবে?
যাইহোক, শেষমেশ বলবো - কেউই মায়ের পেট হতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবি, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যাবসাহি, রাজনীতিবিদ, পুলিশ, কিংবা আমলা হয়ে জন্মায় না। তাই পেশার সমালোচনা না করে যে অন্যায় করে তার সমালোচনা করা উচিত। সৎ মানুষ যদি বানানো যায় তবে ইঞ্জিনিয়ারও সৎ হবে, তখন আর রাস্তার কার্পেট দুই সপ্তার মধ্যে ধ্বংস হবে না। সৎ মানুষ যদি বানানো যায় তবে ডাক্তারও সৎ হবে, সে আর কমিশন খেয়ে টেষ্ট করতে দেবে না, বা কমিশন খেয়ে ওষুধ লেখবে না। সৎ মানুষ যদি বানানো যায় তবে সাংবাদিকও সৎ হবে, সে আর হলুদ নিউজ প্রচার করবে না। সৎ মানুষ যদি বানানো যায় তবে শিক্ষকও সৎ হবে, সে আর চাটুকারিতা করবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৩