আরব বসন্তের ধাক্কায় সৌদি-তুরষ্ক সম্পর্কে যে চির ধরেছিল তা ঘুচে গিয়ো আবারো পূর্বের অবস্থানে যাওয়ার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টা ইসলামের জন্য ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে অনেকেই দেখলাম শুকরিয়া জানাচ্ছে, ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের 'অ্যালাবামা এগ্রিকালচার এন্ড মেকানিক্যাল ইউনিভার্সিটির' সাবেক একজন বাঙ্গালী অধ্যাপককেও দেখলাম এই কাতারে। এ ব্যপারে আমার মত ভিন্ন, চাইলে রাজনৈতিক বিবেচনায় ইতিবাচক হিসেবে দেখা যেতে পারে কিন্তু বিষয়টাকে আমি ইসলামের জন্য ইতিবাচক হিসেবে নেওয়ার কিছু দেখছি না।
প্রশ্ন হল, সৌদি-তুরষ্ক সম্পর্কের উন্নতি হলে সেটা কি ইসলামের স্বার্থে হবে ??? কখোনোই না! তা হবে কেবল রাজনৈতিক স্বার্থে, ক্ষমতার স্বার্থে।
লক্ষ করলে দেখা যাবে, মার্কিন নির্বাচনে সৌদির প্রিয় বন্ধু ডোনাল ট্রাম্পের পরাজয়ের পরই মূলত সৌদি-তুরস্ক সম্পর্ক উন্নতির আভাষ পাওয়া যাচ্ছে। প্রিয় বন্ধু ট্রাম্পের আশীর্বাদেই সৌদি এতোদিন খেয়াল খুশি মতো চলেছে, ক্ষমতা ব্যপারেও জন বিচ্ছিন্ন রাজতান্ত্রিক সরকার পেয়েছে শতভাগ নিশ্চয়তা। কিন্তু বন্ধু ট্রাম্প আর হোয়াটস হাউজে থাকছে না, তাই ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তবে বন্ধু ট্রাম্প তার আশীর্বাদ একেবারে বিনামূল্যে দেয়নি। বিনিময়ে মিউচুয়াল ফ্রেন্ড থেকে ছোট ভাই ইসরাইলকে যুক্ত করিয়েছে উপসাগরীয় দুই রাষ্ট্র বাহারাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফ্রেন্ডলিস্টে।
আবারো হোয়াইট হাউজের চাবি পেলে হয়তো কাতার ব্যতিত উপসাগরীয় পশ্চিমের অন্যসব রাষ্ট্র সমূহের ফ্রেন্ডলিস্টেও ইসরাইলকে যুক্ত করে ফেলতো। আরবের জন বিচ্ছিন রাজতান্ত্রিক সরকারদের পক্ষে ক্ষমতার নিরাপত্তার স্বার্থে এতটুকু আপোশ করতেই হতো।
কিন্তু হোয়াইট হাউজের চাবি হাত বদল হয়েছে, সেখানকার নতুন বাসিন্দা বাইডেন মহাশয়, তিনি ট্রাম্পের তৈরি করা পথে হাটছে না। যেই ইসরাইলের স্বার্থে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জন বিচ্ছিন্ন আরব বাদশাহদের খেয়াল খুশি মতো চলার স্বাধীনতা দিয়েছিল, নতুন প্রেসিডেন্ট সেই ইসরাইলের প্রতি'ই ততটা দরদী নয় (এটলিস্ট ট্রাম্পের মতো একনিষ্ঠ ইসরাইল প্রেমি নয়)। সুতরাং ইসরাইলের মাধ্যমে মার্কিন সমর্থন পাওয়ার দরজা বন্ধ। ইভেন মার্কিন নির্বাচনে পরাজয়ের পরেও বিন সালমান, পম্পেও এবং নেতানিয়াহুর সাথে গোপন বৈঠক করেছে। সর্বশেষ যখন দেখলো রাস্তা এখানেই শেষ, নতুন কোনো পথ নেই, তখন তার প্রয়োজন নতুন বন্ধু। সেক্ষেত্রে উদীয়মান শক্তি তুরস্ক। আবার সুর বদলে সৌদি এখন ইসরাইলের বিরুদ্ধে বেশ কড়া ভাষায় কথা বলছে।
সব মিলিয়ে পুরো ব্যপারটাই রাজনৈতিক। যারা এখানে ধর্মকে টেনে আনছে তাদের সাথে আমি একমত নই, এখানে ধর্মের যোগসূত্র নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩৩