বিগত ২ সপ্তাহ জুড়ে উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলাদেশে সবচাইতে বড় আলোচনার বিষয় ‘রোহিঙ্গা সমস্যা’
প্রেস মিডিয়া,ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়া,ব্লগ এমনকি ফেইসবুকেও চলছে নানামুখি আলোচনা। যেকোন দেশীয় রাজনৈতিক বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। রহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও সেরকম আলোচনাই চলছে। এখানে যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে তার পক্ষে-বিপক্ষে কিছু কথা তুলে ধরা হলো-
(১) রহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিবো কিনা ?
বিশ্বে গোলযোগপুর্ন দেশের বিপদগ্রস্থ মানুষের সীমান্তবর্তী দেশে অস্থায়ী শিবিরের মাধ্যমে আশ্রয় স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বর্তমান বিশ্বে চলমান সিরিয়া সমস্যায় তুরস্ক তার দেশে বিপদগ্রস্থ সিরিয়ানদের শিবিরে আশ্রয় দিয়ে আসছে। এছাড়াও প্রায়ই ফিলিস্থিনীরা ইসরাইলি আগ্রাসন থেকে বাঁচতে মিশরে আশ্রয় নেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কতৃক আফগান আক্রমনের সময় পাকিস্থানও নিরীহ আফগানদের আশ্রয় দিয়েছে। সেই মানসিকতার যুক্তিথেকে অনেকেই রহিঙ্গাদের আশ্রয়ের পক্ষে।
বিপক্ষের যুক্তি হচ্ছে, মায়ানমারের পরিস্থিতি সিরিয়া,মিশর বা আফগানিস্থানের মতো নয়।এটা একটা গ্রামের দুটি সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা। রহিঙ্গারা একবার বাংলাদেশে ঢুকলে আর যায় না,বাংলাদেশে তারা নানামুখি সমস্যার জন্মদিচ্ছে, তাই তাদের আশ্রয় যুক্তিসঙ্গত হবে না।
মন্তব্যঃ দীর্ঘ অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করলে আশ্রয়, হীতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। কারন, এটা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত জাতিসংঘের আহবানে বা তত্ত্বাবধানে আশ্রয় হচ্ছেনা...শুধু চাপ আসছে। চাপদিলেই আশ্রয় দিতে হবে এমনটা নয়। অভিজ্ঞতা বলে একবার কেউ মায়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে এলে তাকে আর মায়ানমার ফেরত নেয় না...তাদের নাগরিক বলে অস্বীকার করে। তাই জাতিসংষের তত্ত্বাবধানে আশ্রয় শিবির খুললে তাতেই কেবল সাড়া দেয়া যেতে পারে।
(২) আমরা কি মানবতাবোধহীন হয়ে যাচ্ছি ?
বাড়ির দরজায় আসা বিপদগ্রস্থ মানুষদের আবার বিপদগ্রস্থ এলাকায় ঠেলে দিয়ে আমরা কি মানবতাবোধহীন হব? আমাদের কি নুন্যতম দায়িত্ব নেই ?
বিপক্ষের কথা হচ্ছে, সব মানবতা কি আমাদেরকেই দেখাতে হবে? মানবতার ফেরিওয়ালারা কই ?
মন্তব্যঃ এখানে অবশ্যই মানবিকতা দিয়ে দেখার আছে, সাথে আরো কিছু কথা থেকে যায়। আন্তর্জাতিক মহল কেন মায়ানমারকে দাঙ্গা বন্ধে এবং মায়ানমারের সংখ্যালঘু রহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নির্যাতন বন্ধের চাপ দিচ্ছে না ? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখানে পুর্ব তিমুরের খৃস্টান সম্প্রদায়ের পাশে ছিল এখানে কেন তারা সংখ্যালঘু রহিঙ্গা মুসলিমদের পাশে থাকছে না ? লিবিয়ার শাসকদের ক্ষমতা থেকে অপসারনে তাদের সহায়তা বাড়াবাড়ি রকমের ছিলো আর এখানে কেন কোন রকম তৎপরতা চোখে পড়ছে না !! জাতিসংঘ-ই বা কি করছে...আর মানবাধিকার কমিশন ও বা কোথায় ? তারা কিছু না করে শুধু বাংলাদেশকেই কেন চাপ দিচ্ছে,যা যুক্তিসংগতও নয়। অং সান সুচি যিনি শান্তিতে নোবেল পেলেন তিনিই বা কোথায়...কোথায় তার শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ? আর বাংলাদেশের ইউনুস কে নাহয় বাদই দিলাম,ঐটাতো একটা ছাগল !
তবে এই সংকটের মাধ্যমে আরেকটা বিষয় বড় করে দেখা দিয়েছে তাহলো মুসলমানদের আসলে শক্তিশালী অভিভাবক নেই...মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , জাতিসংঘ, মানবাধিকার কমিশন সবাই পক্ষপাতদুষ্ট...তাদের স্বার্থের সাথে সংগতিপুর্ন হলেই কেবল তারা অগ্রসর হয় নয়তো নয়, তাই সময় এসেছে মুসলমানদের শক্তিশালী কতৃপক্ষের দাবি জোরদার করা।
যাহোক, বাংলাদেশ এমন কোন শক্তিশালী দেশ নয় যে একবার আশ্রয় দিলে আবার মায়ানমারকে রাজনৈতিক চাপে রেখে রহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবে,মায়ানমার বাংলাদেশের চাপকে পাত্তা দেয় না। তাই বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে সমাধানও করতে পারবে না।
(৩) সমাধান কি ?
একপক্ষ বলছে, কিছু সময়ের জন্য হতে পারে ২-৩ মাস আশ্রয় দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফেরত পাঠানো।
অপরপক্ষ বলছে,একদিনের জন্যও আশ্রয় দেয়া যাবেনা। আগের আশ্রয় দেয়া রহিঙ্গাদের সমস্যাই এখনোই সমাধান হয়নি।
মন্তব্যঃ কিছুদিনের জন্য আশ্রয় দিয়ে বাস্তবিক অর্থেই এর দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হবেও না,কারন হচ্ছে আমার বাংলাদেশ নতজানু দুর্বল রাষ্ট্র এখনো যেমন আছে ২-৩ মাস পরেও তাই থাকবে,তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম মায়ানমার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা রহিঙ্গাদের ফেরত নিলো(যদিও এটা আকাসকুসুম কল্পনা !)আবার যে কোনদিন এভাবে নির্যাতন চলবে না তার নিশ্চয়তা নাই। মায়ানমার অত্যাচার নীতি বলবৎ রাখলে এটা কখনো থাম্বে না।
তাই এই ঘটনা থেকে বাংলাদেশের মানবিকগুন সম্পন্ন তরুন সমাজকে ভবিষ্যৎ শক্তিশালী বাংলাদেশের কথা ভাবতে হবে,নেতৃত্ব দেবার মত দেশ তৈরীর স্বপ্ন দেখতে হবে,মুসলমান অধ্যুষিত দেশ হিসেবে বলছি আমাদের সামনে সুযোগ আছে ইসলামী মুল্যেবোধের নেতৃত্বে শক্তিশালী ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা,যা বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , বৃটেন ভারতসহ সকল শত্রুরাষ্ট্রকে মোকাবেলা করবে,মায়ানমার তো কোনবিষয়ই না। ইসলামেরভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ জনগন ও সশস্ত্রবাহিনীই দেশের নিরাপত্তা বিধান করতে সক্ষম এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আমাদের জন্য নেতৃত্ব স্থানীয় রাষ্ট্রের মর্যাদা নিশ্চিত করবে।
নিকট অতীতের একটা উদাহরন দেই,১৭৯৫ সালে উসমানিয়া খিলাফতের আলজেরিয়া প্রদেশের গর্ভনর সুলতান সেলিমের সাথে বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটা চুক্তি করে, আলজেরিয় কারাগারে বন্দী ১০০ মার্কিনের মুক্তি ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন বানিজ্য জাহাজের যাতায়াতের অনুমতি লাভ করে এর বিনিময়ে খিলাফত রাষ্ট্রকে ৬,০০,০০০ মার্কিন মুদ্রার সমপরিমান স্বর্ন ও ১২০০০ উসমানী মুদ্রা লিরা প্রদান করে এবং মার্কিনদের এযাবৎ কালের ইতিহাসের প্রথমবারের মত নিজস্ব ভাষা বাদদিয়ে খিলাফতের ভাষায় চুক্তি করতে বাধ্য হয়। এসবই সম্ভব হয়ে ছিল শক্তিশালী ইসলামি রাষ্ট্র থাকার কারনে।
১৮৬২ সালে আব্রাহাম লিংকন খিলাফতের সাথে ‘Commerce and Navigation Treaty’ স্বাক্ষর করতে পেরে কৃতজ্ঞতা স্বরুপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’র স্বাধীনতা দিবসে মুসলিম জাহানের খলিফাকে প্রধান অতিথি করে আমন্ত্রপত্র পাঠায়,খলিফা নিজে না গিয়ে আলজেরিয়ার গর্ভনরের এক কর্মকর্তাকে পাঠান,এটা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে underestimate এর মাত্র একটি উদাহরন,শক্তিশালী ও সাহসি নেতৃত্ব না থাকলে তো এটা সম্ভম ছিলোনা...যেমন বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের সামান্য(তাদের দিক থেকে)কর্মকর্তাকেও বাংলাদেশে পাঠায় হাসিনা-খালেদাকে সবক দেবার জন্য,এটা একপ্রকার underestimate।
আসুন,আমরা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে আবার চেনার চেষ্টা করি…দীর্ঘমেয়াদী অত্যাচার নিগ্রহের পরিত্রানের জন্য একটু বড় চিন্তা করি।
সূত্র: বিবেকের তাড়না এবং নাগরিক ব্লগ

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




