পিলখানা হত্যাকান্ড নিয়ে আর কিছু লিখব না ভেবেছিলাম। পিলখানায় যারা শহীদ হয়েছে তারা আমার ভাই। দেশের জন্যে মৃত্যু বরণ করতে হতে পারে জেনেও তারা সেনাবাহিনীতে গিয়েছিল। তাদের কথা মনে হলে চোখ ভিজে আসে। আমার আর লিখতে ইচ্ছে করে না। আজ লিখছি অন্য কারণে। যারা বিডিআর,সেনাবাহিনীর মধ্যে অস্থিরতা তৈরী করতে চায় তাদের জন্যে।
আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। বেশ কয়েক বছর আগে হাসানুল হক ইনুর একটি লেখায় ৭ ই নভেম্বরের সিপাহী বিপ্লেবে তাঁর সম্পৃক্ততার কথা পড়েছিলাম (যে ঘটনা কে তাঁর জোট এখন বিপ্লব হিসেবে ই স্বীকার করে না)। সে ঘটনায় উত্তেজিত সৈনিক দের হাতে অনেক অফিসার কে প্রাণ দিতে হয়েছিল। আর বিদ্রোহের শাস্তি হিসেবে ফাসি হয় কর্ণেল তাহের সহ অসংখ্য সৈনিকের। ইনু ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। এম পি মন্ত্রী হন। সরল মতি সৈনিকরা বুঝতেও পারেন না দাবার বোর্ডের সৈনিকের চেয়েও এসব নেতাদের কাছে তাদের গুরুত্ব কত কম।
ফরহাদ মাযহারের কারো প্রতি যেন বেইনসাফি না হয় পড়ে এ কথাটি ই মনে হচ্ছিল বারবার।তাঁর মত প্রাগ্ঞ বুদ্ধিজীবির বিরোধিতা করব এমন শক্তি আমার নেই, তবে তিনি সাধারণ সৈনিকের সাথে অফিসারদের মর্যাদার দূরত্ব নিয়ে যে কথা বলেছেন তার সাথে আমি একমত নই। আমার জানামতে সেনা বাহিনী সহ অন্যান্য নিয়ম শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পদবীর মোটা দাগের যে বিভাজন তা হচ্ছে, সৈনিক, ননকমিশন্ড অফিসার (তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা), জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার(দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা) এবং অফিসার প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা।এদের মধ্যে অফিসার ছাড়া সকলেই বিনামূল্যে খাবার এবং পোষাক পান।
ফরহাদ মাযহার সাহেব যে মর্যাদার তারতম্যের কথা বলেছেন সেটা কোন অফিসে নেই? যে কোন কর্পোরেট অফিসের কথা যদি ধরি সেখানে ম্যনেজার একজিকিউটিভ এবং নন একজিকিউটিভরা কি একই মর্যাদার। একজিকিউটিভদের মধ্যেই তো কত রকম বিভাযন দায়ত্বে এবং মর্যাদায়। বেশি কথা বলার আগে ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই আজকাল বিভিন্ন অফিসে বড় কর্তারা ভিন্ন লিফ্ট ব্যবহার করেন, বেতন স্কেল তো বটেই অন্যান্য সুযোগ সুবিধারও পার্থক্য বিস্তর। সরকারি অফিসেও গল্প একই পত্রিকা অলারা ই বলুক তাদের অফিসে বিভিন্ন পদবীর সুযোগ অথবা মর্যাদা কী এক?
নিয়ম শৃংখলা বাহিনী এক দিকে এগিয়ে। তারা একটা পরিবারের মত বসবাস করে। কারণ যুদ্ধে র ময়দান থেকে লাশ বয়ে আনবে একজন সহ যোদ্ধাই। আর এজন্যে এক জন অধিনায়ক তার কনিষ্ঠতম সৈনিকেরও পরিবারের খবর রাখে। একজন সৈনিক জানে শত্রুর মাইন ফিল্ডে প্রথম যে পা রাখবে সে অফিসার, কোন বিপদে যে সবচে আগে এগিয়ে আসবে সে আর কেউ নয় তার অধিনায়ক । অধিনায়কের এই অভিভাবকত্ব আছে বলেই সৈনিকের আনুগত্য প্রশ্নাতীত। আনুগত্য ছাড়া আর যাই হোক যুদ্ধ করা যায়না । স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস দেখুন। মুক্তিযোদ্ধারা কত গর্ব নিয়ে তাদের কমান্ডারের কথা বলে। তখন কী তাদের মর্যাদার পার্থক্য ছিল না? আমি একবার একটা জিনিষ দেখে অভিভুত হয়েছি, আমার পরিচিত সৈনিকের বাবার অপারেশণ, রক্তের দরকার, সৈনিক নিশ্চিন্ত, তার অফিসার আছে রক্ত তিনি দিবেন এবং প্রয়োজনে আরও যোগাড় করে দেবেন। সৈনিক ও একই ভাবে তাদের অধিনায়কের জন্যে জান লড়িয়ে দেয়। পিল খানায় নিহত সুবেদার মেজর তার জ্বলন্ত উদাহরণ।
প্রিয় ফরহাদ মাযহার মর্যাদার ধুয়ো তুলে আমাদের এই পরিবার টিকে ভেঙ্গে দেবেন না।
আর একটি কথা ফরহাদ মাযহার সাহেব সেনাবাহিনীর অফিসারদের সাথে প্রধান মন্ত্রীর সাক্ষাৎকার টি ভাল চোখে দেখেন নি। প্রধান মন্ত্রী সংসদের কাছে দায়বদ্ধ । খুবভাল কথা। রাস্তা ঘাটে যখন প্রায় প্রতি দিনই প্রধান মন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন সরকারি পদক্ষেপের ব্যক্ষা চাওয়া হয় তখন ফরহাদ মাযহার নিরব থাকেন,আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যখন শোকাহত অফিসারদের কষ্টের কথা জানতে আসেন তখন ফরহাদ মাযহার প্রধান মন্ত্রীর, মর্যাদা রাষ্ট্রের গণতন্ত্র ইত্যাদি নিয়ে কেন যে চিন্তিত হয়ে পড়লেন বুঝতে পারছি না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ৯:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



