somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্তরালে অন্যকিছু!

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শীতের সকাল। চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে উঠলো হাবিব সাহেব। ঢাকাতে একলা থাকেন তাই সকালে ডেকে উঠানোর মতো কেউ নেই। তাই আজকেও দেরি হবে অফিস যেতে। ব্যাংকে চাকুরী করেন তিনি। পরিবার থাকে চট্টগ্রামে। হ্যাঁ তিনি বিবাহিত। আর বয়সও ৪৫ এর কাছাকাছি। পরিবারকে নিয়ে ঢাকা থাকার সামর্থ্য তার আছে কিন্তু তার স্ত্রী ঢাকার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। তার ছেলে ৯ম শ্রেণীতে পড়ে চট্টগ্রামেই। একটাই ছেলে তার।

কোন মতো করে সেদিন অফিস গেলো। কিন্তু ম্যানেজারের ঝাড়ি তো শুনতেই হলো। ৪৫ উর্ধ্বে বয়স হলেও ঘুমানো তার একটা বাজে স্বভাব। একবার ঘুম দিলে তাকে জাগানো অনেক কষ্টের ব্যাপার। মাসের ৭ তারিখ ছিলো তাই বেতনটাও পেলো একাউন্টে। রাতে বাসায় গেলো। ২ রুমওয়ালা ফ্লাট কিন্তু একাই থাকেন। ভয়ডর এতো নেই তার। তাই কাউকে সাথেও রাখে না। আর কথায় আছে না, যার ভয় কম তার কাছে ভূত আসতেও ভয় পায়। ব্যাপারটা এইরকমই।

পরের দিন সকালে উঠলো কিন্তু শরীরটা কেমন যেনো জ্বর জ্বর লাগছিলো। তাই সেদিন অফিসে কল দিয়ে ৩ দিনের ছুটি নেয়। বস তো ছুটি দিবে না। কিন্তু হাবিব সাহেবও অফিসে যাবেন না তার এই ক্লান্ত শরীর নিয়ে। ভুয়া একটা মেডিকেল সার্টিফিকেট বানায় তার এক চেনা কারো কাছ থেকে। তারপর সেটা দেখিয়ে ছুটি আদায় করে নেয়। শরীরও খারাপ ঠেকছে আর তার উপর পেয়েছে বেতন। গ্রামে তো এমনি টাকা পাঠাতে হবে তাই সে ভাবলো এইবার সে নিজে গিয়েই দিয়ে আসবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ অসুস্থ শরীর নিয়েই রওনা হলেন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে।

সকাল ১০ টার দিকে রওনা হন। কুমিল্লার দিকে একটু জ্যাম থাকায় যেতে একটু দেরি হলো। বাস থেকে যখন নেমেছে তখন ঘড়িতে বেজেছিল ১১ টার মতো। শহর থেকে তার বাড়ি বেশ ভালোই দূরে। তাই সে অটোরিকশা খুঁজছিলেন। কিন্তু রাস্তায় অটোরিকশা থাকা সত্ত্বেও তার বাড়ির দিকে কেউ যেতে চাচ্ছে না। কারণ ওইদিক থেক ফেরার পথে অনেক চালককে কিছু ভৌতিক ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। তাই কোন অটোরিকশাওয়ালা যেতে চাচ্ছে না। আকাশটা কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন কিন্তু চাঁদটা পুরো ভর্তি থালা হয়ে আছে। মাঝেমাঝে চাঁদটা মেঘের আড়ালে লুকিয়ে যায়। কেমন যেনো একটা হরর সিনেমার দৃশ্যের মতো ছিলো।

বাড়িতে জানিয়ে রেখেছিলেন তাই বাড়ি থেকে কিচ্ছুক্ষণ পর পর কল দিচ্ছিলেন। হঠাৎ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নামলো। হাবিব সাহেব বৃষ্টিতে ভিজতে চাচ্ছেন না। এমনি শরীরটা একটু অসুস্থ। তাই একটা দোকানের নিচে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর সে তার বাড়িতে কল করলো আর তার ছেলে নাঈমকে ছাতা নিয়ে সামনের দিকে খাল পাড় আসতে বললো। দোকানের ওইপ্রান্তে কে জেনো বসে আছে। হাবিব সাহেব তার কাছে গেলো। চেহারাটা তার যেনো কেমন চেনা চেনা মনে হচ্ছে। তাই আরো একটু কাছে গেলো। এইবার সরণে এসেছে কে সে। দোকানের ওইপ্রান্তে যে দাঁড়িয়ে ছিলো সে হলো গাফফার চাচা। হাবিব সাহেবের বাড়ির পাশেই তার বাড়ি। ২ মাস আগে যখন হাবিব সাহেব গ্রামে এসেছিলো তখন গাফফার চাচার সাথে তার দেঝা হয়েছিলো কিন্তু তখন সে দেখতে খুব সবল ছিলো কিন্তু এখন দেখতে কেমন রোগা হয়েগেছে।

হাবিব সাহেব আগবারিয়ে কথা বললেন,
-- কেমন আছেন চাচা?
-- বেশি ভালো নেই রে। অনেক কষ্টে আছি। তুই তো অসুস্থ তাই না?
-- জ্বী চাচা কিছুটা অসুস্থ কিন্তু আপনি বুঝলেন কিভাবে?
-- না আরকি তোর শরীর দেখে মনে হচ্ছে!
-- তো চাচা এতো রাত্রে এদিকে কোথায় যাচ্ছেন? বাড়ি যাবেন না?
-- কই এতো রাত। মাত্র তো ১১ টা বাজে। হ্যাঁ আমি তো বাড়িই যাবো।
-- তাহলে চলেন আমিও বাড়ি যাচ্ছি। নাঈমকে ছাতা নিয়ে আসতে বলেছি। এক্ষুনি এসে পড়বে।
-- না না। আমি একটু পরে যাবো, একটা কাজ আছে!
-- ( গাফফার চাচার কথা শুনে একটু অভাব হলো। তারপর একটু সাইডে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো) চাচা খাবেন?
-- ( চাচাকে সিগারেট অফার করার পর সে কেমন যেনো দূরে যাচ্ছে) না না বাবা একটু কাজ আছে আমি আসি।

এই বলে গাফফার চাচা এখান থেকে চলে গেলো। গাফফার চাচার আচরণ আজ কেমন ঠিক মনে হলো না হাবিব সাহেবের কাছে। বৃষ্টি ঝিরিঝিরি পড়ছেই কিন্তু এই বৃষ্টির মধ্যে চাচা কোথায় যাবে। হাবিব সাহেব চাচার চিন্তা ছেড়ে খাল পাড়ের দিকে হাঁটা শুরু করলো কারণ সে তার ছেলেকে খাল পাড়ে ছাতা নিয়ে আসতে বলেছে। তার বাড়ির অদূরেই একটা খাল আছে, খাল পেড়িয়েই তার বাড়ি যেতে ১ মিনিট লাগে।

হাবিব সাহেব খালের গোড়ায় দাঁড়ালেন, ছেলের জন্য অপেক্ষা করছে। ১ মিনিটের মধ্যেই নাঈম আসলো। নাঈম নৌকা নিয়ে এ পাড় আসলো বাবার সাথে একটু কথা বলে নৌকায় চড়ে ওইপাড় গেলো। নাঈম গ্রামে থাকে বলে ভয়ডর নেই বললেই চলে। আর ৯ম শ্রেণীতে পড়ে একেবারে ছোটও না। বাড়ির দিকে যাওয়ার সময় হাবিব সাহেব নাঈকে জিজ্ঞাস করলো, গাফফার চাচা খুব কষ্টে আছে রে, তাই না?। নাঈম ওর বাবার মুখ থেকে এই কথা শুনে তো অবাক। নাঈম বললো কাল সকালে তাকে গাফফার দাদুর বাড়ি নিয়ে যাবে। হাবিব সাহেব আর কথা বাড়ালেন না। বাড়ি পৌছালেন ভালো মতোন। খাওয়াদাওয়া করে সবার সাথে একটু কথা কথা বলে ঘুমিয়ে পড়লেন। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেন হাবিব সাহেব। গ্রামে গেলে যা হয় আরকি একজন অলসও ফজরের আজানের সময় উঠে পড়ে।

মুখ ধুঁয়ে হাল্কা কিছু খেয়ে নাঈমের সাথে বের হলো গ্রামটা একটু ঘুরতে। ঘুরতে ঘুরতে মনে হলো গাফফার চাচার কথা। নাঈম নিয়ে গেলো গাফফার চাচার বাড়িতে কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার পর তো হাবিব সাহেব থ বনে গেলেন। গাফফার চাচা সম্পর্কে যা শুনলো তা কোন মতেই বিশ্বাস করার যোগ্য ছিলো না তার কাছে। শুধু তার কাছে নয় কোন সাধারণ মানুষের কাছেই এটা মেনে নেওয়া সম্ভব না। কারণ সে যেটা জানলো সেটা তার বিশ্বাসের বাহিরে। সে জানতে পারলো গাফফার চাচা ৪ সপ্তাহ আগে মারা গেছেন। কিন্তু হাবিব সাহেব তা মানতে পারছেন না কারণ গতকাল রাতেই যে সে তার সাথে কথা বললো।

নাঈম তাকে বললো গাফফার চাচার কবর দেখতে। নাঈম নিয়ে যাচ্ছিলো তা কবরের দিকে কিন্তু তার মুখে একটাই কথা এটা কীভাবে সম্ভব কাল রাতেই তো কথা বললাম। যখন নাঈম কবরের সামনে পৌঁছে বললো, এই যে গাফফার দাদুর কবর। তখন হাবিব সাহেব মনে হয় পাথর হয়েগিয়েছিল। হঠাৎ হাবিব সাহেব অজ্ঞান হয়ে গেলো। নাঈম লোকজন নিয়ে তাকে বাড়িতে আনে জ্ঞান আসার পর দেখা গেলো এখন তার সত্যি সত্যিই অনেক জ্বর। জ্বরে কাঁপছে সে। অনেক ডাক্তার দেখালো কিন্তু জ্বর ঠিক হতে অনেক দিন লেগেছিলো প্রায় এক মাসের মতো। মনে করা হয়, ভূতের ভয়ের চেয়ে মানুষের দেখানো ভয়ে মানুষ কাবু হয় বেশি। হাবিব সাহেব আজও বুঝেনি যে সেটা ঘটনাটা আসলে কী ছিলো। কোন হ্যালোজেনেশন নাকি গাফফার চাচার কিছু বলার ছিলো নাকি পুরোটাই কল্পনা? উত্তর সে আজও পায়নি। এখন আর সে একলা থাকে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×