ভালো কিছু বিচিত্র অভিজ্ঞতা পেতে চাইলে রাস্তা ঘাটে অচেনা মানুষের তুলনা নাই, প্রায় প্রত্যেক দিন কিছু না কিছু নতুন শিক্ষা জীবনে থাকবেই সেইগুলা দেখার কিংবা বোঝার জন্য টেনশন ফ্রি হয়ে মন কে সাদা কাগজের মতন করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে হবে , যা যা দেখবেন বুঝবেন জানবেন সাদা কাগজে লেখা হয়ে যাবে অটোমেটিক।
এই রকম একটা সাদা কাগজ আমারও ছিল যখন রোজ আমি প্রচুর strugge করে লোকাল বাসে অফিসে যাওয়া আসা করতাম, তারপর কীভাবে কীভাবে সব পরিবর্তন হল দুনিয়ায় করোনা এলো, প্রাইভেট সব কোম্পানি গুলো রাষ্ট্রীয় শর্ত শাপেক্ষে ট্রান্সপোর্ট দিতে বাধ্য হল সেই ট্রান্সপোর্ট ব্যাবহার করে আমার আর পাবলিক বাসে চড়া হয়না বলেই সাদা কাগজেও লেখা হয় না তেমন।
তবে অফিস ট্রান্সপোর্টের ও আলাদা অভিজ্ঞতা আছে; কিছু ভালো না লাগলে জাহির করে জানান দেয়া যায় ; অনেক কিছু অন্যদের মানিয়ে নিতে বাধ্য করা যায়; অনেক কিছু নিজের ও মানিয়ে নিতে হয় ভেতরে ভেতরে লুজারদের মতন।
এই যেমন পাঁচটায় অফিস শেষ হলেও সাড়ে পাঁচটায় গাড়ী ছাড়বার নিয়ম; সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করে অধৈর্য হয়ে গেলেও কিছু বলা যায় না বললেও এর সমাধান নাই সবার সব কিছু গুছিয়ে বের হতে হতে ছয়টা বাজিয়ে দিলেও।
আমি ছাড়া বাসায় ফেরার কারো গরজ নাই মনে হবার জন্য আমি একলাই এই নিয়ে ভেতরে ভেতরে জ্বলিয়া পুড়িয়া খাঁক হয়ে গেলেও সব কাছের মানুষই তো বিধায় কিচ্ছু করার থাকেনা। একেকজনের বস নাকি শেষ মুহূর্তে ডাকাডাকি করে কাজ ধরিয়ে দেয় বেচারা বেচারিদের, নিশ্চিত অজুহাত এই ব্যাপারে আমি কারো কথা বিশ্বাস করিনা যখন করোনা স্টার্ট টাইম ছিল সব লকডাউন তখন গাড়ী পাঁচটায় ছাড়ত তখন তারা শেষ মুহূর্তে কাজ পেত না?? তখন ঠিকই পাঁচটায় সবাই গাড়িতে উপস্থিত।
বিরক্তের উপর আরও বিরক্ত এসে মাথার উপর চরকির মতন ঘুরতেছে আমার, সাংবাদিক বলে ডাকতেছে একেকজন আমাকে। এই জন্য না যে আমি স্টাফ বাসে উঠে সাংবাদিকতা করি, লিখি বলে সাংবাদিক, তাদের এই ভুল ভুল বুঝবার দায় অনুযায়ী; আমাকে দেয়া ভুল নামের প্রতিবাদ মনে মনে করতে করতে একদিন মুখের উপর তীব্র ভাবে বললাম, যাদের বললাম তাদের ভেতর এক মধ্য বয়স্ক বড় ভাই খুব মন খারাপ করলেন আমার ও বলার ধরন ভালো ছিলনা সেদিন।
এর আগেও অবশ্য ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম আমি; এই নামে ডাকা হলে একদিন আমি বিরক্তি প্রকাশ করবো। আমার এই অবজেকশনের পর গাড়ির আবহাওয়া কয়দিন চুপ চাপ ছিল, ধীরে ধীরে এর পর আবার আগের মতন হাল্কা করার চেষ্টা করতে থাকলো গাড়ির পরিবেশ সেই শুরুর মতন, একদিন সবাই মিলে ঠিক করলো স্নাক্স খাবে ফেরার পথে এই কাহিনীও বেশ পুরানো স্টাফ বাস চালু হবার পর শুধু মুখে মুখেই স্নাক্স খাওয়া হয় রোজ।
আমার অবজেকশনে কষ্ট পাওয়া বড় ভাই সেদিন স্নাক্স খাওয়া বাস্তবায়ন করলেন তাকে সাহায্য করলেন আমাদের গাড়ির ড্রাইভার সে নিকুঞ্জ ঢুকে লা মেরিডিয়ানের পেছনে স্নাক্সের কয়েকটা দোকান খুঁজে বের করে গাড়ী পাকিং করে দাঁড়িয়ে রইলেন।বড় ভাই সবাই কে খাওয়ালেন।
স্নাক্স খাওয়া শেষে বড় ভাই কে সবাই ধন্যবাদ দেয়ার পর তিনি সকলের কাছে এই আর্জি জানালেন যে তার একমাত্র ছেলেকে যেন মন থেকে দোয়া করা হয়,
বাড়ি ফেরার মুহূর্ত ছিল খাওয়া দাওয়া পর্ব ছিল সবাই হাল্কা মুডে হাসাহাসি করতেছিল এই অবস্থায় বড় ভাই আবার ও বলে উঠলেন ব্যাপারটা হাসির না কিন্তু, আমার ছেলেটা হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে সে এসএসসি তে এ প্লাস পেয়েছিল নটরডেম কলেজে চান্স পেয়েছিল, এই জন্যই আপনাদের সাথে একটু হাসাহাসি করে ছেলের কথা ভুলে থাকার চেষ্টা করি, আমার কথায় কেউ বিরক্ত হয়ে থাকলে হাত জোর করে ক্ষমা চাইছি, উনার শেষ লাইন ছিল আমার প্রতি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৬