somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অস্তিত্বে অন্তরালে

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভোর ৪টা, সারারাত ঘুম হয়নি উমর সাহেবের আর কিছুক্ষন পরই ফজরের আজান, তিনি ভাবলেন একবারে নামাজ পড়ে অফিসে রওয়ানা দিবেন! আজ আর ঘুমের দরকার নেই,
আজকাল রাস্তাঘাটে জ্যাম যে হারে বেড়ে গেছে সকাল সকাল বের হওয়াই ভালো।

ভোর রাতের এই সময়টা ভীষণ গভীর আর নিরব হয়ে থাকে, প্রকৃতি যেন কিছু একটার জন্য গভীর মনোযোগে অপেক্ষমান, প্রতিদিন সূর্য ওঠে সূর্য অস্ত যায়, কিন্তু এই দুই মুহূর্তের সময়টুকুতে যেন প্রকৃতি স্তম্বিত হয়ে থাকে সবসময়।
পাশের ফ্লাটের সদ্য বিবাহিত দম্পতির হাসি ঠাট্টা কানে আসছে জানালা দিয়ে, বয়স কম জীবনে কিই বা দেখেছে তারা, চোখ ভর্তি শুধু স্বপ্ন আর স্বপ্ন।

খুব দূরে সাইরেনের আওয়াজ কানে আসতে আসতেই মিলিয়ে গেলো, একটা ট্রাক গেলো খুব শব্দ করে। রাস্তা উমর সাহেবের বাড়ি থেকে প্রায় ৪০ গজ দূরে, তবু মনেহল একেবারে কান ঘেঁষে গেলো ট্রাকটা।

পাশেই মরিয়ম ঘুমাচ্ছে, নিঃশ্বাসের সাথে সাথে নাকের পাতা ফুলে ফুলে উঠছে তার, সেখান থেকে এক অদ্ভুত চিকন পাতার বাশির মত আওয়াজ হচ্ছে, গত ২ বছর ধরে মরিয়মের ঘুমে এই উৎকট ব্যাপার যোগ হয়েছে, বয়স হয়েছে হবেই তো। জীবন কত দ্রুতই না কেটে যায়, দেখতে দেখতে বয়স বেড়েছে চুলে পাক ধরেছে তবু মনে হয় এইতো সেদিন মরিয়মকে বিয়ে করে ঘরে তুলেছে উমর সাহেব।
মরিয়ম বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান বলে ঘর ভর্তি করে দামি উপহার সামগ্রী পাঠিয়ে দিয়েছিলো তার বাবা, সেই জন্য উমর সাহেবের মা এর সে কি রাগারাগি।
চিৎকার করে বলছিল ওই উমর তোর শ্বশুরে কি আমগো ফহিন্নি মনে করছে পুরা দুনিয়াদারি পাঠাইয়া দিছে যে! এইসব কি। এইসব কিন্তু ঠিক না। উমর সাহেব যতই তার মাকে বোঝায় সে ততই খেঁপে যায়। কি দিন ছিল হায়!!
অ্যাই আমাকে হানিমুনে নিবানা তুমি?
নিবো তো।

জানালার দিকে ফিরে তাকায় উমর সাহেব, নব বিবাহিত ছেলেমেয়ে দুটি ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে, কোথায় যাওয়া যায় বলতো।
সেন্টমার্টিন যাও আহা কি যে সুন্দর একটা শান্তির জায়গা! আনমনে বলে ওঠে উমর সাহেব শেষ যে বার সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখেছিলো; বুকটা কোন অন্তহীন জগত থেকে যেন নাড়া দিয়ে উঠেছিলো, সে উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে ছেলেমেয়ে দুটি হানিমুনে কই যাবে জানার জন্য, তারা সেই বিষয়েই কথা বলছিল কিন্তু মরিয়ম ঠিক ওই সময়েই বিকট শব্দে ডেকে ওঠে নাক।

ধুর বাল নাক ডাকার আর সময় পেলিনা, আজকাল বয়সের সাথে ক্রমাগতই মেজাজ খিটখিটে হচ্ছে উমর সাহেবের কথাবার্তার ও ব্যালেন্স রাখতে পারেনা।
পেছন ফিরে দেখে মরিয়ম তাকিয়ে আছে তারই দিকে, ঘুমে বিভোর লাল টকটকে চোখে উমর সাহেবের দিকে চেয়ে বললো এই শোনো আমি স্বপ্নে দেখি কি ১০০ বছর বয়সের বুড়া খিটখিটে গলায় আমাকে বলছে ''ধুর বাল নাক ডাকার আর সময় পেলিনা,।''
উমর সাহেব চমকে উঠলেন এই জন্য না যে তার কথা মরিয়ম শুনেছে এই জন্য যে তাকে ১০০ বছরের বৃদ্ধ মনে করছে। মাত্র ৪৮ বছর বয়সে তার কণ্ঠ ১০০ বছরের মত লাগলো কেন!!
আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় উমর সাহেব। একি! চেহারাটা এমন বুড়োটে লাগছে কেন!! বিড়বিড় করে বার কয়েক বললো মরিয়ম মরিয়ম মরিয়ম।
কি হইছে? এই ভোর রাতে ডাকেন কেন!!
মরিয়মের কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক!
মরিয়ম আসলেই কি তখন স্বপ্নে দেখেছিলো? না ইচ্ছে করে বানিয়ে বানিয়ে ১০০ বছরের বুড়া বলেছে তাকে!! বেয়াদব একটা।

অফিসে আজ কাজে মন বসছে না। যে কাজেই উনি হাত দিচ্ছেন সেটাতেই তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে, নতুন যে ছেলেকে নেয়া হয়েছে তাকে একটা সাধারণ ড্রাফ্‌ট করতে দিয়েছিলেন উমর সাহেব, সেটি এই নিয়ে ৯ বার কারেকশন করানো লাগলো, ওই দিকে ৪টায় বোর্ড মিটিং অথচ কিচ্ছু গোছানো হয়নি। সে ভেবেছিলো নেক্সট প্রজেক্টের জন্য দুর্দান্ত একটা প্রেজেন্টেশন দিয়ে চেয়ারম্যান স্যার এমডি স্যার কে একদম চমকে দেবেন। কিছুই হচ্ছে না।

মাথা একদম কাজই করছেনা। বাইরে খোলা জায়গা থেকে হেঁটে এলে হয়ত মাথা একটু ঠাণ্ডা হতে পারে ভাবেন উমর সাহেব। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়, এবং তখনি পিঠের ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে।
তার যে বয়স বাড়ছে তা এই পিঠের ব্যথা প্রতিবার বসা থেকে দাঁড়ালেই মনে করিয়ে দেয়।

বাইরে প্রচণ্ড রোদ উঠেছে ধুর! তাকালেই চোখ পুড়ে যাচ্ছে, মনে করে সানগ্লাসটা সাথে না নিয়ে আসার জন্য প্রমোদ গোনে উমর সাহেব। রাস্তায় ধুলা বালিতে একাকার অবস্থা, কেন যে মাথা ঠাণ্ডা করতে বাইরে বেরিয়ে এল তাও আবার গাড়ি ছাড়া! সে যে দিনে দিনে বোকার হদ্দ হচ্ছে এই তার প্রমান তার মাথা ঠাণ্ডা হবে কি আরও গরম হয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ পাশ থেকে বিকট চিৎকারে সম্বিৎ ফিরে চেয়ে দেখে সে ফুটপাতে এক বাচ্চা ছেলের পায়ের উপর তার চকচকে সু জুতা দিয়ে পারা দিয়ে আরামছে দাড়িয়ে আছে, পা সরাতেই দেখা গেলো বাচ্চার পা এর শেষ তিনটা আঙ্গুল থেঁতলে একেবারে রক্তাক্ত! নিমিষেই মানুষ জমে গেলো।

বাংলাদেশে এই এক ব্যাপার কিছু একটা পেলেই হলো সেটার ভেতর নাক গলানো চাই ই চাই, নাক আবার সরাসরি গলাবেনা, নির্দিষ্ট নিরাপদ দূরত্ব রেখে তবেই গলাবে! এদের কোন কাজ কাম নাই নাকি!! শুনেছি এবার নাকি বাংলাদেশ জিডিপির টার্গেট পুরন হয়ে তা আরও ছাড়িয়ে গিয়েছে, এই বেকার অথর্ব অলস দেশে এটা কি করে সম্ভব উমর সাহেব কিছুতেই ভেবে পায় না। কাউণ্টিং এ ভুল হয়েছে হয়তো।
ভীর নিমেষেই বেড়ে দিগুন, এদের ভেতর থেকে এক গাট্টা পাজামা পাঞ্জাবি পড়া লোক পান চিবুতে চিবুতে বললেন
দেখেন বাচ্চাটা ইয়াতিম আপনি জেনে শুনে তার পায়ে পাড়া দিয়ে পা ভেঙ্গে দিয়েছেন এখন এর চিকিৎসার ব্যয়ভার আপনার।
-ইয়াতিম আপনি জানেন কি করে?
-আমি জানি দোকানের সামনে থাকে ঘোরাঘুরি করে অনেকদিন তো দেখতেছি।
-কিন্তু পা ভাঙ্গলাম কই?
-পা ভাঙ্গেন নাই? এই মিয়ারা দেখেন বাচ্চার পা, কি অবস্থা করছে, আপনি ইয়াতিম বাচ্চার পা ভাইঙ্গা দিয়া চালাকি করতেছেন? আপনি যদি এর চিকিৎসার দায়িত্ব না নেন তবে দোযখের আগুনে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন জানেন আপনি?
-আশ্চর্য এগুলো কেমন কথা! আচ্ছা দিচ্ছি ওর চিকিৎসার খরচ, বলেই পকেটে হাত দেয় উমর সাহেব, টের পায় মানিব্যাগ সাথে নেই হয়তো অফিসে রেখে চলে এসেছেন!
চারদিকে তাকাতেই দেখেন উৎসুক প্রায় ৩০/৪০ জন লোক জমে গেছে, এখন যদি সে বলে মানিব্যাগ অফিসে রেখে এসেছে তাহলে কেউ তার কথা বিশ্বাস করবেনা, গনধোলাই খাওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ ভাগ,
একদম মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে হবে।

খুব ধীরে ধীরে মুখ খোলেন উমর সাহেব। রাস্তার ক্রন্দনরত ময়লা ছেড়া পোশাক পড়া ছেলেটির দিকে এগিয়ে যেয়ে মাথাটা টেনে বুকে জড়িয়ে নিয়ে সবার দিকে চেয়ে বলে, আমি একে আঘাত করে আহত করেছি, শুধু চিকিৎসার খরচ না, যেহেতু বাচ্চাটি ইয়াতিম আমি এর লালন পালনের সমস্ত দায়ভার নিতে চাই আপনারা যদি রাজি থাকেন।
চালাকিতে কাজ হলো, সবাই সায় দিলো, হুজুরটা বেশি বেশি সায় দিলো সবার উদ্দেশে তাকিয়ে উমর সাহেব কতটা মহান ভাষণ দিয়ে দিলেন ছোটখাটো একটা।

অফিসে ফিরে এসে ছেলেটিকে উমর সাহেবের ড্রাইভারকে দিয়ে বললেন একে ভালো একটা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যা। বলেই অফিসে ঢুকে পড়লেন, এত কাজ অথচ সব আজকে ওলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে।

অফিস থেকে বের হতে হতে রাত সাড়ে ৯টা বেজে গেছে, মেজাজ খুব খারাপ, সব প্লান ভণ্ডুল কিচ্ছু ঠিক মত হয়নি, আনিস সাহেব ও কি পলিটিক্সটা করলো সে যে তলে তলে এত বড়সড় তাল পাকিয়েছে কে বুঝতে পেরেছিল! ভাবতে ভাবতে উমর সাহেব দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখে সকালের সেই ছেলেটা কুণ্ডুলি পাকিয়ে ঘুমিয়ে আছে সীটের উপড়, পায়ে ব্যান্ডীজ করা,
দৃশ্যটা দেখেই খেঁকিয়ে উঠলো সে কিরে এটা এখানে কেন ??
ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে স্যার ও কে নাকি আপনি বাড়ি নিয়ে যাবেন ও নাকি আপনার সাথে থাকবে??
কে বলেছে?
এই বাচ্চাই বলেছে, আপনি নাকি সকলের সামনে এই কথা বলেছেন,
সকালের কথা একে একে মনেপড়ে যেতেই বিরক্তির চরম সীমানায় পৌঁছে গেলো তার মেজাজ।
এক্ষুনি এখানে নামিয়ে দে এটাকে, এই আপদ নিয়ে বাসায় যাওয়া সম্ভব না,
ড্রাইভার নামিয়ে দেয় সাথে সাথে, মনিবের কথা না শুনলে চাকরী থাকবে!! বাচ্চাটি তখনো ঘুমন্ত।

বাড়ির গেটের কাছে পৌঁছে উমর সাহেবের মনেহল বাচ্চাটাকে ওভাবে ফেলে এসে বিরাট অন্যায় করেছে এবং কোন মাতাল খুনি বাচ্চাটার পেটের ভেতর চাকু ঢুকিয়ে মেরে ফেলতে পারে, ব্যাপারটা মনে হতেই সে টের পায় তার বুকে চিন চিন ব্যথা করছে, হাত কাঁপছে, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরিয়ে বাচ্চার কাছে যেতে বলল তুলে আনতে,
রাস্তায় জ্যাম ইতিমদ্ধেই বেড়ে গেছে টেনশনে উমর সাহেবের বুকে চিন চিন ব্যথা আরও বাড়তে লাগলো। যখন সেখানে পৌছালো দুর থেকেই দেখল বাচ্চাটি তখনো কুণ্ডুলি পাকিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
আনন্দে তাড়া দুজনই হই হই করে উঠল।

বাসায় বাচ্চাটাকে পেয়ে সবাই খুব খুশি। মরিয়মের দুই মেয়ে রুমা আর ঝুমা একটা স্কুল আর একটা কলেজে পড়ে, ওরা দুজন আর উমর সাহেব অফিসে চলে গেলে মরিয়ম একা পড়ে থাকে, তখন কাজের বুয়া আর বুয়ার মেয়েটি, দারোয়ান এসবই তার সঙ্গী, সে জন্য কিনা কে জানে কিংবা তার কোন ছেলে সন্তান নেই বলে, সে বাচ্চাটাকে হাসি মুখেই গ্রহন করলেন।

তারপর অনেক কিছুই খুব দ্রুত পরিবর্তন হতে লাগলো, মরিয়ম নিজে গিয়ে বাড়ির কাছের একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলো ছেলেটিকে, রুমা ঝুমা ছেলেটির নাম দিলো কাব্য, এবং সব চাইতে যে ব্যাপারটায় উমর সাহেব বিরক্ত তা হল রুমা ঝুমা সবাইকে বলে বেড়াতে লাগলো ছেলেটি ওদের ভাই।

পথ শিশু বলে নয় এই বয়সে এতটুকুন বাচ্চার বাবা ভাবাটা সত্যিই ভীষণ অস্বস্তিকর উমর সাহেবের কাছে।
আরও কিছু কিছু পরিবর্তন উমর সাহেবের চোখে পড়ল,
যেমন অফিসে যাওয়ার সময় দরজায় সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা উমর সাহেবের জুতা, গাড়ির চাবি এক ছুটে ড্রাইভারকে পৌঁছে দেয়া, কলিং বেলের আওয়াজ পেলে বুয়ার আগে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়া, ছুটির দিনে উমর সাহেবের চায়ের টেবিলে সুন্দর করে পত্রিকা সাজিয়ে রাখা, যা মরিয়ম, রুমা ঝুমা কিংবা কাজের বুয়াকে বলেও খুব একটা সম্ভব হয়নি।

একদিন উমর সাহেব অফিস থেকে একটু আগে আগে ফিরেছেন খুব ক্লান্ত একটু হাল্কা খাবার খেয়ে শুয়ে আছেন এমন সময় পাশের রুম থেকে খুব আস্তে আস্তে কার যেন কথা কানে আসতে লাগলো, কেউ একজন কথা বলছে গুন গুন গুন গুন গানের মত করে
কান সজাগ করে রইলেন উমর সাহেব নাহ বোঝাই যাচ্ছে না কি বলছে, সে বিছানা ছেড়ে শব্দের উৎসের কাছাকাছি গেলেন " বলো আপু, ছোত আপু বাবা, মা। বলো আপু, ছোত আপু, বাবা, মা'' কাব্য আঙ্গুল ধরে ধরে ঝুঁকে ঝুঁকে একমনে পড়ছে অনেকটা তাসবিহ পাঠের মত। তুই কি করছিস?? উমর সাহেব বলতেই ছুটে পালালো কাব্য।

ডাইনিং রুম থেকে শুনতে পেল কাব্য কথা বলছে ঝুমা আপু আমাল আর ভুল হইব না এই দেখো আমি বলি বলো আপু, ছোত আপু, বাবা, মা থিকাছেনা??
কথাগুলো শুনতে শুনতে উমর সাহেবের খুব মায়া লাগলো ছেলেটির জন্য। এইটুকুন ছেলে তবু কি চেষ্টা এই পরিবারের একজন হওয়ার, ওর জীবনের সাত আট বছর কতই না নিঃস্ব কেটেছে! কত খুশি ও একটা পরিবার পেয়ে! আহা!

আর একদিন উমর সাহেব অফিসে যাননি দেখেন ছোট ছোট হাত পাতার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে, কাছে গিয়ে দেখলেন কাব্য মালীর সাথে সাথে গাছে লাগাচ্ছে!
ভোরের আলোয় ছেলেটির মুখমণ্ডলে খেলা করছে পবিত্রতা। উমর সাহেব বললেন কাব্য তোমাকে গাছ লাগাতে কে বলেছে? মালী বলেছে?
না না স্যার মালী জিভ কাটে, কাব্য জোর করে গাছ লাগাতে আসে, আমি কত না করি শোনেনা।

কাব্য দূরে দুরেই থাকে উমর সাহেবের কাছ থেকে, এটা করেছে হয়তো মরিয়ম। সে হয়তো ভেবেছে উমর সাহেব এখনো কাব্যকে দেখলে বিরক্ত হয়। বেয়াদব মহিলা কোথাকার, ছেলে নিয়া একাই মজা করবে।

সেদিন অফিস থেকে ফেরার পথে গাড়ি থামিয়ে বাচ্চাদের খেলনা দোকান থেকে একটা বিশাল খেলনা গাড়ি কেনেন,
কাব্য কার ছেলে দেখতে হবেনা! গাড়ি ছাড়া তার চলবে কেন!মনে মনে ঠিক করেছেন সে কাব্যকে নিজে ডেকে কোলে করিয়ে গাড়িতে বসে শিখিয়ে দেবেন কিভাবে গাড়ি চালাতে হয়। ছেলেটা বড্ড দূরে দূরে থাকে।

ওইদিন বাসায় গেটের কাছে যেতে যেতে দেখল বেশ কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, জানা গেলো মালীর সাথে কাব্য ছাদে গাছে পানি দিতে গিয়েছিল, সেখানে বুয়ার অতিরিক্ত দুষ্ট মেয়েটিও ছিল, সেই মেয়ে হঠাৎ খেলতে খেলতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে কাব্যকে, সবাই ওকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে।

ছুটতে ছুটতে উমর সাহেব হাসপাতালে পৌছায়, ইমারজেন্সি করিডরে পৌঁছে দূর থেকেই দেখতে পায় মরিয়ম আমার ছেলে আমার ছেলে বলে চিৎকার করছে সাথে ছোটাছুটি, উমর সাহেব কাছে গিয়ে তাকে ধরে ফেলেন বার বার জানতে চান কাব্য কই কোন উত্তর নেই, উত্তর দেয়ার অবস্থাই নেই তার, রুমা ঝুমার দিকে তাকান, মেয়ে দুটিও কেঁদেই চলছে।

কিছুক্ষণ পর স্ট্রেচারে করে সাদা চাদরে ডেকে নিয়ে আসে একটি ছোট্ট লাশ। ধক করে ওঠে তার বুকের ভেতরটা, সদ্য আবিষ্কৃত সন্তান হারানো বিভোর ঘোলাটে চোখে ভীষণ ভাবে দুলে ওঠে উমর সাহেবের পৃথিবী, ডাক্তারের এক ঘেয়ে কণ্ঠস্বর বার বার এলার্ম ঘড়ির মত বাজতে থাকে। উই আর ভেরি সরি, বাচ্চাটাকে বাঁচানো গেলো না, ছেলেটি আপনার কি হয় বলুন, ওর সাথে আপনার সম্পর্ক কি? বলুন? বলুন? ছেলেটি আপনার কি হয়? আমাদের ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে হবে তো।

বিষাদের গভীর অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে উমর সাহেব অস্ফুট স্বরে বলে ‘’বাবা’’ আমি ছেলেটির বাবা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১২
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×