মাওলানা মিরাজ রহমান
২০০৬ সালের কথা। বরাবরের মতো মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা থেকে একটি নভোযান পাঠানো হলো। মহাকাশের খোঁজখবর সংগ্রহ করাই ছিল যে অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। অন্যান্য গবেষকদের সঙ্গে সে নভোযানে অবস্থান করছিলেন সুনিতা। সুনিতা উইলিয়াম। মহাকাশ গবেষণাযানটি যখন পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ২৪০ মাইল উপরে, হঠাৎ নিচের দিকে চোখ আটকে যায় সুনিতার। পৃথিবী পৃষ্ঠে তারার মতো দুটি আলো জ্বলতে দেখলেন তিনি। চিন্তায় পরে গেলেন সুনিতা; ভাবলেন, পৃথিবীপৃষ্ঠে তো এভাবে জ্বলে থাকার মতো কোনো আলোকশিখা থাকার কথা না। তবে এই আলোকরশ্মি দুটি কি? সঙ্গীদের ডেকে দেখালেন এবং টেলিস্কোপের সাহায্যে আলো দুটিকে নির্ণয় করার চেষ্টা চালালেন। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো সুনিতার। আরো কাছে, আরো পরিস্কারভাবে দেখলেন, আলো দুটির কেন্দ্রস্থল পৃথিবীর মক্কা ও মদীনা। মক্কা শহরের কেন্দ্রস্থল ও মদীনা শহরের কেন্দ্রস্থ থেকে মহাকাশমুখি এই আলোকরশ্মি দুটি বিকশিত হচ্ছে। মহাকাশ অঙ্গনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা সম্পর্কে সুনিতা উইলিয়াম নিজেই বলেছেন, ‘আমি যখন পৃথিবী থেকে প্রায় ২৪০ মাইল উপরে উঠলাম, তখন পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠে দুটি তারা (আলো) দেখতে পেলাম। এরপর একটি টেলিস্কোপের মাধ্যমে আলো দুটি দেখার চেষ্টা করলে দেখি, একটি আলোর অবস্থান মক্কায় আর অন্যটি মদীনায়। এই দৃশ্য দেখার পর আমি প্রচ-ভাবে অভিভূত হই এবং তখনই ইসলাম গ্রহণ করার সিন্ধান্ত নেই এবং পরে ফিরে এসে ইসলাম গ্রহণ করি। আমি এখন একজন মুসলমান।’ আলহামদুলিল্লাহ
ইসলাম গ্রহণ করা নিয়ে শত জল্পনা-কল্পনার ইতি টেনে ওমরাহ পালন করতে আসা সুনিতা উইলিয়াম জেদ্দার হোটেল হিলটনে বসে এভাবেই ব্যক্ত করছিলেন তাঁর ইসলাম গ্রহণ করার কাহিনী। সাংবাদিকদের শোনাচ্ছিলেন তাঁর মুসলমান হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প। এ সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করার নেপথ্যে থাকা ঘটনা ব্যক্ত করার পাশাপাশি উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর প্রদান করেন। নাসার প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সুনিতার ইসলাম গ্রহণ করা বিষয়ে তাঁকে চেনেন বা জানেন এমন অনেকের মন্তব্য ছিল অনেকটাই এ রকম, ‘আর কারো পক্ষে সম্ভব হলেও সুনিতার পক্ষে এটা কখনো সম্ভব নয়। কারণ সে ছিল ইসলাম বিদ্বষী’। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা এবং সন্দেহ-কানাকানির ইতি টেনে গত রমজান মাসে ওমরাহ পালন করতে এসে নিজের মুসলমান হওয়ার ঘোষণা দিলেন সুনিতা উইলিয়াম এবং গর্ব করে বললেন, ‘আমি এখন একজন মুসলমান, এটা ভাবতেই আমার ভালো লাগছে।’
ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনিতা উইলিয়াম ১৯৬৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওহায়ো অঙ্গরাজ্যের ‘ইউক্লিডে’ জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা দীপক পা-ে ও মাতা বনি পা-ে উভয়ই ছিলেন ভারতীয় হিন্দু। ম্যাসাচুসেটস হাই স্কুলে পড়াশুনা করার পর ১৯৮৭ সালে ফিজিকাল সায়েন্সে বিএস ডিগ্রী এবং ১৯৯৫ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট ফ্লোরিডা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে এমএস ডিগ্রী অর্জন করেন সুনিতা। ইতোপূর্বে ১৯৮৯ সালে সুনিতা ন্যাভাল একাডেমীতে কমিশন লাভ করেন এবং ১৯৯৩ সালে ন্যাভাল এভিয়েটর হিসেবে পদোন্নতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে আমেরিকান হেলিকপ্টর ইনস্টিটিউটে টেস্ট পাইলট ইঞ্জিনিয়রের দায়িত্ব পালনকালে ভূমধ্যসাগর, লোহিত সাগর, পারস্য ও আরব সাগরসহ মরুভূমি এলাকায় কাজ করেন। এরপর ১৯৯৮ সালে সুনিতা ফ্লোরিডাস্থ মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসায় যোগদান করেন। কর্মরত অবস্থায়ই একজন ক্যাথলিক খ্রীষ্টানকে বিয়ে করে সংসার জীবনে প্রবেশ করেন তিনি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন সময়, বিশেষ করে আরবের মরু এলাকাতে কাজ করার সময় অল্প-বিস্তর ধারণা অর্জন করেন মুসলমানদের প্রকৃত জীবন সম্পর্কে। উল্লেখ্য, এর আগে ইসলাম সম্পর্কে সুনিতার বস্তুত কোনো ধারনা বা পড়াশুনা ছিল না। ইসলাম বিদ্বেষী পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে অন্যান্য বিধর্মীদের মতো সেও কিছুটা অন্ধাকারচ্ছন্ন ও ভুল ধারনা অর্জন করেছিল।
নভোযান পরিচালনার ক্ষেত্রে খুব দক্ষ কর্মী ছিলেন সুনিতা উইলিয়াম। মহাকাশে গিয়ে রেকর্ড পরিমাণ সময় ১৯ ঘণ্টা ১৭ মিনিট স্পেস ওয়ার্ক করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসন্তান সুনিতা সেদিন সবার সামনে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আমি একজন মুসলমান। আমার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা নিয়ে এতোদিন যে সন্দেহ চলে আসছিল আজ তার অবসান হলো। বর্তমানে আমি একজন মুসলমানের মতোই জীবন যাপন করছি। আমার ইসলাম গ্রহণ করার ব্যাপারে আর কোনো বিভ্রান্তি ছড়ানোর উপায় নেই।’
২০০৮ সালে সুনিতা উইলিয়াম নাসার ডেপুটি চীফ অব আয়াস্ট্রোনট অফিসার্স হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি ৩০টি মহাকাশ স্টেশনে কাজ করছেন। ২০১১ সালের শেষ নাগাত ৩২ কিংবা আরো বেশি পরিমাণ মহকাশ স্টেশনের দায়িত্ব লাভ করবেন বলে জানা যায়।
ইসলাম একটি নূর। দিন দিন আরো বেশি, আরো অধিক পরিমাণে বিচ্ছুরিত হবে যে আলো। আমাদের কোনো অলি আল্লাহ বা বুযুর্গদের কথা না হয় নাই বা টানলাম, পশ্চিমাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিজ্ঞানী জর্জ বার্নাড শো বলেছিলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে খুব শীর্ঘ্রই পশ্চিমবিশ্বে মুসলমানদের জয়জয়কার ধ্বনিত হবে।’ ধীরে ধীরে পৃথিবীর বুকে বাস্তাবায়িত হতে যাচ্ছে পশ্চিমা সংস্কৃতির এক বরপুত্র জর্জ বার্নাড শো’র মন্তব্য। ইসলামের ছায়াতলে আশ্রিত হয়ে, ইসলামের আলোয় আলোকিত হয়ে নিজেকে ধন্য ভাবছেন, আর অতীত জীবনের জন্য অনুতপ্ত হচ্ছেনÑ এমন মানুষের সংখ্যা আজ কেবল সুনিতা উইলিয়াম বা লরেন বুথের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। দিন দিন বেড়েই চলেছে এ সংখ্যা। ভবিষ্যতেও বাড়তে থাকবে ইনশা আল্লাহ।
http://alhudaonline.com/?p=700

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




