somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Middle Class

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধানমন্ডী লেকের পাড়ে অনেক্ষণ ধরেই অপেক্ষা করছে রুদ্র।নীল পাঞ্জাবী পড়ে। সাদা গোলাপ নিয়ে।পিলুর জন্য।
দেখা না করেই যে প্রেম ।দেখা হলে যে কি হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই রিক্সায় আসছিলো পিলু। অনেক উত্তেজনা কাজ করছে তার মাঝে।

একটা দিনও দেখা হয়নি অথচ মনে হয় কত চেনা।ফেসবুকে।দুজনে দুজনাকে অনেক ভালো করে চেনে।সেটাও ভার্চুয়ালী।ভার্চুয়াল টাইম পাসে কখন যে তারা তাদের অনেক কাছে চলে এসেছে কে টেরই পায়নি। রুদ্র অনেক দূর থেকেই দেখতে পেল পিলুকে। নীল শাড়ি পড়েছে এজন্য চিনতে হয়তো অসুবিধা হলো না রুদ্রর। তাছাড়া হয়তো চিনতেই পারত না সে। ভাগ্যিস চশমাটা পড়তে ভুলে যায়নি আজ। তা না হলে ক্যামেরার তোলা ছবির ব্যকগ্রাউন্ডের মত চারপাশ ব্লার লাগে তার। পিলু অনেক কাছে চলে এসেছে।নীল পাঞ্জাবী পড়ায় রুদ্রকে চিনতে খুব একটা কষ্ট হলো না তার।

দুজন-দুজনকে অবাক হয়ে দেখছে।প্রথম দেখছে। অথচ কত পরিচিত মুখ।নীরবতা গ্রাস করছে বাস্তবতা।নীরবতা ভেংগে রুদ্র বলল-তুমি ছবির থেকেও সুন্দর।
পিলু মুচকি হাসল। হৃদয়হরণ করা হাসি।যে হাসির সামনে বাস্তবতা ভ্রম মনে হয়, ।যে হাসির সামনে কেউ মন খারাপ করে থাকতে পারে না।
চারিদিকে ভালোবাসার ছায়া নেবে আসে।যে ছায়ায় স্নান করছে দুজন এক মনের মানুষ।

হয়তো এভাবেই রুদ্র-পিলুর happy ending হতে পারতো।কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন ।

*
তার আগে রুদ্রর পরিচয়টা দেই-
রুদ্র।
পুরো নাম রুসেল মাহমুদ রুদ্র। বাবা সরকারী চাকুরীজীবী। দুই ভাই।। ছোট ভাই দশম শ্রেণীতে পড়ে।গ্রামের বাড়িতে থাকে। তার গ্রামের বাড়ি নড়াইল। আর রুদ্র ঢাকায় থাকে ২ বছর হলো। পড়ে একটা ন্যাশনাল ভার্সিটিতে।থাকে মেসে।মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে।টানাপোড়ার সংসার। পার্টটাইম একটা জবও করে সে । গত মাসে ওভার টাইম করে পিলুকে একটা মোবাইল গিফট করেছে সে।পিলু অনেক খুশি হয়েছিলো সেদিন। যদিও তার হাতে ওটার থেকে অনেক দামি মোবাইল ছিলো।পিলুর দুটো মোবাইলের অনেক শখ ছিলো। সেদিন রুদ্র থমকে গিয়েছিলো ভেবেছিলো টাকা হলেই পিলুর জন্য অনেক খুশি কেনা যাবে।

আর পিলু-
বড়লোকের মেয়ে।সিনেমাটিক বড়লোক না হলেও আছে অনেক।পিলু প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ে। শান্ত-শিষ্ট।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।একেবারে বাধ্য সন্তান।আর পুরো নাম সুজানা তাসনীম পিলু।কিছুদিনের মধ্যে রুদ্রর কথা বাসায় বলেছে পিলু। তার বাবার স্বভাব-চরিত্র পছন্দ হলেও অপছন্দের পাল্লাটাই বেশি ভারী। কারণটা ভেংগে বলার কিছু নেই।বড়লোকের মেয়ে বড়লোকের কাছেই বিয়ে হবে এটাই স্বাভাবিক।এসব কথা না বল্লেও তিনি রুদ্রর ফিউচার নিয়ে তার কাছে প্রশ্ন তুলেছিলো। এই নিয়ে রুদ্র আপসেট।

রুদ্রর ভালো লাগা খারাপ লাগার ব্যপারগুলো পিলু কীভাবে যেন বুঝতে পারে।আর মন খারাপ সারিয়ে তুলতে পারে এক নিমিষেই।এটা রুদ্রর কাছে অষ্টামাশ্চর্যের একটা বলে মনে হয়। হয়তো পিলু এই বিশেষ গুণটি নিয়ে জন্মেছে।হয়তো সব মেয়েদেরই এই গুণটি আছে। অন্যকে কষ্ট দিয়ে তা ভুলিয়ে দেবার বিশেষ গুণ। হয়তো এজন্যে মেয়েদের মায়াবিণী বলা হয় কিংবা এসব শুধুই ছলনার আভাস।

*
সাতদিন হলো পিলুর সাথে কথা হয়নি রুদ্রর । রুদ্র অনেক ভাবেই চেষ্টা করেছিলো কথা বলার কিন্ত পারেনি। আর ওর বাসায় গিয়েও লাভ নেই।ঈদের ছুটিতে ওরা সবাই গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে।রুদ্র যেতে পারেনি ।ছোট খাটো একটা চাকরী সে যোগাড় করে ফেলেছে সে। তাই ছুটি পায়নি।

রুদ্রর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো। পিলুদের বাসার কাজের মেয়েটা অনেক স্মার্ট। নাম জুঁই ।অনেকদিন অনেক ভাবে রুদ্রকে সাহায্য করেছিলো সে।পিলু ব্যস্ত থাকলে তাকেই ফোন করে পিলুর ব্যপারে খোঁজ নিত রুদ্র।
রুদ্র বেড়িয়ে মার্কেট থেকে মোটামুটি ৯০০টাকা দামের একটা শাড়ি কিনলো জুঁইকে দিয়ে পিলুর সাথে দেখা করবে বলে।

রুদ্র চলে গেলো পিলুর গ্রামের বাড়িতে।বাড়ির সামনে গিয়ে জুঁইকে ফোন দেয় সে। জুঁই বেড়িয়ে আসা মাত্রই পিলুর কথা জিজ্ঞেস করে রুদ্র।জুঁইয়ের কথার জন্য প্রস্তুত ছিলো না সে।জুঁই বলে,
-আজকে তো আপার বিয়া। বাবিন ভাইয়ের সাথে। কেন কিছু জানেন না?
-জানি। আচছা আমি এসেছিলাম তোমার আপাকে বলো না।
বাবিনকে ভালো করেই চিনে রুদ্র ।পিলুর বাবার পার্টনারের ছেলে। অনেক বড়লোক তারা।
ভালোবাসায় ক্যরিয়ারই যখন সব। ভাগ্য খারাপ থাকলে কিইবা করার থাকে।

*
গ্রামের বাড়ি চলে আসে রুদ্র। বাবা-মা অনেক খুশি তাকে দেখে। বিছানার একপাশে নিথর দেহ এলিয়ে দেয় রুদ্র।বেঁচে থাকার মানে হারিয়ে ফেলেছে সে। আজ সে জীবনযুদ্ধে হেরে গেছে।
এমন সময় রুদ্রর মা ঘরে ঢুকে।বলেন-
-আমার জন্য শাড়ি এনেছিস বাবা।
-মানে মা
-কি দরকার ছিলো এত টাকা নষ্ট করার
মায়ের মুখে হাসি।
এ হাসি টাকা দিয়েও কেনা সম্ভব না ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২২ দুপুর ১:৪৭
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×