আমি একদিন জানতে পারলাম, একজন বাদশাহ এক বন্দিকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছেন। সেই অসহায় লোকটি হতাশায় মরিয়া হয়ে নোংরা ভাষায় রাজাকে গালি দিতে লাগলো।
কথায় আছে-
যে ব্যক্তি জীবনের সাথে সকল সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলে,
সে নিজের হৃদয়ে থাকা কোন কথাই আর লুকায় না।
যখন কোন মানুষ হতাশ হয়, তখন তার জিহবা আর সংযত থাকে না। সে তখন কোনঠাসা বিড়াল যেমন পিছু নেওয়া কুকুরকে আক্রমন করে বসে, ঠিক তেমনটি হয়ে যায়।
যখন লড়াই করে টিকে থাকার আর কোন উপায় থাকে না, মানুষের হাত এমনকি তলোয়ারের ধারালো অগ্রভাগও চেপে ধরতে পারে!
বাদশাহ জিজ্ঞাসা করলেন বন্দী কি বলছে। তখন এক ভালো মনে্র উজির বললেন-
'বাদশাহ নামদার, এই লোকটি বলছে- যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধকে প্রশমিত করে কোন মানুষকে ক্ষমা করে দেয়, তাঁকে আল্লাহ-ও ভালোবাসেন।'
তা শুনে রাজা'র মন সহানুভূতিতে ছেয়ে গেলো। তিনি বন্দিকে হত্যা করার আদেশ ফিরিয়ে নিতে চাইলেন। কিন্তু, রাজসভায় উপস্থিত আগের উজিরের বিরোধী অন্য একজন উজির বলে উঠলো-
'আমাদের পদমর্যাদা'র কারো বাদশাহের উপস্থিতেতে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলা সাজে না। বাদশাহ, ঐ বন্দি আপনাকে অপমান করে কুৎসিত ভাষায় কথা বলেছে।'
রাজা এ কথা শুনে অসন্তুষ্ট হয়ে বললেনঃ
'ঐ মিথ্যা কথা আমার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য ছিলো, কারণ প্রথমজন পরিস্থিতিকে শান্ত করে বন্দির সাথে মিলিয়ে দি্তে মিথ্যে কথা বলেছে। আর দ্বিতীয়জন সম্পূর্ণ বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে সত্য কথা বলেছে।'
কোন এক জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছেন-
''মিথ্যা কথা বলা অনেক ভালো যদি তা কারো সাথে সম্পর্ক গড়ে দেয়। অন্যদিকে, বিপর্যয় সৃষ্টি করার সম্ভাবনা থাকলে এমনকি সত্য কথাও পরিত্যাজ্য।"
যাদের কথা শাহ মেনে চলেন, এটা খুবই দুঃখজনক হবে যদি তারা ভালো ছাড়া অন্য কোন কথা বলে থাকেন।
নিচের লিপিটি ফেরিদুনের সভার বারান্দায় খোদাই করে লেখা আছে-
এ পৃথিবী কারো'র নয়, ওগো আমার ভাই।
খোদার সাথে যদি নিজেকে বেঁধে ফেলতে পারো,
সন্তুষ্ট থেকো তাতেই।
এই দুনিয়ার কোন কিছুর উপরই নির্ভর করো না, দুনিয়ার উপর তো না-ই।
কারণ, তা আমার মত অনেককেই লালন-পালন করার পর
জবাই করেছে সর্বদাই।
যখন কোন বিশুদ্ধ আত্মা এই পৃথিবী ছেড়ে চাইবে চলে যেতে ,
সে সিংহাসনেই মরলো কি মাটিতে.......
তাতে তার কি যায় আসে!
=========২য় প্রকাশ========
শেখ সাদি'র একটি লেখার ভাবানুবাদ
=======================