কদমবুচি, সুফিবাদ এবং বৃদ্ধাশ্রম
ইদানিং কদমবুচি এবং বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে ফেইসবুকে একটি বিষয় ভাইরাল হচ্ছে । আর তা হলো, যারা মা-বাবাকে কদমবুচি করে তারা তাদের মা -বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দেয় না। অথচ সঠিক ইসলামে কদমবুচি করার কোনো নজির নেই। সুতরাং তারাই মা বাবাকে বদ্ধাশ্রমে দেয়, যারা মা-বাবাকে কদমবুচি করে না।
এই বিষয়টি যদি আমরা খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি। তাহলে দেখতে পাবো যে, যাদের মা বাবা আজ বৃদ্ধাশ্রমে আছে, তাদের অধিকাংশই হয় সুফিবাদে বিশ্বাসী নয় মুনাফিক কিংবা নাস্তিক। যারা নাস্তিক ও মুনাফিক তাদের বিষয়ে কোনো কথা নেই। কিন্তু যারা সুফিবাদী মুসলিম তাদের সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। কেননা আজ একটি মহল মিথ্যা ভিত্তির উপর একটি রটনা রটিয়ে দিতে চাইছে।
যারা সুফিবাদে বিশ্বাসী তারা মা -বাবাকে কদমবুচি করাকে জায়েজ মনে করে। ঠিক একইভাবে তারা পীরকেও কদমবুচি ও সিজদা করাকে ফরজ মনে করে। তাদের বিশ্বাস পীরের মাঝেই আল্লাহ্ থাকেন। তাই পীরকে সিজদা করলেই সোজা জান্নাত। তাদের কাছে মা-বাবা নয় বরং পীরের প্রতি মায়া ভালোবাসা বেশী। তাই সময়ে অসময়ে পীরের দরবারে টাকা-পয়সা, গরু-ছাগল ইত্যাদি হাদিয়া তোফা দিতে তারা কার্পণ্য করো না। অথচ মা-বাবার জন্য তাদের দরদ কিংবা টাকা পয়সা থাকে না। মা-বাবার চিকিৎসা খরচের খবর নেই। অথচ পীরের দরবারে ওরস মাহফিলে টাকা-পয়সা, গরু-ছাগল ইত্যাদি দিতে তাদের হাত বাঁধা থাকে না।
এরাই আবার সেই মা-বাবার মৃত্যুর পর টাকা না থাকলেও ধার দেনা করে, বড় করে চারদিনা, চল্লিশা, কুলখানি ইত্যাদি বিদআত করতে থাকে। যে সুফিবাদে পীরকে সিজদা করলেই জান্নাত পাওয়া যায়। সেই সুফিবাদীরা কীভাবে মা-বাবার সেবা করবে? তাই তারা মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসে। এমন অসংখ্য ভুরিভুরি দৃষ্টান্ত আজ বাংলার জমিনে।
অথচ যারা বলে মা-বাবাকে কদমবুচি করা উচিত নয় বরং মা বাবার পায়ে চুমু দাও সেবা করো এই নীতিতে বিশ্বাসী। তাদের মা-বাবা কখনোই বৃদ্ধাশ্রমে যায় না। কেননা তারা জানে কোনো পীরের পায়ে নয়, বরং মা-বাবার সেবার মাঝেই আল্লাহ্ জান্নাত লিখে রেখেছেন। সুতরাং মাবাবাকে পায়ে ধরে সালাম করা কখনোই সুন্নাহ নয়। বরং মা- বাবার পায়ে চুমু দেওয়া সুন্নাহ এবং তাদের সেবা ও কথা শোনা ফরজ।
আসুন কদমবুচির মতো মিথ্যা নাজায়েজ কাজ থেকে বিরত থাকি। পীরকে সিজদা করার শিরক থেকে বেঁচে থাকি। আর মা-বাবার সেবা থেকে জান্নাত হাসিল করি।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
৫ নভেম্বর, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:১১