somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাখাওয়াত হোসেন  বাবন
ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে "আমার কবিতা নামে" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

অপহরণ - সাখাওয়াত বাবনে'র কল্পকাহিনী (১১তম পর্ব )

০২ রা নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাকে স্পর্শ করা প্রাণীটার স্পেস স্যুটে থাকা ইলেকট্রনের প্রভাবে ভস্ম হয়ে যাবার কথা কিন্তু পেট্রোল শিপ থেকে দশ গজ দূরে ছিটকে পরে একটু স্থির হয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে দেখি, হাজার ভোল্টের ইলেকট্রন শট খেয়েও সেটার তেমন কিছুই হয়নি। শুধুমাত্র ডান হাতটি বার কয়েক ঝাঁকিয়ে আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে অনেকটা মাতালের মতো টলতে টলতে ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে আসতে লাগবো । ডানে, বামে তাকিয়ে দেখি চারপাশ থেকে কম করে হলেও ডজন খানেক প্রাণী আমার দিকে এগিয়ে আসছে । চোখে মুখে তাদের শিকারের নেশা। নিজেকে প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোন বুনো বাইসন মনে হলো,যাকে শিকারের জন্য চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। বুঝলাম, আর নিস্তার নেই । এবার আমার মৃত্যু নিশ্চিত । আজই আমার জীবনের শেষ দিন । স্বয়ং ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ আমাকে বাচাতে পারবে না। হায় ঈশ্বর,এ তুমি আমায় কোথায় এনে ফেললে!

উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করেও পারলাম না । হেলমেটের ভেতর বিপবিপ করে একটা লাল বাতি জ্বলছে নিভছে । সেই সঙ্গে স্যুটের ভেতরে প্রচণ্ড গরম লাগছে । টেম্পারেচার দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে । কারণটা বুঝতে পারছি না । হয়তো LCVG সিস্টেম খারাপ হয়ে গেছে । LCVG সিস্টেম হচ্ছে, স্পেস স্যুটের "একটি বিশেষ তাপ নিয়ন্ত্রণকারী পোশাক । এই পোশাক খুব পাতলা কিন্তু ফাঁপা ও নমনীয় টিউবের তৈরি। আন্ডার গার্মেন্টসের মত এই পোশাক স্পেস স্যুটের নীচে পরতে হয়। এই পোশাকের পুরোটাই টিউব নেটওয়ার্কিংয়ের আওতায়। এই টিউবের ভেতর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় যা নভোচারীর শরীরে উৎপন্ন তাপ সরিয়ে নিয়ে নভোচারীর দেহের তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখে।" মনে হচ্ছে সেই টিউবগুলো ঠিক মতো কাজ করছে না । হয়তো আছড়ে পরার ফলে ড্যামেজ হয়ে গেছে।


বহুকষ্টে দু'হাতে ভর করে উঠে দাঁড়ালাম । মাথার ভেতরটা ঝিমঝিম করছে । ইতিমধ্যে চারপাশ থেকে প্রাণীগুলো আরো কাছে চলে এসেছে । যে কোন সময় হামলে পরবে। যতক্ষণ শ্বাস ততোক্ষণ আশ । বেচে থাকতে হলে খুব দ্রুত কিছু একটা করতে হবে। চারপাশে আরও একবার দৃষ্টি বুলিয়ে, কোমরের সাথে সংযুক্ত লেজার গানটা টান দিয়ে বের করে নিলাম । তবে এটার ব্যবহার আমি করতে চাই না। একান্ত বাধ্য না হলে কিছুতেই না । যুদ্ধ বিগ্রহ আমার অপছন্দের বিষয়।

সামনে থেকে এগিয়ে আসা প্রাণীটিকে লক্ষ্যে করে নিশানা স্থির দাড়িয়ে রইলাম । আমার হাতে অস্ত্র দেখে প্রাণীটা কিন্তু থেমে গেলো না । হয়তো অস্ত্র কি সেটাই সে জানে না। সে তার আপন গতিতে এগিয়ে আসতে লাগলো । অভ্যাস বশত চিৎকার করতে করতে প্রাণীটা পাঁচ গজের মধ্যে চলে আসতেই আমি সেটারা ডান পাশের ফাকা জায়গা লক্ষ্য করে ট্রিগার চেপে দিলাম ।

কয়েক সেকেন্ড কিছুই হলো না । কিন্তু তারপরেই যা হলো তাতে চমকে গিয়ে আমি গিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে এলাম । প্রচন্ড এক শব্দে পুরো গ্রহটি প্রকম্পিত হয়ে উঠলো । সামনে থেকে এগিয়ে আসা প্রাণীটি কিছু বুঝে উঠার আগেই ছিটকে গিয়ে পড়লো কম করে বিশ গজ দূরে । অন্য প্রাণীগুলো হঠাৎ শব্দে হতচকিত হয়ে থমকে দাঁড়িয়ে রইলো । মানুষের তৈরি ছোট্র একটি লেজার গানের এমন বিস্ময়কর শক্তি দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। এ জিনিস হাতে থাকলে এই প্রাণীগুলো আমার কিছুই করতে পারবে না।

পরিস্থিতি অনুকূলে বুঝতে পেরে মনে মনে হেসে উঠলাম । চিৎকার করে বলে উঠলাম,"এবার আয় ব্যাটারা, আমাকে পারলে কিছু করে দেখা, বেশি ওস্তাদি করলে এক্কেবারে মগজ বরাবর মেরে দিবো, তখন বুঝবি মজা ।" কিন্তু তবুও আর কালক্ষেপণ না করে ছুটতে লাগলাম, পেট্রোল শিপের দিকে । যতো দ্রুত সম্ভব কেটে পরতে হবে । লেজার গানের কল্যাণে যে জীবন ফিরে পেয়েছি সেটাকে রক্ষা করতে হবে।

কিন্তু আমি ছুটতে শুরু করতেই আর একটা ঘটনা ঘটলো । পুরো গ্রহটা থরথর করে কাপতে লাগলো এবং তারপরেই যা ঘটলো সেটা বলে বুঝানো যাবে না । বাজি ফুটানোর মতো ফুট ফুট শব্দ করে গ্রহটি জুড়ে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটতে লাগলো । সেই সঙ্গে তীব্র ধোয়ায় চারিদিক আচ্ছন্ন হয়ে আসতে লাগলে। ব্যাপারটা কেন ঘটছে তা বুঝলে দেরি হলো না। আমার অবৈজ্ঞানিক মাথাও পানির মতো বুঝে গেল বিষয়টা। টেলসার ভূত্বকে সালফার এর পরিমান বেশি হওয়ায় ল্যাজার গানের আঘাতে বিস্ফোরণ ঘটায় এমন হচ্ছে। ছিটকে যাওয়া আগুনের স্ফুলিঙ্গে সর্বত্র বিস্ফোরণ ঘটছে। হায় খোদা ! এতো দেখছি নতুন এক যন্ত্রণার সৃষ্টি হল। এমনটা হলে পুরো গ্রহটি ধ্বংস হয়ে যাবে।

ছুটতে ছুটতে আশেপাশের দিকে তাকিয়ে দেখছি যেখানে বিস্ফোরণ হচ্ছে, সেখানকার মাটি ঝুরঝুর করে খস পরে বড় বড় গর্তের তৈরি করছে । আমাকে ছুটতে দেখে, এবং চারিদিকের অবস্থা বিবেচনা করে প্রাণীগুলোও ছুটতে শুরু করলো তবে এবার তারা আমার দিকে না এসে উল্টো দিকে ছুট পালাতে লাগাল । ব্যাপারটা দেখে বেশ মজা পেয়ে গেলাম। মনে মনে বললাম, কিরে ব্যাটারা এতো তাড়াতাড়িই আমাকে পাকড়াও করার সাধ মিটে গেলো ।
আয়, এবার আয় পারলে ।
গ্রহটি জুড়ে ততোক্ষণে তাণ্ডব শুরু হয়ে গেছে । যতদূর দৃষ্টি যাচ্ছে বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট হওয়া বড় বড় গর্ত আর ধোয়া ছাড়া আর কিছুই চোখে পরছে না । সেই সঙ্গে বিস্ফোরণের ফলেও সৃষ্ট শব্দে কানে যন্ত্রণা হতে লাগলো ।
থুতনির কাছে লাগানো বোতামগুলো টিপে যতোটা পারি শব্দ বাহিরের শব্দ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার করেও কোন লাভ হলো না । মনে হতে লাগলো কান ফেটে রক্ত বের হয়ে আসবে । তীব্র যন্ত্রণায় চোখে পানি চলে এলো । তারপরেও কিভাবে যে, পেট্রোল শিপের কাছে পৌঁছলাম সেটা বর্ণনা করে বোঝানো
যাবে না । কিন্তু ভাগ্যে যদি বিপদে লেখা থাকে তাহলে তা আর খণ্ডাবে কে ?

পেট্রোল শিপের কাছে পৌঁছে সেটার দরজার হাতল ধরতেই ঠিক আমার পাশে পরপর কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটলো । এবং সঙ্গে সঙ্গে টের পেলাম পেট্রোল শিপটা উল্টো দিকে কাত হয়ে আমাকে নিয়ে ধীরে ধীরে মাটিতে ডেবে যেতে লাগলো । তীব্র আতংকে পেট্রোল শিপের দরজা ছেড়ে উঠে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করলাম কিন্তু কোন লাভ হলো না ।
ওলট পালট খেতে খেতে প্রচন্ড গতিতে বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট হওয়া সুরুঙ্গের মধ্যে দিয়ে নেমে যেতে লাগলাম পাতাল থেকে পাতালে । কোন কিছু করেই সে পতন রোধ করা গেলো না ।

এভাবে কতক্ষন পরেছি তা বলতে পারবো না । তবে এক সময় মনে হলো এ পতন যেন আর শেষ হবে না । হয়তো আর অল্প সময়ের মধ্যেই টেলসার অভ্যন্তরে জমে থাকা হাজার বছরের উত্তপ্ত গলিত পর্দাথের ভেতর পরে ভস্ম হয়ে যাবো । কেউ্ আর এ যাত্রায় আমাকে বাচাতে পারবে না । কিন্তু বিস্ময়ের তখনো অনেক কিছু বাকি ছিলো । এ জন্য হয়তো গুনিজনেরা নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন ।

সুরঙ্গ বেয়ে নেমে যেতে যেতে হুট করে তীব্র আলোয় চোখ ধাধিয়ে গেলো । হঠাৎ করেই পৃথিবীর মতো মুক্ত আকাশে বের হয়ে এলাম । এ যেনো বিস্ময়ের পর বিস্ময় । চারদিকে যতোদূর চোখ যাচ্ছে , পৃথিবীর মতো চির চেনা সবুজ সব কিছু ।

একবার মনে হলো, হয়তো পৃথিবীতেই ফিরে এসেছি। কিন্তু যুক্তি নির্ভর মন বলছে,সেটা অসম্ভব। কোথায় রয়েছে এন্ডোমিডা গ্যালাক্সির অখ্যাত এক গ্রহ টেলসা আর কোথায় রয়েছে সুজলা,সুফলা শস্য শ্যামলা পৃথিবী । কিন্তু চোখ তো মিথ্যা বলছে না। যা দেখছি তার সবটাই কি সত্যি নাকি ভ্রম!


চলবে .....


এখানে থেকে সবগুলো পর্ব পড়তে পারেন ।
৯ম পর্ব
৮ম পর্ব
৭ম পর্ব
৬ষ্ঠ পর্ব
৫ম পর্ব
৪ থ পর্ব
৩য় পর্ব
২য় পর্ব
১ম পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:২৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×