somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

The Green Mile: কঠোর বাস্তবতা, স্বপ্নময় পরাবাস্তবতা এবং এক পশলা মানবতার মিশেল (মুভি রিভিউ)

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের এই দুনিয়ায় অনেক কিছু ঘটে যা আমাদের পক্ষে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয় না। কিন্তু আসলেই কি এই অলৌকিক ঘটনাগুলো ব্যাখ্যাতীত, নাকি সাদা চোখে আমরা যাকে অলৌকিক বলি তা আমাদেরই সমাজ বাস্তবতার কিছু অসংগতি - আমাদের সীমিত বোধবুদ্ধিতে যার মানে বের করা দূরুহ?? কেমন হয় যদি আমাদের আশ পাশের এই বাস্তবতাকে যাচাই করা যায় আপাত দৃষ্টিতে কিছু অবিশ্বাস্য, অলৌকিক ঘটনাপ্রবাহ দিয়ে?? আমাদের সমাজের কিছু অসংগতি, নিষ্ঠুরতা, কঠোর বাস্তবতা এবং অতি অবশ্যই মানবতার জয়গান যদি ফুটিয়ে তোলা হয় বাহ্যিক ভাবে অবিশ্বাস্য কোন ঘটনার নিক্তিতে যাচাই করে - স্বপ্নময়, অনেকটাই কাল্পনিক পরাবাস্তবতার রথে চড়ে, চমৎকার হয় না তাহলে??

ঠিক এই কাজটিই করা হয়েছে The Green Mile

মুভিতে। টম হ্যাঙ্কস , মাইকেল ক্লার্ক ডানকান অভিনীত এই মুভিটি বাস্তবতার সাথে সংযোগ ঘটিয়েছে অপরবাস্তবের, আমাদের কাছে যা পরাবাস্তব, কাল্পনিক জগৎ!! মুভিতে চিত্রিত করা হয়েছে সমকালীন সমাজ ব্যাবস্থার দূর্বলতা, মানব মনের বিচিত্র গতি - প্রকৃতি আর তুলে ধরা হয়েছে ভালো - মন্দের, শুভ - অশুভের অত্যন্ত জটিল বিশ্লেষণ। সাথে প্রভাবক হিসাবে আছে দম আটকানো, একেবারে টান টান স্টোরী লাইন, অসাধারণ কিছু সংলাপ, অসম্ভব ভালো লাগা অভিনয় শৈলী এবং প্রায় নিখুঁত ভাবে উঠে আসা একটি ম্যাসেজ - সাদা চোখে দেখা দুনিয়াটাই সব নয়, দুনিয়া চিনতে হলে চাই অন্তর্দৃষ্টি।

আসুন প্রিয় পাঠক, আমরা মুভিটার স্টোরীলাইনে আলোকপাত করি।
Paul Edgecomb (টম হ্যাঙ্কস) একজন প্রিজন অফিসার। জেলখানায় তাঁর ব্লকের কাজ হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বন্দীদের বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসিয়ে দণ্ড কার্যকর করা। এই বিশেষ ব্লকটির নাম 'গ্রীন মাইল'। আর পল এখানকার কমান্ডিং অফিসার, হর্তাকর্তা।
একদিন সেখানে এক নতুন বন্দী এল, মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে। বন্দীর নাম John Coffey(মাইকেল ক্লার্ক ডানকান), বিশালাকার এক নিগ্রো। কিন্তু আকার- আকৃতিতে যত বিকট আর ভয়ানক হোক না কেন, জন নিজেকে প্রমাণ করলো একজন অতীব ভদ্র, শান্ত শিস্ট দৈত্যাকার ব্যাক্তি হিসেবে। শিশুসুলভ সরলতার এই বন্দী অন্ধকারে ভয় পায়। ঝড়ের রাতে আতঙ্কিত হয় এবং সদা সর্বদা একান্ত বাধ্যগত আচরণ করে!! অথচ সে একজন ভয়ংকর অপরাধে দন্ডিত মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী!! অবস্থা আরো রহস্যময় হয়ে উঠলো যখন প্রমাণিত হলো যে জন অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। সে সারিয়ে তুলতে পারে মৃত্যুপথযাত্রী রোগীকে।

প্রশ্ন হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তা যাকে এমন একটা অসাধারণ শুভ ক্ষমতার মালিক করেছেন তার দ্বারা কি করে ঐ জঘন্য অপরাধ করা সম্ভব?? সে যদি ঐ অপরাধ না করে থাকে তাহলে কে অপরাধী?? আর সে যদি নিরপরাধই হয়ে থাকে তাহলে এই অলৌকিক, অনন্যসাধারণ ক্ষমতা থাকার পরো কেন বিনা দোষে দণ্ডিত হতে চলেছে??

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মুভিতে চমৎকার করে দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে মহানতার, বিশালতার নতুন সংজ্ঞা।

মুভির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী দুটো চরিত্র হচ্ছে Percy Wetmore এবং Eduard "Del" Delacroix, যার মধ্যে প্রথম জন হচ্ছে এক্কেবারে পাজির পা ঝারা, পুরোদমে স্যাডিস্ট এবং কাপুরুষ একজন প্রিজন অফিসার যে কিনা জেলে চাকরী করতে পারছে কেবলমাত্র উঁচু মহলে তার শক্তিশালী যোগাযোগের জন্যে। নিজের অযোগ্যতা ঢাকতে এই লোক সব সময় বন্দীদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালায়, যা প্রতিনয়ত বিব্রত করে অন্য প্রিজন গার্ডদের। দূরুহ করে তোলে তাদের স্বাভাবিক কর্ম তৎপরতা।
আর দ্বিতীয় জন একজন ফ্রেঞ্চ মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামী, নিজের কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত এবং সহজ - সরল একজন ব্যক্তি। মুভির ঘটনা প্রবাহে এই দুই চরিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

উপরে উল্লেখিত অভিনেতারা সহ বাকী সবাই অসাধারণ অভিনয় করেছেন। আমার এক বন্ধু এই মুভির একটি করুণ দৃশ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রায়ই বলে, সে নাকি ঐ দৃশ্যর ক্রন্দনরত প্রিজন গার্ডের মত অঝোরে কেঁদেছে মুভিটা দেখার পরে!! কতটা চমৎকার অভিনয় শৈলী প্রদর্শন করেছেন সবাই মুভিতে তার কিছুটা হয়ত বোঝা যায় একজন দর্শকের এই আবেগ দেখে!!
আর টম হ্যাঙ্কস এর কথা আলাদা করে না বললেই নয়। একজন অসাধারণ ক্ষমতাশালী অভিনেতার অরেকটি মাস্টারপিস এই মুভি। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি হ্যাঙ্কসের একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত। আমি বলব এই মুভিতে হ্যাঙ্কস আমার প্রত্যাশার শতভাগ পূরণ করতে পেরেছেন।

মুভির শক্তিশালী সংলাপ মুভিটাকে অনেকটা সমৃদ্ধ করেছে। কয়েকটি সংলাপ এখানে উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি নাঃ
১। পল এবং জনের প্রথমবারের মত পরিচিত হওয়াঃ
Paul Edgecomb:
Your name is John Coffey?
John Coffey:
Yes sir boss.
Like the drink, only not spelled the same
২। জন যখন পলের ইউরেনাল ইনফেকশান ভালো করে দেয়ঃ
Paul Edgecomb:
What did you just do to me?
John Coffey:
I helped it. Didn't I help it?
I just took it back, is all. Awful tired now, boss. Dog tired.
৩। জন কে যখন অন্য একজন ভদ্রমহিলাকে সুস্থ করে দেবার জন্যে লুকিয়ে জেল থেকে বের করা হয়ঃ
Paul Edgecomb:
John, do you know where we're taking you?
John Coffey:
Help a lady?
Brutus "Brutal" Howell:
That's right. But how do you know?
John Coffey:
Don't know.
To tell the truth, Boss, I don't know much'o anything.

এছাড়া পুরো মুভি জুড়ে আপনি এর সংলাপ মুগ্ধ হয়ে গিলবেন একথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়!!

শেষ করছি এই মুভির ক্যামেরার পিছনের কিছু চমৎকার ফ্যাক্টস দিয়েঃ
১। বৃদ্ধ পলের ভূমিকায়ও হ্যাঙ্কসের অভিনয় করার কথা ছিল, কিন্তু মেকাপ দিয়ে কোন ভাবেই তাঁকে অতটা বুড়ো বানানো যায় নি!! তাই অন্য একজন সেই চরিত্রে অভিনয় করেন!:|
২। জন কফি যখন পল এজকম্বের ইউরেনাল ইনফেকশান ভালো করে দেয় সেই দৃশ্যে অভিনয় করার সময় টম হ্যাঙ্কস তাঁর প্যান্টের ভিতর একটা খালি বোতল রেখে দিয়েছিলেন, যাতে ডানকান অস্বস্তি অনুভব না করেন!! ;):P
৩। সর্বসাকুল্যে ৩০ টি ইঁদুর লেগেছিল Eduard "Del" Delacroix এর প্রিয় ইঁদুর Mr. Jingles এর ভূমিকায় ফিল্মিং সম্পন্ন করতে!!:|:|
৪। মুভিতে দেখা যায় জন কফি বিশালাকায় প্রিজন গার্ড Brutus "Brutal" Howell থেকেও কমপক্ষে আধ হাত লম্বা, কিন্তু বাস্তবে এই উচ্চতা ছিল মাত্র এক ইঞ্চি!! পুরো মুভিতে স্পেশাল অ্যাঙ্গেলে ক্যামেরা চালনা করা হয়েছে এটা ঢাকার জন্যে!! :|;)

মুভিটির আই এম ডি বি রেটিং : 8.4/10
আমার রেটিং : 9.3/10
ডাউনলোড লিঙ্কঃ মিডিয়াফায়ার
প্রিয় পাঠক, আর দেরী কেন?? দেখে ফেলুন মুভিটা এবং সাক্ষী হোন অপার মুগ্ধতার!!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২০
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×