.
(কোন রকম কল্পনার আশ্রয় না নিয়ে, যা ঘটছে বা ঘটেছে, তাই নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হলো। শুধু নাম গুলো বদলে দিলাম। জীবনের সহজ বয়ান – এই আমার গল্প লেখার রসদ।)
.
দাওয়াতটা পাওয়ার পর থেকেই আমি একটু দো টানায় আছি। ফেসবুকের জমানায় বসবাস। তাই ফেসবুকে ই দাওয়াতটা পেলাম মেসেঞ্জারে। অনেকেই সাড়া দিচ্ছে দাওয়াতে। আমি কাউকে চিনি, কাউকে চিনি না। এইচএসসি পাশ করার পর অনেকের সাথেই আর দেখা হয়নি। সেই কলেজ জীবনের বন্ধুদের নিয়ে এই ফেসবুক গ্রুপ। গ্রুপে একজনকে খুব তৎপর মনে হলো। আমি তার ফেসবুক ওয়ালে গিয়ে তার ছবিগুলো দেখলাম। কিন্তু তাকে চিনতে পারলাম না। বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলাম, ভদ্রলোক গ্রহণ করলেন। বন্ধু তালিকায় ফারুক নামে একজন যোগ হলো ।
.
আমি নিজের মনেই একটু হাসলাম, কলেজ জীবনের বন্ধুকে এখন আর ছেলেটা বলার অবকাশ নেই। এখন আমরা সবাই ভদ্রলোক, আংকেল। মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পরিচিতি বাড়ছে। একজন দাঁড়িওয়ালা ভদ্রলোকের সাথে দেখছি ফারুকের বেশ কথাবার্তা চলছে। কোন যেন দাঁড়িওয়ালা ভদ্রলোককে খুব চেনা চেনা লাগলো। ওর প্রোফাইলে গিয়ে ছবিগুলো দেখলাম। বন্ধুত্বের আহ্বান জানিয়ে পর দিন সাড়া পেলাম।
.
যা ভেবে ছিলাম তাই, ও তোহা। ওর সাথে আমার একটা স্মৃতি আছে, কলেজ জীবনের। নিজেকে স্বাধীন এবং বড় ভাবার সেই সময়টায় আমিও একটু অন্য রকম হতে চেয়ে ছিলাম। বাস ভাড়া ও টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে সিগারেটে টান দেই। বন্ধুদের সাথে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আড্ডা দেই। একদিন আড্ডার মধ্যেই সিদ্ধান্ত হলো সিনেমা দেখতে যেতে হবে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে। যে কথা সেই কাজ। কয়েকজন মিলে হাজির হয়ে গেলাম সিনেমা হলে। ছবিটার নাম আজ আর মনে নেই, তবে ইংলিশ ছবি ছিল। ছবির শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত বাজছে। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে। কেউ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বসে পড়েছে। আমিও বসে পড়লাম। অন্ধকার হলে পাশের সিটে দেখি তোহা তখনো দাঁড়িয়ে। ও স্থির দীপ্ত কণ্ঠে বলছে, I feel proud!. আমি বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালাম, অন্যান্য বন্ধুরা ও ওঠে দাঁড়ালো। সবাই বসে, আমরা ক’জন কলেজ বন্ধু জাতীয় সঙ্গীত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে রইলাম।
.
তোহার সাথে ফখরুলের বেশ ভাল বন্ধুত্ব তখন। ফখরুলের কাছ থেকে শুনেছিলাম তোহার কথা। তোহাদের বাড়ি যশোহর। ওর বাবা একাত্তরে আওয়ামী-লীগের একজন বড় নেতা ছিলেন। সামনে থেকে যশোহরের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন। উনাকে পাক-হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। স্বাধীনতা এসেছে, উনি আসেননি। ওর ভিতরের আবেগটার প্রতি একটা শ্রদ্ধাবোধ সবসময় অনুভব করেছি, আজ ও করি।
.
অফিস থেকে ফেরার পথে মেসেঞ্জারে ওর ফোন পেলাম। ওর স্ত্রী ও তিন মেয়ের কুশল জানলাম। আমারটা ও জানালাম। ওর মার কথা জিজ্ঞেস করলাম। উনি এখনো বেঁচে আছেন। ভালো ই আছেন। তোহার বড় ভাইয়ের সাথে থাকেন উত্তরায়, ৭৩ বছর চলছে। আমি হিসেব করি, একাত্তরে মাত্র উনত্রিশ বছর বয়সে উনি স্বামীকে হারান। তারপর এই দীর্ঘ সময়টা পার করে দিয়েছেন সন্তানদের লালন-পালন করে মানুষ করার কাজে। নিজেকে নিয়ে ভাবেন নি। আমাদের দেশে মায়েদের এই রকম ত্যাগের বহু ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে বাঙলার মায়েদের স্মরণ করি।
.
তোহা দাওয়াতে যাচ্ছে না। কারণ জিজ্ঞেস করতে ও বললো, ও এখন পাঞ্জাবী-পায়জামা পরিধান করে, সার্ট-প্যান্ট পরা ছেড়ে দিয়েছে। ওখানে দাওয়াত খাওয়ার ও ড্রেস কোড আছে। আমি জীবনে কখনো সেখানে যাই নি। তোহার কথাই বিশ্বাস করলাম এবং মর্মাহত হলাম। আমি ও যাবো না ভাবছি।
.
এদিকে ফারুক ওর ফেসবুক ওয়ালে বিভিন্ন জিনিস পোস্ট করছে। সাদা-কালো একটা গ্রুপ ছবি একদিন পোস্ট করলো। ছবিটা ঢাকা শহরের কোন এক স্টুডিও তো তোলা। অধিকাংশ তরুণের মাথায় টুপি। আমাদের গ্রুপের অনেকেই আছে। প্রায় সবাইকেই চিনতে পারলাম। ফারুকের বিভিন্ন পোস্ট দেখে মনে হলো, ধনী হলেও, লোক হিসেবে বেশ মানবিক। তাই অনেকের সাথে আমিও একদিন মেসেঞ্জারে ওর দাওয়াতে ‘কবুল’ বলে দিলাম। কিন্তু মুশকিল হলো, যে দাওয়াত দিয়েছে, তাঁর সাথে তখনো পরিচয় হয়নি।
.
চলবে..
মো. শামছুল ইসলাম
৯ এপ্রিল ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




