।
পর্ব-০১
.
পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে পাগল আমার মন নেচে ওঠে, চেনা শোনার কোন বাইরে... গানটা আজ দুপুর থেকে খুব মনে পড়ছে। মাতাল হাওয়ায় জানালার পর্দা বার বার উড়ে যাচ্ছিল। মনটাও উড়াল দিচ্ছিল ক্ষণে ক্ষণে - সুদূর এক অতীতে। যে অতীতে আমি ছিলাম চুয়েটের পাহাড় ঘেরা কুদরত-ই-খুদা হলের একজন। সাথে রুমমেট হিসেবে পেয়ে ছিলাম ভীষণ আড্ডাবাজ আহসান ও ওহাবকে। রুম নম্বর ১৫৮ ছিল সবার আড্ডার আদর্শস্থান। কারণ ডাইনিং থেকে খাওয়া সেরে আট-দশ কদম পা চালালেই আমাদের রুম। আর এটা ছিল এমনই একটা রুম রাতে ঘুমানো ছাড়া সব সময়ই দরজা খোলা থাকতো। যার যখন পড়তে পড়তে ক্লান্তি লাগতো, সেই মিনিট বিশেক আমাদের রুমে এসে আড্ডা দিয়ে যেত। পারিবারিক থেকে শুরু করে রাজনীতি, বিজ্ঞান, ধর্ম - কোন কিছুই বাদ যেতো না। তার্কিক প্রকৌশলীদের যুক্ত - অযুক্তির ধারে রুমটা সারাক্ষণ গমগম করতো। এরমধ্যেই আমরা আহসানের সুযোগ্য নেতৃত্বে একটা জার্মান গ্রুনডিগ ক্যাসেট প্লেয়ার কিনে ফেললাম।
.
এবার শুরু হলো নতুন অভিযাত্রা। তরুণ প্রাণে গানের জোয়ার শুরু হলো। চিটাগং নিউমার্কেটে গিয়ে রবীন্দ্র সংগীতের বেশ কিছু ক্যাসেট কেনা হলো। অন্যান্য রুম থেকে ধারেও ক্যাসেট আনা হতো। বেশ একটা পিকনিক ভাব নিয়ে দিন গুজরান করছি। এমন সময়ে আমরা আবিষ্কার করলাম আমাদের মধ্যে একজন বেশ ভালো রবীন্দ্র সংগীত গাইতে পারে। সন্ধ্যা হলেই ঘরের সমস্ত বাতি নিভিয়ে গান শুরু হতো। কারণ গানটা ছিল অনুভবের, আলোয় তার আবেদন কমে যায়। গানটার কলি আমার লেখার শুরুতেই বলেছি। আর গায়ক ছিল আমাদের রুহুল। ভরাট গলায় অসম্ভব দরদ দিয়ে ও গাইতো। সমস্ত ঘর সুরের লহরীতে ডুবে যেত।
.
চেনা শোনার কোন বাইরে, যেখানে পথ নাই নাই রে - যে পথের দেখা এখনো পাইনি, সেই পথের গান আজও কানে বাজে, এখনো বাজছে।
.
চলবে...
.
মো. শামছুল ইসলাম
৫ আগস্ট ২০২০
.
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৪৪