somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকৃতির বিচার বড়ই নিষ্ঠুর,বড়ই নির্মম....

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিন কি কারণে যেন একজনকে বলতে শুনেছিলাম,
"আমি আজও লবণ আর চিনি মিশিয়ে ফেলি,লবণ ভেবে খাই চিনি,চিনি ভেবে লবণ।"
শুনে মনে মনে বলেছিলাম,
"ফাইজলামির আর জায়গা পায় না!"
# গত মাসে আমাদের এলাকার এক আন্টির বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। দীর্ঘ ত্রিশ বছর ডায়াবেটিসে ভোগার কারণে আন্টির চোখে হালকা, পাতলা সমস্যা হয়।শরীরটাও মাঝে মাঝে হালকা পাতলা খারাপ হয়।বাদবাকি আন্টি পুরাই ফিট।জীবনটাকে যতটুকু উপভোগ করার,তিনি করেন।এক চুলও ছাড় দেন না।
আন্টির ড্রইং রুমে বসার সাথে সাথে, আন্টি অনেক উৎসাহ,উদ্দীপনা নিয়ে আমার কাছে একটা কাঁচের সাদা বাটি আর একটা চা চামচ নিয়ে ছুটে আসলেন।
বাটির মধ্যে পায়েস টাইপের কিছু হবে।দেখতে অনেক লোভনীয় হয়েছে।
আগের চেয়ে আরও দ্বিগুণ উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আন্টি বললেন,
"একটা নতুন রেসিপি ট্রাই করছি, ইউটিউব দেখে।ক্যামন হয়ছে, দ্যাখত মা?"
আমিও দেরি না করে অতি উৎসাহের সহিত এক চামচ নাস্তা নিয়ে মুখে পুরে দিলাম।
এই মূর্খতা পূর্ণ কাজের জন্য আমার জিহ্বা,আলজিভ,গলা পেট সকলে মিলে আমাকে শত ধিক জানাল।
ঐদিকে আন্টির আর তর সইছে না মনে হয়।
জিজ্ঞেস করলেন,
"ক্যামন হইছে মা?মজা না?"
আমি কিছু বলতে পারলাম না।শুধু একটা ভদ্রতার হাসি দেয়ার চেষ্টা করলাম।কিন্তু, ঠিকঠাক মত মনে হয় হাসতে পারলাম না।
চেহারটা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলাম,কিন্তু বিধি বাম। আয়না দেখার সুযোগ হয়নি,কিন্তু মনে হয়েছে, কেঁচোর গায়ে লবণ ছিটালে কেঁচো যেমন কুঁকড়ে যায় আমার চেহারাও অমন করে কুঁকড়ে যাচ্ছিল।
আমার চেহারার এই বেহাল দসা দেখে আন্টির ভ্রু কুঁচকে গেল। আমার কাছ থেকে বাটি কেড়ে নিয়ে ঐ চামচই না ধুয়ে তড়িঘড়ি ঐ অতি সুন্দর অখাদ্য,এক চামচ নিয়ে নিজের মুখে পুরে নিলেন।
আর যায় কই!
সাথে সাথে মুখে হাত দিয়ে বেসিনের দিকে দৌড় দিলেন।
মুখ মুছতে মুছতে ফেরত আাসলেন।মন খারাপ করে বললেন,
"সরি সরি মা, আমি চিনি আর লবণ গুলায়ে ফেলছি।আমার চোখটা এরকম ধোকা দিল আমাকে!"
মনে মনে বললাম
"ফাইজলামির আর জায়গা পায় না!"
মুখে বললাম,
"ইট্স ওকে আন্টি।ভুল ভ্রান্তিত মানুষেরই হয়।ব্যাপার না।
আপনি আবার ট্রাই করেন।ইনশাল্লাহ ভাল হবে।"
আমার কথা শুনে আন্টি আবার উৎসাহিত হলেন।
আমি সুযোগ বুঝে কেটে পড়লাম।

# বিয়ের আগে কেউ চা বানানোর কথা বললে আমার রাগে গা জ্বালা দিয়ে উঠত,কারণ আমি ভাল চা বানাতে পারতাম না।
বিয়ের পরে আমার হাজব্যান্ড থেকে খুব ভাল চা বানানো শিখেছি।এখন আমার চা মাশাল্লাহ খুব জনপ্রিয়।
কোন অতিথি বাসায় আসলে আমার চা না খেয়ে ফেরত যান না।আর চায়ে চুমুক দিতেই চোখটা বন্ধ করে সহসা খুলে তৃপ্তি সহকারে যখন বাহ্ শব্দটা আপনা আপনিই ওদের মুখ থেকে বেরোয়। শুধু ঐটুকুতে আমার তৃষ্ণার্ত মন পুরোপুরি ভরে না।
আরও কিছু শোনার জন্য জিজ্ঞেস করি,
কেমন হয়েছে?সব ঠিক আছে ত?"
উত্তর আসে,
অ-নে-ক ভাল হইছে।কিভাবে এত ভাল চা বানান আপনি?
কথাটা কানে যেতেই আমার কান+ মন প্রসন্নতায় ভরে যায়।
গত কয়েকদিন ধরে একটা বিশ্রী রোগে ভোগছিলাম।
আর তার জন্যে বোধহয় মস্তিষ্কেও হালকা পাতলা গোলযোগ হচ্ছিল।চোখেও মাঝে মাঝে ঝাপসা দেখছিলাম।
সেদিন এক দূর সম্পর্কের মামা আসলেন বাসায়।
সোফায় বসতে বসতে বললেন,
"সারমিন, তোমার হাতের চা না খেয়ে যাচ্ছি না,কিন্তু।
তোমার হাতের চা খেয়ে যতটা তৃপ্তি পাই,দুনিয়াতে আর কোথাও চা খেয়ে এত তৃপ্তি পাই না।এই দুনিয়াতে মনে হয় না তোমার চেয়ে ভালো চা কেউ বানাতে পারে।
শ্রুতি মধুর কথাগুলি শুনতে শুনতে মনে মনে বললাম,
আলবৎ!হতেই হবে।
মুখে বললাম,
কী যে বলেন না মামা! এত বাড়িয়ে বলার কি দরকার?"
বলেই চা বানাতে চলে গেলাম।
যত্ন করে দুধ গুলে অনেকক্খন যাবত দুধটাকে ঘন করে তাতে এক চিমটি লবণ, আর এক চামচ চিনি, এক চামচ চা পাতা দিয়ে বেশ খানিকক্ষণ চুলায় রেখে পারফেক্ট কালার আাসার পর মামার সামনে টা সহ চা পরিবেশন করলাম।
মামা খুব স্বযত্নে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দুই তিনবার ফু দিয়ে চায়ে তার প্রথম চুমুকটা দিলেন।
সাথে সাথে অন্যদিনের মত চোখটাও ঠিকঠাক বুজলেন।কিন্তু বাহ্ শব্দটা বলতে বোধহয় ভুলে গেলেন।ঐদিকে আমার কর্ণদ্বয় কিছু একটা শোনার জন্যে উদগ্রীব হয়ে আছে।স্বভাবদোষে জিজ্ঞেস করে ফেললাম,
"চা কেমন হয়ছে মামা?"
মামা মনে হল হঠাৎ যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন।
একটা ভদ্রতার হাসি দেয়ার চেষ্টা করলে, কিন্তু উনার মুখমন্ডল উনার সাথে ঠিকঠাক কোঅপারেট করছিল না।
উনি কিছু একটা বলার জন্যে আমার চোখের দিকে তাকালেন।
যথেষ্ট ভদ্রভাবেই তাকালেন।
কি বলবেন মনে হয় বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
কিন্তু উনার চক্ষুদ্বয় আমার সাথে ভদ্রতা দেখায়নি।
মামা কিছু না বললেও তার চক্ষুদ্বয় খুব নিষ্ঠুর এবং স্পষ্টভাবে বলছিল,
"ফাইজলামির আর জায়গা পায় না!"
১৮টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×