somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

কিছু স্মৃতি আমরা খুব গভীরে পুষে রাখি

০৮ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছুদিন ধরে আদুরে একটা গন্ধ বারবার নাকে সুড়সুড়ি দিয়ে, আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ছেলেবেলায়। আমাদের জীবনের এমন কিছু সময় বা স্মৃতি থাকে যা আমরা কখনোই ভুলে যাই না, স্মৃতির রাজ্যে তাদের প্রভাব এতোটাই প্রকট যে চোখ বন্ধ করলেই আমরা তা স্বচ্ছ জলের মতো দেখতে পাই।

সেই সময় মফস্বল শহরে ঘরে ঘরে খাবার সংরক্ষণ করার জন্য ফ্রিজ ছিলো না। কোনো খাবার সংরক্ষণ করতে চাইলে হয় রোদে শুকিয়ে নয়তো সকাল বিকাল চুলায় গরম করে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা হতো।

কোরবানির সময় দেখতাম আমার নানী ঈদের দিন মস্তবড় এক পাতিল ভরে কোরবানির গোশত রান্না করতেন, সেই রান্না করা গোশত আমারা সহ দিন-রাত আসা মেহমানরা মিলে ঈদের পরদিন দুপুর কিংবা রাত পর্যন্ত খেয়ে শেষ করতাম। প্রথমবার রান্না করার পর বাকি যে ঢের গোশত থাকতো তা আলাদা আলাদা পাত্রে হালকা করে হলুদ ও লবন দিয়ে জ্বালিয়ে রাখা হতো, যাতে করে তা নষ্ট না হয়ে যায়। প্রথম কিস্তি গোশত খাবার পর শুরু হতো একদিন ভুঁড়ি তো একদিন পায়ার নেহারি অন্যদিন আবার মগজ ভাজি তো আরেকদিন মাথার গোশত কিংবা কলিজা ভুনা। এভাবে এসব গোশতময় দিনে আমরা তিক্ত হয়ে যেতাম গোশতের উপর। গ্লাস-বাটি থেকে শুরু করে ঘর,কলপাড় সবজায়গা কেবল গোশতের গন্ধ।আমরা গোশতের উপর তিক্ত হয়ে গেলেও গোশত আমাদের পিছু ছাড়তো না।

ভুঁড়ি,মাথা,পা,মগজ,কলিজা খাওয়া শেষে শুরু হতো সেই হলুদ লবন দিয়ে সেদ্ধ করে রাখা গোশত রান্না করে খাওয়ার পালা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাদের সেই গোশত তিনবেলা গিলতে হতো। বার বার গরম করে খাওয়ার কারণে গোশত গুলো ভেঙ্গে তেল ও ঝোলের সাথে মিশে একাকার হয়ে যেতো তখন আমার নানী সেই ঝোল ব্যবহার করে বানিয়ে ফেলতেন অদ্ভুত স্বাদের এক পিঠা।

দেখতাম নানু সেই ঝোলের সাথে কাঁচামরিচ ও পেঁয়াজ কুচি সহ আরও কিছু অতিরিক্ত মশলা যুক্ত করে, প্রয়োজন মতো আতপ চালের গুড়া দিয়ে বড় গোলাকৃতির একটা ডো বানিয়ে রেখে দিতেন। মাটির চুলায় রাতের রান্না শেষে কয়লাগুলো যখন টকটকে লাল হয়ে তাপ ছড়াতে থাকতো, তখন সেই চুলার উপর লোহার কড়াই বসিয়ে তার ভিতর কলাপাতা বিছিয়ে কিছুটা সর্ষে তেল মেখে পূর্বে বানিয়ে রাখা ডো টা কড়াইতে চেপে চেপে বসিয়ে দিতেন, এরপর আরও কিছু কলাপাতার খন্ড দিয়ে উপরের অংশ ঢেকে, চুলা থেকে কিছু আগুনের কয়লা এনে ঢেকে দেওয়া কলাপাতার উপর দিয়ে ছড়িয়ে দিয়ে দীর্ঘ সময় অবধি কিংবা আগুনের তাপের তারতম্যের উপর ভিত্তি করে সারারাত চুলায় রেখে দিতেন।

সকালবেলা চুলা থেকে নামিয়ে পোড়া কলাপাতা আর কয়লা গুলো পরিষ্কার করে সেই পিঠাকে গোশতের টুকরোর মতো টুকরো টুকরো করে কেটে পরিবেশন করা হতো। আমরা সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বিদ্যুৎ কালো নিমের মাজন দিয়ে দাঁত মেজে, সেই পিঠার টুকরো গুলো হাতে নিয়ে উঠোন জুড়ে হেঁটে হেঁটে খেতাম। স্থানীয় ভাষায় পিঠা টাকে রুট পিঠা বলা হতো। পিঠার বাহিরের অংশ শক্ত কামড় দিলে কড়কড় শব্দ করে ভেঙ্গে যেতো; আর ভেতরের অংশ ছিলো স্পঞ্জের মতো নরম। আমরা যখন পিঠা গুলো কামড়ে কামড়ে খেতাম তখন খুব সুন্দর এক আদুরে বাটা মশলার গন্ধ পেতাম। কিছুদিন ধরে সেই গন্ধই আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে ছেলেবেলায়।

নানী মারা গেছেন অনেকদিন! তার সাথে বিদায় নিয়েছে রুট পিঠাও। আমার মা কিছুটা এই পিঠা বানাতে পারতেন; কিন্তু নানীর বানানো পিঠার মতো এতো স্বাদ হতো না। নানীর সাথে সাথে মাও চলে গেছেন অনেকদিন! এখন সেই স্বাদ বা কম স্বাদ কোনোভাবেই আর রুট পিঠা খাওয়া হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৪:২৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×