somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

অভাব যখন দরজায় কড়া নাড়ে...

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




যোহরের নামাজের ইকামাত দিচ্ছেন মুয়াজ্জিন সাহেব। মুসল্লিরা রবের হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সহসা খেয়াল করলাম, আমার সামনের সারির এক ভদ্রলোক দুহাত তুলে বিড়বিড় করছেন। তার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছেন আশে পাশের মুসল্লিরা। আমি প্রথমে অবাক হলেও পরক্ষণে খেয়াল হলো, আজান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময় দুআ কবুল হয় (আবু দাউদ, ১/১৪১, তারগীব, ১/১৮০, মাজমাউয যাওয়াইদ, ১/৩৩৪)। ভদ্রলোক বোধহয় সেই আশায় হাত তুলে ধরেছেন, তার রবের দরবারে।


নামাজ শেষ হলো। ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে প্রথমে সবার কাছে ক্ষমা চাইলেন। বললেন, ‘আমি শিক্ষিত মানুষ, দেশের বাইরে থেকে বেশ অর্থ-সম্পদ উপার্জন করে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। সব ঠিকঠাকই চলছিল কিন্তু হঠাৎ করে বিজনেসে ধ্বস নামে। শেষ হয়ে যায় সমস্ত কিছু। এই অবস্থায় পরিবার নিয়ে অবর্ণনীয় বিপদে পড়েছি। অনুগ্রহ করে আপনারা আমাকে কিছুটা সাহায্য করবেন।’ মানুষটি যখন কথাগুলো বলছিলেন, তার চোখ-মুখ লজ্জায় লাল হয়েছিল। মনে হচ্ছিল এখনি কেঁদে ফেলবেন।


বাকি নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় খেয়াল করলাম, ভদ্রলোক সিঁড়ির এক কোণে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। অথচ বাকি সাহায্যপ্রার্থীরা হাত বাড়িয়ে চাইছেন, ডাকাডাকি করছেন, নিজেদের নানাবিদ সমস্যার কথা তুলে ধরছেন। কিন্তু সেই ভদ্রলোক একভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। উনাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এক মুসল্লি বলেন, ‘এভাবে এক কোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে কি আপনাকে কেউ সাহায্য দেবে? মাঝখানে এসে দাঁড়ান, হাত বাড়িয়ে চান।’ ভদ্রলোক তবুও মাথা তুলে তাকাতে পারলেন না। লজ্জা আর আত্মসম্মানবোধের ভারে নুইয়েই রইলেন।


একটা মানুষ ঠিক কতটা বিপদগ্রস্ত হলে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়—তা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়া আর কারো পক্ষে অনুমান করা সম্ভব নয়। নিশ্চয় বাড়িতে আদরের বাচ্চারা না খেয়ে আছে। দুদিন আগেও যার ঘর ভরা খাবার ছিল। যে বাবা বাচ্চারা না চাইতেও ডুবিয়ে রাখত নানা মজাদার খাবারে। আজ তারই ঘর খাবার শূন্য। আদরের সন্তানের ক্ষুধার্ত মুখ অসহায় বাবাকে রাস্তায় নামিয়েছে। মানুষটির জন্য ব্যথায় দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছিলাম। সাধ্যানুযায়ী তাকে কিছু সাহায্য করার চেষ্টা করলাম কিন্তু মনে হচ্ছিল উনি এর চেয়ে অধিক সাহায্য পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।


অফিসের পথে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম, পৃথিবীর সব চেয়ে খারাপ মানুষকেও যেন সৃষ্টিকর্তা এমন পরিস্থিতে না ফেলেন। আর যারা এমন পরিস্থিতে আছেন তাদের যেন শীঘ্রই আজাদ করে দেন। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণ ভালো থাকুক, শান্তিতে থাকুক। কারো গায়ে না লাগুক দুঃখের কোন আঁচ। পৃথিবী হয়ে উঠুক শান্তির স্বর্গরাজ্য…।

ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৩২
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×