
যোহরের নামাজের ইকামাত দিচ্ছেন মুয়াজ্জিন সাহেব। মুসল্লিরা রবের হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সহসা খেয়াল করলাম, আমার সামনের সারির এক ভদ্রলোক দুহাত তুলে বিড়বিড় করছেন। তার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছেন আশে পাশের মুসল্লিরা। আমি প্রথমে অবাক হলেও পরক্ষণে খেয়াল হলো, আজান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময় দুআ কবুল হয় (আবু দাউদ, ১/১৪১, তারগীব, ১/১৮০, মাজমাউয যাওয়াইদ, ১/৩৩৪)। ভদ্রলোক বোধহয় সেই আশায় হাত তুলে ধরেছেন, তার রবের দরবারে।
নামাজ শেষ হলো। ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে প্রথমে সবার কাছে ক্ষমা চাইলেন। বললেন, ‘আমি শিক্ষিত মানুষ, দেশের বাইরে থেকে বেশ অর্থ-সম্পদ উপার্জন করে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। সব ঠিকঠাকই চলছিল কিন্তু হঠাৎ করে বিজনেসে ধ্বস নামে। শেষ হয়ে যায় সমস্ত কিছু। এই অবস্থায় পরিবার নিয়ে অবর্ণনীয় বিপদে পড়েছি। অনুগ্রহ করে আপনারা আমাকে কিছুটা সাহায্য করবেন।’ মানুষটি যখন কথাগুলো বলছিলেন, তার চোখ-মুখ লজ্জায় লাল হয়েছিল। মনে হচ্ছিল এখনি কেঁদে ফেলবেন।
বাকি নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় খেয়াল করলাম, ভদ্রলোক সিঁড়ির এক কোণে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। অথচ বাকি সাহায্যপ্রার্থীরা হাত বাড়িয়ে চাইছেন, ডাকাডাকি করছেন, নিজেদের নানাবিদ সমস্যার কথা তুলে ধরছেন। কিন্তু সেই ভদ্রলোক একভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। উনাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এক মুসল্লি বলেন, ‘এভাবে এক কোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে কি আপনাকে কেউ সাহায্য দেবে? মাঝখানে এসে দাঁড়ান, হাত বাড়িয়ে চান।’ ভদ্রলোক তবুও মাথা তুলে তাকাতে পারলেন না। লজ্জা আর আত্মসম্মানবোধের ভারে নুইয়েই রইলেন।
একটা মানুষ ঠিক কতটা বিপদগ্রস্ত হলে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়—তা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়া আর কারো পক্ষে অনুমান করা সম্ভব নয়। নিশ্চয় বাড়িতে আদরের বাচ্চারা না খেয়ে আছে। দুদিন আগেও যার ঘর ভরা খাবার ছিল। যে বাবা বাচ্চারা না চাইতেও ডুবিয়ে রাখত নানা মজাদার খাবারে। আজ তারই ঘর খাবার শূন্য। আদরের সন্তানের ক্ষুধার্ত মুখ অসহায় বাবাকে রাস্তায় নামিয়েছে। মানুষটির জন্য ব্যথায় দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছিলাম। সাধ্যানুযায়ী তাকে কিছু সাহায্য করার চেষ্টা করলাম কিন্তু মনে হচ্ছিল উনি এর চেয়ে অধিক সাহায্য পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।
অফিসের পথে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম, পৃথিবীর সব চেয়ে খারাপ মানুষকেও যেন সৃষ্টিকর্তা এমন পরিস্থিতে না ফেলেন। আর যারা এমন পরিস্থিতে আছেন তাদের যেন শীঘ্রই আজাদ করে দেন। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণ ভালো থাকুক, শান্তিতে থাকুক। কারো গায়ে না লাগুক দুঃখের কোন আঁচ। পৃথিবী হয়ে উঠুক শান্তির স্বর্গরাজ্য…।
ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


