somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

মানুষ মূলত একা

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দিন শেষে প্রতিটি মানুষ একা। চৈত্রের মধ্য দুপুরের মতো, কনকনে শীতের রাতের মতো একা। মানুষে মানুষে যতটুকু সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, মায়া, ভালোবাসা—এর সবটাই ক্ষণিকের। বেলা শেষে মানুষ মূলত একাই। যতই আমরা অন্যদের সাথে সময় কাটাই, সম্পর্কের সেতু গড়ি, একে অপরকে পাশে পাই, সেগুলো একটা সময় মলিন হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয় দূরত্ব, এক এক করে ভেঙে পড়ে সম্পর্কের সেতু; অনন্তকালের জন্য বিচ্ছিন্ন হয় যোগাযোগ।


দিনের আলো ফুরিয়ে গেলে রাত আসে, ক্লান্ত পাখির দল নীড়ে ফেরে, পাতাঝরা শীতের শেষে আসে সজীব বসন্ত, এভাবেই সময়ের চাকায় যাওয়া-আসা করে ঋতুময় বছর। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া মানুষ—যার গহনে লুকিয়ে থাকত সুখ পাখি, যার ডাকে মন-দরিয়া খুশির ঢেউয়ে উচ্ছল হয়ে উঠত, যার সঙ্গতায় দূর হয়ে যেত মনের যত বিরাগ, যার সঙ্গে ভাগ করা যেত দারুণ সুন্দর মুহূর্ত, যে ভুলিয়ে দিত সজল ভৈরবী—সেই মানুষটি আর কখনোই ফিরে আসে না।


যে মানুষটা অহর্নিশি সঙ্গ দেওয়ার জন্য উন্মাদ হয়ে থাকে, আপনার সামান্য হাঁচি-কাশিতে যার রাতের ঘুম চলে যায়, যার মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে আপনার চিন্তায়, একটিবার আপনার কণ্ঠস্বর শোনার জন্য যার ভেতরটা আঁকুপাঁকু করে, যে বলে আপনাকে ছাড়া এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা যায় না—হঠাৎই বদলে যায় সেই মানুষটি। মায়ার টান, আবেগের উত্তাপ, অনুরাগের অনুভূতি কর্পূরের মতো বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে সুখ খুঁজে নেয় বিপরীত ব্যক্তিতে। চেনামুখ, মিষ্টি হাসি, পরিচিত কণ্ঠস্বর, এমনকি গায়ের গন্ধটুকুও তখন অচেনা হয়ে যায়।


এভাবেই ঘটে যায় সঙ্গতার পালাবদল। আমরা নিসঙ্গ হতে থাকি মনের অগোচরে। একসময় যাপনের কোলাহল থেমে যায়, উড়ে যায় মুখের হাসি, কথারা হারিয়ে ফেলে খেই; সবকিছুই কেমন নিস্তব্ধ-নির্জীব হয়ে আসে। আমরা হয়ে পড়ি ভীষণ একা।
একই শহরে বাস করে মানুষগুলো; হয়তো পাশের গলিতেই, কিন্তু দেখা হয় না। কফিশপ, ফুলের দোকান, রমনা পার্ক, শাহাবাগ মোড়, বাস-স্টপ কোথাও দেখা হয় না। প্রিয় জোছনায় ভেসে যায় সবকিছু, বারান্দায় মুক্তোদানার মতো আছড়ে পড়ে বৃষ্টি কণা; কিন্তু হারিয়ে যাওয়া মানুষ ফিরে আসে না।


দিন গড়ায়, মাস গড়ায়, এরপর বছর—আপনার শরীরজুড়ে ব্যামোদের মেলা বসে, জ্বরে কপাল পুড়ে যায়, রোগ-শোকে ক্লান্ত হয়ে একাকি বিছানায় ছটফট করেন, তবুও সে মানুষটি আর ফিরে আসে না। জীবনের কত চড়াই-উতরাই, ভাঙাগড়া, নৌকাডুবি হয়, এত কিছুর পরেও হারিয়ে যাওয়া মানুষ পেছনে ফিরে দেখে না।


একটা সময় আজীবন আগলে রাখতে চাওয়া মানুষটি এভাবেই আপনাকে একাকী কষ্টের তুষার পাহাড়ে ফেলে নিরুদ্দেশ হয়। এটা নির্মম তবে চিরন্তন সত্য। দিন শেষে আমাদের একমাত্র সঙ্গী আমরা নিজেই। এছাড়া আমাদের নিজের বলতে কিছুই নেই, কিছুই থাকে না।
যতই আমরা ব্যস্ত থাকি—কলিগ, সহপাঠী, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে ওঠি। যতই মানুষের ভিড়ে নিজেদের জায়গা তৈরি করি, ভার্চুয়াল জগতের সবুজ আলোয় সুখ খুঁজি, দিন শেষে একটি জায়গায় এসে একা হয়ে যেতে হয়।


আমরা একা একাই জীবনের পথে হাঁটি, একাই ভাবি, একাই মনের দুঃখ-কষ্টকে অনুভব করি। হৃদয়ের ব্যথায় নিসঙ্গ বিছানায় এপাশ-ওপাশ করি, বারান্দায় ফুরিয়ে যায় নির্ঘুম রাত। কত না বলা কথা গলা অব্দি এসে ধোঁয়া হয়ে উড়ে যায় আকাশে, কত অশ্রু গিলে খায় মাথার তলার বালিশ, এসব খবর কেউ রাখে না, কেউ জানে না। মানুষ যতই মিশে যাক সবার সাথে, নিজেকে মেলে ধরুক, আঁকড়ে রাখুক, জড়িয়ে থাকুক—একসময় তাকে একা হয়ে যেতেই হয়।


মানুষের জীবন মূলত ট্রেন স্টেশনের মতো। এখানে রোজ ট্রেন থামে, নানা মানুষের হইচই আর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে হৃদয় প্রাঙ্গণ। কেউ শুরতেই চলে যায়, কেউ ক্লান্তি নিয়ে বসে হৃদয়ের বৈঠকখানায়। গল্প হয়, মায়া জন্মায় এরপর অচেনা পথের বাঁকে উধাও হয়।


একাকিত্ব আমাদের জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা যতই সম্পর্ক গড়ি, ভালোবাসায় শক্ত করে বাঁধি, একদিন সেই সম্পর্কগুলো ঠিক ভেঙে পড়ে। মানুষ একা পৃথিবীতে আসে এবং একাই তাকে চলে যেতে হয়। মাঝখানে সম্পর্কগুলো তাকে একে অপরের সঙ্গে বাঁধে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শোক, দুঃখ, বেদনা—এইসব কিছু একাই বয়ে বেড়ায় জীবনভর!


ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৪২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×