
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা মূলত এডিস মশা (Aedes aegypti) নামক এক বিশেষ ধরনের মশার কামড়ে ছড়ায়। এই মশা সাধারণত পরিষ্কার, জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে এবং দিনের বেলায় (ভোর এবং সন্ধ্যায়) সক্রিয় থাকে। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে হলে এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।
১. মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করুন:
এডিস মশা বংশবিস্তার করে মূলত আপনার আশেপাশে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের মূলমন্ত্র হলো মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো নির্মূল করা।
• জল অপসারণ: বাড়ির আশেপাশে বা ছাদে ফুলের টব, টায়ার, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত বোতল, প্লাস্টিকের পাত্র, এসি বা ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানি
প্রতি ৩-৪ দিন অন্তর ফেলে দিন।
• পাত্র ঢেকে রাখুন: পানি সংরক্ষণের পাত্র, ট্যাঙ্ক বা ড্রাম সব সময় ভালোভাবে ঢেকে রাখুন।
• পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: আপনার বাড়ির আঙ্গিনা, বারান্দা এবং ছাদ নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। সামান্যতম জমে থাকা পানিও ডেঙ্গুর উৎস হতে পারে।
২. ব্যক্তিগত সুরক্ষা: মশার কামড় থেকে বাঁচুন
মশার কামড় এড়াতে নিম্নলিখিত সতর্কতাগুলি মেনে চলুন:
• সুরক্ষিত পোশাক: দিনের বেলায়ও মশার কামড় থেকে বাঁচতে পুরো শরীর ঢাকা পোশাক, যেমন লম্বা হাতার শার্ট ও ফুল প্যান্ট পরিধান করুন।
• মশারি ব্যবহার: দিনে ও রাতে, বিশেষ করে রোগী ও শিশুদের জন্য মশারি ব্যবহার নিশ্চিত করুন। এডিস মশা দিনেও কামড়ায়!
• মশা তাড়ানোর স্প্রে/লোশন: দরজা-জানালায় মশারোধী নেট ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনে ত্বকে বা পোশাকে মশা তাড়ানোর ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন।
৩. ডেঙ্গুর লক্ষণ ও জরুরি করণীয়
ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
• সাধারণ লক্ষণ: উচ্চ তাপমাত্রা সহ হঠাৎ তীব্র জ্বর (১০৫° ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে), তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধিতে প্রচণ্ড ব্যথা, বমি বমি ভাব, ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি।
• চিকিৎসা ও সতর্কতা:
o জ্বর হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
o প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার (যেমন: পানি, ডাবের জল, ফলের রস, স্যুপ) গ্রহণ করুন।
o জ্বর কমাতে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল খান।
o কোনো অবস্থাতেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যাসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ খাবেন না, কারণ এতে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
o ডেঙ্গু নিশ্চিত হলে বা মারাত্মক লক্ষণ (যেমন: পেট ব্যথা, মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ, কালো পায়খানা) দেখা দিলে বিলম্বে না করে নিকটস্থ হাসপাতালে যান।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনসচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি আপনার প্রতিবেশীদেরও সচেতন করুন এবং মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করার কাজে অংশ নিন। মনে রাখবেন, সচেতনতাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের একমাত্র হাতিয়ার।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


