দূয়ারে উঁকি দিচ্ছে ঈদ। এই ঈদ এবং রমজান নিয়ে প্রতি বছরেই মনে পড়ে আমার সোনালী শৈশব। সাথে কৈশোরের ঈদ এবং ইফতার সন্ধ্যাগুলিও। শৈশবে রোজা মানেই ছিলো বাড়তি এক গাদা সান্ধ্যকালীন নাস্তা টাইপ খাবারের আনন্দ যা শিশু হৃদয়ে দোলা জাগাতো। এখনকার বাচ্চাদের মত তো বার্গার কে এফসি দেখিনি আমরা আমাদের শৈশবে। কাজেই বাড়িতে মেহমান এলে বিস্কিট আর চানাচুরের প্লেটগুলোর উপর আমাদের নজর থাকতো। ভাত তরকারী মাংস মাছ সব্জীর সাথে সাথে বাচ্চাদের এসব ফাস্টফুড টাইপ খাবারের প্রচলন ছিলোনা বলতে ফেলে। আর তাই মায়ের বানানো আলুচপ, কাবাব, ফিরনি পায়েস হালুয়াই আমাদের কাছে অমৃত ছিলো। চিন্তা করে দেখি আজকাল সেসব যেমনই ছিলো সাস্থ্যসন্মত তেমনি ছিলো ভালোবাসায় মোড়া স্বর্গের অমৃতসম। আমরা আমাদের মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ চিনতাম। এখন কি বাচ্চারা চেনে?
শৈশবের রোজা এবং ইফতার সন্ধ্যা
ইফতারের ঠিক আগ মুহুর্তে ডাইনিং টেবিল ঘিরে বসে থাকতাম আমরা। মা বাবা ভাই বোন। মা হয়ত তখনও ব্যস্ত রান্নাঘরে তার শেষ কাজটুকু নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। আমরা বসে আছি টেবিল ঘিরে। বিকেল থেকেই শুরু হত সেই ইফতার আয়োজন। মনে পড়ে ছোট্ট একটা স্টিলের বাটিতে ভেঁজানো কিছু কাঁচা ছোলা,সাথে একটু গুড়, তেঁতুল পানি এসব নাকি সারাদিন রোজা রাখার পর শরীরের জন্য খুব ভালো। এগুলোর কোনোটাই আমার খুব যে ভালো লাগতো তা না তবুও দু একটা গলাধকরন করতাম।
কাঁসার থালায় থরে থরে সাজানো থাকতো বেগুনী পেঁয়াজু, ছোলাবুট, মুড়ি, চপ, কাবাব, ফিরনী পায়েস সাথে কিছু মৌসুমী ফল, খেঁজুর। বলতে গেলে রোজই একই টাইপ আয়োজন। তবুও শৈশবের রোজা মানেই আমার চোখে ভাসা সেই ইফতারের টেবিল। বাবার মাথায় টুপি এবং পবিত্র এক দ্যুতি, আতর ছড়ানো সৌরভে চারিদিক ভরে উঠতো রোজার এক আলাদা সৌরভে। মায়ের ঘর্মাক্ত মুখ খুব দ্রুত অজু করে পানি ভেঁজা এবং আচলে আধা মোছা সেই চেহরাটা। ফিরে যাওয়া যায়না সেখানে আর কখনও কোনোদিন।
কৈশোরের রোজা এবং ইফতার- ইফতার আইটেমে তেমন পরিবর্তন হয়নি তখনও শুধু আমরা তখন রোজা রাখতে শুরু করেছি। টেবিলে ইফতার সাজিয়ে দেওয়া এবং রান্নাঘরে রান্নাতেও মাকে কিছু সাহায্য করতে শিখে গেছি। কে কয়টা রোজা রাখতে পেরেছে তার হিসাব কষি। যে যত রোজা সে তত সোয়াব পাবে তত নিজেকে শক্তিশালী ভাবি। নামাজ পড়া শিখেছি এবং ইফতার আধা রেখেই মাগরিব ঠিক সময়ে পড়তে হবে শিখেছি। মায়ের পাশে জায়নামাজ পেতে রোজ নামাজ পড়ি। দোওয়া করি প্রাণ থেকে সবার জন্য। আমার ধারণা তখন ঐ বয়সটাতে সেই খাঁটি দোয়া ছিলো। ঐ নিস্পাপ নিস্কলুষ হৃদয় আমরা হারিয়ে ফেলি বড় হবার সাথে সাথে।
বর্তমানের রোজা- রোজা সবটুকু জৌলুষ হারিয়ে ক্ষীন প্রদীপ শিখার মত জেগে আছে আজ। চারিদিকে কত আয়োজন তবুও সেই শৈশব আর কৈশোরের রোজা ইফতার আর ঈদের জন্য অধীর অপেক্ষা ক'জনে অনুভব করি আমরা আজ? ছোট বাচ্চাদের কাছেও জিগাসা করে দেখেছি তাদের নানা রকম আনন্দময় উৎসবের কাছে রোজা ঈদ এসব আনন্দ আজ ম্রীয়মান।
আজ সেই পুরোনো দিনের মত পাড়া প্রতিবেশী এবং অসহায় আতুর মানুষদেরকে ইফতার বিলানোর দিন আমাদের। হঠাৎ মনে পড়ে গেলো শৈশব কৈশোরের রোজা রমজানের দিনগুলির মধুময় স্মৃতিগুলি। আইটেমগুলোতেও পরিবর্তন এসেছে। কত রকম কত স্বাদের খাদ্য আয়োজন। তবুও সেই ফেলে আসা দিনের রমজান ইফতারের আমেজ কই? কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালী ইফতারের সন্ধ্যাগুলো সেই?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২১ দুপুর ১:৫২