somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[গাঢ়]বিরানপুরের সহযাত্রী- 5ঃ মোস্তফা আনোয়ার পাশা[/গাঢ়]

১৪ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিরানপুর ছোট্ট একটি গ্রামের নাম- যা বাংলাদেশের শাশ্বত গ্রামের প্রতীক। নানান সংগ্রাম করেও বিরানপুর গ্রামের শব্দ-সৈনিকরা লিখে যাচ্ছেন ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস কিংবা গান। আমার দৃষ্টিতে এইসব শব্দ-সৈনিকরাই বিরানপুরের সহযাত্রী। অজান্তে তাঁরা বেঁচে থাকবেন দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রাণে। কিন্তু অনেকের কাছেই হয়তো থাকবে অজানা অচেনাই তাদের জীবন। আমার শ্রদ্ধা প্রতিনিয়ত নত হয় সেইসব কবি-সাহিত্যকদের প্রতি। এই পর্বে আমি আমার এক সিনিয়র ভাই শ্রদ্ধেয় কবি, বন্ধু এবং সহযাত্রী মোস্তফা আনোয়ার পাশা-র কথা বলবো।

মোস্তফা আনোয়ার পাশা পড়তেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাদের শিক্ষায়তনে আসতেন মাঝে সাঝে। তাঁর ছোটো সহোদর মোস্তফা কামাল পাশা ছিলেন আমার তিন বছরের সিনিয়র। দারুণ সাহিত্য-সংস্কৃতিমনা ছিলেন দু'ভাই-ই। ভালো আবৃত্তি এবং কৌতুক বলতে পারতেন মোস্তফা কামাল ভাই। আর মোস্তফা আনোয়ার পাশা ভাই লিখতেন ভালো কবিতা। আমি কবিতা লিখতাম। সেই সূত্রে তাঁর খুব ভক্ত ছিলাম আমি। তাঁর কবিতা পড়তাম নিয়মিত। লিটন ম্যাগাজিন এবং ময়মনসিংহের বিভিন্ন পত্রিকায়ও পেতাম তাঁর লেখা। আমাকে একটি বইও উপহার দিয়েছিলেন তিনি। সেই বইটিই এখনও আমার কাছে রয়ে গেছে। বইটির নাম- জ্যোৎস্নায় বর্ণমালা। অবশ্য তাঁর আর একটি বই- নদী, কাশবন ও শাহানা- প্রকাশের কথাও শুনেছিলাম আগে।

জ্যোৎস্নায় বর্ণমালা বইটির প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি 1986; বাংলা 1392 সালের ফাল্গুন মাসে। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন মৃত্যুঞ্জয় রায়। আলোকচিত্র গ্রহণে সাইফ উদ্দিন আহমেদ। মুদ্রণ হয়েছে মাতৃছায়া প্রিন্টিং প্রেস, জয়দেবপুর এবং দেশ মুদ্রণ, ময়মনসিংহ-এ। বইটির মূল্য রাখা হয়েছিলো মাত্র বারো টাকা। বইটির শেষ প্রচ্ছদে মোস্তফা আনোয়ার পাশা সম্পর্কে বলা আছে- কবিতায় যার নদীর কথকতা, শব্দ বিনির্মাণে যার বিশেষত্ব সময়ের সাথে সমান্তরাল হয়ে চলে গেছে বহুদূর এবং হঠাৎ হঠাৎ ঘুঙুরের মত বাজতে বাজতে যার ছন্দ অলৌকিকভাবে পাঠকদের নিয়ে যায় ধানসিঁড়ি নদীটির কাঁচা স্বপ্নের ভেতর, সেইসব শব্দের জ্যোৎস্নায় অবগাহন মোস্তফা আনোয়ার পাশার এই কাব্যগ্রন্থ- যা সত্যিই পাঠকদের দেবে এক অনাস্বাদিত কবিতার মৌরি গন্ধ।

মোস্তফা আনোয়ার পাশার কবিতার মৌরি গন্ধ এখনও রয়ে গেছে আমার মনে। দুই ফর্মার বই -জ্যোৎস্নার বর্ণমালা-য় মোট তেইশটি কবিতা রয়েছে। সব কবিতাগুলোও লিরিকধর্মী। দু'একটা ছড়াও আছে এতে। লেখাগুলো আশির দশকের। ছড়াগুলোতে তৎকালীন স্বৈরশাসনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে তাই। মূলত প্রেমধর্মী লিরিকগুলা সুখপাঠ্য। সেখান থেকে তিনটি কবিতা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম-

[রং=0অ00অঅ]1. [গাঢ়]একদিন[/গাঢ়]

একদিন তোমাকে দেখবো বলে
ঘর থেকে বেরোলাম।

দেখলাম তোমার হাতের আঙ্গুল, নখ
তোমার চিবুক, গ্রীবা
ঠোঁটের বাঁক, নাকের গড়ন।

নিতল দিঘীর মতো তোমার চোখে
রেখে আমার চোখ
খুঁজে নিলাম আমারি ছায়া।
এবং তখনি
নার্সিসাসের মতো আমারো মৃত্যু হলো।


2. [গাঢ়]ওরা আসে[/গাঢ়]

ওরা আসে। ওরা এসে সমবেত হয়
ওরা সমবেত হয় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে।
ওরা কথা বলে অনুচ্চ কণ্ঠে। ওদের ছায়াগুলো কাঁপে।

ওদের একজনের মনে পড়ে যায় তার প্রেমিকার কথা
শ্যামলা রঙের সুচিক্কন মুখ তার কতদিন দেখেনি আহা!

জয়নালের কশেরুকায় বিধে থাকা বুলেট
নতুন করে যন্ত্রণা ছড়ায় সারাদেহে
বেদনায় নীল হয়ে যায় ফর্সা মুখ তার।

মা! মা! বলে ডেকে ওঠে একজন
তার চোখে ভাসে জননীর ছবি।
শেষবার গ্রাম থেকে ফেরার সময়
সজল চোখে তাকিয়েছিলো তার দিকে।

মোজাম্মেলের মনে পড়েঃ
ছোট বোনের জন্যে ট্যুশনির টাকা বাঁচিয়ে কেনা
চাঁপ রঙ শাড়ীটির কথা।
প্রথম শাড়ী পড়ার পুলকে
কেমন দেখাতো ওর লাজুক মুখটি।

ওদের চারপাশ ঘিরে থাকা সুমসাম নীরবতা ভেঙ্গে
একজন নির্বোধ কবির কথা ভেবে ওরা হেসে ওঠে সজোরে
সে হাসির গমকে কেঁপে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর।
ঢাকা। সারা বাংলাদেশ এবং বঙ্গভবন।


3.[গাঢ়] জেনারেল ট্রাক[/গাঢ়]

চারদিক হৈ চৈ
হুঁশিয়ারি হাঁক
ঐ আসে ঐ আসে
জেনারেল ট্রাক।

জনতা জনতা
জেগেছে জনতা
নয় নির্বাক।

হুঁশিয়ার জেনারেল
সামানেই বাঁক
ঐখানে উল্টাবে
তোমার-ই ট্রাক।[/রং]
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০০৬ রাত ১১:১০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×