আমি যে এলাকায় থাকি সেটা আমার খুব প্রিয়। কারণ এখানে থেকেই ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছিলাম। উচ্চশিক্ষা শেষ করে বিয়েও করেছি কলাবাগান এলাকাতেই। কলেজ জীবনের অনেক বন্ধুদের সাথে আড্ডাও দিতাম এখানেই। নিজের বাসা এই এলাকাতেই হওয়ায় এখানকার পরিচিত পরিবেশের প্রতি বেশ মায়া জমে গেছে। 1980 সাল থেকেই এ এলাকার প্রতি রয়েছে আমার নাড়ির টান। মাঝে উচ্চশিক্ষাকালীন সময় এবং মফস্বলে চাকরির কারণে এলাকা ছেড়ে থাকলেও যখনই ঢাকা আসতাম তখন এ এলাকাই ছিলো আমার ঢাকার যোগাযোগের ঠিকানা- এখনও আছে, সস্ত্রীক ছেলেমেয়ে নিয়ে এখানেই আছি বছরের পর বছর। যদিও নিজের বাড়ি করা হয়নি এলাকায়, তবুও এখানকার মায়া ত্যাগ করে কোথাও যেতে পারিনি।
1998 সালে মফস্বল চাকরিস্থল থেকে বদলি হয়ে ঢাকায় আসার পর এ এলাকার আগের বাসাতেই উঠেছিলাম। আসার পর বখাটে, ছিঁচকে চোরদের উৎপাত, নিত্য ছিনতাই দেখে মনটা খারাপ হয়েছিলো। সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়েছিলো পরিচিত দুইজন খুন হবার সাথে ঢাকা কলেজ জীবনের বন্ধু বাচ্চুর কোমরে গুলি লেগে পঙ্গু হয়ে যাওয়া। এরপর অফিসের এক নারী কলিগ-এর দুই ভাইয়ের খুন হয়ে যাওয়া আরও ব্যথিত করেছিলো। এলাকার আইন-পরিস্থিতির এররকম অবনতিতে নিজের কাছে বেশ অসহায় লাগতো। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ চাইতাম সবসময়। ভাগ্য কিছুটা সহায় ছিলো এলাকার। বিগত বেশ কিছু বছর পরিস্থিতিটা বেশ শান্তই ছিলো।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকলে মনটাও ভালো থাকে। পরিস্থিতি খারাপ থাকলে নিজের ভিতর অস্থিরতা আর থামাতে পারি না। আজ সকালে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলাম। এখন ওর পরীক্ষা চলছে। তাড়াহুড়ো করে রিক্সায় উঠতেই রাস্তার ওপর পার থেকে এক মহিলার চিৎকার শুনলাম। রিক্সাওয়ালা বললো- ছিনতাই। তাকিয়ে দেখলাম মহিলার রিক্সা ভীষণ বেগে যাচ্ছে একটি প্রাইভেট গাড়ির পিছনে- সাথে মহিলা এবং রিক্সাওয়ালার চিৎকার। কিন্তু কে পায় কাকে- অনেক দূরে চলে গেছে প্রাইভেট কার। আমার রিক্সা চলছে রাসেল স্কোয়ারের দিকে রাস্তার উলটাদিকে উলটাপথে। ছেলের পরীক্ষা শুরু হবে 8.15 তে-তাই চলে গেলাম এ দৃশ্য ছেড়ে- তবে মনটা খুঁতখুঁত করতে থাকলো।
সকালের পেপার প্রথম আলো খুলে দেখি- গুলশান থানার এসআই খুন। গতরাতে টিভি চ্যানেলে শুনেছিলাম। নিশ্চিত হতে পারিনি। উনি এ এলাকাতেও ছিলেন কিছুদিন- তখন তার পোস্টিং ছিলো ধানমন্ডি থানায়। নিজের দেশের বাড়ির ছেলে হওয়াতে আর দূর সম্পর্কের আত্মীয়তার সূত্রে তাঁকে মামা বলে ডাকতাম। ছবি দেখে মনটা সত্যিই খারাপ হয়ে গেলো। তাঁর বয়স খুব বেশি নয়। একটি মাত্র মেয়ের বয়স ছয় বছর মাত্র। অসময়ে এভাবে তাঁকে হারানো স্ত্রী-কন্যা, বাবা-মা, ভাইবোনদের জন্য কতো যে কষ্টের ভাবতেই মনটা কষ্টে ভরে গেলো। দেশ কোন দিকে যাচ্ছে? আমরা কোথায় যাচ্ছি আবার? আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আবারও কী অধঃপতন হবে? শিউরে ওঠে প্রাণ!
20.12.2006

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


