somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ এমভী জলরাজ

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসমাইল হাঁপাতে হাঁপাতে এসে লঞ্চে উঠলো । ঈদের সময় লঞ্চ কোন সময় সূচী মানে না ।

হয়ত ভীর বেশী হলে সাড়ে পাঁচটার আগেই ছেড়ে দেবে । একে ত পুরান ঢাকার ঘুলিঘুপচি রাস্তা তার উপরে উপচেপড়া ঈদের ঘরমুখো মানুষ । মালটানা ভ্যান , ক্যাভারড ভ্যান , রিকশা , প্রাইভেট কার , পুরানো ট্রাঙ্কের মত লক্কর ঝক্কর মিনিবাস আর সেগুলোর জানালা , পা-দানি ছাদেও ঝুলে আছে মানুষ । যেমনি করে ছোট বাটিতে তরকারি রাখলে ছলাৎ করে উপচে পড়ে তেমনি ।


ইসমাইল অবশ্য ঘোড়ার গাড়িতে এসেছে । ঘোড়ার গাড়িতে চড়ার সখ ছিল তার বহুদিনের । এমনকি স্বপ্নেও সে বারকয়েক পঙ্খিরাজ ঘোড়া দেখেছে । আজ সেই সাধটা পূর্ণ হল ।
তবে বাস্তবের এই ঘোড়ার গায়ে বিশ্রী গন্ধ । শ্রীহীন ঘোড়াগুলোর জীন লাগানোর জায়গায় ঘা আর আঘাত এর দাগ মানুষের লোভের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল ।

বিকেল পাঁচটা নাগাদ যানজট আরও বেড়ে গেল । সিগন্যাল ছাড়লেই হুটোপুটি । সবাই আগে যাবে , সবার তাড়া , ঠেলাওয়ালা থেকে শুরু করে মিনিবাসের ড্রাইভার অলিখিত এক রেসে নিজের সবটুকু সামর্থ দিয়ে জয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে ।


এতসব রেস আর যুদ্ধের ময়দান পেরিয়ে যখন লঞ্চটাতে এসে সে পৌঁছাল একটা প্রশান্তির বাতাস তখন তার ফুসফুসে তৃপ্তির অনুভূতি ছড়িয়ে দিল ।
সব শেষে সে যখন তার বাড়ি নুরীর চর পৌঁছাবে তখন নুরীর চরের খোলা বাতাসের এক দমে সব কষ্ট হাওয়াই মিঠাইয়ের মত একটা মিষ্টি স্বাদ রেখে বাতাসে মিলিয়ে যাবে ।


ক্ষুধা , তৃষ্ণা যেমন শরীরের টান , বাড়ির টান , নাড়ির টান তেমনি মনের । আর মনকে সময়মত সেটা না দিলে বাকি সব কিছু অসাড় হয়ে পড়ে ।
পায়ে পায়ে মানুষ , ভীরে গায়ে গা লেগে যায় এমন । ভীরবাট্টা ঠেলে কোন রকম তৃতীয় তলার যাত্রী কেবিনের কাছে উঠে আসে সে । কিন্তু বসা ত দূরের কথা কোথাও এতটুকু জায়গা নেই তার সাড়ে পাচফুট শরীর নিয়ে দাড়ানোর।


অগত্যা সে চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে বয়লারের কাছে চাদর বিছিয়ে বসার খানিকটা জায়গা পায় । না তার ডেকের তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের সাথে শুয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে , না প্রথম শ্রেণীতে যাওয়ার বিলাসিতার পয়সা ।
মতিঝিলের একটা অফিসের অফিস সহকারী সে । আরবি লাইনে ফাজিল পাশ । অফিসের পত্রিকাটা পড়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে । শিল্প , সাহিত্য আর শিক্ষার জ্ঞান তার মধ্যে একটা আত্মসম্মানবোধ তৈরি করেছে । আর তাই মানসিক দিক দিয়ে সে সম্পূর্ণই মধ্যবিত্ত ।

চাদর বিছিয়ে বয়লারের ডান দিকের এক কোনায় বসে পড়ল ইসমাইল । তার পর তাকিয়ে দেখতে লাগলো চারপাশ ।
এই বুড়িগঙ্গা নদী বেয়েই একদিন ঢাকা এসেছিল সে । বুড়িগঙ্গা নাম না হয়ে “ “কুমারিগঙ্গা” বা “রানিগঙ্গা” হলেও বোধ হয় নদীর এত করুণ দশা হত না । পানির রং কালচে , কালি গুলে দিলে যেমন হয় । আর জলের গন্ধ যে কাউকে বৃষ্টি ভেজা ডাস্টবিনের কথা মনে করিয়ে দিবে ।


বিগত যৌবনা স্থিরস্রোতা এ নদীর বুকজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সব রকম জল যান । ঐ পাড়ে কেরানীগঞ্জ ঘাট আর তাতে কিলবিল করছে মানুষ আর নৌযান ।


চারপাশের প্রত্যেকটি লঞ্চে কান ফাটানো শব্দে হিন্দি গান বাজছে , এক চানাচুর ওয়ালা লাফিয়ে এক লঞ্চ থেকে অন্য লঞ্চে পার হয়ে গেল । সার্কাসের দলে থাকলে অনেক নাম কামাত সে ।


পুঁটি মাছের আকারের এক ছেলের সাথে পাঙ্গাস মাছের আকারের এক মেয়ে ভীর ঠেলেঠুলে ছাদের কিনারে এসে দাঁড়াল । মাথাটাকে বাদ দিলে মেয়েটাকে মাংসের এক টুকরা বলেই চালিয়ে দেওয়া যায় । সৃষ্টিকর্তা একে বানাতে বেশি সময় নষ্ট করে নি বোঝা যায় ।

মোটামুটি আশি কেজি ওজনের মেয়েটি ইসমাইলের কড়ে আঙুলের চেয়েও চিকন দুটো পেন্সিল হিলের উপর দাড়িয়ে আছে ।
_ উহ , এইখানে নিয়ে আসছ ক্যান আমায় ? বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে সে বলল ।
_ নদী দেখানোর জন্য , পুঁটিমাছের মত ছেলেটি ,মিন মিন করে বলে উঠল ।
_ এটা কি নদী না ড্রেন ? ওয়াক থু , মেয়েটি একদলা থুথু ছুড়ে দিল নদীতে , সঙ্গে হাতের চিপস এর প্যাকেট আর কোল্ড ড্রিংকসের বোতলটাও ।
তার পর কটাস কটাস শব্দে পা ফেলে চলে গেল ।


ইসমাইলের বাম পাশের রেলিং এর পাশে দাড়িয়ে দু বছরের এক বাচ্চা সর সর করে নদীতে মূত্রত্যাগ করছে আর তার এই মহৎ কাজের ব্যবস্থাপনায় পাশে দাড়িয়ে বাচ্চাটির বাবা । নিচে লঞ্চের কার্নিশে হেটে যাওয়া এক ব্যক্তির মাথায় সরাসরি সে মূত্র বর্ষণ হল শুরু হয়ে গেল অভিধান- বহির্ভূত কিছু বাংলা শব্দের মহড়া ।
তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে তারস্বরে কয়েকটা কাকও চেঁচান শুরু করলো । ইসমাইলের মনটা খারাপ হয়ে গেল ।


ছোটবেলায় সে যখন তার মায়ের সাথে নদীতে গোসল করতে যেত , তখন তার মা তাকে বলত ,
নদীতে পুকুরে কখনও পিশাব করবি না বাপ , নদী ও পুকুরে পানির নবী থাকে , সে গুনাহ দেয় । ইসমাইল মনে মনে পানির নীচে এক শ্মশ্রুমণ্ডিত এক বৃদ্ধকে দেখত হাতে এক দণ্ড নেওয়া । পানিতে ঐকাজটি কখনো করে নি সে ।


অবশেষে প্রকাণ্ড শব্দে বয়লারটা সবেগে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে লঞ্চ যাত্রা শুরু করলো এম.ভী জলরাজ ।


প্রচুর মালবাহী কার্গো , কিছু বালির কার্গো তো প্রায় ডুবেই আছে । বেশ কয়েকটি ট্রলারে গরু নিয়ে সদরঘাট অভিমুখে আসছিল । কোরবানি উপলক্ষে গরুগুলোকে ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে । গায়ে গায়ে লাগিয়ে দাড়িয়ে আছে গরুগুলি । মৃত্যু – পথ যাত্রী গরুগুলোকে দেখে ইসমাইলের মন খারাপ হয়ে গেল ।

নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পুরো নদীর দু’ধারেই অসংখ্য ইটের ভাটা আর কল কারখানা। আস্তে আস্তে নদী প্রশস্ত হতে শুরু করল । নদীতে ছড়িয়ে থাকা মাছধরা নৌকার আলোগুলোকে মনে হচ্ছে খসে পড়া তারা । দূরের আলো দেখার জন্য একটা পদ্ধতি শিখিয়েছিল তার বন্ধু নওশের ।


চোখ সম্পূর্ণ আধ বোঝা করে একটু করে খুলে আলো দেখতে হয় তাতে আলোর ঝিকিমিকি টা বোঝা যায় । রাত আটটা নাগাদ একবার বাথরুমে গেল সে । লঞ্চের বাথরুমে নানা ধরনের অভিধানবহির্ভূত শব্দের চর্চা । একটা ছাড়া বাকি সব গুলো পড়ার অনুপযুক্ত । সেই একটা হল ,

“ আপনি যত বড় রাজা মহারাজা হন না কেন , এখানে এলে আপনাকে উলঙ্গ হতেই হবে ’’ ।



রাত দশটার দিকে কেবিনের পাশের একটা চেয়ার খালি পেল সে । সেখানে বসে ঝিমুতে লাগলো সে । চেয়ারে , চলার প্যাসেজে সর্বত্রই মানুষ শুয়ে বসে রয়েছে । রাত বাড়ার সাথে সাথে তাদের চাঞ্চল্যও কমে আসে । মনে হয় মানুষগুলো সংখ্যায় একদম কমে গেছে । কর্ম , কথা আর উচ্ছলতায় প্রানের প্রকাশ । ঘুমন্ত মানুষরা যেন তাদের মিইয়ে যাওয়া গৌরবহীন অস্তিত্ব ।


ইসমাইলের তন্দ্রাভাব চলে এল । আধঘুমে সে দেখতে পেল সে গ্রামের পথটা ধরে বাড়ি যাচ্ছে ।
লম্বা লম্বা হোগল পাতার ঝোপের পাশে দাড়িয়ে খালে জাল ফেলছে মিরনের বাপ । ছিন্ন পাঞ্জাবী গায়ে মসজিদে যাচ্ছে মুয়াজ্জিন । মসজিদের চালাটা খড়ের । ইসমাইলের বাড়ীর চালাটাও খড়ের । বৃষ্টির সময় ফুটো ফাটা দিয়ে পানি পড়ে আর তার মাকে পাত্র নিয়ে এখানে সেখানে দৌড়াতে হয় । এইবার বোনাসের টাকায় সে টিন কিনে চাল ছাইবে ।


মাকেও দেখতে পায় সে । পুকুর ঘাটে বসে ছাই দিয়ে বাসন মাজছে । তার মা যেন আসলেই পৃথিবীর সব মায়েদের প্রতিনিধিত্ব করে । পান খাওয়া মুখ , শাড়ি পড়া সরলতা মাখা চেহারা , আর মনভরা মায়া । সন্তানদের দুঃখে সে মায়ার সাগরে ঢেউ উঠে জলে ভেসে যায় ।
প্রতিবার ,ছুটি কাটিয়ে ঢাকা ফেরার সময় মায়ের সে কি কান্না , সে মায়ার জলে ইসমাইলেরও পা আটকে যায় । ইচ্ছে হয় না আর ফিরে যেতে । কিন্তু ছোট ভাই বোনদের ভবিষ্যৎ আর বুড়ো বাপ মায়ের খাবারের চিন্তা যে আরও বড় ।


হঠাৎ করেই কেউ একজন পায়ে পাড়া দিলে ধড়মড়িয়ে উঠে ইসমাইল । লুঙ্গি পড়া এক স্ফীত তলপেটের কাল লোক তার পায়ে পাড়া দিয়ে কোনরকম দুঃখ প্রকাশ না করেই বাথরুমের দিকে যাচ্ছে । কানে গলায় জ্বল জ্বল করছে স্বর্ণের চেইন ।

ইসমাইল রাগ ও বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে রইল । যেমনি সে এসেছিল তেমনি হেলে দুলে পাশের পর্দাঘেরা কেবিনে ঢুকে গেল ।
কিছুক্ষণ পরে খুব অল্প বয়স্ক একটা মেয়ে পর্দাঘেরা কেবিন থেকে বেরিয়ে বাথরুমে গিয়ে আবার কেবিনে ঢুকে গেল ।
পর্দাঘেরা কেবিনের উদ্দেশে একটা অশ্লীল গালি ছুড়ে দিল একজন কেবিন বয় ।

_ শালা ......দলের পাতি নেতা । এলাকায় বউ , দুইডা বাচ্চাও আছে ।
_ মাইয়াডা কোথার বস ? আরেক জন কেবিন বয় জিজ্ঞেস করল ।
_ এগো আবার মাইয়ার অভাব ! গত মাসে আরেকটারে নিয়া উঠছিল ।
_ লঞ্চে তো কোন ভয় নাই , হোটেলে তো আবার পুলিশ রেইড দেয় অনেক সময় ।
পর্দার ফাঁক ফোকর দিয়ে ভেতরের কোন “ বিশেষ দৃশ্য” দেখার জন্য উকিঝুকি মারল বয় দুটো ব্যর্থ হয়ে আবার গালি দিয়ে চলে গেল । ইসমাইলের মনটা বিষে ভরে উঠল । তার পাশেই খুব খারাপ একটা পাপ হচ্ছে কিন্তু সে বাধা দিতে পারছে না ।



ক্ষমতাশালীদের পাপগুলোও কেমন ক্ষমতাধর । পাতি নেতাদের দল ক্ষমতায় । এই লঞ্চের মালিকও তাদের এক নেতা । তাদের বিরুদ্ধে বলে এমন সাধ্যি কার !
আর ঘুম আসলো না ইসমাইলের । নদী দেখতে লাগলো সে । নদী এখন অনেক প্রশস্ত । তীর অনেক দূরে ছাই রঙা রেখার মত । অনেক দূরের তীরে কত মানুষের ঘরবাড়ি । হয়ত তারা এখন গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে ।

আকাশটা থমকে আছে । রাত দুটোর দিকে চারপাশটা যেন আরও থমকে গেলো । একটা ঘূর্ণি বাতাস ভয়ানক এক শক্তি নিয়ে এগিয়ে এল । নদীর ঢেঊগুলো সব দানব হয়ে আছড়ে পড়তে লাগলো ।


ঘুমন্ত মানুষগুলো জেগে হতভম্ব হয়ে কেঁদে কেটে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকা শুরু কোড়ে দিল। লঞ্চটা দুলতে শুরু করলো । আতঙ্কিত মানুষের চিৎকার , আছড়ে পড়া ঢেঊ , বাতাসের ঝাপটা আর লঞ্চের দুলুনি ।
বাতাসের প্রচণ্ড দমকে লঞ্চটা ডান দিকে কাত হয়ে গেল । মানুষগুলো ইটের টুকরার মত এ ওর উপর আছড়ে পড়ল । প্রচণ্ড এক শক্তিশালী বাতাস ডান দিক থেকে আঘাত করতেই লঞ্চটা ডান কাতেই অন্ধকারে বিশাল নদীর অথৈ পানিতে ডুবে গেল ।


জানালা দিয়ে সাতরে বের হওয়ার চেষ্টা করলো ইসমাইল , ইসমাইলের মত আরও শত । কেউ একজন ইসমাইলের পা টেনে ধরল , সর্বশক্তি দিয়ে ইসমাইল সেটা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো । টানা হেঁচড়ায় ইসমাইলের প্যান্ট খুলে গেল । পা কিছুতে আটকে গেল । হটাৎ ডুবে যাওয়ায় ইসমাইলের নাক দিয়ে পানি মস্তিষ্কে ঢুকে গেল। কিন্তু মস্তিষ্কে একটা শব্দই কাজ করছিল “ বাচাও”


ইসমাইল সাতার কাটার চেষ্টা করলো । সর্বশক্তি দিয়ে নিজের পাটা ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করল । কোন একটা কিছুতে লেগে পায়ের মাংস খানিকটা উঠে গেল হয়ত । একটা ভোতা যন্ত্রণা মাথায় দপদপিয়ে উঠলো ।
পা আটকা থেকে মুক্ত হয়ে পানির গভীরে এক ঘূর্ণিতে পড়ে গেল সে । পানির এক ঘূর্ণিস্রোত তাকে যেন অতল গভীরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । তার গায়ের উপরে চারপাশ দিয়ে অসংখ্য মানুষ কিলবিলিয়ে সরে যাচ্ছে ।


যে বাতাসের কারণে লঞ্চটা ডুবে গেল সেই বাতাসেই নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য ফুসফুসটা হাসফাস করে উঠলো । শরীরের সমস্ত রক্ত কণিকায় শ্বাস নেওয়ার ইচ্ছা।
আবার প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা চালাল । পানির উপর উঠে এল সে । চারদিকে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লো না তার । শরীরের সবটুকু শক্তি খরচ করে সাঁতরাতে চেষ্টা করল সে । কিন্তু চারদিক থেকে তীর যেন কোথা হারিয়ে গেছে । তুচ্ছ খড়কুটার মত ভেসে যাচ্ছে সে । আর পারছিল না , নিজেকে সে স্রোতের মুখে ছেড়ে দিল ।

স্রোত আর বাতাস উল্টে পাল্টে তাকে ভাসিয়ে নিচ্ছিল । কিছুদূর ভেসে যাওয়ার পর কিছু একটা ভেসে যেতে দেখল সে । সাতরে সাতরে সে সেইদিকে যাওয়ার চেষ্টা করল । পানির স্রোত তার শরীর ঘুড়িয়ে দিচ্ছিল যদিও , সে জিনিসটার কাছে পৌঁছে গেল ।


একটা শাদা শোলার শীট আরও দুজন সেটাকে ধরে আছে , শিশুসহ এক মা , আর কালোমত এক পুরুষ । ইসমাইলও সেটাকে আঁকড়ে ধরল । কিছুক্ষণ ভাসার পরে বিদ্যুৎ চমকের আলোতে পুরুষটাকে চিনতে পারলো সে ।


সেই পাতি নেতা । খুব জিদ হল ইসমাইলের । নিশ্চয়ই এর পাপে লঞ্চটা ডুবেছে। শরীরের শক্তি সঞ্চয় করে পানির তল দিয়ে নেতাকে এক লাথি কষল সে । কিন্তু কিছু হল না ।
আবার দ্বিতীয় লাথি । এইবার নেতা ছেড়ে দিল শোলাটা । ভেসে গেলো স্রোতের তোড়ে ।


কিছুক্ষণ অর্ধচেতনে থাকলো সে , যখন চোখ খুলল তখন আর শিশুসহ মেয়েটিকে দেখল না , ভেসে গেছে কোথাও ।

তার হাতগুলো অবশ হয়ে গেছে । শোলাটাকে ধরে রাখার কোন শক্তিই আর নেই । হটাৎ বহুদূরে নীল আবছা রেখার তীর দেখল সে । বাচার এক অদম্য ইচ্ছে জাগল মনে । অবশ হাতগুলো নিয়ে আবার সাঁতরানোর চেষ্টা করল । তার খুব বাচার দরকার । মার মুখটা দেখতে চায় সে আবার .........।




পরদিন পত্রিকায় ব্রেকিং নিউজ:
ভোলাগামী এমভী জলরাজ ডুবে ছয়শ যাত্রীর সলিল সমাধি ।


১৫টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×