১.
বাঁটা মসলায় গরুর মাংস রান্না অনেকদিন খাওয়া হয়না।এখন আছে রাধুঁনী মরিচের গুড়া, মাংসের মসলা। আগে মনে আছে বাড়িতে মাংস রান্না হতো শুকনা মরিচ বেঁটে, মাটির হাঁড়িতে। অপূর্ব একটা গন্ধ পেতাম, টকটকে লাল তেল ভাসতো আর ঝোলটা হতো অনেক গাঢ়, আস্ত সিদ্ধ নরম রসুন, কয়েকটা কাঁচা মরিচ!! নাহ্ সেই স্বাদ অনেকদিন পাইনা।
শীতের দিনে রান্না হতো, সাথে গমের আটার গরম তপ্ত রুটি। গরম রুটির গন্ধটায় অন্য রকম। রান্নাঘরে পিঁড়িতে বসে, গরম রুটি ছিঁড়ে লাল লাল তেল যুক্ত ঝোল মাখিয়ে.... আহারে! আহারে!!
২.
অফিস থেকে ফেরার পথে হাঁস বিক্রি করতে দেখলাম। পাঁচশো টাকা জোড়া, দামাদামি করলে সাড়ে চারশো টাকায় দিয়ে দিতো! মনটা তখন থেকেই আনচান করছে। এখন ই তো হাঁসের মাংস খাওয়ার সময়! হাঁস চামড়া সহ রান্না করতে হবে, টুকরা টুকরা করে কেটে মসলা, টক দই আর ভাজা পেঁয়াজের গুড়া দিয়ে কিছুক্ষন মাখিয়ে রাখতে হবে।কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ বেশী দিয়ে মাখা মাখা করে ঝাল ঝাল রান্না, রান্নার এক পর্যায়ে যখন লাল লাল তেল ভাসবে তখন কয়েক চামচ খাঁটি ঘি ছেড়ে দিতে হবে, মাংস কড়াইয়ে ধরে যাওয়ার আগে একটু পানি দিলে ঝোলটা একটু গাঢ় হবে।
এইবার কি দিয়ে খাবেন সেটা আপনার বিবেচনা। ঘিয়ে ভাজা পরোটা, ভাত নাকি খিচুরী। খিচুরীতে সুবিদা হলো পেঁয়াজ আর সবুজ টসটসে তাজা কাঁচা মরিচে কচ করে কামড় দিয়ে খেতে পারবেন!
এই স্টাটাসটা যখন লিখছি, জানলা দিয়ে দেখলাম পাশের বাড়ির আংকেল দুটো হাঁস নিয়ে বাসায় ঢুকছে.... ঐ বাড়িতে আজ ঈদ!!
৩.
বাসায় ঢুকতেই ভাজা ইলিশের গন্ধ! কড়া করে ভাজা। গন্ধেই বোঝা যায় মচমচে হয়েছে, কুড়মুড়িয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলা যায়। আজ আবার বৃষ্টি বৃষ্টি। শুনলাম খিচুড়ী নামক 'অদ্ভুত' খাবারটা রান্না হচ্ছে। বাড়ির কলাইয়ের ডাল, সেই সাথে মিশিয়ে দেয়া হবে দুমুঠো মসুর আর মুগডাল। 'অদ্ভুত গরম ধোয়া ওঠা খিচুরী'র পাতে এক চামপ ঘি, দুটো কাঁচা মরিচ আর একফালি পেঁয়াজ আর কড়া করে ভাজা চর্বিদার ভাজা ইলিশ দিয়ে খাওয়া শুরু করা যেতে পারে।
খেতে খেতে চলে আসবে একবাটি গরুর মাংস। মাখা মাখা ঝোল, টকটকে ঝোল, তেল তেল ঝোল, ঝাল ঝাল ঝোল। কয়েকটা আলু, উপরে ভাসা আধা সেদ্ধ কাঁচা মরিচ..কাঁচা মরিচের গন্ধ !
বাসার প্রস্তুতি তাই দেখলাম। আপাতত আমি দুটো রুটি আর আধা সিদ্ধ করেলা ভাজি খেয়ে ঘুমাবো!
ভাজা ইলিশ, খিচুরী আর গরুর মাংসের জন্য শুভকামনা রইলো।
৪.
শীত মানেই পিঠা / পুলি , ভাজা পোড়া । আর এগুলো রাতেই খেতে মজা তাই এগুলো রাতেই ভাজতে হয়। তবে গ্রাম বাংলায় রাতে মাছ কেনা বা মাছ ভাজা যাবেনা একথা মেনে চলা হয়। মাছের গন্ধে তেঁনারা বেড়ালের মত ঘুরঘুর করে। শুধু মাছ নয় ভাজা পোড়া ( পিঠা /পুলি / বড়া ) ভাজলেও সমস্যা আছে। রান্নাঘরের জানলার পাশে বসে থাকে। নাকি গলায় গান গায়। আঁমাঁকেঁ দিঁ বিঁ নাঁ ----।
মাঝে মাঝে চাটাইয়ের বেড়া ভেদ করে হাত ঢুকিয়ে দেয় ! লিকলিকে লোমশ হাত। কি ভয়ংকর। চিকন আঙ্গুল গুলো নাড়তে থাকে। বড় বড় নখ। গরম খুন্তি দিয়ে বাড়ি দিলে একছুটে বাঁশঝাড়ের কাছে গিয়ে বিড়ালের মতো ম্যাও ম্যাও করে ডাকতে থাকে। তারপর একসময় গাছ বেয়ে উঠে যায় , আর দেখা যায় না। আমার ধারণা , মেছো ভূত গুলো খুব সহজেই বেড়ালের রূপ নিতে পারে , তাছাড়া বেড়ালও খুব মাছ পছন্দ করে।
আমাদের বাড়িতে রান্না ঘরে যখন পুলি/ পাকান ভাজা হতো তখন রান্নাঘরের বাইরে অস্বাভাবিক শব্দ হত। আমাদের কালো বেড়ালটার অস্বাভাবিক গতিবিধি লক্ষ্য করতাম আর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম আমরা। বাঁশ ঝাড়ে কেমন জানি শব্দ হতো।
ভূতের আনাগোনা গ্রাম বাংলাতেই বেশি। তবে এখন আর আগের মত লক্ষ্য করা যায় না। ভর দুপুরে তাল গাছে পা ঝুলিয়ে কাউকে বসে থাকতে দেখা যায়না।বাবলা গাছেও কেউ চুল শুকায় না। তবে রাতে রান্না ঘরে যতবার আপনি মাছ ভাজবেন , তেল পিঠা ভাজবেন। আশপাশের পরিবেশ একটু খেয়াল করে দেখবেন। আপনার পোষা বেড়ালটা পিঠ টানটান করবে , ঘুরঘুর করবে। রান্নাঘরের বাইরে কেউনা কেউ পায়চারি করবে , অপেক্ষা করবে। আপনি তার উপস্থিতি টের পাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২৭