somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলোর পথে হোঁচট খেয়ে দেখি হারিয়ে গেছি আধাঁরে .......

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১.

কেন তোরা প্রোটেকশন নিস্ নাই ?
না , ভেবেছিলাম কিছু হবে না !
পাগল নাকি ? এমন করতে গেলি কেন ? এখন বাদ দে। কিছুদিন পরেই তো তোদের বিয়ে। এখন এমন সিদ্ধান্ত নিস্ না, বাচ্চাটাকে পৃথিবীতে আন। ভাইয়া কি বলে ?
তোদের ভাইয়া কিছুই বলে না। চুপ থাকে। যেন সব সিদ্ধান্ত আমার।

বান্ধবীদের অনুরোধ তাদের সিদ্ধান্তকে থামাতে পারিনি। তাদের সিদ্ধান্ত তারায় নিয়েছিল। তাদেরকেই নিতে হয়েছে।

নুমাদের বিয়ে হয় এই ঘটনার আড়াই মাস পরে। ওদের বিয়ের ৫ বছর হয়ে গেছে। নুমা এখনো কনসিভ করতে পারেনি। সদা হাসিখুশি নুমা নিয়মিত সামাজিক মাধ্যমে ছবি আপলোড দেয়। তাদের জীবনটা বেশ স্বাভাবিক ,আনন্দময় বলেই ধরে নেয় সবাই। যদিও গোপন অবসরে বৃষ্টির মত লোনা জল ঝরে নুমার চোখে।

২.
নতুন সংসার। টাকা পয়সার টানাটানি। এই মুহূর্তে বাচ্চার আগমন। কি ভাবে কি করবে ভেবে পায় না নীলা আর রুবেল। এই মুহূর্তে বাচ্চাকে পৃথিবী আনার অবস্থা কি তাদের আছে ? বাড়তি খরচ কোথা থেকে আসবে ? তারপর নীলাকে চাকুরী করতে হবে। এখন বাচ্চা নেয়ার সময় না। সাময়িক মন খারাপ হলেও বাস্তবতাকে মেনে নেয়া উচিত। বাস্তবতা খুব কঠিন।
সেই কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে নীলার শরীর থেকে ফিটাস আলাদা করা হয়। সেটা ছেলে না মেয়ে ছিল নীলা বা রুবেল কেউই জানতে পারেনি।

কয়েক বছর পরে নীলা একটা মেয়ে জন্ম দেয় । ভাগ্যবানদের নাকি আল্লাহ নেয়ামত হিসাবে কন্যা সন্তান দান করেন। নীলা রুবেল খুব খুশি। তাদের সংসারে কোন অভাব নেই।
সেই ফিটাসের নিষ্পাপ প্রস্থান নিয়ে হয়তো তারা আর ভাবে না। কিংবা কে জানে আমরা যা দেখি সেটা সঠিক নাও হতে পারে।
আধাঁরে হারিয়ে যাওয়া সেই ফিটাসের কান্না কিংবা মা ডাক নীলা নিশ্চয় শুনতে পান কখনো কখনো।

৩.
'দুঃখিত , আমি আবরোশন করা করাই না । একটি ভ্রূনকে বাচ্চা রুপে পৃথিবীতে আনতে আমি চিকিৎসা দিয়ে থাকি। ভ্রুণকে চলে যেতে নয়।'
দেশসেরা গাইনিকোলজিস্ট ডাঃ কামরুন্নেসা কথাগুলো বেশ কঠিন ভাবেই বললেন। এই কথা তিনি অনেকবার বলেছেন।
তার সামনে তরুণ-তরুণী বসা । তারা তাদের ভ্রূণকে বড় হতে দিতে চাননা। বিয়ে নিয়েও তারা আপাতত ভাবছে না। । তাদের সাথে কথা বাড়াতে ইচ্ছা হচ্ছে না।

আপনার সমস্যা কি? আমরা তো টাকা দিয়ে চিকিৎসা নেবো। - মেয়েটা বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠ বলে উঠলো। ছেলেটার কপাল কুঁচকানো। নামকরা ডাক্তারের কাছে আসা ঠিক হয়। এদের দাম বেশি।

'টাকা নিয়ে যেখানে এবরোশন করায় আপনারা সেখানে যান। ডাক্তারের অভাব নাই। আর যাবার আগে ফীসটা রিটার্ন করে নিবেন। '

ডাঃ কামরুন্নেসা বেল টিপলেন। তিনি কিছুক্ষন রুগী দেখবেন না। সেলফে রাখা পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছেন। তার মনটা বিষণ্ণ।

মেডিক্যাল কলেজে প্রথমে যেদিন তিনি ল্যাব রুমে ঢোকেন তখন বয়ামে মাতৃগর্ভে শিশুর প্রতিকৃতি দেখেছিলেন। ভেবেছিলেন এগুলো মোমের পুতুল। পরে জানলেন যেসব শিশু জন্মের আগে মারা যায়। তাদের বাবা মা এখানে দান করে দিয়ে যায়।

ডাঃ কামরুন্নেসার মনখারাপ হতে শুরু করেছে। আগেও হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। ডাঃ কামরুন্নেসা নিঃসন্তান অথচ তিনি হাজার শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখতে সাহায্য করেছেন।

৪.
বাংলাদেশের লেজেন্ডারি ব্যান্ড অর্থহীন। তাদের নিজেদের অর্থহীন দাবি করলেও ভীষণ অর্থবহ গান তৈরি করেছে 'ফিটাসের কান্না' শিরোনামে। ফিটাসের কান্না জন্মাবার আগেই হারিয়ে যাওয়ার গান , নাড়ি ছিন্নের গান। গর্ভপাত নিয়ে গান। আবরোশন নিয়ে বাংলা ব্যান্ডের ইতিহাসে আর কোন গান আছে নাকি আমার জানা নেই। অর্থহীনের একটা আন্ডাররেরেড গান বলা চলে এটাকে। গানটা আমার প্রিয় গানের একটা। গীটারিস্ট শিশিরের গিটার সোলো আমার মোবাইলের রিং টিউন হিসাবে রাখা আছে।


ফিটাসের কান্না

বেঁচে ছিলাম জন্মাবার স্বপ্ন নিয়ে
মিশে ছিলাম তোমার রক্তস্রোতে,
আলোর পথে হোঁচট খেয়ে দেখি
হারিয়ে গেছি আধাঁরে

কালো জলে…..কালো জলে।

বেঁচে ছিলাম জন্মাবার স্বপ্ন নিয়ে
মিশে ছিলাম তোমার রক্তস্রোতে,
আলোর পথে হোঁচট খেয়ে দেখি
হারিয়ে গেছি আধাঁরে
কালো জলে…..কালো জলে।

ঝরবো আমি নোনা জলে
বৃষ্টি হয়ে তোমার গোপন অবসরে,
অলস চোখে ভাঙ্গবো আমি
ভোরের ঐ শিশির বিন্দু
কষ্টে গড়া সূর্যের আর্তনাদে….আর্তনাদে।

কষ্টের এই নষ্ট সময়ে
ছায়ার মাঝে বন্দী এ হৃদয়,
মায়ার শূন্যতায় লুকাবো তোমায়
কষ্টে গড়া আলোর আর্তনাদে….আর্তনাদে।

ঝরবো আমি নোনা জলে
বৃষ্টি হয়ে তোমার গোপন অবসরে,
অলস চোখে ভাঙ্গবো আমি
ভোরের ঐ শিশির বিন্দু
কষ্টে গড়া সূর্যের আর্তনাদে….আর্তনাদে।

ভালোবাসার তীব্র জোসনা দিয়ে
পারোনি তুমি মমতায় বাঁধতে,
নিষ্পাপ আমার প্রস্থান লিখা থাকবে না
সাজানো কোন এপিটাফে…………

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৫
১৫টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মওসুমের প্রথম কুয়াশাভেজা প্রভাত

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৫

মওসুমের প্রথম কুয়াশাভেজা প্রভাত

ছবি আমার তোলা

আজকের সকালটা অন্যরকম। মওসুমের প্রথম কুয়াশাভেজা স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ প্রভাত। অসাধারণ সুন্দর। চারদিকে সাজানো গোছানো। ঠিক যেন কোনো পুরনো ছবির মতো। শীতের ছোঁয়া এসে পড়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সু-রাজনীতির অভাবেই সুনাগরিকের সংকট

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২৫



রাজনীতি শব্দের মূল অর্থই হলো রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়মনীতি। অর্থাৎ—কোন সমাজ, কোন রাষ্ট্র কীভাবে চলবে, তার নীতি, দিকনির্দেশনা এবং উদ্দেশ্যই রাজনীতির মূল ভিত্তি। একটি আদর্শ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাজনীতি কখনোই... ...বাকিটুকু পড়ুন

Poetic justice!

লিখেছেন মৌন পাঠক, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:২৭

আরে ধুর, এটা নাকি বিচার! এটা সেই গল্প, যেটা মানুষকে ঘুম পাড়ানোর জন্য বানানো—“ভালো করো, ভালো পাবা”
—এই সব kindergarten-level নীতি কথা। যেন দুনিয়া কোনো ন্যায়ের দোকান চালায়! হাস্যকর।

King Lear-এ ধরো—হ্যাঁ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গণভোট হবে কিনা এ বিষয়ে একটা গণভোট হওয়া অতীব জরুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গণভোট হবে কিনা এ বিষয়ে মতভেদ দেখা গিয়েছে। এ বিষয়টি সুরাহা করার জন্য জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গণভোট হবে কিনা এ বিষয়ে একটা গণভোট হওয়া অতীব... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাই সনদ ও অধরা ঐক্য: বাংলাদেশের রাজনীতির সন্ধিক্ষণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৬


জুলাই সনদ ও অধরা ঐক্য: বাংলাদেশের রাজনীতির সন্ধিক্ষণ

অন্তর্বর্তী সরকারব্যবস্থার এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে আমরা দেখেছি নানা কমিশন, তাদের সুপারিশ, এবং শেষ পর্যন্ত ‘ঐকমত্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×