‘দেয়াল’, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ও শামীম ওসমান
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
অংশ-১
সাম্প্রতিক সময়ে আমি হুমায়ুন আহমেদের দেয়াল নামের উপন্যাসটি পড়েছি। মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিষয় উপন্যাসে আসলেও উপন্যাসের মূল বিষয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা ও সে সময়কার পরিস্থিতি। উপন্যাসের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে রক্ষিবাহিনী ও তাদের অত্যচারের বর্ননা। হুমায়ুন আহমেদের পরিবারকে তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দখল করে নিলো রক্ষিবাহিনীর এক সুবেদার। মুক্তিযুদ্ধে হুমায়ুন আহমেদের বাবা শহীদ হয়েছিলেন। শহীদ পরিবার হিসেবে তারা এ বাড়িটি পেয়েছিলেন। পরে অনেক প্রতিবাদের পরে তারা বাড়িটিতে ঢুকতে পারলেও বাড়ির দো’লা দখল করে বসে রইলো ঐ সুবেদার। যেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো সেদিন রক্ষিবাহিনীর ঐ সুবেদার পালিয়ে গেলো। তার দু’মেয়ে হুমায়ুন আহমেদের মায়ের পায়ে পড়ে কান্নাকাটি শুরু করলেন। হুমায়ুন আহমেদের মা তাদের বললেন, ‘তোমাদের আশ্রয় দিতে হবেন কেন তোমরা কি করেছ? ’ উত্তরে তারা বললো ‘খালাম্মা এখন পাবলিক আমাদের মেরে ফেলবে।’
রক্ষিবাহিনী তৈরী করা হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু যখন মেজর রশিদ, ডালিমরা জাতির জনককে হত্যা করলো তৎক্ষনাৎ রক্ষিবাহীনি আত্মসমর্পন করলো। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহম্মেদ ছিলেন রক্ষিবাহিনীর সদর দপ্তরে। রক্ষিবাহিনী বারেবারে বঙ্গবন্ধরু হত্যাকারিদের সাথে যোগাযোগ করে বলছে এখন তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে কি করবে ? ( মানে মেরে ফেলবে না খুনি সেনা কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেবে ?)
অংশ-২
অল্প কয়েক মাস আগে নারায়ণগঞ্জে বিশাল সমাবেশ করে শামীম ওসমান ঘোষনা দিলেন একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ শুরু করতে হবে। এরপর জামায়াতে ইসলামীর একটি হরতালে তাকে সিদ্ধিরগঞ্জে আওয়ামীলীগ নেতাদের নিয়ে মিছিল করতে দেখা গেলো। তার সমর্থকরা ঢাকায় ও নারায়ণগঞ্জে তার দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ধারনা সম্বলিত বিশাল বিশাল ফেষ্টুন স্থাপন করলেন। শাহবাগের আন্দোলন শুরু হলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গনজাগরন মঞ্চ স্থাপন করলেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। তাদের সমর্থন দিলো নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বাম সংগঠনসহ অনেকেই। সাধারন মানুষ এ মঞ্চে অংশ নিতে লাগলো। কিন্তু শামীম ওসমান শহীদ মিনারের দশ গজের মধ্যে একটি রাস্তা বন্ধ করে স্থাপন করলেন একটি মঞ্চ। এ মঞ্চের নাম তিনবার পরিবর্তন করা হলো। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, পরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মঞ্চ ও শেষে প্রজন্ম মঞ্চ। এ মঞ্চের সামনের মোড়টির নামকরন করলেন রাজীব চত্ত্বর। জনকন্ঠের এক বিশিষ্ট সাংবাদিক শামীম ওসমানের প্রশস্তি গেয়ে কলাম লিখলেন।
এর কয়েকদিন পরেই পাওয়া গেলো নারায়ণগঞ্জের গনজাগরন মঞ্চের উদ্যোক্তা রফিউর রাব্বির ছেলে তানভীর মোহাম্মদ ত্বকীর লাশ। ত্বকীর বাবা , নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রকাশ্যে জনসভায় এ খুনের জন্য শামীম ওসমানকে দায়ী করলেন। ত্বকীর বাবা পুলিশের কাছে করা লিখিত অভিযোগে খুনের জন্য শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমানসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করলেন। এরপর শামীম ওসমান পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বলতে লাগলেন, রফিউর রাব্বি ও আইভী জামাতের হয়ে কাজ করছে।
হেফাজতে ইসলামের সমর্থক মুসল্লিরা মিছিল করে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের রাজিব চত্ত্বরের মঞ্চ ভেঙ্গে দিলো। শামীম ওসমান এ বিষয়টিকে উদাহরন হিসেবে টেনে বললেন, জামাতিদের সাথে রাব্বির সম্পর্কেও কারনেই তারা রাজিব চত্ত্বরের মঞ্চ ভাংলেও গনজাগরন মঞ্চ ভাঙ্গেনী। কখনও মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে কখনও তার সাবেক পিএস চন্দন শীলের নেতৃত্বাধীন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি দিয়ে তার এ প্রচারনা চলতেই লাগলো।
কিন্তু হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচী ঘোষনার পর হঠাৎ করেই উল্টে গেলেন তিনি। ৪ এপ্রিল নগরীর বাগে জান্নাত মসজিদে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের ডেকে নিয়ে নিজ খরচে প্রায় পাঁচশ লোকের খাবারের ব্যবস্থা করে তাদের লংমার্চকে সমর্থন করলেন শামীম ওসমান ! লংমার্চ ঠেকাতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কেন্দ্রীয়ভাবে হরতাল ডাকলেও নারায়ণগঞ্জে তারা নামলো না। লংমার্চের দিন এটিএন জামাতের ভারপ্রাপ্ত মহাসচীব ও হেফাজতে ইসলামের এক নেতার (সম্ভবত মহাসচীব) এর স্কাইপি সংলাপ প্রচার করলো। যেখানে তারা এই লংমার্চের পরিকল্পনা করছিলেন।
রফিউর রাব্বি অভিযোগ করেছেন, শামীম ওসমান এখন পরিবারসহ বিদেশে চলে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন। সে যাতে বিদেশে যেতে না পারে এজন্য তিনি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন। #
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ঘরে আগুন, মন্দীরে হামলা, মাজার ভাঙ্গা, পিটিয়ে মানুষ মারা এমন মেধাবী এদেশে দরকার নাই
২০০১ সালে দেলাম ঘরে আগুন দেওয়া ও মন্দীরে হামলার জঘণ্য কাজ। ২০০৪ আবার দেখলাম ঘরে আগুন, মন্দীরে হামলা, মাজার ভাঙ্গা, পিটিয়ে মানুষ মারার জঘণ্যতম ঘটনা।জাতি এদেরকে মেধাবী মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিক্ষাঙ্গনে অপ্রীতিকর ঘটনার মুল দায় কুৎসিত দলীয় লেজুরভিত্তিক রাজনীতির
সোস্যাল মিডিয়ার এই যুগে সবাই কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবি সাজতে চায়। কিন্ত কেউ কোন দ্বায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে রাজী নয়। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটা মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে । এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
কোমলমতিদের নিয়ে আমি কি বলেছিলাম?
আমি বলেছিলাম যে, এরা ভয়ংকর, এরা জাতিকে ধ্বংস করে দেবে।
ড: ইউনুসের সরকারকে, বিশেষ করে ড: ইউনুসকে এখন খুবই দরকার; উনাকে টিকিয়ে রাখতে হলে, কোমলমতিদের থামাতে হবে; কিভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
পিটিয়ে মানুষ মারার জাস্টিফিকেশন!
এদেশে অনেক কিছুই সম্ভব।বর্তমান এলোমেলো সয়য়ে যা সম্ভব না বলে মনে করতাম তাও সম্ভব হতে দেখেছি।তবে মানুষকে কয়েক ঘন্টা ধরে পিটিয়ে মারাকে ইনিয়েবিনিয়ে জাস্টিফাই করা যায় এটা ভাবিনি।তাও মেরেছে কারা?
একদল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আহা তোফাজ্জল
মৃত্যু এখন এমনি সহজ
ভিডিও করতে করতে;
কথা বলতে বলতে
ভাত খেতে দিতে দিতে;
কনফিউজড করতে করতে
মেরে ফেলা যায়।
যার এই দুনিয়ায় কেউ অবশিষ্ট নাই
এমন একজনরে!
যে মানসিক ভারসাম্যহীন
এমন একজনরে!
যে ভবঘুরে দিক শূণ্য
এমন একজনরে!
যে... ...বাকিটুকু পড়ুন