somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অধর-১

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)

আজও বেশ হন্তদন্ত করে অফিসে ঢুকল রাফিদ। মাথায় সেকেন্ডের কাটার টিকটিক নিয়ে, সময় শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে কার্ড পাঞ্চ করে পা ফেলল অফিসে।
ঢোকার সাথে সাথেই নাঈমের ঠাট্টা ব্যঞ্জক উক্তি, ‘কি মামু আজকেও টায় টায়? আর কয়েক সেকেন্ড পর হলেই তো, আজকের বেতনের অর্ধেকটা খচাৎ।‘
রাফিদ বলল, ‘তুমি কি বুঝবা ভাই, থাকতো অফিস থেকে দুই গলি আগে, আমার মতো তেপান্তরে থাকতা, খানা খন্দক পার হওয়ে আসতা, তাইলে বুঝতা।‘
‘না মানে শুনলাম কাকে নাকি দেখতে টেকতে যাবা, তাই ভাবলাম, দেখার আগে নিশ্চয়ই রাত কাবার করে ফোনে কথা টথা সেরে নিয়েছ, তাই ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি, পরিণামে অফিসেও দেড়ি!!!’
‘কি যে বলও না, ঐ ছবি আর সি ভি পর্যন্তই। তাও আজকাল ছবিতে কি বিশ্বাস, পুরা দমে এডিটের যুগ, ছবিতে এক, দেখব যেয়ে আর এক। ফ বি-তেও সার্চ দিয়েছিলাম, প্রোফাইল-টাই বেশ ভারী, ছবি টোবি তেমন একটা নাই। পরিবারের সকলের সিধান্তে যাওয়া, এই আর কি’
‘হুম তোমারই তো দিন। যাই হোক বেস্ট অফ লাক, গলায় দরি পরার আগে কিন্তু জানাইয়ো!!!’
অফিসের সময়টা যেন পার হচ্ছে ধীর পায়ে, বাড়িতে মা, খালা, ফুপু সকলেরই করা নির্দেশ, ‘আজ কিন্তু আগে আগে বাসায় আসবা’। নির্দেশ অনুযায়ী রাফিদ আগে আগেই বাসায় ফিরল। এ তো আর আংটি বদল না শুধুই মেয়ে দেখা, তাই গ্যেতি গুষ্টি সবাই কে না টেনে, খুব অল্প সংখ্যক মানুষ নিয়ে রওয়ানা হল রাফিদের পরিবার।

বাসাটা বেশ ছিমছাম, কোথায় যেন একটা আভিজাত্য লুকীয়ে আছে, তাই ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখতেই হয় বাসাটাকে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, জাগায় জাগায় সবুজের ছোঁয়া, যেখানে যতটুকু প্রয়োজন বাসাটা যেন ঠিক সেভাবেই সাজান গুছানো। এই পুরো বিল্ডিং-এর আলাদা আলাদা ফ্লাটে এঁদের আত্মীয় সজনেরাই থাকেন, তাই এই পক্ষের আত্মীয়দের সমাগমটাও একটু বেশি। কথা বার্তায়, আতিথিওতায়, এরা বেশ রুচিশীল। সে যাই হোক এখন বাকি, আসল মানুষটা কে দেখা, যার উদ্দেশ্যে আসা।

নীল জমিনের উপর জ্যমেতিক নকশার, মরচে লাল পাড়ের একটি খাদির শাড়ি পরে, চেহারায় সামান্য কিছু সাজ নিয়ে, সামনে এসে সালাম দিল অধরা। এতক্ষণ বাসা এবং বাসার লোকজন দেখে, রাফিদ এবং রাফিদের পরিবারের ঠোঁট যেমন দুই প্রান্তে প্রশস্ত হওয়ে ছিল, ঠিক তার চেয়েও দ্রুত ও দিগুণ আকারে সকলের ঠোঁট একেবারে চুপসে গেলো !!! এই মেয়েকে উজ্জ্বল শ্যামলা তো দূরে থাক, শ্যামলা বলেও মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার উপায় নেই, আক্ষরিক অর্থে যাকে কালো বলে, ঠিক সেটাই বলা চলে।

(২)

ফিরতি পথে গাড়িতেই শুরু হলো তুমুল আলোচনা। যেটা ঠিক আলোচনাও নয়, বলা যেতে পারে সমালোচনা।

রাফিদের মা বলে উঠলেন, ‘কি একটা দেখলাম?? এই রকম একটা ঝিম কালো মেয়ে আমার রাফিদের জন্য?’

শিরীন বলল, ‘আমার ভাতিজার মতো এমন একটা ছেলে, লম্বা চওড়া সুন্দর, আই বি এ থেকে পাশ করা, এখন কত বড় কোম্পানিতে চাকরি করে, তার জন্য এই মেয়ে? অসম্ভব!!’

রুবি আরও যোগ করলো, ‘ তুমি ঠিকই বলসো বড় আপা, তোমার ছেলের জন্য ঐ রকম মেয়ে? দেখে মনে হইতেছিলো হিন্দুদের কালি মূর্তি। এই যে আমাদের অয়নের জন্য কত সুন্দর মেয়ে ঘরে নিয়ে আসলো, আবার ঐ দিকে ফরহাদের বউটাও কম কিসে। এঁদের সামনে দাঁড়ানোর মতো তো একটা বউ চাই নাকি, না হইলে তোমার মান সম্মান থাকবে?’
সুমি বলল, ‘আরে তুই রাখত রুবি, মেয়ে দেখলেই কি আর বিয়ে হওয়ে গেলো নাকি। তবে যাওয়া টা কে কিন্তু একদম ফেলনাও মনে করো না আপা। মেয়েটার মামাতো বোনটাকে দেখসিলা? একদম দুধে আলতা গায়ের রঙ, স্লিম, লম্বা। সবার মধ্যে তো ঐ মেয়েটাকেই ঘুরে ঘুরে দেখতেসিলাম।‘

রাফিদের মা বলে উঠলেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, আমিও তো ঐ মেয়েটাকেই দেখতেসিলাম, কি সুন্দর, সবার মধ্যে একদম হিরার মতো জ্বলজ্বল করতেসিলো’

সুমির তড়িৎ উত্তর, ‘শোন আপা, আমি অত কাঁচা কাজ করি না, বাসায় চল সব বলছি’

বাসায় যেয়েই সবাই গোল হওয়ে বসলো।

সুমি হর হর করে বলতে শুরু করলো, ‘মেয়েটার নাম আরমিন, এ-লেভেল শেষ করে, এখন বি বি এ পড়ছে। বাবার বড় ব্যবসা আছে। এরা এক ভাই এক বোন। ভাই পড়াশোনার জন্য লন্ডন থাকে। তুমি এই মেয়েটাকেই দেখ না, আমাদের রাফিদের সাথে খুব মানাবে’।

রাফিদের মা চিন্তিত মুখে বললেন, ‘তা তো বুঝলাম, কিন্তু কিভাবে বলই, দেখতে গেলাম এক মেয়ে, আর প্রস্তাব পাঠাব আরাক মেয়ে কে, তাও আবার আপন মামাতো বোন’

শিরীন বলল, ‘উফ ভাবী তুমিও, এখনকার দিনে এগুলি কোন ব্যাপার নাকি। বলবা, আমাদের ছেলে আপনাদের ঐ মেয়েকে পছন্দ করসে। তুই কি বলিস রাফিদ?’

কন্যা দেখার পর এই প্রথম রাফিদের মুখে বাক্য ফুটল, ‘এখানে আর বলার কি আছে, যাকে দেখতে গিয়েছিলাম তাকে আমি কোন মতেই বিয়ে করবোনা, তবে যাকে নিয়ে কথা বলছ তার ব্যাপারে আমর আপত্তি নেই’

চলবে………
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৯
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×