আমার এক বন্ধু এমন একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন, যেখানে চাকরি করলে তার ইনকামটি হালাল হয় না। এটা তিনি নিজেও বুঝতেন এবং এজন্য প্রায় সময় আফসোসও করতেন। একসময় চাকরিটি ছেড়ে দেয়ারও মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন।
কিন্তু প্রথমে বাঁধা আসে পরিবারের কাছ থেকে। খুব কাছের মানুষেরাও তাকে সহযোগিতা করার পরিবর্তে উলটো মানসিক চাপ সৃষ্টি করেন। আর এরকম একটি দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে তার পদোন্নতি হয় এবং বেতন বেড়ে যায় প্রায় দিগুণ।
পরিবারের পক্ষ থেকে প্রেশার ও লোভনীয় স্যালারির মোহে শেষ পর্যন্ত চাকরিটা তার আর ছাড়া হয় নি। পরবর্তীতে বেতন আরও বেড়েছে, বেড়েছে সুযোগ সুবিধাও। সেই সাথে পরিবর্তন হয়ে গেছে তার মন মানসিকতার। এখন আর তিনি চাকরিটি ছাড়তে চাননা। বরং উলটো নিজের কাজ ও ইনকাম হালাল হওয়ার পেছনে এমন সব খোঁড়া যুক্তি উপস্থাপন করেন, যে যুক্তিগুলো তার নিজের কাছেই এক সময় অসার মনে হত।
২)
এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়। বয়স অনেক হয়ে গেলেও বিয়ে শাদী হচ্ছিল না। শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। ঢাকার একটি অভিজাত এলাকাতে তাদের তিন তলা বাড়ি আছে। বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্রী না পাওয়াতে কাছের মানুষেরা যে কারণটি দাঁড় করিয়েছিল, তা হল তার মুখের দাড়ি। এত বড় দাড়ি দেখলে নাকি কেউ বিয়ের জন্য আগাবে না।
অথচ দাড়ির কারণে বিয়ে দিবে না এমন ফ্যামিলি যেমন আছে, দাড়ি না থাকলে সম্পর্ক করবে না এমন পরিবারও তো আছে। তাহলে মানুষ কিভাবে এ সমস্ত যুক্তি দেখায়?
যাই হোক, ফ্যামিলির চাপে পড়ে একসময় সেই ছেলে দাড়ি কেটে ফেলে। পরিবর্তে তার বেশ ভাল জায়গায় বিয়েও হয়। ভাল জায়গা বলতে ফ্যামিলি স্ট্যাটাস মিলে যায়, দেখতে মোটামুটি ভাল, এই আর কি। আচার ব্যাবহার সহ অন্যান্য দিকগুলোর ব্যাপারে আমার জানা নেই।
------------------
উপরের দুজন ব্যক্তি সম্পর্কে যদি এমন কাউকে মন্তব্য করতে বলা হয়, যার কাছে এই দুনিয়ার জীবনই একমাত্র জীবন, আখিরাতের জীবন সম্পর্কে যার কোন মাথাব্যথা নেই - তিনি হয়তো নিঃসংকোচে বলে ফেলবেন, দুজন ব্যক্তিই সফলকাম। এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান মানার অর্থ হল, নিজেকে এমন ক্ষতির মধ্যে ফেলে দেয়া যা থেকে উত্তরণের কোন উপায় নেই। ভাল চাকরি চলে গেলে, আরেকটা ভাল চাকরি পাওয়া কিংবা বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলে ভাল পাত্রী পাওয়া, এ যুগে এ দেশে অসম্ভব প্রায়। তাই চাকরি না ছেড়ে এবং দাড়ি কেটে ফেলে তারা অতি উত্তম কাজই করেছেন।
কিন্তু যার কাছে আখেরাতের জীবনই আসল জীবন, দুনিয়ার জীবন ক্ষণিকের ভোগ তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়, তার কাছে এ দুজন মানুষকে চরম ক্ষতিগ্রস্তই মনে হবে। যে মেয়েকে বিয়ে করার জন্য তিনি দাড়ি কেটে ফেললেন, সেই মেয়ে তাকে বিয়ের পর জান্নাতের কাজে সহযোগিতা না করে জাহান্নামের দিকে এগিয়ে দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ইনকাম যার হারাম ছিল, প্রথম দিকে তার একটি আফসোস কাজ করতো। সম্ভাবনা ছিল অনুতপ্ত হবার। কিন্তু পরবর্তীতে সেই ভয় ও আফসোস কেটে গেছে। হারাম উপার্জন বেড়েই চলছে, তওবা করা সম্ভাবনাও প্রতিদিন হয়ে যাচ্ছে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর।
বোঝা গেল লাভ ও ক্ষতির হিসাব মানুষ ভেদে ভিন্ন হয়। দুনিয়ার মানুষেরা যেটাকে লাভজনক মনে করে, আখিরাতের মানুষেরা সেখানে ক্ষতিই দেখতে পায়। তাই হিসাব কষার আগে সিদ্ধান্ত নিন - আপনি কোন দলের সদস্য হতে চান?
দুনিয়ার না আখিরাতের......